বুধবার, ২ মার্চ, ২০১৬

সম্পাদকীয়



সম্পাদকীয়




প্রকাশিত হলো 'এবং একুশ', ২য় বর্ষ, ১৩তম সংখ্যা


এই সংখ্যার নির্বাচিত কবিরা হলেন- 

তৃপ্তি








এবং একুশ

শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়




আমি কিছু করিনি 
শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়



বৃদ্ধটি থলে হাতে আপন মনে হাঁটছিলেন
কি যেন বিড়বিড় করছিলেন
তবে এ নিয়ে ভাবার কিছু নেই
এটা তিনি প্রতিদিনই করে থাকেন, কারণ
হাতে থলে আর টাকা গুঁজে দিয়ে
বৃদ্ধা গড়গড় করে যা যা বলেন, আর
তার যা যা আনতে ভুলে গেলে
আরও যা যা বলেন, তা থেকে বাঁচতে হলে
প্রথম বলা গুলো মুখস্ত করা ছাড়া কোন উপায় নেই ।


প্রত্যেকদিনের মত আজও তাই করছিলেন, কারণ
আজও একই সময় সূর্য উঠেছিল
আজও শালিখটা নেচে গিয়েছে ঝুলবারান্দায়
টাকা আর থলের দ্বন্দ্ব আজও অপ্রতিরোধ্য ।
তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, সে অনেকদিন
নিজের নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত তারা ।
তিন-চতুর্থাংশেরও বেশী পেরিয়ে আসা দুজনের সংসারে
সাধ ও সাধ্য দুইই এখন সীমিত, তবু
পুরোনো দিনের অভ্যেসটা রয়ে গেছে ।

না, তিনি বুল-ফাইটে আগ্রহী ছিলেন
এমন অপবাদ কেউ কখনও দিতে পারবে না
এমন কি দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যের প্রতি অনীহায়
গো-জাতির প্রতি তাঁর বিশেষ জাতক্রোধ ছিল
এমন চিন্তাও কেউ মনে ঠাঁই দিতে পারবেন না,
তবু ঘটনাটা ঘটেই গেল ।
ঠিক কি কারণে যে বৃষটি হঠাৎ অমন
বিপরীতমুখী হয়ে বৃদ্ধের দিকে ধেয়ে গেল
প্রত্যক্ষদর্শীরা কেউ তার কোন কারণ বলতে পারেননি
শুধু যখন পাশের নর্দমা থেকে তাঁর রক্তাক্ত শরীরটা তোলা হোল
তখন সম্পূর্ণ নিস্তেজ হবার আগে
শিশুর মত বলেছিলেন – ‘আমি কিছু করিনি’
যেন তাঁর এই দশার জন্যে সবাই তাঁকেই দুষছে !!

ডাক্তারবাবুরা বললেন –
তাঁরা নাকি তাঁদের আয়ত্তের সব চেষ্টাই করেছিলেন, তবু......
কেন যে তাঁর এই দুর্ভোগ তা না বুঝেই
বৃদ্ধ বিনা প্রতিবাদে চলে গেলেন ।

শালিখটা কি কালও আসবে ?!

গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারতো
যদি না এই দেশেরই আর এক প্রান্তে
সেই কিশোরটিকেও বিনা প্রতিবাদে চলে যেতে হোতো ।
আঁকার স্কুল থেকে ফিরছিল সে
পথে আগত ভোটের মুখে হঠাৎ যুযুধান দুই রাজনৈতিক দল
একটা আধলা ইট সোজা এসে লাগে তার মাথায় ।
সে’ও তার মা’কে শেষবারের মত বলেছিল –
‘আমি কিছু করিনি’ ।

যাকগে, এসব নিয়ে ভাববেন না
নিতান্ত কাকতালীয় ব্যাপার আর কি !!








এবং একুশ

পল্লববরন পাল




নাম 
পল্লববরন পাল



আমার শোকের নাম আলো
সে আলোর শৌর্য পোড়ালো
তামাম সুখের বীজ। তবে
এবার ফিরবো বাস্তবে

আমার ফেরার নাম শীত
শিরায় বাজায় সঙ্গীত
যেই সুরে আদিম অমোঘ
ওং শান্তি – প্রিয় মৃত্যুযোগ

আমার মৃত্যুর নাম বায়ু
চিতাচুল্লি তোমার জরায়ু।
স্খলিত বীর্যঠিকানায়
শোক জাগে একা বিছানায়।








এবং একুশ

মৌ দাসগুপ্ত



রুদ্রাক্ষ
মৌ দাসগুপ্ত


নদীর তীরে শ্মশানফেরত একলা এক মানুষ। ক্লান্ত, বিধ্বস্ত,পরিশ্রান্ত... মুখ ধুয়ে নিচ্ছে বহতী নদীজলে। জল তো নয়, যেন বৃষ্টিলেখা মেয়ের আনন্দাশ্রু! আঁকাবাঁকা দেহলতায় বেখেয়ালী খুশিতে জড়িয়ে ধরছে ঠিকানাভোলা পথের পুরুষালী শরীর। বড় শান্ত পরিবেশ। অদূরে চণ্ডালরূপে স্বয়ং হরিশচন্দ্র একা চিতাদণ্ড হাতে লেলিহান শিখায় উড়িয়ে দিচ্ছে প্রিয়মানুষটির বড়প্রিয় অঙ্গপরশ, মায়াময় চাউনি, সুগন্ধী এলোচুল, উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া। ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস এখন অভিমানে পোড়া সুখ। অগ্নিশুদ্ধ সোনার মত খাঁটি। সামনে প্রসারিত অন্তহীন ধূলিপথ, মননে সব হারানোর শূন্যতা! শেষ সহায় সেই বিষ্ণুচরণ, আঙুলে আঙুলে তর্পণমুদ্রা।অনিমেষ দৃষ্টি, অন্তর্মুখী মন, নদীজলে ভেসে যাচ্ছে ভষ্মমায়া অহমিকা। বিস্রস্ত জ্যোৎস্নায় অনিরুদ্ধ শরীরে তিলাঞ্জলি মুক্তি। মৃত্যু তো শেষ নয়। তারপরেও থেকে যায় মায়া-মোহ-মমতাহীন রুদ্রাক্ষ সংসার।…







এবং একুশ

পাপিয়া গাঙ্গুলি

মেঘরূপি
পাপিয়া গাঙ্গুলি


এক মেঘের সাথে দেখা। লম্বাটে মত, সাদা ফোলা ফোলা এক মেঘ।
-তুই কি মেঘ পিওন?
-ঠিকানা কি তোর?
না, না, এমন কোনো কথোপোকথন হয়নি মেঘের সাথে।এমন কথা কাব্যে হয়।আর কাব্য লেখা কঠিন কাজ। সেদিন যা হল তাই বলি শুধু।
এক মেঘের সাথে দেখা হল, পাকদণ্ডীর নির্জনে।
সন্ধে নামার ঠিক আগে পথ আগলানো জমাট বাঁধা মেঘ। ছুঁয়ে দেখি প্রাণ আছে। মেঘের গভীরে প্রাণ আছে। বলি, "তুমি কি মেঘের মত মানুষ? না কি মানুষের মত মেঘ?"
মেঘ বলল, "আমি মেঘ দেশের মেঘ। মানুষও না ধোঁয়া মেঘও না"।
- মেঘ দেশ? সে কেমন? কত মেঘ সেখানে?
- আমরা যেখানে আরাম করি সেটা মেঘ দেশ।
সে দেশে হাসির আলো। কান্নারা সব মুখ ডোবানো।
যে মানুষদের চোখে মেঘের ছায়া পরে তাদের এক বুক দুঃখ ফুরফুরে মেঘ হয়।এমনি করে মেঘ জন্মায়। তারপর বৃষ্টি হয়ে মানুষগুলোর চোখেপুকুরে জমা নোনতা জল ধুয়ে মিষ্টি কর দেয়। চোখে তখন লাল নীল মাছের খেলা।
মেঘ বলল, যাবি?
মন বলল, এমনি করেও বাঁচা যায়।
মেঘের হাতে আমার হাত, নরম মেঘের ছোঁয়া গালের পাশে। পা দুটো মেঘ হতে শুরু করলো হৃদ্‌পিণ্ড তখনও বেঁচে।









এবং একুশ

সৌমেন গুহরায়



যাত্রাপথ
সৌমেন গুহরায়


যা আমি জানি যা আমার একান্তই সে আমার যাত্রাপথ
কেউ আসে কেউ যায় কেউ বা কিছুটা সময় 
রয়ে যায় কাছে
এভাবেই এসেছিল অপত্য স্নেহ মায়া মোহ 
নির্বাক নিরুপদ্রব উৎপাত কিছু ও
উঁকি দিয়ে দেখে যায়
সম্পর্কের অভিঘাতে
এভাবেই এসেছিল প্রেম বারেবারে 
আমি অবাক হতাম 
এই যাওয়া আসা দেখে
যাত্রাপথ যার যা নিজস্ব 
আমি পিছিয়ে পড়ছিলাম 
আমার ভিতরে এক অনিবার্য যাত্রাপথ
স্পষ্টতই যা আমি দেখতে পারছি আজ






এবং একুশ

ব্রতী মুখোপাধ্যায়



আলোর খেলা 
ব্রতী মুখোপাধ্যায়


মুখের ওপর আলো পড়ছে, পড়ছেই 
তার বড়ো কষ্ট তাকে কেউ দেখতে পাচ্ছে না 
সামনের দিকে, মাথার চুলের নিচে 
কপাল, আলো পড়ছে কপালে 
তার নিচে ধনুকের আদলে দুই ভুরু, সেখানেও 
তারপর চোখের পাতা, চোখ, নাক, নাকের ফুটো, ঠোঁট, 
ঠুতনি, গলা, এদিকে ওদিকে কান ছুঁয়ে একটি করে গাল 
আলো পড়ছে সর্বত্র 
রথ, রথের চূড়া, ধ্বজা, সর্বত্র

তার বড়ো কষ্ট তাকে কেউ দেখতে পাচ্ছে না 
ঠিকঠিক দেখতে পাচ্ছে না 
এভাবে সে জানল আলোতেও সবকিছু দেখা যায় না 
অনেক কিছুই দেখা যায় না, অন্তত

আলোর আবার হাত পা বাঁধা
একটুও লুকোতে পারে না যা আর কি সবচাইতে অসুন্দর
যা কারো দেখতে ইচ্ছে করে না 
চোখ পড়লেই মানুষজন মুখ ফিরিয়ে নিতে চায়, আর নেয়ও 
আলো তাও দেখায়, দেখায় আবার চোখে আঙুল দিয়েই






এবং একুশ

সুবীর বোস



দরজা পেরিয়ে 
সুবীর বোস


তোমাকে সেভাবে দরজার তত্ত্বকথা বলার সময় পেলাম কই -
তোমাকে বলা হল না
এ শহরের অস্পষ্ট শরীরে যে সব অন্ধকার দেখেছি - তার কথাও -
রাঙাদাদু বলতেন, ওরে, দরজাই যাপনের মূল স্তম্ভ -
তাকে দেখে-শুনে পড়ে নিস্‌, গড়ে নিস্‌
কী ভাগ্যিস রাঙাদাদুকে আদৌ দেখে যেতে হয়নি
উদ্বাস্তু আমরা একটা সময় মৃদু জীবনের খোঁজে
কীভাবে প্রতিদিন এই শহরের ইঁটখসা নির্মাণে খুঁজেছি দরজার প্রকৃত মুখ!

তুমি বলো, এ কথা কি বলা যায়
যে, ১৯৪৭ আমাদের কাছে ছিল শিরোধার্য শীতের এক দুঃসহ প্রকাশ
বা, এ কথাও কি বলা ঠিক হবে -
স্টেশন চত্বরে বিযুক্তির বিষয় আমরা চটবন্দী মৃতদেহের মতো পড়ে থেকেছি
রাতের পর রাত, পাশাপাশি!
তবে তোমাকে বোধহয় স্বচ্ছন্দে বলে ফেলা যায়
স্টেশনেই প্রথম রাতের এক অন্য রকম অভিজ্ঞতার কথা 
কী বলব, মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেল হঠাৎ
দেখি আমার গায়ে কিলবিল হেঁটে বেড়াচ্ছে টর্চের অনুসন্ধানী আলো
প্রথমে চমকে উঠলাম, তারপর ঘিরে ধরল ভয়
ভাগ্যিস তক্ষুনি মনে পড়ে গেল, আরে, আমাদের তো দরজাই নেই
তাই এত আলো - তাই এত আসা-যাওয়া
অথচ পিছনে ফেলে আসা দেশে আমাদের বাবা-কাকাদের দেখ -
কী সব দরজা ছিল আমাদের - আলাদা-আলাদা -
মনে আছে, ন’কাকার দরজাটা খুব শক্তপোক্ত ছিল
সেবার জোর করে সে দরজা ভেঙে ন’কাকীর ঝুলন্ত দেহটা নামিয়ে আনা -
থাক, সে গল্প অন্য কোনওদিন...
আরেকবার স্কুলের পিছন দিকে একটা দরজাহীন ঘরে 
আচমকা ঢুকে পড়ে সে কী কান্ড...
এ গল্পও না হয় অন্য কোনও দিন -

সেই থেকে, হ্যাঁ সেই থেকে আমি খুব দরজা-কাতর বেঁচে আছি
প্রথমে দেখে নি’ ঘরে দরজা আছে কিনা
তারপর দেখি সে দরজা সময়ে ঠিক মতো বন্ধ হয় কিনা
এভাবেই দেখেছি, কিছু দরজা বাইরে থেকে খুব পোক্ত দেখালেও
ভিতরে ভিতরে বড় পলকা
আবার এভাবেই এমন অনেক আপাত নিরীহ দরজাকে দেখেছি
প্রয়োজনে রুখে দাঁড়াতে জানে প্রচন্ড

দেখ, আজ তোমাকে দরজা নিয়ে কত কথা বলে ফেললাম
আসলে তোমার দরজাটা আমার বড় পছন্দের ছিল হে -
সমস্যা যা কিছু তার শুরু আজ সকাল থেকেই
সকালে আড়াল থেকে দেখলাম তোমার অসতর্ক দরজা পথে
এক দ্রুতগামী বেজি বারবার ঢুকে পড়বার চেষ্টা করছে
আকর্ষণীয় খাস দরবারে
সে সময় ফের মনে পড়ল, রাঙাদাদু বলতেন, 
কিছু দরজার বাইরে অপেক্ষায় থাকে ধূসর, সুযোগ-সন্ধানী বেজি
কারণ সে জানে
দরজার অন্যদিকে থাকলেও থাকতে পারে তার খুব প্রিয় খাদ্য 
যার গালভরা নাম - বাস্তু

আজ তোমাকে সব বলে ফেলার পরেও জানো, আমার তেমন ভয় করছে না
অঘটন কিছু ঘটে গেলেও আজ আমার আর কোনও চিন্তা নেই
কারণ তুমি তো জেনেই গেলে -

দরজার এপার হোক বা ওপার - ডাকনামে আমি আজও সেই উদ্বাস্তু!


এবং একুশ

প্রণব বসুরায়



মেরুন বৃষ্টি হলে 
প্রণব বসুরায়


শব্দ, শব্দ-- ধাতব শব্দের জট
অকল্পনীয় উপায়ে হাত দীর্ঘ করে ফেলে 
সটান ধরেছে। 

মেরুন রংয়ের বৃষ্টি হবে, ছিল পূর্বাভাষ
বৃষ্টি মেরুন হলে কী কী হতে পারে
কোন অভিধানে লেখে নি তা,
গুগুল সার্চের ফলাফলও শূন্যই
আমি তাই খোলা উঠোন পছন্দ করলাম
ওখান থেকে এক জ্যামিতিক দূরত্ব তোমাকে দেখায়
তোমার বসার ভঙ্গি ভারী সুন্দর, তুমি জানো না
সেকথা আমি কক্ষণো বলিনি তোমায়

অপেক্ষায় আছি,
মেরুন বৃষ্টি হলে আজ 
হাত ধরে
চলে যাব মাধ্যাকর্ষের বাহির সীমায়...





এবং একুশ

সুবর্ণা রায়



এই আমি, এই তুমি
সুবর্ণা রায়


ভালো লাগে একা থাকতে, এদিক ওদিক ছড়ানো
ভাবনাগুলো রোঁয়ার মত নিঃশ্বাসে মিশতে চায়,
সব ব্যথা তোলা থাকে যত্নে, যখন জীবনের মানে
চুপ করে খুঁটে, দিন থেকে দিনান্তে তুলে নিতে হয়।

যাবো না কোথাও আর, এই ছবি এই মোহ উচ্ছ্বাস
শান্তির শানে সোনালি পাখির গানে ভরা ঘরবার,
নিস্তব্ধতা জমিয়ে রাত্রিকে ওম দিয়ে নিবিড়তা নিয়ে
প্রতিদিন জমা জ্যোৎস্নায় করি তোমাকে আবিস্কার।







এবং একুশ

রেজা রহমান



অনধিকার চর্চা 
রেজা রহমান


কী যে কখন বলো কিছু যদি কাণ্ডজ্ঞান থাকে
কখনো কি কেউ কিছু জিগ্যেস করেছে তোমাকে?
এক তুমি একা তুমি কোন একা কবে সুখি হায়
দুঃখের কথা বলো দুঃখ কি তোমাকে মানায়?

যখন প্রেমের কথা বলো তুমি যেন খৈ ফোটে
বোঝো কি আসলে তার বিন্দুবিসর্গটি মোটে?
তোমার তো ঘর নেই ঘরের কথা যে বলো বড়ো
কিছু বলবে না তুমি শুধু দেখে যাও শোনো পড়ো ।

লিখতে চাইবে কেন লেখাটা যে বলা কে না জানে
কাজ কি এখন খুঁজে নষ্ট এই জীবনের মানে?






এবং একুশ

পবিত্র চক্রবর্তী



উড়িয়ে দিলাম 
পবিত্র চক্রবর্তী 



এক ঝাঁক রোদে পাখি তোমায় দিলাম উড়িয়ে ,
দিক্চক্রে পরিভ্রমণের পর পারলে এসো !
খিড়কির ফাঁকা কপাটে আজও দেখি 
ডানার আওয়াজ ;

রাতের ঘুমন্ত ল্যাম্পপোস্ট স্বপ্নের জাদু 
সব যেন মিলে যায় স্মৃতির অতলে .
যে গেছে, তাকে যেতে দিয়েছি -
শূন্যতার মানে বড় মধুর ,
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন মস্তিষ্ক আজ ; 
তবু দেখি শূন্য থেকে শুরু !!






এবং একুশ

তৃপ্তি




খবর
তৃপ্তি

বাংলা আমার জীবন জুড়ে
বন্ধু সখা সুজন 
বাংলা মায়ের কোল ছুঁয়ে রয় 
তেঁতুল পাতায় ন,জন ।

বাংলা মায়ের হাতের পরশ 
বাংলা মায়ের গান 
হৃদয় ভরা ভালোবাসায়
শীতল গঙ্গা স্নান ।

বাংলা দেশের সবুজ ফসল 
সোানার বরন ধান 
জোতদার আর মজুতদারের 
গোলায় অবস্থান ।

সকাল সন্ধ্যা দিন মজুরি 
ঘামের রক্তের দামে 
পেট ভরে না নুন পান্তায়
স্বপ্ন চোখে নামে ।

একদিন ঠিক আঁধার পেরিয়ে
আলোর খবর আসবে
বদলাবে দিন বাংলা মা ও
সুখের হাসি হাসবে ।









এবং একুশ

অনাদি চক্রবর্তী



তৃষিত ফাগুন
অনাদি চক্রবর্তী


এই মধুমাসে
সুনীল আকাশে 
উদাসী দক্ষিণা বায়,
কুঞ্জে কাননে
মধু গুঞ্জনে
মধুকর আজি ধায়।


শিমুলে পলাশে 
খুশী উচ্ছাসে
প্রেমের অরুণরাগে,
ফাগুনের সাজে
মম হিয়া মাঝে
পুরাতন স্মৃতি জাগে।

আজ পড়ে মনে
এমনি ফাগুনে
কৃষ্ণচূড়ার ছায়,
প্রতিদিন এসে
মুখোমুখি বসে
থাকতাম দুজনায়।

ঝড়া ফুলে ফুলে
বৃক্ষের তলে
রক্তিম আভরণে,
অজান্তে কত
স্বপ্ন জাগাত
শিহরণ দেহ মনে।

সোনালী বিকেলে
গঙ্গার জলে
সূর্যি ডোবার পালা,
অরুণ আভায়
কি মুগ্ধতায়
সাজাত বরনডালা।

পূর্ণিমা রাতে
কাক জোছনাতে
সে মোরে শোনাত গান,
বেদনা বিধুর
সে গানের সুর
কাঁদাত আমার প্রাণ।

আজও মধুর আবেশে
বসন্ত আসে
আসে সে ফাগুন বেলা,
শুধু তাহার বিহনে
তৃষিত ফাগুনে
দারুণ দহণ জ্বালা।



এবং একুশ

রানা পাল



দিন কাল 
রানা পাল



ইদানিং প্রায়ই আমার মা মুখ ফস্‌কে বলে ফেলেন,
যা দিন কাল পড়েছে, দু-একটা মিথ্যে বললে কিছু হয়না,
একটু আধটু ছল্লি বল্লি করতেই হয়,
ওপরওয়ালাকে তেল না দিলে কি ওপরে ওঠা যায় ?

এ সবের একটাও মা আমায় শেখায়নি,
আমি কি করে পারব,
এ জীবনে আমার আর ওপরে ওঠা হল না।

প্রান্তর জোড়া রোদ্দুর পেরিয়ে
একলা গাছের ছায়ায় বসতে চেয়েছি কেবল,
দু চোখ ভরে ছুঁতে চেয়েছি
নরম শিউলি ভোর,
কান্না ভেজা মানুষটির কাঁধে
রাখতে চেয়েছি আন্তরিক হাত,
এর পর তো শুধু নুন ভাত,
আমার সঙ্গে থাকবে তো তুমি মা ?

মেয়ে বলল, তুমি গরীব,
বাবা তুমি স্বীকার কর তুমি গরীব,
বাড়িতে একটা প্রপার সাউন্ড সিস্টেম নেই,
গান শুনতে পারি না।

আমি তো ওকে শেখাইনি এসব কথা,
ও কিন্তু অপ্রিয় কথা উগরে দিতে শিখে গেছে,
স্থান কাল পাত্রের থোড়াই পরোয়া।

মেয়ে আমার সত্যি বড় হল?
নতুন সময়, নতুন প্রজন্ম,
সত্যি ওরা এগিয়ে যাচ্ছে বুঝি?
কোন দিকে?











এবং একুশ

কাজী এনামুল হক




শেষপ্রহর ডাকছে
কাজী এনামুল হক


(আঁচলে শুকনো ফুল গিঁট খুললে কি বলে বুঝেও বুঝ না)


চলে যাবো, থাকবো না বেশীক্ষণ ফুরিয়ে এসেছে সব আয়োজন, 
খেলা শেষ মেলা গুঁটিয়ে এবার যে যার ঘরগেরস্থালী নিয়ে ব্যস্ত।
কোন ব্যস্ততা নেই; ধুতির কোচাটা ঠিক করে দিও, নিজেই দিও-
আর কাউকে হাত লাগাতে দিও না, ও শুধু তোমারই অধিকার।

জাত-পাত মানিনি কোনদিন মন থেকে, বহি:প্রকাশ হয়নি তার, 
অন্ধ সমাজ দ্ধন্ধে ভরে দিয়েছে জীবনের জর্দার কৌটা দিনরাত।
খুললেই আশপাশ ভরে গেছে কেমন নেশা নেশা গন্ধে প্রতিনিয়ত, 
বুঝেনি কেউ, না সেও বুঝতে পারল না! বোঝাবার চেষ্টা ব্যর্থ।

অনুনয় বিণয় করে ভালবাসা হয় না, ওতে মান অভিমানটুকু
ভাঙ্গান যায় শুধু! প্রেম খুব গভীর থেকেই উৎসরিত হতে হয়।
মুখে মুখে ছলাকলা সবাই জানে, অন্তর্নিহিত ভাব বুঝা কঠিন, 
ওতে গর্ব করার চেয়ে অত বড় বোকামী পৃথিবীতে কিছু নাই।

কষ্টের রং যদি হয় নীল, তাহলে নীলে নীল নীলকন্ঠ হয়ে গেছি,
যতটুকু বাকি আছে, আছে কি কিছু! না শুধু শেষপ্রহর ডাকছে।








এবং একুশ

শান্তনু দাশ




সীমানা
শান্তনু দাশ


তোমাকে গুছিয়ে রাখছি
নিষেধের বিছানায়
স্বৈরাচারী ভাবো বুঝি?
অথচ দিনের শেষে কেমন বিমূর্ত হয়ে ওঠো
দুহাত বাড়িয়ে উড়িয়ে দাও অবিচল
পাহাড়ি উপকথা

কলকাতা আসলে এক অরণ্যের ছদ্মনাম

প্রতিটা অন্ধকারের ভাঁজে
তোমার আরাত্রিক হাতছানি
সীমানা পেরিয়ে আমিও যাযাবর
অমরত্ব নয়, মৃত্যু এনে দেবে আফ্রোদিতি?









এবং একুশ

মনজিৎ কুমার দাস




বসন্ত বাড়ি আছো ?
মনজিৎ কুমার দাস


(কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতির উদ্দেশ্যে)


বসন্ত, বাড়ি আছো ?
কে যেন জিজ্ঞেস করে।
জবাব আসে,
ধুরন্ধর সময়ের ধুন্ধমার কাণ্ডকারখানার মাঝে
বসন্ত বাড়ি থাকে কী করে !

বসন্ত, বাড়ি আছো ?
কে যেন আবার জিজ্ঞেস করে।
জবাব আসে,
ফুল ফেটেনি, কোকিল ডাকেনি, দক্ষিণে হাওয়া বয়নি
বসন্ত বাড়ি থাকে কী করে !

বসন্ত, বাড়ি আছো ?
কে যেন আবারও জিজ্ঞেস করে।
জবাব আসে,
ফুল ফুটবে, কোকিল ডাকবে, দক্ষিণে হাওয়া বইবে
তবে তো বসন্ত বাড়ি থাকবে। 









এবং একুশ

পিনাকী

অকৃত্রিম প্রেম......
পিনাকী


তোমার শরীর -
পড়ে আছে বিছানার প’রে – অচেতন
পাশে ব’সে আমি... রাত্রিদিন।
একদিন এসেছিলে – লজ্জার আবরনে ঢেকে
সুগন্ধি বুকে মুখ গুঁজে... সারাদিন
যেন নদীতে পাল-তোল নৌকো... ভাসে উদাসিন।

আজ সেই খাটে...তোমার পাশে – দৃষ্টি অপলক
কালের ঘণ্টাধ্বনি ভেসে আসে অন্ধকারের ওপার হতে। 
মনে পড়ে তোমার আমার অর্ধশত দাম্পত্যের প্রতিটিদিন,
আজও যেন সদ্দফোঁটা ফুল অমলিন।

ফিরে দেখি তোমার যন্ত্রণা কাতর মুখ ...
অস্ফুট কথা ভেসে আসে...তারপর সব চুপ।
শেষবারের মতো চুম্বন করি... ঠোঁটে, 
আরও একবার বুকভরে নিতে চাই সেই সুগন্ধ – ঠিক আগের মতো।


                                  






এবং একুশ

জাফর পাঠান



ঋতুরানী
জাফর পাঠান


বসন্তরানীকে কেন বলো তোমরা- বসন্তরাজ
রাজা কি তবে ফুলে সেজে দেখায় পুরুষের ঝাঁজ,
নারীর সৌন্দর্যে ফুলের সম্পর্ক বলে পুস্পরানী
ফুলো রূপে রূপায়িত বসন্তকে নারী রূপে মানি।

ফুলে নারী আর নারীকে ফুল করে উপমা টানি
ফুলে ফুলে বাসর ঘরের- নববধূকেই জানি,
রসে ভরা ফলে যদি হয়- ঋতুরাজ গ্রীষ্মরাজ
বসন্তকে ঋতুরানী বলতে- কেহ নয় নারাজ ।

নারী খোঁপায় গাঁথলে ফুল নারী হয় অপরূপ
ষঢ়ঋতু মোহিনী সাজে বসন্তে পায় নবরূপ,
বসন্ত তুমিতো চাঁদিনী প্রকৃতির অভিসারিনী
তুমি বসন্তরানী নারীরূপে তুমি মনোহারিণী।






এবং একুশ

রূপক সান্যাল



দহন
রূপক সান্যাল



ঘরের মসৃণ মেঝেতে সমুদ্রের ঢেউ উঠলে
পিঁপড়ের মিছিল, মৃত প্রজাপতিদের হলদে
ডানা বয়ে নিয়ে যাবে -
আমার সব ক্ষোভ-দুঃখ-অভিমান, যুগ যুগ
চাপা ছিল কয়লা খনির বুকে – জ্বালানীর খুব 
অভাব ব`লে, কে যেন
তাকে তুলে নিয়ে এলো আজ … …
আমার এই বুক-ভাঙা-বুক
দহনের সহায়ক হবে খুব ?





এবং একুশ

পলাশ কুমার পাল



মা তুমিই গর্ব
পলাশ কুমার পাল


বাংলা-বর্ণমালা ঠোঁটে আধো আধো বুলি
অস্তিত্ত্বের জাতিস্মর।
হে শিশু, তোমার ভাঙা ভাঙা শব্দে পুনর্জন্ম;
যত শুনি কিলবিল করে ওঠে মাতৃস্নেহ...
মন্থনে শৈশব।

অক্ষরে অক্ষরে এক-একটা শ্বাস
পৌষালি ক্ষেতের রোদ,
পরিযায়ী পাখি মেখে নেয় ক'দিনের সবটুকু!

তবু বলি, পরিযায়ী নই!
বৃষ্টির নিঃশব্দ আঁকিবুঁকি দাগ জানলার কাঁচে
আজও ভুলিনি উলগুলান!

শব্দের মশাল ছুটে চলে
পাহাড় ঢিঙিয়ে
বন ঢিঙিয়ে
...কোনো সম্মেলনে-
কলমের গর্ভ থেকে বেড়িয়ে আসা কল্লোল...

'মা তুমিই গর্ব!'
মৃত্যুর পরও চিরস্বপ্ন-আঁচলে ঢেকে
শহীদদের খাওয়াও স্তন। 










এবং একুশ