শুক্রবার, ১ জুলাই, ২০১৬

সম্পাদকীয়






সম্পাদকীয়




প্রকাশিত হলো 'এবং একুশ' জুলাই, ২০১৬ সংখ্যা। এই সংখ্যার নির্বাচিত কবিরা হলেন -


পর্ণা সেনগুপ্ত
কাশীনাথ গুঁই
সুনিতী দেবনাথ
আরশাদ উল্লাহ্‌
রেজা রহমান
সুপ্রভাত লাহিড়ী
তাপসকিরণ রায়
পলাশ কুমার পাল
রমি গুপ্ত
সুরজিৎ চক্রবর্তী
সুমিত নাগ
গোপেশ দে
আলো বসু
সঙ্গীতা দাশগুপ্ত রায়
দীপ রায়
দীপঙ্কর বেরা
জাফর পাঠান
ইপ্সিতা মন্ডল
সিয়ামুল হায়াত সৈকত
সোমাদ্রি সাহা
শীলা বিশ্বাস








































































এবং একুশ

পর্ণা সেনগুপ্ত




যাত্রা

পর্ণা সেনগুপ্ত






খামখেয়ালীর বুনোন - এ
ধরা দেয় কিছু
হিসাব -নিকাশ এর গল্প,
কিছুটা হারিয়ে যাওয়া
কিছুটা কুড়িয়ে পাওয়া,
আর থাকে
কিছু অমলিন ক্লান্তি
অপার স্নেহধারায়
স্নাত,
স্বপ্নে রঙ্গিন কোনো একলা পাখি
পাড়ি দেয় নাম না জানা
কোনো এক দেশে,
কোনো ভুল ছদ্মনামে,
বিবাগী হয়ে।











এবং একুশ

কাশীনাথ গুঁই




ফতুর
কাশীনাথ গুঁই


রোজ বিকেলবেলা,
কালো মেঘের আনাগোনা।
বৃষ্টিবিহীন একঝলক
ফতুর হওয়া হাওয়া।
যেন নির্ঘুম রাতের
এলোমেলো পা ফেলা।
অসহায় নির্বিকার মুখে
শুধুই পালিয়ে যাওয়া।













এবং একুশ

সুনীতি দেবনাথ






প্রজন্ম
সুনীতি দেবনাথ



ইউক্যালিপটাসের সরু দীঘল পাতা পিছলে
সকালের চৈতী রোদ্দুর ছলকে ঝাঁপিয়ে পড়লো
টংঘরের দুয়ারে চিত্রার্পিত ধনবতী রিয়াংএর পেটে।
চার চারটে সুদীর্ঘ দিন রাত নৌকো বেয়ে পার হলো
ফেরেনি মরদ চাল নিয়ে উপরের লুসাই বস্তি থেকে,
পেটে জ্বলছে ধনবতীর জুমের আগুন ধিকিধিকি
সারাদিন সারারাত দমকে দমকে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে,
আরেক বিপন্ন নবীন অস্তিত্ব হাত পায়ের সঞ্চালনে
ঘোষণা করেই চলেছে বেরোতে চাই আলোকে,
মোচড়ে মোচড়ে কঁকিয়ে উঠছে নারী বিস্ফারিত চোখ।
তারপর সূর্য যখন প্রখর উত্তপ্ত মাথার উপর —
আদিম জননীর মত ধনবতী রক্তস্রোতে ভাসিয়ে
রক্তাক্ত আবহে একটি শিশু উপহার দিলো
আগামী পৃথিবীর প্রবাহিত জনতার স্রোতে,
কান্নার উতরোলে সে তার আবির্ভাব ঘোষণা করলো,
তার কান্নার চমকে তপ্ত চৈতালি সূর্য উঁকি দিল —
সামনের রক্তিম পলাশ উঁকি দিল., প্রসবের রক্তিম
স্রোতে নিস্পন্দ নিস্প্রাণ জননীর পাশে দেখা গেল
আগামীর রক্তাক্ত ইতিহাস জেহাদে ক্রন্দনে আকুল,
বিষাদে মুখ ফেরালো সূর্য ঝরলো পলাশ গুচ্ছ ।




































এবং একুশ

আরশাদ উল্লাহ্‌






ফুটপাতে
আরশাদ উল্লাহ্‌


মৃত মায়ের লাশের পাশে
কাঁদছে শিশু গ্রীষ্মের রাতে,
রাজধানীর এ রাস্তার পাশে
মাগো তুমি মরলে কেনো?


গ্রাম ছেড়ে মা আমায় নিয়ে
আসলে কেনো - নগর মাঝে
খাবার কিছু মিলবে বলে
মিথ্যে আশ্বাস কেন দিলে?
মাথা গুঁজার - স্থান হলনা
ফুটপাত হল নতুন ঠিকানা!
এতো দালান কোঠার মাঝে
হাত পেতেছো সকাল সাঁঝে,
মরলে মা গো - ডেঙ্গু জ্বরে
যাওনি কেনো ডাক্তার ঘরে?

রাস্তায় মরে - পড়ে আছো
আমার কথা কিছু ভেবেছো?
কোথায় কাঁথা কোথায় বালিশ
কোথায় গিয়ে করবো নালিশ?

অট্রালিকা - আকাশ ছুঁয়া
তাতে যারা থাকছে এখন
তাদের কাছে বৃথা যাওয়া
তারা যে মা বড় মহাজন!

রাস্তার উপর মরে আছো
খাবার পাওনি আরামবাগে,
মহানগরীর খাবার কি তা
জানলে নাকো মৃত্যুর আগে।
আমায় নিয়ে - বাঁচতে এলে
আকাশ তলে - রাত কাটালে,
কাজ পেলেনা স্থান পেলেনা
দালান বাড়ির গেট খোলেনা!
প্রাণহীন সব মানুষ যেনো!
মাগো তুমি মরলে কেন?











এবং একুশ

রেজা রহমান




একজন
রেজা রহমান


যতই আসুক ফিরে সেই একই অপরাহ্ন-সন্ধ্যা সন্ধিক্ষণ
কোথায় সে ছায়াপথ আদিগন্ত দিব্য শাল মহুয়ার বন
সেই পথও বাঁক নেয় তোমার সিঁথির মত সরল যে ছিল
জলের কিনার ঘেঁষে পথের কিনারটুকু এবং মিছিলও
দিব্য সেই বাঁক বুঝি বেলাশেষে মুখোমুখি দাঁড়ায় নদীর
জনপদে ভিড়গুলো শোকসভা কমেনি অসুখ পৃথিবীর
যদি শিখে থাকি এই এতটুকু গণনার প্রকৃত নিয়ম
পৃথিবীর জনসংখ্যা আজ তবে এমনকি দুজনেরও কম











এবং একুশ

সুপ্রভাত লাহিড়ী




ছড়ায় স্নিগ্ধ হাসি

সুপ্রভাত লাহিড়ী




পথশিশুদের হাসি ছড়ায় স্নিগ্ধ হাসি
কারণ, আমরা দিলে তবেই ওদের পাওয়া
ব্যতিরেকে আবার দু-হাত পেতে চাওয়া....
না রেখেই কোনও প্রত্যাশা।


লালবাতির শাসনে
গাড়ির গতি স্তব্ধ,
বন্ধ কাঁচের ওপাশে
কচি একটা হাত
লেগে গেলো ঝাড়পোঁছে।
আমি নামিয়ে দিলাম কাঁচ
ও হতবাক, বিব্রত, হতাশ
বাধা পেয়েছে, পাবেনা কিছুই এখানে।

আমি মৃদু হেসে বাড়িয়ে দিলাম
একটা দশ টাকার নোট,
চকিতে কেঁপে উঠে ওর ঠোঁট
তারপর সেই হাসি, স্নিগ্ধ তৃপ্তির।

আমরা দিলে তবেই ওদের পাওয়া,
না হলে আবার দু-হাত পেতে চাওয়া
না রেখেই কোনও প্রত্যাশা!







এবং একুশ

তাপসকিরণ রায়



আগুন ফুলকি

তাপসকিরণ রায়





পলাশ কানে দুলিয়েছ


তুমি একলাটি যেমন ছিলে


লাল টুকটুকে বেনারসি দাউ দাউ জ্বলে উঠছে


এবং ধোঁয়ায় ব্যাপ্ত একটা দিন






আগুনের ফুলকি দানায় উৎফুল্ল ভেঙে পড়ছে


ঝলসে যাচ্ছে রং ফুল কথা


তাকাতে তাকাতে দৃষ্টি বিভ্রম


ভেষজ শরীরে তোমার লাঞ্ছিত দাগ ঢেকে যাচ্ছে










নির্লিপ্ত কুঠুরিতে হা হা হাসতে গিয়ে


মোলায়েম কথাগুলির কাব্য


অলংকরণ থেকে নগ্নতায় ফুরিয়ে যাচ্ছ তুমি


আলো থেকে অন্ধকার অনেক অনুশীলন প্রবণ।

শারীরিক ক্ষমা ভিক্ষাগুলি সময়ের আশ্রয়।









এবং একুশ

পলাশ কুমার পাল




চোখের গণ্ডীতে

পলাশ কুমার পাল




চোখ দিয়ে কাটা গণ্ডীর

ওপারে বিপদ

এপারে অবিশ্বাস।

পালাবার পথে শাড়ি বেছানো

ক্লান্ত জীবন আশ্বাস।




রাবণের দশমুখ দশদিকে হাসে

রক্তে সরবত্‍ ভয়;

দ্রবণের নামে

আতিথেয়তা প্রতি পাল্স খুন করে যায়...




বেঁচে থাকা তবু

কুটুমবাড়িতে রান্নাশাল সুগন্ধী জয়,

বদলানো পোশাকে রূপসজ্জা

পোশাকও একদিন ছিঁড়ে যায়-




চোখ দিয়ে গণ্ডী কাটা

দণ্ডীকাটা কোনো উপবাস,

মানদ হয়ে গেলে ভক্তিও ঘরছাড়া।

বলির পরে পাঁঠাই আস্বাদ।




তারপর বলিকাঠ

শূন্য থেকে শূন্যতায় চামড়াতে গুটি বসায়,

বসন্ত নেই তবু বসন্ত

জীবন এতই অসহায়?




এবং একুশ

রমি গুপ্ত



বাঁচা

রমি গুপ্ত





বেঁচে থাকা , সে তো হক !

নিজের বাঁচা --

সে তো নিজেকেই বাঁচতে হয়--

কিন্তু শুধু নিজে বাঁচা --

সে কি হয় ?








এবং একুশ

সুরজিৎ চক্রবর্ত্তী






কেমন আছ তুমি

সুরজিৎ চক্রবর্ত্তী



বাকি কথা যেটুকু ছিল

আজীবনের সঞ্চয়

হাটাহাটি

বয়ে চলা

অনন্ত চুম্বনের স্রোতে

ভেসে নির্বাক হয়

তোমার সামনে

রুপকথা।


কেমন আছ তুমি

আজকাল দিন প্রতিদিন

কি বদলে যাচ্ছো

বহমানতায়? তোমার হাসিতে

কি এখনও মাথা দোলায়

ইউক্যালিপটাস? চিরুনির শাসন

উপেক্ষা করে কপালের উপর

নেমে আসা সেই

অবাধ্য চুলের গোছা ....


কেমন আছো তুমি??




এবং একুশ

সুমিত নাগ





আদম
সুমিত নাগ



গভীর রাত
ঘুম থেকে জেগে উঠল ভামবেড়াল।
দুর্গন্ধ গা।
পেরিয়ে এলো বুদবুদ ওঠা নর্দমা,
টিনের চাল পেরিয়ে
মুখ তুলে তাকাল ওপরে।
ল্যাম্পপোস্টের তারে চাঁদ আটকে আছে,
হিম জমছে, ছেঁড়া প্লাস্টিক উড়ছে;
জ্যোৎস্নায় চকচক করছে মেঘ,
স্লেট পাথরের আকাশ
ঝকঝক করছে তার চোখ, তারা-
মণিতে মিলনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা
এবং
নিষিদ্ধ এই মিলন
অতিপ্রাকৃত আনন্দে ভাগ নেই তার
তুমি স্বর্গ থেকে নির্বাসিত
তোমার নাম দিলাম আদম
এই অলৌকিক রাতে তুমিই একমাত্র পার্থিব
আমি তোমার দুঃখ বুঝি।





অর্ঘ্য


ঘরের রঙ নীল পেরিয়ে যাই দুই পাড়
ঘরের নাম রাত, দেখছি যাযা না দেখার।

যুদ্ধে বড় বেশি ক্লান্ত; শরীরের ক্ষুধা
মেটাতে পারল না বিজিত জমি, নারী, সুধা।

শেষের শুরু তাই যেমন নেই, নেই তার
জানা তরবারি রক্ত ঝরিয়েছে কার।

কেবল জানা গেল এভাবে জ্বলেছে আগুন
আপনাআপনি বা আবেল হয়েছিল খুন

কেনের হাতে যবে, আজকে নয় শুরুয়াৎ;
গান্ধী, হিটলার, ভারত-পাক সংঘাত

টুইন টাওয়ার ঘোষিত মার্কিন নীতি
লাদেন, সন্ত্রাস উর্দিবাহী সম্প্রীতি

নির্দ্বিধায় ঝেড়ে সহজে ফেলে দিতে পারি
এমন যুক্তিতে- আমরা পোড়াইনি বাড়ী

বা লাশ কারো আগে সেদিন বহু আগে গত;
মেলাতে সব তাই হয়েছি নিয়ত প্রণত

সে আদি ও মহান হত্যাকারীটিরই পায়ে;
কাগজে দেখলাম নেতাকে নামাবলী গায়ে।












এবং একুশ

গোপেশ দে



ছেলেটা খুব ভুল বুঝেছে

গোপেশ দে



ছেলেটা খুব ভুল বুঝেছে

পাহাড় ভাঙছে একলা হাতে

সবুজ নরম মনের ভেতর বারুদ পোড়া ছাই

সূর্য হাতে খাচ্ছে বসে আগুনপোড়া চাঁদ

স্বপ্নমাঝে দেখে তাকে

হাসছে শিউলিফুলের মত

ঐ মেয়েটি ঐ মেয়েটি

দেয়ালে তার পিঠ ঠেকেছে

হাতখানা তার রক্ত জমাট

দেয়ালখানা ঘুষির বাহন

বুকের পাজর দুখের সলতেখানি

ব্যালকনিতে দাঁড়ায় যখন

মধ্যরাতে গ্রীলটা ঠেসে

পরিষ্কার ঐ রাতের আকাশ

ছুটছে তারা সপ্তর্ষিরা

চাঁদের হাসি ভেঙেছে বাঁধ

তবু বুকে জমাট ক্ষত

চাঁদটা বুঝি ডুবেই গেল

একলা হয়ে থাকাটা বেশ

মাঠের পড়ে তালগাছটা ও

বড্ড একা বড্ড একা

ছেলেটা খুব ভুল বুঝেছে

পাহাড় ভাঙছে একলা হাতে




এবং একুশ

আলো বসু





বৃষ্টির রূপরেখা

আলো বসু






ক্যালেন্ডার পাতা নাড়িয়ে ডেকেছে অনেক আগেই

এখন তো আকাশটাই দখলে
গুরু গুরু মাদল সঙ্গতে বর্ষণমন্দ্রিত দিন

ঝমঝম দিনরাত বাজাচ্ছে রাতদিন

যেভাবে যে বাজে
অপরূপ মুদ্রায় নৃত্যের তালে তালে

দূর থেকে কাছে আসে বৃষ্টি

আকাশের বুকে চুম্বন এঁকে দেওয়া

হাইরাইজের ব্যালকনি থেকে দেখেছি

সায়ন্তনের ভিজে ক্যানভাসে

শ্রাবণী মেঘেদের আড্ডাখানায় বর্ষা উৎসব

মেঘের কানায় কানায় কারুকাজ

বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় রঙ বদল

কেউ কেউ জানে

টিনের চালায় মেঘ ভেঙে পড়ে

ক্যানেস্তরা পিটিয়ে জলদ্গম্ভীর স্বরে রাত বাজে

রাত বেজে যায়

ভাঙা টালির ঘুমের ঘরে রাতের আসরে

ছোট বড় আধারে টুংটাং জলতরঙ্গ

কেউ কেউ জানে না

আমি জানি কত কারুবাসনার চারুকলারূপ

জলে ভেসে গেছে কত বর্ষায়

ভেবেছি ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গেছে

আর ফিরে দেখবে না কোন কালে কোন বর্ষণ

জলগর্ভজাত জলজ জীবন

জলের আর এক নাম নিয়ে বারবার কিশলয়

প্রাণ বাড়িয়ে দেয় প্রাণে

বৃষ্টির এক একটি অক্ষর

আমাদের নিস্তরঙ্গ বুকে টুকরো পাথর

তরঙ্গে তরঙ্গে অতল জলের আহ্বান

স্মরণবিলাসীর গোপন তোরঙ্গ অভিসার

রিমঝিম আবহে ফ্ল্যাশব্যাক

আমাদের মন্দ ভালো জলছবি ফোঁটায় ফোঁটায় লিখে

আবার লিখবে বলে

মুছে দিয়ে চলে যায় বর্ষার দিন

এদিকে নশ্বরতা আমাকে তুমুল বাজিয়ে চলে

ব্যথা বেজে যায় রিনরিন ৷











এবং একুশ

সঙ্গীতা দাশগুপ্ত রায়






পরকীয়া

সঙ্গীতা দাশগুপ্ত রায়



তুই চাঁদের ঘরে থাকিস
পেঁজা মেঘেতে মুখ ঢাকিস
সুযোগ একটু আধটু চাখিস...
তাতেই নেশার ঘরে বেশ


আমি হাঁটছি এক পা-দু পা,
সব রুস্তমই তো ছুপা
জেনে হাসিমুখে লুকোই
ছেঁড়া আঁচলে সব ক্লেশ


যেদিন তোর দোরে বৈশাখী-
ঝড়ে আছড়ে পড়বে পাখে
তুই মেলবি অলস আঁখি,
হাত ছোঁয়াবি তার ঠোঁটে


সে ঠোঁট তেষ্টা মেখে ফাটা
চাঁদের খিড়কি দুয়ার আঁটা
অতঃ প্রেম যমুনায় ভাঁটা-
তবু জাগন জোয়ার ওঠে


কোথায় শান্তি দু এক কুচি
খুঁজে ঠুকছি মাথা, বুঝি
তুইও ঘরকুনো অবুঝই,
তবু সামলাতে চাস টুক্


বঁধু তোকেই চিনে নিতে
ঘুরে মরছি অতর্কিতে
ফিরে আদর পেয়ালায়
দিচ্ছি বিষাক্ত চুমুক‌ ...













এবং একুশ

দীপ রায়




আহার সিরিজ


দীপ রায়






(১)

তৃষ্ণা


ঘিরে আছে কাকস্নান

গায়ে মেঘ লুটোপুটি I

জল দাও I গলা ভেজাই I

জ্যোস্না পাউরুটি I


(২)

কৃত্তিম


ধোঁয়াওঠা ক্যাসেরল

লা-পোলার এঁটো মুখ I

গাল ছোঁও কাঁটা-চামচ

আঙুলের অসুখ I


(৩)

উত্তাপ


নিভু আলো গ্যাসওভেন I

মৃদু ফাটল I ফিসফিস I

ঠোঁট জুড়ে বিভ্রম I

দাঁত ঢাকো কাপডিস্ I


(৪)

দিনান্তে


নিঃশ্বাসে কলহ I

ভাতে-ভাত I অজুহাত I

কব্জির কালঘাম I

বেঁচে থাক ঢিমে আঁচ I













এবং একুশ

দীপঙ্কর বেরা





অন্য মাত্রায়

দীপঙ্কর বেরা







অপ্রাপ্তির দায় নেয় না


আকাশ জল মাটি বাতাস,


ভেতরে যে হৃদয়ী ভাঙচুর


সৃষ্টি করা বঞ্চিত উপখ্যান


তাতেই চলে প্রাপ্তির টানাপোড়েন।


দুদণ্ড গাছ হয়ে ভাবা মাটি কথা


ফুঁ দিয়ে বাতাস ছিনিমিনি


জল গভীরে নষ্ট হাবুডুবু


বৃথা সরলের গরল কথা


গল্প রাত্রির ঘুম পাড়ানি গান।


কিছু অকবিতাই হোক না


রক্ত থামিয়ে প্রেম


অবুঝ দুজন অনতি কথোপকথন।


আর কি


সবটাই তোমার আমার


স্বভূমি সংলাপ।











এবং একুশ

জাফর পাঠান





দুখানন্দ


জাফর পাঠান







দুখের সাথে চলতে চলতে কথা বলতে বলতে


সময়ও আমায় সময় দেয়নি- দুঃখকে ভুলতে।






এক ঝলক পলকের উল্কাপিন্ড- দূর গগনের


ঋষি-মুনি আমি দুখানন্দ খোঁজা গভীর মগনের।






সেই কবে আমাকে নাকি সুখ এনে দিবে কেবা কারা


তুলে পাল-ধরে হাল, তবুও হইনা আমি দিশেহারা।






দুখের সাগরে ঘূর্ণি তুলে- ঘূর্ণন থেকে চাখি সুখ


আমি এখন দুখি নই, সুখ পাওয়ার নাই ভুখ।






উষা থেকে গোধূলি, গোধূলি থেকে মধ্য রাত


হারিয়ে যাক সব বছর- শূন্য হয়ে যাক বরাত।






কোন কিছুকে ভয় পাইনা আর- চাইনা সুখানন্দ


দুখের সাথে ভাব জমিয়েই- খুঁজে নেই দুখানন্দ।



























এবং একুশ

ঈপ্সিতা মন্ডল




মাটির টানে

ঈপ্সিতা মন্ডল




বাদল ঝরা দিনের শেষে মেঘবালিকা এসে,

বললে আমার কানে কানে, বললে আমায় হেসে,

`আসো যদি আমার সাথে ওই পাহাড়ের চূড়ায়,

তোমায় নিয়ে উধাও হব পাগল মেঘের ভেলায়;

রামধনুকের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে শেষে,

হাজির হব আমরা দু'জন ইন্দ্রদেবের দেশে;

শোক-দুঃখ-আঘাত-ব্যথা নেই তো সেথায় কিছু,

সারাটা দিন কাটিয়ে দেব মেঘের পিছু পিছু !

সূর্যদেবের রথে চড়ে ঘুরব সারা আকাশ;

কিংবা নেব মনের সুখে পারিজাতের সুবাস ।

তোমার তরে নদির তীরে রইব অপেক্ষায়, –

পক্ষীরাজে উডিয়ে নেব একটি লহমায় !'

মেঘবালিকার কথা শুনে সইল না আর তর, –

রাঙামাটির পথটি বেয়ে চললেম নদী-চর । ।।




গোধূলিবেলার আকাশ তখন খেলছে রাঙা সিঁদুর; –

এমন সময় শুনতে পেলেম করুণ বাঁশির সুর !

সে যে আমার রাখাল ছেলে – ডাক দিয়েছে আমায় , –

তারে ছেড়ে যাচ্ছি আমি কোন সে সুখের আশায় ?

সেই তো আমার ইন্দ্রধনু , সেই তো আমার পারিজাত,

তারই স্পর্শে ভুলব সকল শোক-দুঃখ-আঘাত;

তার মধুর হাসি ভাসাবে মোর জগৎ-পারাবার,

তার বাঁশির সুরে দেব পাড়ি তিন-ভুবনের-পার !

ছুটব দু'জন হাওয়ার সাথে তেপান্তরের মাঠে;

সাঁঝের বেলা কাটবে মোদের কাজ্‌লাদিঘির ঘাটে; –

কাজ্‌লাদিঘির কালো জলে দেবে তখন ধরা,

স্বর্গলোকে আছে যত চন্দ্র-গ্রহ-তারা ! ।।
















এবং একুশ

সিয়ামুল হায়াত সৈকত






ছায়াধূপ


সিয়ামুল হায়াত সৈকত






*


এলেই শুনি বুকের শহরে,


নিভৃতে তুমি সমুদ্র হও সমুদ্র জুড়ে


ছায়াগুলো কেমন বুকপকেটে রাখি-


সকালের মতো কয়েকটা শহর জুড়ে।


*


রাত্রিগুলো কাটিয়ে ফেলি চুপচাপ


সকাল হলেই ছায়া জমে খুব খুব


প্রিয়, ভালোবাসি আজন্ম, তোমায় ছুঁয়ে বাঁচি!


মেঘ বলে উড়ে যাওয়া আপাতত ভুলে যাও


তোমার ছায়াগুলোতে আমার বাড়ি!


*


ঢেউ এলো বুঝি?ছায়া দিয়ে রেখো,


ঘুম পেলেই ঘুমিয়ে যাব ঠোঁটের আস্ফালনে


খুব যত্নে তোমায় নিয়েই বাঁচি, আমি..





এবং একুশ

সোমাদ্রি সাহা



চাবিগুলো কে নিতে চাও

সোমাদ্রি সাহা





হৃদগোপনে লুকিয়েছি ভালবাসার অনন্ত সুখ

চাবিগুলো সব মুক্তির জেনেও গুছিয়েছি অসুখ

তোমায় দেব কোনও জন্ম শেষে।

অমর্ত্য চাবিতেই মুক্তির স্বাধীনতা প্রণাম প্রাপ্ত

কিসের জন্য এতো সম্পত্তি গোছাছো অপর্যাপ্ত

একটু ডাকো আমায় ভালবেসে।

অনেক কাজ রয়েছে তাই অপেক্ষা করছি জীবন

সুযোগ্য তৃতীয় বিশ্বের চাবিওয়ালা, তুলবো প্লাবন

বাঁচতে চাই সৃজনশীলতা প্রকাশে।

.

এই চাবিতে তুমিও খুলতে পারো মনের বন্ধ চোখ

এই পৃথিবী চেতনার-স্বাধীন-শ্রমজীবী-কৃষকের হোক।









এবং একুশ

শীলা বিশ্বাস








পৌনপুনিকতা
শীলা বিশ্বাস



আকাশ- বাতাস- নক্ষত্রকে এখনও ভাগ করতে পারিনি
পারলে কবেই বিভাজনরেখা টেনে দিয়ে বোলতাম
এটা এলিট আকাশ ,ওটা স্লাম আকাশ
এটা ধনী বাতাস, ওটা দরিদ্র বাতাস
এই সূর্যকিরন মহাজনদের, ওই কিরণ কৃষকের

পঞ্চপাণ্ডব ভাগ করেছিল দ্রৌপদীকে
আমরা ভাই- বোনেরা মাকে ভাগ করেছি
জাতির মহান নায়করা দেশ
অর্থে ক্ষমতায় ভাষায় আর ধর্মে
ভাগ হয় মানুষ সাদা কালো দুরঙে

ভাগাভাগি অঙ্ক কোনোদিন মেলেনি
একই ঐতিহাসিক ভগ্নাবশেষ
পৌনপুনিকতা চলতে থাকে
যীশু বুদ্ধ চৈতন্যের পৃথিবীতে
কালভেদে প্রস্ফুটিত হয় ক্লেদজ কুসুম ।















এবং একুশ