রবিবার, ১ মার্চ, ২০১৫

সম্পাদকীয়

প্রকাশিত হল "এবং একুশ" -প্রথম বর্ষ, দ্বিতীয় সংখ্যা। থাকছে ২১ টি কবিতা।
লিখছেন :

স্বপন দেব
মমতা দাস (ভট্টাচার্য)
ইন্দ্রনীল ভাদুড়ী
অমৃত অধিকারী
দর্শনা বোস
শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
অনুপম দাশশর্মা
জয়া চৌধুরী
তন্ময় গুপ্ত
সংযুক্তা মজুমদার
পারমিতা চ্যাটার্জী
আবদুল্লাহ আনসারী
দ্বীপ সরকার
সন্দীপ দাশ
রেজা রহমান
নির্মাল্য বিশ্বাস
পিয়ালী বসু
স্বাতী বসু পাল
শাহেদ সেলিম
সুচেতা মন্ডল
বলাকা দত্ত 



আপনাদের নিরন্তর সাহচর্যে সম্পৃক্ত।

শুভেচ্ছান্তে

'এবং একুশ'-এর পক্ষে
সুস্মিতা বসু সিং 







স্বপন দেব





নির্বাসন
স্বপন দেব




কাল আমি নির্বাসনে যাবো 
চলে যাবো স্তব্ধতার গর্ভজলে 
যেখানে কবিতারা খেলা করে । 
রাত্রি হলে হেঁটে হেঁটে বনপ্রান্তে 
গিয়ে শরীর এলিয়ে দেব প্রত্যাশায়
কখন অরণ্য নুয়ে দুই ঠোঁটে 
দীর্ঘ চুমু দেবে ভালোবেসে । 
আবার নতুন ভোরে উঠে 
হাঁটা দেব যেখানে পাহাড়েরা 
আকাশের কাছ ঘেঁষে বসে 
ছায়ার মতন । 
এখানে জলের শব্দ, শালবনে অদৃশ্য প্রপাত 
অরণ্যে বৃষ্টি এলে গাছেদের
ঘুমভাঙ্গা গান । 
দুশো বছরের জীর্ণ মহুয়া গাছের তলায়
পাতা ছাওয়া ঘর বেঁধে আমি এখানেই
থেকে যাবো।
চুম্বনের তীর থেকে ফিরে আসা ঠোঁটের মত
আমি এই ক্লান্ত উপত্যকার জানুতে মাথা
রেখে শোব
কাল আমি নির্বাসনে যাবো !




এবং একুশ

মমতা দাস (ভট্টাচার্য)

এবং একুশ 
মমতা দাস (ভট্টাচার্য)  


আজকের পৃথিবীতে সব-ই বদলে বদলে যায় 
একুশ-ও কখন যেন চৌকাঠ পার হয়ে সামনে দাঁড়ায় ! 
এবং একুশ আজ হয়তো আঠাশ 
সমূহ চিন্তায় থাকে আজ বারোমাস। 
উড়িয়ে বসন্ত দিন যে ছিল রঙ্গীন 
যৌবন গত তার , নয় সে নবীন। 
যে তরুণী যৌবন মেলেছিল একুশের বিষে 
হয় তো স্বপ্ন কাঁদে আঁখি জলে মিশে
কেঁদেছে, কাঁদায় তারে আজো বার বার
কিছু আর নেই তার দেবার-নেবার ! 
প্রেম অপ্রেম হলো পেরিয়ে একুশ 
আগুন জ্বলেছে বুকে, ধিকি ধিকি তুষ ! 
যে শিশু শুনেছে কথা ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী
একুশে এসে জেনো ছাড়বে না জমি। 
বনভোজনের ছায়া ছিল যে একুশে 
বদলানো সংসারে ভরে যায় বিষে
পদ্য লিখেছে যে একুশে সবাক 
মধ্য বয়সে আজ নীরব, নির্বাক ! 
একুশ থাকে না বসে একুশের ঘরে 
তরতাজা মন যায় ধীরে ধীরে মরে। 
'অমর একুশে' দিল বাংলার জয়

আজ জেনো বুকে তার মৃত্যুর ভয় !


এবং একুশ

ইন্দ্রনীল ভাদুড়ী

বিষাক্ত ভাবনা 
ইন্দ্রনীল ভাদুড়ী 




কিছু মুহূর্তের ভিড়ে তোমার মুখটা অকস্মাৎ মনে পড়ে
নিকষ কালো আঁধারে হৃদয়ের অন্দরে 
তোমার নরম বুকের ছোঁওয়া লেগে 
মানসিক উত্তেজনার সঞ্চারে ।। 
ভ্রান্ত দিক, আঁকাবাঁকা সর্পিল পথ ছেড়ে 
ইচ্ছে করে ছুটে যেতে সমুখপানে ।। 
ব্রতী হতে চায় মন, জোরালো কণ্ঠে রহস্যময়ীর জয়গানে 
প্রহর যায় চলে একটু একটু করে, কাঙ্খিত লক্ষ্য সুদূরে – 
উষ্ণতার প্রবল আলিঙ্গনের মাঝে ছেঁড়া ছেঁড়া স্বপ্ন দেখে 
রক্তরাঙ্গা ঠোঁটে মিশে প্রগাঢ় চুম্বন করে 
সূর্যোদয় হল ধীরে ধীরে...শান্তি আসে নেমে
নিষিদ্ধ ভালবাসা ধরে ঘিরে 
বিষাক্ত রক্ত নীল হয়
অনুভব করায় প্রেম এসেছে অবশেষে সাদাকালো নষ্টনীড়ে ।।



অমৃত অধিকারী

সাধু 
অমৃত  অধিকারী 


তোর সাধন-ভজন রইলো বাকি 
কাটলো বেলা পড়লো ফাঁকি 
মুক্তিলাভের তপস্যাতে তোর 
পালিয়ে এলি জীবন ফেলে 
এমনি রে তুই বে-আক্কেলে 
কাটলো না তাও ভালোবাসার ঘোর 
সাধু, তুই এমন হৃদয় চোর! 

মুক্তি পেতে কোথায় যাবি
সে মুক্তিতে কিই বা পাবি
লাগবে না তার সঙ্গে তাতেও জোড় 
বাসলে ভালো তবেই তাকে 
যায় পাওয়া, যে লুকিয়ে থাকে 
রূপসাগরে মনের মানুষ তোর 
সাধু, তুই তার আগুনে পোড়! 

পুড়তে তোকে হবেই, সাধু 
সেই দহনের এমনি যাদু 
গহন মনের কপাট আঁটা দোর 
হৃদয়-চাবির মোচড় লেগে 
যায় খুলে আর বাতাস বেগে 

যায় ছিঁড়ে তার, যায় কেটে সব ডোর !




এবং একুশ

দর্শনা বোস


মাতৃভাষা তোমায়
দর্শনা বোস 


বাংলা মানে মোহনবাঁশি, বাংলা চরাচর
বাংলা অামার অাগুনপলাশ, বাংলা সুখের ঘর।

বাংলা অামার মায়ের অাঁচল, বাংলা অামার জোশ
বাংলা অামার মরণবাঁচন, বাংলা দুঃসাহস।

রক্তেভেজা পথেই জানি তোমার উন্মোচন
রক্তে আমার টগবগানো তোমার সম্মোহন।

অাকাশ অামি মুঠোয় ধরিতোমার মিঠে বোলে
অাজও অামার রোমাঞ্চ বন সহজপাঠের কোলে।




এবং একুশ

শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়



ভাষা দিবসের গান 
শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়



বাংলার মাটি এতো লাল কেন কেউ কি তা জানো
ইতিহাস জানে কিছু তাজা খুন রয়েছে মেশানো
রক্ত-আখরে তাতে লেখা আছে কিছু কলতান
এ মাটি আমার প্রেম, এ ভাষা আমার সম্মান......


এমন হরিৎ কেন বাংলার সব তৃণভূমি
সবুজ হয়েছি আমি, সবুজ সবুজ হলে তুমি
এ মাটি এখনো গায় সবুজ প্রাণের জয়গান
এ মাটি আমার প্রেম, এ ভাষা আমার সম্মান......


এখনো লালন শুনে হৃদয়ে বৃষ্টিধারা ঝরে
এখনো আকুল হলে রবীন্দ্রনাথ মনে পড়ে
এ মাটি দেখলে দেখি সালামের বিদ্রোহী জান
এ মাটি আমার প্রেম, এ ভাষা আমার সম্মান......


কেন এ মাটির বুকে নদীরাও এতো গান গায়
কেন এ মাটির ঘ্রাণ বিক্ষত জীবন জুড়ায়
এই মাটি আজও দেয় সোনারঙ পৌষালী ধান
এ মাটি আমার প্রেম, এ ভাষা আমার সম্মান......


এ মাটিতে শুয়ে আছে আজও সেই সব চেনা মুখ
বাংলা কাঁদলে জেনো সেদিন এ মাটির অসুখ
মাটির আব্রু কাড়ে কিছু বোকা কিছু শয়তান
এ মাটি আমার প্রেম, এ ভাষা আমার সম্মান......






এবং একুশ

অনুপম দাশশর্মা



উল্টে গেলা 
অনুপম দাশশর্মা


বদলে যাচ্ছে রেটিনার দুনিয়া
গভীরতার দ্রুত পতন
খুশীর শরীর জঘন্য ফালা ফালা
গোছাচ্ছে যে যার মতন'

এক ঝলকে নিক্তি মেপে নেওয়া
আপডেটেড টাচ স্ক্রীন
কিট কাট কিংবা ও.এস. ললিপপ
হাই স্পীড ঘোড়ার ডিম'

এমনটাই বুঝি আত্মার টান
অনুভূতির র‍্যাম ক্লীয়ার
হটস্পটে এল নতুন ব্রীফকেস
বদলেছে সেমসাইড 'ডিয়ার'

অভিমান সব রেকর্ডেড এক্সেলে
ভবিষ্যত্বের ডিভিডেন্ড
কৃতজ্ঞতা থাক অভিধানে শুয়ে
সততা মেন্টাল পেশেন্ট

ভার্চূয়ালের এই নতুন ফর্মূলায়
ওয়াই-ফাই জোন খালি
মেধার ঘনালে মেঘ ফেরার ইচ্ছায়
ডেকে নিও বিবেকের মালী!




এবং একুশ

জয়া চৌধুরী

দুর্গাবতী
জয়া চৌধুরী



সোনালী সিল্কি কেশর ফুলিয়ে যখন 
ঘোড়দৌড় সেরে সামনে এসে দাঁড়াত
উফ্ বলেই ত্র্যস্ত চেপেছি ঠোঁট,
পাছে কেউ শুনে ফেলে শীৎকার
টগবগে তাজা গ্রে হাউন্ড আমার 
কতদিনের মন কেমন স্বপ্ন
বেড়াল টেড়াল ধর্তব্যের মধ্যেই ছিল না।
নরম নরম হাল্কা পায়ে কুচকুচে কান আর
গলার নিচে পেটের কাছের জড়ুল
নিয়ে গায়ে মুখ ঘষলে 
বিরক্তিতে ঝটকা দিই সবটা সময়
ও আমার নেকুপুসি ভাল্লাগে না একদম
কেবল চকিতে ঘাড় কামড়ে
আছড়ে ফেলে ঠোঁট কামড়ে
মুখ ডুবিয়ে চর্ব্য চোষ্য লেহ্য পেয় 
ঘন ঘোর মাখোমাখো হতে হতে
কঁকিয়ে ইচ্ছেয় বারবার আসতে আসতে
আধবোজা চোখে ওষ্ঠে কান রেখে কিংবা 
কর্ণে অধরে আদুরে শব্দে ছবি এঁকে এঁকে 
দুর্মর জংলী বেড়াল হতে হতে...
...ইসসসস
বলে ফেলি

যা মার্জারীঃ সা ভগবতীঃ ।





এবং একুশ

তন্ময় গুপ্ত

ভগ্ন হৃদয় চারা 
তন্ময় গুপ্ত


ছন্দ ছাড়া হব এবার 
পথের ধারে দাঁড়িয়ে আমি 
আকাশচূড়া গাছের নীচে 
রৌদ্র তপ্ত পাথর ফাটল 
ছোট্ট সে এক সবুজ চারা 
অকাল জন্ম প্রবল মিছে 
মিথ্যে স্বপন মিথ্যে বপন 
বীজ খানি সেই উচ্চ আশার 
ধিক্কারিছে আপন প্রাণে  
ভাঙ্গছে দুকূল ভাঙ্গছে পাহাড় 
উড়ছে ধুলো ভগ্ন হৃদয় 
আপন মগ্ন ধ্বংস ঘ্রাণে।






এবং একুশ

সংযুক্তা মজুমদার



ভালবাসার ভাষা 
সংযুক্তা মজুমদার


কলেজের এক মুহূর্ত মনে এল 
সকালে চেনা পথে এক বিদেশিনী 
একা অচেনা শহরে ত্রস্ত পায় 
বলছে কিছু কথা .. ভাবলাম শুনি 

হাত পা নেড়ে শব্দ করে সে হুশ হুশ 
স্টেশন? ফেরিঘাট? লোকে করে চেষ্টা  
ক্লান্ত মহিলা ভাষার বিপাকে পড়ে 
ভাবে বুঝি কি অদ্ভুত এই দেশটা

কাছে গিয়ে ইংরেজী তে বলি 
কি ভাষা জানো? কি বোঝাচ্ছ তুমি
কোথা থেকে এলে? কোথায় বা যেতে চাও
কি ভাষা বোঝো? কোথায় জন্মভূমি

সে সময় আমার মাথায় ভাষার ভূত 
নানা ভাষা নিয়ে ঘাঁটতাম দিনরাত 
ফ্রেঞ্চ জার্মান স্প্যানিশ আর জাপানি 
শব্দ কিছু ......মনে ধরে রাখতাম 

কথা শুনে তার স্টেশন ই মনে হল 
কিন্তু সে যে কেবল মাথা নাড়ে 
কান্ট্রি বলাতে জার্মানি বলে ওঠে 
Bahnhof? ।। বলি আমি এই বা...। 

আনন্দে কেঁদে জড়িয়ে ধরে সে আমায় 
তার কান্না কে আর তখন থামায়
ট্যাক্সি ডেকে হাওড়া স্টেশন বলি 
মাথা নেড়ে বিদেশিনী বোঝায় ' চলি

এমন করে ও ভাষা বলে কত কথা 
শব্দে বর্ণে, নানা রূপে সে গাঁথা 
মাতৃভাষা সবার বড় প্রিয় 
আমার বাংলা সবার চেয়ে শ্রেয়।।






এবং একুশ

পারমিতা চ্যাটার্জী



যদি
পারমিতা চ্যাটার্জী



তোমায় দেথেছিলাম আবছা ভোরে
সূর্য ওঠার সময়,
দেখেছিলাম তোমায় নীল পাহাড়ের পাদদেশে,
উচ্ছল গতিতে বয়ে যাওয়া ঝর্ণার পাশে,
তোমায় দেখেছিলাম বিবর্তনের মাঝে
বদলে যাওয়া সময়ের সাথে।
আমায় কি দেখেছ কখনও?
আমিতো সেই একই আছি,
পোড়ো বাড়ীর তুলসী তলায়
সাঁঝের প্রদীপের আলো খুঁজি,
মরে যাওয়া গাছে জল ঢালি
যদি বেঁচে যায়,
মরে যাওয়া ভালোবাসার ছেঁড়া খামটা
গুছিয়ে রাখি, নিভৃতের আন্তরালে,
স্মৃৃতি যদি নিস্তব্ধ রাতে সঙ্গী হয়ে আসে,
তাই ভরা থাকে গোপন সিন্দুকে।।






এবং একুশ