বুধবার, ১ এপ্রিল, ২০১৫

সম্পাদকীয়



সম্পাদকীয়




তৃতীয়া, কিশোরী কন্যার মত কমনীয়, অথচ সাবলীলতায় ঋজু। নতুন আঙ্গিকে, নতুন সাজসজ্জায়।


শুধু কবিতার জন্য আরো একটি ব্লগ। কিন্তু বাঙালীর কাছে কবিতা কখনোই উদ্বৃত্ত হয় না। বয়স কালে দু’ছত্র কবিতা লেখেননি – এমন বাঙালী আছেন বলে আমার জানা নেই। প্রাচীন কালে তো বটেই, নিতান্তই আধুনিক যুগেও এমন এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, যখন কবিতার স্মরণ নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। ব্যক্তিগত আমি-র প্রাচীনতা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান, তবু বলি – সাড়ে তিনটে দশক পেরিয়ে এসেছি অবলীলায়। তা, বাঙালী জীবনে কবিতার সর্বব্যাপী মাহাত্মের কথা ভাবতে গিয়ে দেড় দশক আগের একটি কবিতাশ্রয়ী ঘটনা মনে পড়ে গেল, বলি সেই কথাই –


তখন কলেজে পড়ি। আমার এক সহপাঠী, ধরুন, নাম অমিতাভ, প্রেমে পড়লো আর এক সহপাঠিনী অনিন্দিতার (এই নামও কাল্পনিক)অনিন্দিতা পড়াশোনায় অসম্ভব ভালো, এদিকে অমিতাভ চলনসই। কিছুতেই আর প্রেম নিবেদন করে উঠতে পারেনা Stairs-এর (কলেজের সিঁড়ির আড্ডার ওই নামই ছিলো) মন্ত্রণাসভায় সিদ্ধান্ত হল, কবিতা লিখতে হবে। দুদিন সময় দেওয়া হল আমিতাভকে। অমিতাভ লিখতে শুরু করল কবিতা। “ তোমার প্রেমে আমি মাতাল ”... মাতাল-এর সঙ্গে কি মিল যায়? পাতাল? চাতাল? ঝাঁপতাল? – ধুউউউউর – হচ্ছে না ঠিক। এটা বাদ। নতুন লাইন – “ আনিন্দিতা, আমি তোমায় ভালোবাসি ” – কাশি? ফাঁসি? মাসি? ...ইশ্‌শ্‌শ্‌


দুদিন পরে অমিতাভ এলো কলেজে – অবসন্ন, বিধ্বস্ত! অগত্যা সেই stairs-এই বিশুর চায়ের দোকানের বিখ্যাত ১/২ চায়ের ফোয়ারা আর লেড়ো বিস্কুট সহযোগে যৌথ উদ্যোগে তৈরী হল অনিন্দিতার জন্য প্রথম প্রেমের কবিতা। ওই এক কবিতার জোরে প্রেমটা ওদের হয়ে গেল। ওরা এখন সুখী দম্পতি।


বিশ্বায়নের যুগে এখন হয়তো কবিতার এমন বহুল ব্যবহার সীমিত। ঠিকই। তবুও ভাবুন তো, বসন্তের চাঁদনীরাতের মাতাল সমীরণে মন যখন ব্যাকুল, whatsapp-এ দু'ছত্র কবিতাই তো তাকে লিখে পাঠাতে ইচ্ছে করে। কি, করে না? তাই তো উত্তর আধুনিক কবিও লেখেনঃ

কবিতা আমার ছেলেবেলার খাতা
কবিতা আমার রাত-পালানো ঘুম
কবিতা আমার তোমার ছবি নিয়ে
সারা দুপুর একলাটি বাথরুম

কবিতা আমার যৌবনের নেশা
কবিতা আমার প্রথম উপার্জন
কবিতা আমার ল্যাপটপের খাঁজে
আঁকড়ে থাকা জীবনকে প্রাণপণ

কবিতা তোমায় স্পর্শ করে আজও?
ভোলাতে পারে শব্দের অপমান?
কবিতা আমায় রোজ ভুলিয়ে রাখে
বিপন্নতা... এবং পরিত্রাণ!




আপনাদের কাব্যময় সাহচর্যে নিরন্তর সম্পৃক্ত হোক এবং একুশ



শুভেচ্ছান্তে
সুস্মিতা বসু সিং
















এবং একুশ

কবিতাঃ পিয়ালী বসু




রূপকথা নয়
পিয়ালী বসু


অপেক্ষার স্থানটা এই মুহূর্তে নিশ্চিত
যদিও কালের নিয়মে পাত্র পাত্রীর বদল ঘটে
"
এই শোনো না, আজ বিকেলে বাড়ি ফাঁকা, আসবে নাকি" ?

# শরীরের বদল ঘটতে থাকে
এবং কালের নিয়মে পাত্র পাত্রীর বদলও ঘটে

# It certainly took a long time
to choose what I wanted

# অচেনা আঙুল ঘুরতে থাকে শরীরময়
কালের নিয়মে পাত্র পাত্রীরও বদল ঘটে

# Come live with me and be my love...

# জীবনটা কি পরূকথা নাকি ?
তাই বদল ঘটে পরিবেশের, সঙ্গে পরিস্থিতিরও
এবং কালের নিয়মে পাত্র পাত্রীর বদলও ঘটে

# ইচ্ছেগুলো মরতে থাকে অকালে

# And I will make beds of Roses
And a thousand fragrant posies

# স্বপ্নগুলো মরতে থাকে অকালে


# Because...Life isn't a fairy tale, My love







এবং একুশ


কবিতাঃ শমীক জয় সেনগুপ্ত

আমার ২১
শমীক জয় সেনগুপ্ত



তোকে নিয়ে আগুন বাসর ছেড়ে,
বৃষ্টি ভেজা ছাতিম হতে পারি।
হেঁটে গেলেই বিঁধছে পায়ে কাঁটা-
ডাকছে পিছে ২১ ফেব্রুয়ারি।

তোর সঙ্গে আমার যত ভাষা
হেঁটে বেড়ায় শরীর থেকে মনে,
আঁজলা জলে তাদের চোখে ঠোঁটে-
ঠোঁট ছোঁয়াবো চুমুর নিমন্ত্রণে।








এবং একুশ

কবিতাঃ সুধাংশু চক্রবর্ত্তী

আমার বিশ্বস্ত সাথীরা
সুধাংশু চক্রবর্ত্তী



আমার বিশ্বস্ত সাথী আমার ছায়া, আমার কল্পনার জগৎ
এবং আমার একুশ বছর বয়সটা ।
আর কয়েকটা বছর পর এই আমিই একদিন দশটা-পাঁচটা
করে ক্লান্ত শরীরে ঘরে ফিরে এসে আমার কল্পনার জগৎকে
ডেকে বলবো, আর প্রশ্রয় দিও না আমায়
এরপর মাথায় চড়ে বসলে সেই তুমিই কিন্তু পাগল বলবে
সেই তুমিই কিন্তু প্রহসনের ঝুলি উজার করে দেবে
আমার সমস্ত সত্ত্বার ওপর
তারপর
আমি সত্যিকারের একটা পাগল হয়ে গিয়ে
আমার বিশ্বস্ত ছায়াকেও যাবো দুপায়ে মাড়িয়ে
অথচ ভাববো ওটা ছিলো কোনো শত্রুর ছায়া ।
আর আমার সেই একুশ বছরের বয়সটা আটকে থাকবে
ক্যালেন্ডারের পাতায়, ডায়রীর বুকে লাল আখরের সাথে
যার ইতিহাস পাড়া প্রতিবেশীদের মুখে মুখে ফিরবে,
ওরা একে তাকে ডেকে বলবে
ঐ দ্যাখ পাগলটা হেঁটে যায় নিজের সাথে কথা বলতে বলতে,
কল্পনার জগতে রঙিন স্বপ্নের জাল বুনতে বুনতে ।










এবং একুশ

কবিতাঃ শাহেদ সেলিম


ধুসর বিকেল
শাহেদ সেলিম



ধুসর বিকেলে
বৃদ্ধ বাড়ির উঠোন ছেড়ে
চলে গেছে সব চরিত্র
ধুলোর পদচিহ্ন এখানে সময়ের গায়ে
ভেঙ্গে গেছে কাঠের সিঁড়ি
দুতলার পাটাতন
তবুও সন্ধ্যের আগে তক্ষক ডাক দেয় আজও।









এবং একুশ

কবিতাঃ সপ্তর্ষি মাজি

পরিচয়
সপ্তর্ষি মাজি



কে তুমি তরুণী?
চিনিনা তোমায় আমি, তবু যেন কতদিনের চেনা,
দেখেছি তোমায় আমি বারবার
সেই আদিম গুহাজীবনে
চকমকি আগুনে দেখেছিলাম প্রথম তোমার মুখ
আবিষ্কারের আনন্দে আমি তখন আত্মহারা
তুমি তাকিয়ে ছিলে ধীর ভীরু চক্ষে
আমি হেসে উঠতেই তুমি যে সেই কোথায় ছুটে পালালে!
তারপর;
ব্যাবিলনের শহর
ঝুলন্ত উদ্যানের অপ্সরা ছিলে তুমি
মনে আছে তোমার?
আমি তখন গ্রীসের মেষপালক
তুমি প্রত্যহ মাঠের ধারে দাঁড়িয়ে দেখতে আমায়
ঝরনার ধারে জল ভরতে ভরতে, যেতে-আসতে
পারস্য উপসাগরের তীরে পরাজিত সৈন্যদের দলে,-
সেখানেও আমি ছিলাম, হাঁটু গেঁড়ে বসে
তুমিই দিয়েছিলে আমায় এক আঁজলা জল
তারপর একদিন প্যারিসের রাস্তায়
তুমি আমার দিকে তাকিয়েছিলে একটু লাজুক চোখে,
একটু হেসেওছিলে তুমি আর আমি রাস্তা ভুল করে
ঢুকে গিয়েছিলাম অন্য গলির ভিতর
আজ তুমি ইউফ্রেটিসের ধারে
এসেছিলে ঘোড়ায় চড়ে,
তারপর ঘোড়াটাকে গাছের গোড়ায় বেঁধে
এখন কি আকাশ দেখছ তুমি?

কী দেখছ তুমি তরুণী? কাকে খুঁজছ তুমি অমন করে?
বরং ভাসিয়ে দিও একখণ্ড প্যাপাইরাসের টুকরো,
তাতে লিখে দিও তোমার পরিচয়;
আমিও ভাসিয়ে দেব নৌকো মন্দাকীনি স্রোতে
ভালোবাসার কোনো ভাষা হয় না,-
আমরা একদিন ঠিক জেনে যাব আমাদের পরিচয়,

নক্ষত্রের সঙ্কেতলিপি পড়ে তোমায় আমি খুঁজে নেব ঠিক একদিন।।





এবং একুশ

কবিতাঃ অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়




সেল্ফি
অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়



আমি আঁতেল চশমাধারী,
কথায় কথায় তর্ক করি,
আমার আমিটা খুব জঘন্য,যাচ্ছেতাই।
জানি প্রেম আজ ভোগ্যপণ্য,
আমিই মালটা অকর্মণ্য,
যখন তখন হঠাৎ করে সেন্টু খাই।
নাটক মানেই সারকারিনা,
প্রেম করতাম আর করিনা,
দুঃখ হলে জড়িয়ে ধরি পাশবালিশ।
পরীক্ষাতে ভরাই পাতা,
দুই পকেটে ভর্তি চোতা,
'ল পাহারায় রয়েছে গার্ড আর পুলিশ।
ইচ্ছে মতো গল্প করি,
সুযোগ পেলে গরম মারি,
এক নিমেষেই গাইতে পারি পর্নো গান।
চাহিদা মতো বলতে জানি,
রুমাল চেপে কাশতে জানি,
মুখোশ খুললে মুহূর্তে হই শয়তান।
শয়তানিটা চলছে চলুক,
বুকের মধ্যে আগুন জ্বলুক,
মাঝে মধ্যে শহরে আসুক বৃষ্টি দিন।
বৃষ্টির ঝাঁটে বৃষ্টি ভিজুক,
বৃষ্টি বেয়ে বৃষ্টি নামুক,
শাড়ীর সাথে আটকে থাকুক সেফটিপিন।
বৃষ্টি তুমি স্বপ্নে এসো,
আমার পাশে একটু বোসো,
বৃষ্টি Please, তোমায় নিয়ে লিখতে দাও।
এবার অবগুন্ঠন খোলো,
আমার শরীরে তুফান তোলো,
বৃষ্টি তোমার করুণাধারায় ভিজতে দাও।



এবং একুশ

কবিতাঃ ডঃ সুজাতা ঘোষ




তবেই লাল সূর্য
ডঃ সুজাতা ঘোষ



তুমি সবে উঁকি দিচ্ছ সোনালী হাসি ছড়িয়ে সাদা রূপ খুলে
জল পেরিয়ে সবুজ আর তার উপর আরও অনেক পেখম
এখনই কি তোমার ঘুম ভাঙল আমার মত?
তাল গাছের লম্বা পায়ের মাথায় নীল পাখিটা অস্থির লাল চোখে খুঁজছে ...

লোকে বলে, কেন এত হাবিজাবি লেখেন আপনি?
আমার মনের বন্ধ মনে অনেকগুলো রঙ এলোমেলো ঘোরাফেরা করে
ওই যে দেখছ রামধনু রঙ আকাশ, ওখানে আমার বাস।
তুমি তো শুধু পড়, পড়েই তোমার আনন্দ ...
কি করে বুঝবে সারি সারি মেঘেদের নাচ?

সবুজের সারিগুলো আস্তে আস্তে সরে সরে যাচ্ছে
যেন স্মৃতির বিন্যাস ...
সূর্য আর বিকিরণের প্রেম, সেখান থেকেই উঠে এলো
আরও দুটো চাঁদ আর পৃথিবী।

আমি কি লিখছি?
প্রকৃতি না আমি ... কার কথা বেশী রঙিন?
কাল গেছিলাম “মধুলোকা” তে, ওরা দাঁড়িয়ে আছে ... স্থির।
কত নেশা ওদের গহ্বরে, নেশাগুলো গোল গোল ঘুরপাক খাচ্ছে
কত যুগ যুগান্ত কেটে গেল, এখনো ওরা ঘুরছে।
পুরুষদের নাকি ওতেই নেশা হয়, মনে রঙ ধরে, শরীর আনচান করে।

আমিও কি ঘুছি ওদের মত!
গোল গোল করে অনেক পথ পেরিয়ে?
আমার ঘুম কাটছে, সোনালী আর সাদা মাখা সূর্যটা ডাকছে
নেশা ঝেড়ে আর দুটো পথ এগোতে হবে আমায় ...

তবেই লাল সূর্য ।।




এবং একুশ