মঙ্গলবার, ৩ মে, ২০১৬

সম্পাদকীয়



প্রকাশিত হলো 'এবং একুশ' মে, '১৬ সংখ্যা

এই সংখ্যার নির্বাচিত কবিরা হলেন -
কেয়া বসু
সলিল বোস
রেজা রহমান
ব্রতী মুখোপাধ্যায়
শর্মিষ্ঠা নাহা
সঞ্জীব রায় ব্যানার্জী
শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়
অলভ্য ঘোষ
পবিত্র চক্রবর্তী
অনাদি চক্রবর্তী
সুপ্রতীম সিংহ রায়
কাজী এনামুল হক
সুপ্রভাত লাহিড়ী
বনশ্রী মিত্র
কৌশিক বিশ্বাস
শঙ্কর দেবনাথ
বন্দনা মিত্র
জাফর পাঠান
সুমিত নাগ
পলাশ কুমার পাল






























এবং একুশ

কেয়া বসু



না

কেয়া বসু



আজ দুপুর থেকে আকাশ জুড়ে

         ধূসর মেঘের আনাগোনা

আমার উত্তরের জানলাটা

দিয়ে আমগাছ গুলোর

          ফাঁকে ফাঁকে

আকাশ দেখা মনটা

মেঘগুলো ভেসে ভেসে

             কোনদিকে যায়?

                সামনে? না পেছনে?


মন আমার মেঘে মেঘে

                সেই সে দিনে

সেই যেদিন স্কুলে যাবার আগে

মা বলল, আজ আর তোমায়

         যেতে হবে না স্কুলে

আজ থেকে তুমি

বড় হয়ে গেলে... সেদিনও

          আকাশে কত্তো মেঘ

আমার মন খারাপের মতো


দুপুর বেলা বৃষ্টি বৃষ্টি বৃষ্টি

দেখতে দেখতে গলিতে

          এক হাঁটু জল

সদর দরজায় বসে বসে

ভাসলো কত নৌকোর দল

এটা তোর জন্য, শ্রাবন্তিকা

      অনন্যা, এটা তোর...

তোকেও দেবো, কমলিকা

এটা শ্রুতিকে দিস,

                    এটা ওর...



আচ্ছা, ওরাও কি বড় হয়ে গেছে?

গলির মোড়ে বুবাইরা

               জল ঘাঁটছে

ডাকল আমায়, আআয়য়য়...

আমার কান্না পাচ্ছে,

কেন সবাই এমন করে

            বড় হয়ে যায়?


এমনি করেই কমলিকারা

কমললতা হয়... এমনি করেই

অনন্যারা অন্য উপায় নেয়

   বুবাইরা সব বড় হলেও

           কিছুতেই নেই মানা

শ্রাবান্তিকা বড় হলেই

              সব কিছুতেই ‘না’

















































এবং একুশ

সলিল বোস



গোপন কথা
সলিল বোস



পুরুষের স্বভাব বদল হয়না
বয়স যতই হোক,
নারীর বিশেষ অঙ্গের প্রতি
প্রথমেই পড়ে চোখ।
নারীও সেবিষয়ে সচেতন তাই
রূপচর্চায় গুরুত্ব দেয়,
পুরুষের মুগ্ধ দৃষ্টির আকাঙ্ক্ষায়
উদগ্রীব হয়ে রয়।
বিধাতার একি অপূর্ব অবদান
সৃষ্টির মাহাত্ম্য অনন্য,
উভয়ের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ
জীবনকে করেছে ধন্য।




























এবং একুশ

রেজা রহমান



প্রেম
রেজা রহমান



একদিন সেই কবে স্বপ্নঘুম ঘুমিয়েছিলেম
তারপর থেকে জাগি ঘুমজাগরণ থেকে জাগরণঘুম থেকে প্রেম
আজ আমি বলি তুমি শোনো
তুমিই বলেছ আগে শুনে গেছি অমনোযোগী কি আমি হয়েছি কখনো?


ঘুমভাঙা চোখ মেলে জেগেছি প্রভাতে
যখন যেখানে খুশি এ আমাকে নাওনিকি সাথে
হাতে ধরে তুমি কালে কালে
অষ্টপ্রহর কাছে কাছে রেখে কতই না কিছু যে শেখালে
শেখালে একাই তুমি সব
তুমি ধর্ম কর্ম যুদ্ধ সন্ধি শান্তি উপাসনা স্তব
আমার ঈশ্বর তুমি দহনদীপিকা শুদ্ধতম অগ্নি আনন্দলোক
চাইতে না চাইতেই তথাস্তু বলেছিলে বলেছিলে তবে তাই হোক ।

একেকটা কথা তুমি বলে গেছ সেই ছিল পাঠ
কী ঝড় তুলেছে এই বুকের ভেতরে আর পরাপাখিটার পাখসাট
আমাকে করেছে কী যে ক্ষতবিক্ষত অহর্নিশ
ফটিক জলের মত পান করে যাইনি কি নিত্য আমি অমরতা বিষ?

চমকে উঠেছি আমি কারো চোখ দেখে
সে চোখের কথা কেউ কী করে যে লেখে
চমকে উঠেছি কারো শুধু কথা শুনে
চমক উঠেছি অপরূপে রূপেগুণে
চমকে উঠেছি কারো শুধু কন্ঠস্বরে
চমকে উঠেছি দেখে গানের ভেতরে
কাউকে বা দেখে ভাবি ফিরে দেখা বুঝি
সে কি তুমি যাকে আজও নিরন্তর খুঁজি?
তুমি দুঃখ দেখেছ কি আমার মতন ভালোবেসে
দেখেছ কি মন্দাকিনী ফিরেছে উজানে রুধিরাশ্রুজলে ভেসে?

জেগেই ঘুমোই যদি ঘুমিয়েও জাগি
ঘুম ভেঙে দেয় আজও মাঝরাতে স্বপ্ন বিবাগী
স্বপ্ন ভেঙে দেয় ঘুম যখন তখন
স্বপ্ন নিজে কি ভেঙে যায়নাকো কাঁচের মতন
কত আর সয়ে যাই স্বপ্নের মার
ঘুমভাঙা স্বপ্নও কী করে যে পেয়ে যায় পার
স্বপ্নের ভেতরেও স্বপ্নই দেখি
স্বৈরিণী স্বপ্ন থেকে মুক্তি মেলে কি
স্বপ্ন আমাকে আজও জিম্মি করে রাখে
স্বপ্ন দেখি যদি আমি স্বপ্ন কি দেখে এ আমাকে?

কে যে ডাকে কত শুনি জাগো জেগে ওঠো
এ সবই তো কবে থেকে জেগে ওঠা বড়ো কিংবা ছোটো
অনেক দেখেছি আমি জেগেওঠাউঠি
জেগেওঠাউঠি নিয়ে আদিগন্ত কম কি করেছি ছুটোছুটি?

একদিকে কার্ল মার্ক্স এঙ্গেলস লেনিন
অন্যদিকে রুমি রোঁলা কবিগুরু আরো কেউ কেউ রাতদিন
স্মৃতিসত্ত্বা ভেঙেচুরে বুকের পাঁজর ছেপে উপচে যে পড়ে
দুহাত উপুড় করে তোমাদের এত সব দেয়া আর কোথাও না ধরে ।

আমাকে আমার মত ঘুমোতে দে প্রেম
নইলে পাবিনে পার আজ এই শপথ নিলেম
সমস্ত কুকীর্তি তোর করে দেবে ফাঁস
তারপর দেখা যাবে কে যে রোখে তোর সর্বনাশ
আজ শুধু ঘুম চাই—ঘুম
আরশিনগরও কি স্বপ্নই আকাশকুসুম?





































এবং একুশ

ব্রতী মুখোপাধ্যায়






একেবারেই করপোরেট দুনিয়ার স্টাইল
ব্রতী মুখোপাধ্যায়





একেবারেই করপোরেট দুনিয়ার স্টাইল
রাজধানীতে হেড কোয়াটারস
প্রেসিডেনট, ভাইস, বোরড অব ডিরেকটরস
সেখানেই থাকেন
প্রতিমাসের শিডিউল যেমন, সেভাবেই, সেখানেই
নিয়মিত বোরড মিটিং
এখন আবার কোনো কোনো স্টেটের ডিমান্ড মেনে নিয়ে
সিটুয়েশন অনুযায়ী
ব্রানচেও এক-আধবার মিটিং করতে হয়


একেবারেই করপোরেট দুনিয়ার স্টাইল
স্টেটে স্টেটে কোমপানির সিইওরা থাকে
তাদের নিচে
জেলায় জেলায় চিফ ম্যানেজার
তাদের নিচে
ম্যানেজার
গোটা সেট-আপটাই ডিমোক্রেটিক রাখা হয়েছে
শধু ফাইন্যাল ডিসিশানগুলো, ডেলিগেশান অব পাওয়ার
সেনটার থেকে কনভে করার ব্যবস্থা
পুরোপুরি ছিমছাম

একেবারেই করপোরেট দুনিয়ার স্টাইল
মিটিংগুলো ইমপরটানট
সেখানেই প্রি-শিডিউলড আলোচনা
রিপোরটিং রেভিনিউ
পুরানো এরিয়া ধরে রাখা
নতুন এরিয়া এক্সপ্লোর করার স্কিম
ময়দানে অন্য যেসব প্লেয়ার আছে তাদের সঙ্গে রিলেশানস
যা আবার সবসময় চেনজিং
তাছাড়া লিগাল সেল গ্রিভানস সেল ইনটারন্যাশন্যাল ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি

এমনিতে ব্রানচগুলো স্বাধীন
বড় কিছু না ঘটলে পলিসি অব নো ইনটারভেনশান মেনে চলা হয়
সিইওরাই ম্যানেজারদের সঙ্গে ডিশকাস করে স্থির করবে
কোমপানির স্পোকসপারসন কে হবে
কার ওপর কোন সময় দায়িত্ব থাকবে প্রেস-মিটের
কোন কোন ইস্যু সামনে আনা হবে
অন্য প্লেয়ারদের কার সাথে কখন কিভাবে
আন্ডারগ্রাউনড আনডারস্ট্যান্ডিং গড়ে তুলতে হবে
কোন সময় কাকে কোন কৌশলে অ্যাটাক করতে হবে
অবলাইন এবং অনলাইন মিডিয়ার কোন অংশের সাথে
কতখানি হবনবিং নেসেসারি
কোথায় কবে কোন ইস্যুতে
মিটিং মিছিল ধরনা জনসমাবেশ (আর হ্যাঁ, আর্মস ইউজ) করতে হবে
সব কিছুই নিচের লেভেল ইনডিপেনডেনটলি সামলে নেবে

তবে কিনা
একেবারেই সায়েনটিফিক, মানে বিজ্ঞানসম্মত, মানে
একেবারেই করপোরেট দুনিয়ার স্টাইল





































এবং একুশ

শর্মিষ্ঠা নাহা



একলা আজ পয়লা মে
শর্মিষ্ঠা নাহা




গগনভেদী আর্তনাদ,
বজ্রমন্দ্রে
বলল 'হে'-


"পুঁজিবাদ
নিপাত যাক;
শ্রমিক দামী
শ্রমের চেয়ে।

নিজের ন্যায্য
অধিকার,
মজদুর, তুই
ছিনিয়ে নে।"

রক্তনদী
বইয়ে এক
বলল, কিন্তু
শুনল কে?

বাজার জুড়ে
হাতছানি-
হাজার লোভ:
'চাই গো, চাই'

রক্ত, ঘাম,
নাইকো দাম:
রাত্রদিন
খাটছি তাই।

বিশ্বময়
আজ যে বয়
দীর্ঘশ্বাস-
লক্ষ বুক

কিনল যে
ঈর্ষা, দ্বেষ ;
মিলল না
শান্তি-সুখ।

তবুও হায়,
সবাই চায়
শিকল-
স্বাধীনতার চে'

ভোগের নেশা,
সবাই বুঁদ-
একলা আজ
পয়লা মে।











































এবং একুশ

সঞ্জীব রায় ব্যানার্জী



কুরুক্ষেত্র
সঞ্জীব রায় ব্যানার্জী



গান্ডীবের ছিলাটা পটাং করে ছিঁড়ে গেলে
আমি সটান অর্জুন থেকে কর্ণ হয়ে যাবো;
আর রথের চাকায় টান মেরে
ধরনীকেও সরিয়ে আনবো দু-কদম।
সবাই তো সব্যসাচী অর্জুন হতে চায়,
আমি কর্ণ।
কবচকুন্ডল তোমার হাতে তুলে দিয়েছি,
অভিশপ্ত জীবনের বোঝা টেনে টেনে
পরাজিত মহাবীর হয়ে আছি আজ।
জন্ম থেকে হার দেখতে দেখতে
আজ ক্লান্ত কর্ণ কৌরব সেনাপতি।
সেনাপতি?
জীবনের শেষদিনে সেনাপতি!
নিয়তির হাতে বন্দী।
অদৃষ্টের বাঁধা গতে
আমি ক্লান্তির দ্বীপশিখা;
ভুলপথের ভালোবাসায় রিক্ত, নি:স্ব।
সহায়সম্বলহীন এক ব্যর্থ প্রেমিক।
হায় কর্ণ!
আমার একমাত্র আদর্শ চরিত্র।
দেবতার অনুগ্রহে পালিত নই আমি।





































এবং একুশ

শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়



একটি পারিবারিক গান
শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়



পরিবার মানে তোমার আমার স্বপ্নের গাঁটছড়া
পরিবার মানে আকাশের নীচে একসাথে বাস করা
পরিবার মানে দেওয়ালে উঠোনে তীব্র গেরস্থালী
পরিবার মানে মাস পুরোবার আগেই ভাঁড়ার খালি
পরিবার মানে থালাতে বাটিতে ঠুং-ঠাং কলরব
পরিবার মানে শুধু দুজনের নিজস্ব বৈভব
পরিবার মানে হাতে হাত রেখে আস্থার বীজ বোনা
পরিবার মানে ভাত তরকারি, এবং কখনও লোনা
পরিবার মানে আগুন শরীরে প্রজন্ম বয়ে যাওয়া
পরিবার মানে উত্তাল ঢেউয়ে সীমাহীন তরি বাওয়া
পরিবার মানে দুমুঠো অন্ন ছেলে-মেয়েদের মুখে
পরিবার মানে গোপনে গোপনে সব ভালবাসা বুকে
পরিবার মানে টানাপড়েনের নিত্য ঝামেলাঝাটি
পরিবার মানে বাবুইয়ের নীড় শান্তিতে পরিপাটি
পরিবার মানে মন কষাকষি, পরিবার মানে সন্ধি
পরিবার মানে পারিজাত ফুল হিয়ার মাঝারে বন্দী
পরিবার মানে দিনগুজরান দোলাচলে অবহেলে
পরিবার মানে যেখানে নিদাঘে আঁচলের ছায়া মেলে
পরিবার মানে বন্ধুতা ভরা আতুরে কাতরে নির্ভর
পরিবার মানে ফাগুনের গান, বৃষ্টির নাচ ঝরঝর
পরিবার মানে বহুজন ভিড়ে একান্ত বাসভূমি


পরিবার মানে আমি যে তোমার, এবং আমার তুমি ।











































এবং একুশ

শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়



আমি বিশ্বমানব
শর্মিষ্ঠা মুখোপাধ্যায়




আমি বিশ্বমানব
তুই প্রতিবাদের দেওয়াল
আমি জটপাকানো
তুই সর্বনাশা খেয়াল
আমি সালতামামি
তুই অনাদি আশ্বিন
আমি হলুদ দুপুর
তুই ভালোবাসার ঋণ
আমি আড়ষ্ট সুর
তুই অব্দ খতিয়ান
আমি গৈবি লিপি
তুই আকাশজোড়া খাম
আমি ফেরার গাড়ী
তুই আধকপালী সুখ
তোর পাগলাটে দিন
আমি যাপনে উন্মুখ








































এবং একুশ

অলভ্য ঘোষ



বৃষ্টি নামার আগে
অলভ্য ঘোষ



বৃষ্টি আর অগ্নির মধ্যে ফারাক যদি তুমি জানতে।
বৃষ্টি খরা দগ্ধ ভূমিকে উর্বর করে শ্যামল করে।
তোমার দুচোখ টাই পুড়ে গেছে এই শহুরে জঙ্গলের দাবানলে।
শুধুই কি চোখ পুড়েছে নাকি মন ও!
না হলে তুমি বুঝতে আগুন আর বৃষ্টি পরস্পর বিরোধী।
বৃষ্টির ফোটোগুলোকে আগুনের ফুলকি বলে ভ্রম হতোনা।
পুড়ে যাবে ভেবে নিজেকে গুটিয়ে নিলে ছাতার আড়ালে।
তবুও এই নাগরিক সভ্যতার বুকে একা ধ্বংস স্তূপে
বৃষ্টি নামার আগে আমি এখনো দাঁড়িয়ে আছি তৃষণার্থ চাতক হয়ে।








































এবং একুশ

পবিত্র চক্রবর্তী



নামহীন ইতিকথা 
পবিত্র চক্রবর্তী 

এঁকে দাও আমার কপালে দীপ্ত কলঙ্কটীকা
একবার সঁপে দাও কলঙ্কের ভার -
তোমাদের আঁধার আমার কলঙ্ক ভারে ,
হবে সবুজদের পূর্ণ চন্দ্রিমা ,অথবা -
শরতের শিশিরের মতো আলো !


আমার কালো রক্তের ধারায় স্নাত হবে ,
মলিন-দুর্বলদের ললাট !
শিরায় বইবে কালোর স্রোত ;
তারপর তারাও একে একে পরবে -
আমার মতো কলঙ্কটীকা !

ঘৃণ্য বলবে , তোমরা ওই -
কুলটা আর কালো মুখগুলোকে ;
ক্ষতি নেই, তবুও তো ওরা নাম পেল !

সময়ের দুর্বল চাকায় ওরা চালাবে -
আসুরিক লুঠ,ধর্ষণ , অনেক কিছু !
একদিন হয়তো দেখবে,হয়তো একদিন-
কালস্রোতে কালো রক্তের ধরায় , তাদের
তৈরী অন্ধকার মসনদে সৃষ্টি হবে বিপ্লব !

আমার কালো হাত দুটিতে আরো দাও
মসি লেপে ; দেখবে কেমন করি ধ্বংস
করি ঘুণ ধরা জড়ভরত সমাজকে !

একদিন ধ্বংসের ধোঁয়া আর জঞ্জালের মাঝে দেখলাম , সূর্যকান্তি কচি কলাপাতার মতো দুটো অঙ্কুর - হয়তো তারা দুইজনা নারী ও পুরুষ ; হাত ধরে
বাঁধতে চাইছে নব যুগের বিজয়তোরণ !

হে বিধাতা, আর কেউ না দিক , এখন
তুমি দিও কলঙ্কের জয়টীকা !
বিজয়তোরণে প্রাণ ভরে নেব বহুকাল পর স্নিগ্ধ নিঃশ্বাস !!





































এবং একুশ

অনাদি চক্রবর্তী



হৃদয় দুয়ার
অনাদি চক্রবর্তী




হৃদয়ের দরজা যদি
বন্ধ করাই থাকে,
জমবেই মরচে যে তার
কব্জাগুলোর ফাঁকে।


খুললেই ক্যাচোর ম্যাচোর
শব্দ তখন তার,
ভয়ে আর আসবে না কেউ
খুলতে রে সেই দ্বার্।

রাখ তোর দুয়ার খোলা
আসা যাওয়া থাক দু'বেলা,
যদি কোন আপন ভোলা
পথিক এসেই পরে।
হৃদয়ের সিংহাসনে
বসে যদি আপন মনে,
চুপি চুপি সংগোপনে
আপন করিস তারে।

তারপর না হয় আবার
বন্ধ করিস রে দ্বার,
যদি সে হয় আপনার
চিরদিনের তরে।
না যদি হয় রে আপন
আপনি ফিরবে সে জন,
স্মৃতিগুলো থাকবে তখন
শূন্য হৃদয় জুড়ে।

সে স্মৃতির সুধারসে
থাকবি ডুবে যবে,
হৃদয়ের বন্ধ দুয়ার
আপনি খোলা রবে।





































এবং একুশ

সুপ্রতীম সিংহ রায়


সমুদ্র দেখব বলে
সুপ্রতীম সিংহ রায়




অন্ধকারে গা বাঁচিয়ে চলার মত হেঁটে গেলে
তোমার কাছে পৌঁছতে পারবনা কোনওদিনই


অথচ হিমেল স্রোতের মত এক একটা ঢেউএর তোড়ে
নিজেকে বড় নিঃস্ব মনে হয়।

ঝাউবন দ্বীপে আমার ছাইরঙা শব-চিতা
বালিয়াড়ি দ্বীপজুড়ে বোহেমিয়ান ভালবাসা

তুমি উপস্থিত বেওয়ারিশ কুয়াশার শরীরে আগুন পোষাক পরালে
স্বভাবগত হাওয়ার গন্ধ ভেসে আসে।

কর গুনে ভুল হয়

মুখ তুলে দেখি তুমি রিসর্টের চেয়ারে একা বসে আছো

অথচ ক্রমশ বহুদূরে সরে যাচ্ছে আমার ব্যক্তিগত বালিয়াড়ি দ্বীপ।








































এবং একুশ

কাজী এনামুল হক



নাভির কাজলদানিতে জ্বলে ওঠে সলতে
কাজী এনামুল হক


কিছু কথা ছিল জমা, বুকের তলদেশে।ওখানে ডুবুরী পৌঁছাতে পারে না,
মাঝে মধ্যে চিতল বোয়ালের মতো খলবল করে উঠতো বলা হতো না,
না, ঠোঁটের কাছে এসেও বেধে গেছে কাঁটার মতো এক তীব্র যন্ত্রনায়।
ভেবেছিলাম কোন একদিন অবসরে তুষকুড়োর মতো ঝেড়ে ফেলবো।


হয়নি অবসর, অবসাদে কেটে গেছে বেলা হয়তো হবে না কোনদিন,
কালো ময়না ডানা মেলে উড়ে গেলে বটবৃক্ষে পড়ে থাকে ঝরা পালক
কোকিল কাকের চোখ ফাঁকি দিয়ে ফেলে যায় বংশধর মাতৃ হলুদকুসুম,
বুকের মাণিক পায় না আদর বড় হয় অমিত্রবুকে উড়াল উড়াল ভাব।

ঝিনুক শুক্তি নিয়ে বুকপকেটে জলজজীবন কাটায় সুখ-দু:খে জলডাঙ্গায়
বাসনা বিলাসি মন কাঁদে দুপুর রাতে আলো নিভে গেলে জগৎ সভায়
কে আর দেখে কাকে? কত বুক ফুঁসে ওঠে অবৈধসঙ্গম কৃত্রিম স্বান্ত্বনায়
নাভির কাজলদানিতে জ্বলে ওঠে সলতে দাঁতাল পেরেকবিদ্ধ গোলাপকুড়ি।

এসপার ওসপার কিছুই হয়নি, বৈরীমনোভাবে হয়না কোনদিন নিগুঢ় প্রেম,
তুমুল ঝড়ে উড়িয়ে নিলে চৌচালা ভিটেমাটি ভিজে যায় বৃষ্টি ও কুয়াশায়।




























এবং একুশ

সুপ্রভাত লাহিড়ী






মায়া চলে গেছে
সুপ্রভাত লাহিড়ী



মায়া চলে গেছে। চলে যাবে সে জানতই
শুধু জানত না কবে যাবে! শিয়রে জাগবে
দুটি উদ্বিগ্ন চোখ। সন্তানের কাতর জিজ্ঞাসা,
ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু ঝরে সূঁচ ফোটানো হাতে।


প্রথম ভোরের আলো ভর করে এলো সেই মৃত্যু।
অসহায় জিজ্ঞাসু চোখ খুঁজেছিল কিনা কেউ জানে না,
ডেকেছিল, ‘রিনা’!শয্যা-লাগোয়া রোগিনীর নাম ধরে,
সে ডাক তার কানে গেছিল, কিন্তু বলার সময়
আর ছিল না। হলো চোখ নিমীলিত, আড়াআড়ি দু-হাত
হৃদয় জড়িয়ে। অদ্ভুত বিচার নিয়তির!সব কাছে থেকেও
কেউ ছিল না, একক যাত্রায় সত্যিই একাকী.....!








































এবং একুশ

বনশ্রী মিত্র


প্রতীক্ষা
বনশ্রী মিত্র





মেঘবুড়ি তোর বয়স হবে কত?
মা বলে হাজারখানেক মত।


মেঘবুড়ি হাসে মিটিমিটি,
ছাদের ধারে আসে গুটিগুটি।
গল্প গাথা চলে সারাদুপুর,
বিকেল হলেই আবার সে
দূর বহুদূর।


মেঘবুড়ি তোর মজা কিন্তু ভারি
যেখান সেখান বানাস তোর বাড়ি।


মেঘবুড়ি তুই নিবি আমায় সাথে?
আকাশটাকে দেখব কাছ থেকে
তোর পেখমে বাঁধব বাসা আমার
গল্পে গল্পে সারাদিন কাবার।


হঠাৎ বৃষ্টি অহং নিয়ে তরপায়
শাওন এলে মেঘের কি বা রয়!


মেঘবুড়ি এই আঁধার ঘোচাবি কবে
অবিরাম বৃষ্টিতে মন যে আমার কাঁদে।
আয় না সখি,সেই চিলেকোঠার কোণে
শেষ না হওয়া কথাগুলো শুরু করি
আবার দোঁহে!




























এবং একুশ

কৌশিক বিশ্বাস

ঐতিহাসিক
কৌশিক বিশ্বাস 



অস্তিত্বের লড়াইয়ে
একটা পরাকাষ্ঠা দরকার
আদিমতম জলোচ্ছাসে
কূল ভাঙ্গার নিপুণতাও উধাও
রাখা আছে শুধুই
অসংখ্য খোলস !
আদিমরিপুর হাতে পরাজিত ,
বাহকরাও মলিন
রাত -দিন
এ কোন্ অভিশাপ ?
নাকি রক্তচাপের খেলা ?
বিভক্ত পৃথিবীতে যারা ছিল ;
এক সমান্তরাল সমাজের অঙ্গীকার
আজ ,
তাঁরাই কিনা ছোবল খেলায় মত্ত ?
রিক্ত , অনুরক্ত
ফেলে রাখা দুধ -কলায়
কেবলই অনুরাগের মায়া ...
তবে , তাই হোক
হোক মুক্তি , হোক অবলুপ্তি -
"শেষের প্রার্থনা করি করজোড় হাতে
দোহের সন্তান যেন থাকে দুধে -ভাতে !"
( sankhinipur গ্রামটি আজ পুরোটাই অবলুপ্ত
দক্ষিণ দিনাজপুরের সাপ গ্রাম নামে বিখ্যাত
শুধু মানচিত্রে তার অস্তিত্ব বহন করে চলেছে
সাপের খেলা দেখিয়ে মানুষ দিনযাপন করত
কিন্তু লোকায়ত কথা অনুযায়ী সাপের কামড়ে প্রায় মৃত্যু হবার জন্য গ্রামটি জনমানবহীন হয়ে পড়ে
বাকিটা ইতিহাস )





















































এবং একুশ

শঙ্কর দেবনাথ



মনে করো
শঙ্কর দেবনাথ



মনে করো - আমাদের ছোট্ট খাটটি
আদিগন্ত দেহ মেলে বিছানা পেতেছে -
মশারির ঘরে ঢুকে দু'চারটি
জোনাকিমন
নক্ষত্রের মত চোখ টিপে শুনাচ্ছে
আলোর গল্প -
আমি আর তুমি পাশাপাশি শুয়ে
ডুবে যাচ্ছি শুন্যের শরীরে -
মাঝখানে তোমার গর্ভে বসে
জন্মমঙ্গল পড়ছে আমাদের অনাগত
আলোক সন্তান-

মনে করো- আমরা দু'জন কোনো
নির্জন নক্ষত্রে গিয়ে শরীরের
অনদীমাতৃক ভুঁইয়ে রুয়ে দিচ্ছি
ভালবাসা-
আমাদের ঋতুময়ী প্রতিটি চুম্বনে
জন্ম নিচ্ছে
এক একটা প্রাণময়ী মহাগ্রহ -
আর তারা
ক্রমশ ছড়িয়ে যাচ্ছে মহাশুন্যে -
যদিও কৃষ্ণগুহা হা করে রয়েছে
তবু সঞ্জীবনী বীজমন্ত্রে
ভরে দিচ্ছে শব্দহীন চরাচর -
আর তুমি আমার হাতের মধ্যে
সংগোপন সুখে এঁকে রাখছো
চরিতার্থ মাতৃত্বের চিরন্তন
বর্ণমালা---

মনে করো- তোমার বুকের মধ্যে
ক্রমাগত বেড়ে উঠছে
আমাদের নাক্ষত্রিক ভালবাসা -
আর আমার চোখের প্রান্তরে
জেগে উঠছে সীমাহীনা
তোমার আকাশ---

মনে করো- প্রেমার্ত বাতাস মেখে
আমাদের একক জীবন
মহাজাগতিক যৌথজীবনে
হেঁটে যাচ্ছে অনন্তপ্রসারী পথে---

মনে করো---





































এবং একুশ

বন্দনা মিত্র




দাহ
বন্দনা মিত্র



জানি, কেউ কেউ খুঁজে পায়

নিজস্ব এক নদী

আর কেউ কেউ আছে

খোঁজেনি কখনও

যার না পেলেও চলে যায়।



দুজনেই ভাগ্যবান।



আর আমরা, যারা কাচ ঘেরা জানলায় চোখ রেখে

আজীবন খুঁজে ফিরি একান্ত নিজস্ব নদীটিকে

এবং মনে মনে এও জানি ,

না পেলেও

কেটে যাবে ছাপোষা জীবন

যেমন স্বভাবত কেটে যায়।



আমরাই জানি কাকে বলে যন্ত্রণা,

কাকে বলে দাহ।














































এবং একুশ

জাফর পাঠান






ক্ষমো-প্রেমো
জাফর পাঠান




আমার প্রেম - যতই দিক আমায় অপবাদ

করবোনা আমি তার-সামান্য কোনো প্রতিবাদ।



দিতে পারিনি আমি তাকে কোনদিন কোনকিছু

যদিও এখনো লেগে আছে- আমার পিছু পিছু।



প্রেম দিয়ে ঝুড়িকে ভরে-বাড়িয়েছে কত হাত

অপেক্ষায় থেকে কাটিয়েছে; কত প্রহর রাত।



শুকিয়েছে ফুল-ভেঙ্গে গেছে রেখে দেওয়া ঝুড়ি

দুখী তটিনী তটে, আমি হাতিয়েছি জড় নুড়ি।



দেখাবো কাকে আমার এই তাপিত হিয়া খুলে

যেখানে দুঃখ-ঘৃণা-দ্রোহ-প্রেম সবি যায় গুলে।



যে দোলনায় দুলে- ধর্ষিত মৃত শিশুর দেহ

চাইনি সেখানে হাতে হাত রেখে বসুক কেহ।



যত আছে ধর্ষক- খুনি- মিথ্যুক- অবিচারক

প্রেম কেড়ে আমায় করেছে অঙ্গারের ধারক।



হে প্রেম পিয়াসী অভিলাষী, করো আমায় ক্ষমো

পারিনি হাত মিলাতে হাতে, পারিনি দিতে প্রেমো।































এবং একুশ

সুমিত নাগ



অতিথিসৎকার
সুমিত নাগ



অতিথি আসেই ঘরে

যেমন এসেছে আবার

ঘরে আসবে, থাকতে দিলে থাকবে

খেতে দিলে খাবে, খঞ্জনি বাজিয়ে গান করব

মন যদি চায়-

কিন্তু মদ খেয়ে বাড়ী এসে আমাদের রাতের বেলা

পুরনো টেবিল ল্যাম্পটা ভাঙলে, সোফাটা বিশ্রী ভাবে

ধামসালে, হড়হড় করে বমি করে দিলে আমাদেরই

ঘরের মেঝেতে বা পোষা কুকুরটার গায়ে

আমাদেরই কাউকে না কাউকে তো বলতে হবে

-‘এই সামলাও, মদ খেয়েছ, চুপ করে বসো

বেশি হুল্লোড় না করে, এই বাড়ীতে আমরা এসব

সহ্য করি না। বাইরে বের করে দেবো’।













































এবং একুশ

পলাশ কুমার পাল






বারুদ খেলনা
পলাশ কুমার পাল



বারুদের মেলা আকাশ পারে

জীবনের ফুলঝুরি,

পুড়ছে জ্বলছে আর নিভছে...

স্বপ্নের সব তুবড়ি।

কোনো স্বপ্নই আকাশ পায় না

সব মৃত্যুর প্রতিধ্বনি,

আলোর সজ্জা বাহুল্য শুধুই

আকুতির ঝুমঝুমি।

বেজে যায় স্মৃতি-শব্দ-কথারা

হৃদয়ের দেয়ালেতে...

পিঞ্জরে পাখিরা ডানার শব্দ

পুড়ছে বারুদেতে...



ভালোবাসা আকাশ কামনায়

মিথ্যা বারুদ-খেলনা,

ক্ষণেক জ্বলে মাটিতেই ফেরে

অধরা থাকে বায়না!




























এবং একুশ