সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

সম্পাদকীয়



সম্পাদকীয়




'এবং একুশ' প্রথম বর্ষ, দ্বাদশ সংখ্যা




এই সংখ্যায় পড়ুন








এবং একুশ

পিনাকী




একাকীত্ব
পিনাকী



যেদিকে বাড়াই হাত ঊষর মরুভূমি,
শুকনো বালি-ঝড় নয়তো কাদামাটি,
মনে পরে তোমার মুখ ভালোবাসার ফল্গু নদী।


আজ মাঝরাতে
তারারা যেন ধুসর – বিবর্ণ মনে হয়,
চাঁদের দিকে তাকালে
মুখ ভেংচি, উপহাস মনে হয়।


রাত যত গভীর হয় বড় একা লাগে,
সারা পৃথিবী যেন গ্রাস করে আমাকে।
আজও কি রাত জাগো আগের মতন ক’রে ?
আপেক্ষা করো আমি আসব বলে ।


পেতে চেয়েছি তোমায় শুধু আমার ক’রে,
কোথাও কি ছিল ফাঁকি? যে
কারণে তুমি চ’লে গেলে দূরে,
আমায় নিঃসঙ্গ ক’রে, অসহায় মানুষের ভিড়ে।


আসবে না কি ফিরে কোনওদিন,
প্রখর রৌদ্রতাপে, নয়তো বৃষ্টিভেজা দিন,
অথবা কনকনে ঠাণ্ডায় বা বসন্তে রঙ্গিন,
অপেক্ষা ক’রে আছি আমি, থাকবো চিরদিন।





এবং একুশ

মাহমুদ নজির






কবিতা সন্ধ্যা
মাহমুদ নজির 


তোমার তাড়া আছে জেনে
আমি ভীষণ ব্যথিত হলাম
দারুণ কষ্টে কেঁপে ওঠলো হৃদয়ভূমি।
যে আয়োজন আমি
ঘটা করে সাজিয়ে রেখেছি
তোমাকে অভিনন্দন জানাবো ভেবে
মুহূর্তে উল্টে গেলো তার হিসেব,
মেলাতে পারছিনা কিছুই।
একটি কবিতা আমি লিখে রেখেছি
পুরানো খাতায়, একটি কবিতার 
ছন্দ এঁকেছি মনে।
বুক ভেঙে যাচ্ছে, শব্দ হারিয়ে যাচ্ছে
নিজেকে লাগছে একা, বড়ই বেমানান। কিসের এতো তাড়া?
দাঁড়াও আগন্তুক স্বপ্ন বুনি,
তোমাকে অভিনন্দন জানাই ফের। 
কথা, কবিতায় উৎসব আয়োজনে
মিলন মেলা জেগে ওঠুক। 
আগামীর কবিতা সন্ধ্যায় 
তোমাকে দেখত চাই
প্রধান অতিথির রূপে!


এবং একুশ

অভিজিত



আমার কবিতা
অভিজিত




ভোরের স্বপ্ন সাত সকালে আজকে আবার দিল ফাঁকি
অনেক দিনের পরে আবার এসেছিল আগুনপাখি


আগুন ছিল মন্ত্র সে এক,প্রতিদিনের মিথ্যে বাঁচায়
শিখিয়ে গেল ভাঙ্গতে শেকল,বন্দী যখন সোনার খাঁচায়


শিখিয়ে গেল মুক্ত হাওয়ায় মেলবে কেমন ইচ্ছে ডানা
বাঁচার স্বপ্ন যেমন দেখায় জোছনা রাতে হাস্নুহানা


আমি তখন আধেক ঘুমে,হয়তো ছিলাম তন্দ্রাচ্ছন্ন
স্বপ্নে আবার আগুনপাখি এসেছিল আমার জন্য


রেখায় লেখায় ফুটিয়ে গেল নতুন দিনের চিত্রকল্প
অন্ধকারকে সরিয়ে রেখে আমার এগিয়ে চলার গল্প




এবং একুশ

জাফর পাঠান



মনোমতি
জাফর পাঠান



মনকে শুধাই
মন তুমি মনোচরিত্র নিয়ে কিছু বলো,
কোন্ সুখে তুমি
এই দেহকে ছেড়ে ধোঁয়াসার পথে চলো।


তুমিতো আমার
তবু কেন ছুটো দিগ্বিদিক অন্ধের মত,
ধরো তুমি রূপ
মরুভূমির তৃষ্ণা মিটানোর তৃষ্ণা যত।


জন্ম থেকে আজো
এক ছাতা তলে দুজনে বাস মিলেমিশে,
হতবাকে ভাবি
তবু যোজন যোজন দূরে জানিনা কিসে।


বলো তুমি মন
ফুলে বসেও কাঁটায় গাঁথো কেন মনন,
করো কেন পণ
মনাসনে বসে মনের কেন করো খনন।



এবং একুশ

পলাশ কুমার পাল



কয় না কথা ময়না
পলাশ কুমার পাল


কয় না কথা ময়না
ধরেছে বুক বায়না
মরণ কেউ দেয়না

আলো আর সয়না
জীবনও তো গায় না

মনরাখার ছলনা
চাইনি সে করুণা

কয় না কথা ময়না
মৃত্যু গো তুই আয়না





এবং একুশ

মনোজিৎকুমার দাস







নবজাতকের হাস্যেজ্জ্বল মুখ 
 মনোজিৎকুমার দাস 



ক্ষরণ ! আনন্দ- বেদনা
আহার নিদ্রায় কেটে যায়
বিন্দু বিন্দু ক্ষণ প্রতিক্ষণ;

রক্ত, ঘাম আর ক্লেদ জারিত
এক একটা পল অনুপল।

ক্ষরণ; প্রতিক্ষণে বিষাদ !
নদীর নূপুর, পাখির গান---
ফুলের হাসি, লাস্যময়ী কিশোরীর
চঞ্চল চরণযুগলের রুনুঝুনু-- 

ক্ষরণ ! অমিত বিত্ত, সুরা যৌনতার ভোগস্পৃহা
আহার-নিদ্রা, মৈথুন , রিরংসার অমিত তেজ---


অরুণোদয়ে হলুদবরণী সূর্যমুখীর
হাস্যোজ্জ্বল মুখ-----
খুন,ধর্ষণ, প্রবঞ্চনা, তঞ্চকতা, লাম্পট্যের
মূর্তিমান বঃহিপ্রকাশ সত্ত্বেও বকুলের সুবাস, সফেদ বনবেলী কিংবা রজনীগন্ধার সৌরভ !
ধুম্রজালে আচ্ছন্ন মারণাস্ত্রের বারুদপোড়া
বেদনাদীর্ণ শব্দের মাঝেও নবজাতকের হাস্যেজ্জ্বল মুখ।                                                                          




এবং একুশ

মধুমিতা সেনগুপ্ত



উপলব্ধি
মধুমিতা সেনগুপ্ত




অনেক আবেগ আসলে পরে 
কলম নড়েনা 
বহু কষ্ট জমলে তখন 
অশ্রু ঝরে না ।
খুব ভালবাসা বোবা কান্না 
ভাষা পায় না 
ঝিনুকবুকে বালির আঘাত 
সবাই মুক্তো হয়না ।



এবং একুশ

রুবি মুখার্জী



প্রত্যাশী
রুবি মুখার্জী



একমুঠো উৎসব পেতে কি পারিনা !
হলাম ই বা এক দীনহীনা...
মনের যে কুঠুরিতে নিত্য রক্ত ক্ষয় ,
সে ঘরেও দীপ জ্বালি..নক্ষত্রখচিত সন্ধ্যাবেলায়
সাজিয়ে রাখি তাকে তারায় তারায় |


ছোটবড় গলির ভাঁজে ভাঁজে,
একগুঁয়ে ভুলচুকগুলো-
রোজই নতুন সাজ সাজে !

নিত্য নতুন বিশ্বাসে..অনাস্থার রক্তচোখ যখন,
উপেক্ষার পরম আশ্বাসে-
অবহেলিত-অনস্বীকার্য-একপেশে;
নতুন এক ভুল বুঝি ঘোর করে আসে..
মনের আকাশে |

কুরে কুরে খায় যত আনাচকানাচ,
বৃথা যত সৎ উদারতা...!
সুন্দর ভাবনার ফল নিয়ে আসে কুৎসিত বারতা !

এই তব খেলা হে ঈশ্বর !...ভুলগুলি ক্ষমা করে
পারোনা কি দিতে এক উদার আকাশ --
আর আলোর পথের সন্ধান?
সে পথের প্রত্যাশী
তোমার এই অবোধ সন্তান ||













এবং একুশ

অমরেশ বিশ্বাস



শীতকাল 
অমরেশ বিশ্বাস


শীতকালেতে ইচ্ছে করে রোদ পোহাতে ভাই
আয়েশ করে গরম চায়ে চুমুক দিতে চাই।
বাক্স বন্দি লেপ, কম্বল পায় মুক্তির স্বাদ
সোয়েটার, চাদর, মাফলার, জ্যাকেট কেঊ যায় না বাদ। 
সুযোগ পেলেই আগুন জ্বেলে নিই সেঁকে দুই হাত 
শীতে দারুণ মজা লাগে খেতে গরম ভাত।
পিঠে-পুলির ধূম পড়ে যায় শীতকালটা এলে
নানান রকম শাকসব্জী এই কালেতেই মেলে। 
গরিব যারা শীতে কাঁপে পৌষ,মাঘ মাস এলে
শীতের মজা সে পায় যার গরম কাপড় মেলে।
সে ভাগ্য আর হয় না তাদের, দুই হাতে বুক ঢাকে
বলে ভগবান বিদেয় করো এবার শীতকালটাকে।




এবং একুশ

সুতীর্থ



তুলি এবং কয়েকজন ছাত্রীকে 
সুতীর্থ




হারিয়ে যাস না 
তোরা, উজ্জ্বল দীপশিখা


সঙ্গে রয়েছি 
আমরা, সবটা সময়

দুঃখ-কষ্টের 
অবসান, লেখাপড়ায়

প্রতিজ্ঞা কর 
তোরাই, আনবি জয়।

কেটে যাবে মেঘ
সূর্য নিজের আকাশে জ্বলবে

খুশি খুশি মন
সেদিন অতীতের কথা বলবেই।

সব কথকতা 
রূপকথা হয়ে সাজবে

গ্রাম্য জীবনে 
সেতারে বেহাগ বজবেই।




এবং একুশ

‪ব্রততী



‪রংমশাল‬
‪ব্রততী‬



রূপের আলোয় সাজানো বংমহল
আমার যে শুধুই রংমশাল
রূপের ছটায় পুন্জীভূত আভা
সুরভী ঢালে মনে ভরায় সভা
রূপের কাননে পুস্প হয়ে ঝরে যাওয়া 
কিছু আলগা হাওয়ার মাঝে আমাদের পাওয়া 
নগণ্য ছিলাম, অতি নগণ্য 
ঘৃণা আরশী ছিল তার প্রতিসম
রংমহলে সাঝে ঝরে যাওয়া কিছু অব্যক্ত ভংগি
শরম রাখা চোখের নেশা
লাল শেরাবের সংগী
রূপের কাননে আমার ফুলদল
গোলাপ জুঁই শেফালী মল্লিকা 
আর আঁখিজল
নিতি বিকিকিনি রূপের হাটে মোর
উন্মুক্ত প্রাঙ্গন খুলেছে দোর
প্রদীপের সজল আলোকমালা
আঁখি জলে ঝরে সে মতিমালা
প্রাণ জ্বলে দীপাধারে
উজ্জ্বল রূপ প্রশফুটিত
এই রংমহলের আঁধারে






এবং একুশ

অমরেশ বিশ্বাস



স্মৃতি
অমরেশ বিশ্বাস



বাতায়ন খুলে বসে আছি চেয়ে
আসবে কখন আল্লাদী মেয়ে
সময় যে চলে যায়
কলকল হাসি দেখে তার মুখে
নিমেষে বুকটা ভরে উঠে সুখে
ডাকি তারে কাছে আয়।


না বলে কয়ে সে গিয়েছে চলে
চোখ দুটো তাই ভরে উঠে জলে
আসবে না ফিরে আর
সে আর আসে না যে চলে যায়
তবু পথ চেয়ে বসে থাকি ঠায়
আসে যদি একবার।

হাজার তারার মাঝে কোনখানে
সে কোথায় আছে, কে জানে
লোকে বলে বৃথা খোঁজা
হয়তো পাব না তাকে খুঁজে আর
হৃদয়তে তবু শুধু হাহাকার
ভোলা নয় এত সোজা।

সব কিছু আছে আগের মতন
শুধু নেই বুকে মানিক রতন
সবই বিধাতার খেলা
রাখত মাতিয়ে করে হই চই
খেলত পুতুল মিলে সব সই
নেই আজ সেই মেলা।





এবং একুশ

শিব প্রসাদ হালদার



সমাজ প্রেম
শিব প্রসাদ হালদার


সামাজিক অবক্ষয়ের বর্ণচোরা বেঈমানেরা সর্বদাই
সুস্থ সমাজের ভয়াল শত্রু।
তাই, প্রতিনিয়ত আমি 
তোমাকে অনুসরণ করে চলেছি।
তোমার প্রবল চেষ্টায় আমি প্রচণ্ড বাধ সেধেছি।
তুমি মরিয়া, তোমার চেষ্টা-তোমার লক্ষ্য; 
সমাজের নগ্ন অবক্ষয়।
তুমি গোপনে গোপনে সমাজের
শক্ত প্রাচীরে করেছ আঘাত।
কিন্তু সে চেষ্টা ব্যর্থ! 
তুমি যদি কায়া-আমি তবে ছায়া।
তোমার ঐ চোরাগোপ্তা প্রবেশদ্বারের
অতন্দ্র প্রহরী আমি।
আমি সজাগ-আমি সচেষ্ট, 
তোমার প্রচেষ্টা-আমার প্রতিরোধ।
তোমার সাফল্য-আমার মৃত্যু।
আর আমার মৃত্যু-
সমাজে শত সহস্র নির্মম অপমৃত্যুর অনুপ্রবেশ!
তাই যতই অসাধ্য হোক-
যে কোন মূল্যেই আমি করবোই তার শেষ!!




এবং একুশ

সুপ্রভাত লাহিড়ী



জলের ধারে এক মুহূর্ত
সুপ্রভাত লাহিড়ী



গর্বিত গ্রীবা নিয়ে সারি সারি সাদা হাঁস
কেমন চলেছে ভেসে সামনের জলাশয়ে,
জলে থেকেও ভেজেনি, উচ্ছ্বলিত এ বিচরণ,
আমরা বড়ই বানভাসি, আর ভালবাসি নিজ জন।

লাঙলের রেখা তুলে জলে
চলে গেল সারিবদ্ধ হাঁস
শাসিয়ে, দাপিয়ে......।



এবং একুশ

আরশাদ উল্লাহ্‌



আজো তাকে মনে পড়ে
আরশাদ উল্লাহ্‌


সেই পূরানো ডায়েরি আমার!
এক পাহাড় বই খাতা থেকে আজ বের করেছি।
কোন রোজনামচা, কবিতা, গল্প লেখা নেই তাতে,
তবু যুগের পর যুগ আগলে রেখেছি তাকে-
পূরানো এ ষ্টীলের মর্চে ধরা ট্রাঙ্কের ভিতর।
তারুণ্যের একটি কথা আছে লেখা আছে তাতে! 
জীবনের প্রথম যে মেয়েটিকে ভালবেসেছি,
যার প্রথম পরশে তারুণ্যের মানে বুঝেছি,
তাকে খুব ভাল লেগেছিল আমার তখন
যাকে দিয়েছিলাম আমার এ প্রশান্ত মন!
ডায়েরিতে তার কথা লিখবো ভেবে প্রতিদিন
তার নামটি শুধু লিখেছি দিনের পর দিন!
তাতে আদ্যোপান্ত কতোবার যে লিখেছি তার নাম
আজো গুণে দেখিনি-
তবে হাজার তিনেক বার তো হবেই!
তাকে একটি নীল পদ্ম এনে দিয়েছিলাম,
একদিন সাঁতরে দীঘির মাঝ খান থেকে। 
ভেজা কাপড়েই গিয়ে তার হাতে দিলাম,
সেদিন তার চোখে মুখে 
উষ্ণ হাসির সেই আভা দেখে
মুহূর্তে গায়ের ভেজা কাপড় আমার মনে হল
শুঁকিয়ে গিয়েছিল অজানা কোন শিহরণে! 
আজো তাকে মনে পড়ে।




এবং একুশ

সুধাংশু চক্রবর্ত্তী



ক্ষুধার জ্বালা বিষম জ্বালা 
সুধাংশু চক্রবর্ত্তী


ছল ছল ছল চোখের দুকোণে
জল জমেছে ঢের
সোনা ছেলের মুখটি দেখেই 
মা পেয়েছেন টের।
- বল রে সোনা, দুঃখ কি তোর
চোখে যে জল জমে?
মুখ ফুটে বল চেষ্টা করি
কান্না যাতে থামে।
ছেলের গলায় বিষাদের সুর
- জানলাম মা আজ
মানুষ নয় গো, অমানুষেরাই
করে সমাজে বিরাজ।
মা হেসে কন – এমন কথা
বলছো কেমন করে?
- ঐ দ্যাখো মা অনাথ শিশুটিকে
মারছে সবাই ধরে।
খুবই অপরাধ কি করেছে সে
যদি খিদের জ্বালায় 
দোকান থেকে না বলেকয়ে 
রুটি ছিনিয়ে খায়? 
ক্ষুধার জ্বলার বিষম জ্বালা 
সহ্য করা কি যায়?
বলো তো মা অনাথ শিশুটি 
পয়সা কোথা পায়?


এবং একুশ

মিজান ভূইয়া



শীতের জামা 
মিজান ভূইয়া



নিজস্ব গতি পায় দুই চোখের
গ্রহ
কিছু স্বেচ্ছাতর্ক পিছু নেয়
কৌশলে হেসে বাতাস পার হয়
বিপদ সংকেত
হিমজলে মেতে থাকে প্রাচীন
কুয়াশা
দূরে দূরে ভোর অব্দি বাজে সঙ্গীত
দীর্ঘ ছায়া দৌড়ায় অসুখী
অন্তরে
স্নানের জলকণায় ভিজে যায় চাঁদ
গাছের ফাঁকে ফাঁকে চলে যায়
সময়
ছোট্ট দোয়েলের বুকে হাসে
পাহাড়ী জ্যোৎস্না
উড়ন্ত পাথর এসে খুঁজে নেয়
শীতের জামা।




এবং একুশ

মৌ দাশগুপ্ত



কামদুনি : বিষয় মানবাধিকার
মৌ দাশগুপ্ত


কখনো কালো কখনো সাদা,
আড়াই কদম চালে দাবার বোড়ে সেজে এমনিই হেঁটে যাই...! 
বাকি তেষট্টি খোপে অনেকগুলো মুখ ঈশারায় ডাকে …
কেউ সম্মোহক কাজল টানে চোখে
কেউ শেয়ালের মতন লোভী মুখে লালা ঝরায়,
কেউ কথাকলি মুখোশে হাসিমাখা ঠোঁট এঁকে রাখে...।
প্রেম শব্দটাকে টুঁটি টিপে আদর করে ড্রাকুলার মতো,
কেউ আবার নিজের যৌন-ইচ্ছাকে উৎসব ভেবে ভেসে যায় সর্পিল পথে।
কেউবা ছুঁড়ে দেওয়া রুটির টুকরোকে স্বাধীনতা ভেবে কাড়াকাড়ি করে, 
মাংসের লাল টুকরোকে বসন্তের পলাশ ভেবে কলমে শান দেয় কেউ।
ঠিক তখনই
ধর্ষক আর ধর্ষিতার মধ্যে কার পাল্লাভারী করবে অন্ধ কানুন,
ভাবতে ভাবতে 
মানবাধিকার নামক ডিমে তা দিতে থাকি আমি ও আমার সমাজ।





এবং একুশ

নির্মাল্য কুমার মুখার্জী




কবে তুই কর্পোরেট হবি 
নির্মাল্য কুমার মুখার্জী


কবে তুই 
লুঙ্গি কেটে রুমাল বানাবি -অমিতাভ্‌ 
কবে তোর জিন্স ফাটবে
পেছন ফাটবে চোদ্দ পুরুষের 
কবে গেয়ে উঠবি মহানন্দে রোদ্দুর রায়ের গান 
চুমুতে চুমুতে বান্ধবী পাল্টাবি- অভিমন্যু 
কবে তুই কানে দুল নিবি
বকুলবিছানো পথে কবে তুই নাচবি -উদ্দালক নাচ 
ফোর লেন হাইওয়ে - কবে কবে পোস্টার হবি তুই
কবে তুই ডিনার করবি- শায়ক 
প্রভিডেন্ট ফাণ্ড 
কবে তুই কবিতা লড়বি 
মরিচ তুলবি ঝাঁপি ঝাঁপি - অরুনাভ 
কবে হবি অরণ্য সাঁওতাল 
পার্ক স্ট্রীট , কামদুনি 
কবে তুই করবি দেখভাল - অয়স্কান্ত 
ট্রিগার হবি- হ্যাপি হবি 
উৎস হয়ে যাবি ক্ষমতার 
কবে তুই ধর্ম হবি জিরাফ হবি- একলব্য 
তোর পিছু পিছু কবে ছুটবে 
বগল কাটা সোনালি জাগুয়ার -সায়ন্তন 
আমার এই শীতকালে 
চেপে ধরা আরথারাইটীস
কবে তুই সারাবি মারীচ- অনিকেত 
হোমিওপ্যাথির ধৈর্য নিয়ে
কবে তুই রঞ্জন হবি -- যাজ্ঞসেনী
তোর জন্য বসে আছে 
ঐ দ্যাখ চম্পা চামেলি - অগ্নিমিত্র 
বসে ছিল রাধিকারমণ
বেণু হাতে চরাইত ধেনু- ক্ষপণক 
তাই নিয়ে কতনা বাওয়াল
বসে ছিল ঘ্যাম কেলো - নীলকণ্ঠ 
ঐ দ্যাখ আটটা বাইশ 
ঐ দ্যাখ সাপ লুডো সিঁড়ি
কবে তুই উঠে যাবি
খুলে দিবি স্বর্গের উঠোন 
কবে তুই
কর্পোরেট হবি -- অমিতাভ্‌ ।


এবং একুশ

‪আচার্য মিলন‬



স্বাধীনতা...
‪আচার্য মিলন‬



তুমি কি জানো?
তোমায় আমি ভালোবাসি।
প্রবল ভালোবাসি।


আমার জন্য কি তুমি খুলবে নেকাব
তোমার বক্ষ বসন
নাভির নিচের আবরণ

আমি তোমায় দেখতে চাই
প্রবলরকম আকুলতায় দেখতে চাই
তোমার সৌন্দর্য
তোমার কমনীয়তা
তোমার অপরূপ যৌবন

জানি না,
গোটা বসন্তজুড়ে যে তোমার করেছি আরাধনা
সে তুমিই কি না

তুমি খুলে দাও নেকাব
সরাও বক্ষ বসন
নাভির নিচের আবরণ

প্রমাণ দাও, তুমি সত্যিই আমার স্বাধীনতা





এবং একুশ

আরশাদ উল্লাহ্‌



শেষ দেখা
আরশাদ উল্লাহ্‌


শেষ দেখার পর - নতুন বছরে পদার্পণ,
বিদায়ের পর নির্ঘুম রাত্রি প্রাণে বড় ক্লান্তি
অশান্ত মনে একাকি বসে ভাবি শুধু তোমাকে,
অন্তরে বিরহের অনল! 
তুমি যে সত্যি চলে যাবে, আসবে না ফিরে আর-
কক্ষনো এমনটি ভাবিনি, এতো অভিমান তোমার?
যেন হিমশীতল হিমাদ্রির মতো অন্তর! 
তাও জানার সময়টুকু দিলে না
কিছু বলার ছিল - বলার সুযোগ তো দিলে না।
কিছু দন্ধ ছিল জানি মনে - ছিল ভুল বুঝাবুঝি,
এমনতো কিছু থাকবেই, এ সব বুঝে নিতে হয়! 
ভালবাসারও প্রাণ আছে যদি তাতে সুরভি থাকে,
থাকে কবিতা - থাকে সুর আর কিছু গান, 
সে কথাটি বুঝার আগেই তোমার প্রস্থান।


কক্ষনো এমন ভাবিনি, বুঝিনি তুমি চলে যাবে,
গানের সুরের সেই মায়াবী টানে প্রেমিকেরা জানে
জেগে উঠেন খোদ প্রেমেশ্বর - হৃদয়ের কম্পন 
সে কথাই বলে। 
পৃথিবী ঘুর্নায়মান, 
আমিও পথিক একজন গৃহহীন,
দেখা হবেই তোমার আমার কোন এক শহরে
একদিন!

এবং একুশ