মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০১৬

সম্পাদকীয়





প্রকাশিত হলো 'এবং একুশ' নভেম্বর, ২০১৬ সংখ্যা
এই সংখ্যার নির্বাচিত কবিরা হলেন -




ঋতব্রত ঘোষ
বৈশালী সেন
সেলিম কুরেশি
জাফর পাঠান
স্মৃতি
সুভাষ চট্টোপাধ্যায়
শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
শিবাংশু দে
সৌম্যদীপ রায়
গোপেশ দে
শান্তনু চ্যাটার্জী
শুক্লা মালাকার
অখিল কুমার দাস
আরশাদ উল্লাহ্‌
মেঘ শান্তনু
দেবীস্মিতা দেব
সোমাদ্রি সাহা
গৌতম দত্ত
রতন সেনগুপ্ত
ডঃ সুজাতা ঘোষ
শর্মিষ্ঠা নাহা






















এবং একুশ

ঋতব্রত ঘোষ



কাকবন্ধ্যা
ঋতব্রত ঘোষ



"এই নে না, টিকিট কেন না, আমি খুব পয়মন্ত রে, কত ফকির রাজা হয়ে গেলো, কত রাজা সম্রাট হয়ে গেল, তুইও হয়ে যাবি। নে না, টিকিট কেন না......"

পুনর্মিলন উৎসবের টিকিট চাইতে এসে লাটরিসায়েবের সাথে দেখা হয়ে গেল।
যুদ্ধে খুইয়েছে দুটো চোখ,
দুইখান হাত অবশ, কানে যা শোনে শোনে না
অবান্তর কথা বলে বাকি সব ঢেকে যায় প্রতিস্বরে,
জাত বেজাতের এজলাসে আস্কারা বিলি হয়;
সবেতেই এক ওজোর, টিকিট কেন না, নে না টিকিট।
টিকিটের দাম বেশি ছিল বলে নাকি আস্থা নেই তাই
রোগ, ধর্ম, গন্ধের বিচারে সটকে গেলাম,
প্রত্নবিদ্যার ঝলকানিতে ট্যারামেরা বসন্ত আলাপের মতো খেউর উঠেছে দেউলের আঙনে,
নদী তুমি ভাগ হলে কেন?
সরগরম হয়ে উঠছে মাহোল,
অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে যেন,
প্রতিদ্বন্দে মুখর মুখ গুলি উত্তেজনায় বেগনি হয়ে গেছে,
ইন্ধনের অপেক্ষায় তারা রাত জাগছে।


নদীরই দোষ।
সে কেনই বা অঞ্চল, গ্রাম, চৌহুদ্দি, নগর, বন্দর, দেশ
বিদেশের ঘেরাটোপ টপকালো?
পরিণামে পুড়ছে গ্রাম, ছারখার হচ্ছে শহর,
দগদগে ঘায়ের প্রকোপে
কাকবন্ধ্যার জরায়ু আর ভরে ওঠে না,
স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দেখেছিল বড় ডাক্তার
বলেছিল শহরে যেতে হবে, তবে ব্যারাম সারবে,
লাটরিসায়েব সেই থেকে রাস্তায় রাস্তায় টিকিট বেচে ফেরে,
লাটরি লাগে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে,
নদীর জল বেচার লাটরি
দেশভাগের লাটরি
ফুটিকড়ি পুঁজি লগ্নি করার লাটরি,
শরীর বেচা-কেনার লাটরি
দেশ ধ্বংস করার লাটরি,
কেউ কেনে, কেউ বাতুল বলে ধাক্কা মেরে চলে যায়,
গিয়ে আলোচনায় বসে,
সবাই বসে তুমুল আলোচনায়,
লাটরিসায়েব রাত বেরাতে আস্তানায় ফেরে,
ঘরে তার কাকবন্ধ্যা বউ
সেই কবে একবার বিইয়েছিল,
সেযাত্রা লাটরিসায়েবের বাড়ি থেকে
উৎসবের রোশনাই ভিনগাঁয়ে পৌঁছেছিল
চোগা-চাপকানে সেজে ইনিয়ে বিনিয়ে সায়েবের সে কি নাচন,
কাউন্সিলর বলেছিলেন, নেক্সট মহড়ায় এসো দিকিনি একবার,
তোমার একটা হিল্লে তোলা রইল এই।

একমাত্র অবলম্বন সে লায়েক হতেই দেশছাড়া হয়ে গেছে কবেই,
পুনর্বিন্যাস উৎসবের মহড়া চলছে বঙ্গীয় সংস্কৃতি দপ্তরে।
কেউ কিনছে, কেউ কিনছে না টিকিট যেমনটা হয়ে থাকে,
জনতার উল্লাস এবারের মতো থম্ মেরে গেছে।





এবং একুশ

বৈশালী সেন



খোলা চিঠি
বৈশালী সেন



গত চব্বিশ বছরে কখনো লিখিনি তোমায়,
জানি না কেন, আজ বড়ো ইচ্ছে করে
তোমায় লিখি মনের কথা,
'মা',সবাই বলে হাসি আমার 'প্রাণ খোলা'৷
আমি জানি, এ হাসি আমার নয়, এ তোমার৷
দিয়েছো আমায়, তাই না অমন হাসতে পারি৷
আর সব গুণ তো বোনের ঝোলায়৷
আমি শুধু হাসতে পারি৷

তবে, এই যে আমি লিখতে পারি
এও কিন্তু তোমার দয়ায়৷
অভয় দাও তো, সত্য বলি৷
সেই যে তোমার সাধের সবুজ খাতা-
যাতে লিখতে তুমি তোমার জীবন কথা,
আর ছিল মা প্রেমের কথা৷

'হাত দিবি না'— শাসিয়ে ছিলে৷
যেদিন তুমি চলেই গেলে,
পড়লো সেটা, তোমার এই দুষ্টু মে'টা৷
বুঝে ছিলাম সে'দিন আমি
কেমন করে বলতে হয় মা—'জীবন কথা'৷

জানি তুমি অনেক দূরে,
তারাদের দেশে বাস কর৷
সময় করে না হয়, তোমার
মেয়ের পত্রখানি একটু পোড়ো৷






এবং একুশ

সেলিম কুরেশি






মরণ
সেলিম কুরেশি




মরণ ১;
জীবনের সত্য জীবনেই নিহিত, তাঁর জন্ম কোন জরায়ুর গর্ভে নয়
না তাঁর মৃত্যু কোন খোদাই করা গোরস্তানে।
মানুষ হেঁটেছে কত পথ বছরে পর বছর, এ শুধু এক মুহূর্ত থেকে মুহূর্তের উত্তোলন
শুধু এক শাশ্বত অন্তিমের চিরস্তায়ী চমৎকার ; এক চাকচিক্য ধরে আছে
সপ্নের কেমেরার রঙিন অবলিলায় । সপ্ন ভাঙলেই জেগে উটে সমর্পিত মৃত্যুর মহা সন্ত্রাসে ।

মরণ ২;
ওগো মানুষ তুমি আর সাগরের ফেনার ফানুশ
ভেসে রও পানির নোনা শরীরে সাগরের সৈকতে
এক আমরন দুশমন বাতাসের কাছে সমর্পিত হবে বলে
আর বাতাস প্রবল হয়ে আসে দাঙ্গায় নামবে বলে
নিয়ে আসে সাগরের নোনা আত্তহুতি,
তুমি মিলিয়ে যাও বালিকার সিকিকোনে,
যেন ছিলোনা উৎপত্তি তোমার কোন কালে।
মানুষ আর ফেনার ফানুশ, একই সমান্তরাল চলাচল

মরণ ৩;
আত্মাই দেহের সেই অন্তরীন ভ্রুন,
একখান চাবি মাইরা দিছে ছাইড়া
চলতে আছে আপন ঘোরে,
জেগে উটে তাই অন্তিম জাগরনে।
ওরা বলে উদয়ের দিন,উন্মেষের দিন আজ ।
তুমি বুক ভাসাও কেঁদে, তুমি আর কোনখানে নেই বলে।
তুমি কস্মিনকালেও বুমার, আজিইতো তোমার প্রসববেদনার
এক ঐশ্বর্যশালী সৃষ্টির মহান যোগের দিন ।

মরণ ৪;
মরন দিয়ে গেছে অচলা মর্তের সন্তানের শেষান্ত
গানে গানে দেহ বলে তোমার হলও শুরু
আর মন বলে সুরে তালে তোমার হলও সারা
জয় জয়কার এখন আমারই অন্তরের অন্তরিক্ষে।

মরণ ৫;
মরন নিয়ে গেল স্পর্শ আর সংস্পর্শের সকল মান অভিমান।
রয়ে গেল জীবনের সকল সচেতন আর সজাগতা,
রেখে গেছ মনে স্মৃতির পাণ্ডুলিপি।
তুমি আর আমি হেঁটেছি মধুর বসন্তে, বর্ষায় ভিজেছি রিক্সার হুড তোলে,
খোজেছি উষ্ণতা শীতের সকালে চায়ের পেয়ালায়
গ্রীষ্মের খরায় ঘেমেছি ঘামে, লিখেছি নাম মাইলের ফলকে।
পরোলৌকিকতা পারবেকি ছিনিয়ে নিতে
জীবনের সকল স্মৃতির কথক আর ভৈরবী রাগ ।

মরণ ৬;
জীবনের আকুল সেই প্রতিক্ষা , শিশুর জন্মের গর্ভবস্তা
তারপর আবারো প্রতিক্ষা ।
দরজায় সেই অজানা কলিং বেলের ,মরনের শেষ আওয়ােজ
চলে যাওয়া এক অচলা শীতের খাঁজে
এইতো জীবন দুই প্রতিক্ষার হাত ধরাধরিতে।
এইতো জীবন জাতির উদয়ে আর বিলীনে
সকল কিছুর চলে যাওয়ার মাতমে।








এবং একুশ

জাফর পাঠান



শুনতে কি পাস্
জাফর পাঠান



চঞ্চল, উচ্ছল, উদ্দাম শিশুদেরকে
প্রাণহীন- নিথর করে দিচ্ছিস তোরা,
একেকটি সাজানো গুছানো সংসারকে
ক্ষণিকে ভাঙ্গিস একটানে আগাগোড়া।

স্বপ্নে বুনা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে
মানুষেরা যখন- শান্তির নীড় গড়ে,
ঠিক তখনি মারিস- বিষাক্ত ছোবল
মানবতার যকৃত খাস- ধরে ধরে ।

তোরাতো মানুষ খাচ্ছিস
জেনে শুনেই তা খাচ্ছিস।

মানুষ হিসাবে- এখন আর দেখিনা
তোদের ধর্মের লেবাস গায়ে মাখিনা,
তোদের রাজতন্ত্র, গণতন্ত্রের যন্ত্র
শুধু পুঁজিতন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদের মন্ত্র।

সাগরের প্রতি প্রান্তরে- ভাসছে লাশ
তৃপ্তে সাম্রাজ্যবাদ করে, নগ্ন উল্লাস,
আছি অপেক্ষায়, দেখতে তোদের নাশ
রে কুলাঙ্গারেরা, তোরা কি শুনতে পাস্ ।






এবং একুশ

স্মৃতি



কৌশিকী
স্মৃতি



আঁধারকে ভালোবেসে
প্রদীপ জ্বালাই
ঢেকে দিই সর্বনাশা
শরীরি বালাই..
হেই ই ই বাবু ইদিকে আয় অন্ধকারে জ্বালাব রোশনাই... কেন এত অন্ধকার খুঁজিস? হাতেতে বেলিফুল জড়াস --- আমি কিন্তু তামসী ই আছি
দেহ সুখ তোলা দরে বিকাই...
আজ বুঝি শ্যামা পূজা হবে টুকুস ভাগ আমাদেরো আছে -- ন্যাংটা বেটি কিসে এত বড়ো? সর্ব অঙ্গে রক্ত টুকু সার।
আমি কিন্তু কালী হতে পারি -- শ্যামা হওয়া কি সহজ কাজ, আমি যাব বিপরীত বিহারে
মাগো মেয়ে দিস এ পোড়া জঠরে....
দন্ড কেটে চেয়ে নেব মাপ.. শোন বাবু বৃদ্ধাবাসে বাবুরাই থাকে, আমাদের অনন্ত নরক
মেয়ে তবু খেটে নিয়ে দেহ
পার হবে খিদের সড়ক ------
' যা দেবী সর্বভূতেষু ক্ষুধা রূপেন সংস্থিতা '
এই টুকু যদি শুনতে পাস, তোর পূজা ঠিক দেব আমি
( হেই বাবু হোস না উদাস) ....
এই দেখ বাঙলা বোতল
ঢুকু খেয়ে একটুকু রাখ
ওই শোন বাজায় বাজন
বোধনেই শ্যামা বিসর্জন.....
একটু বেশি টাকা দিস বাবু এ কালী পূজোতে
টুকু ব্যথা লাগবে বাবু আজ আলো রাঙা রাতে
কৌমার্য ঘোচাতে......








এবং একুশ

সুভাষ চট্টোপাধ্যায়



মাতৃদর্শন
সুভাষ চট্টোপাধ্যায়



কে বলেছে শ‍্যামা- মা মোর বস্ত্রহীনা ? --
সত‍্য কি তা-ই দেখ যা সাদা চোখে ?
অন্তর থেকে দৃষ্টি বাইরে আনো --
দেখবে, মা মোর লজ্জাভূষণ ঢেকে !!

কে বলে মা মোর নরের রক্তপিপাসু -
হাতে মুখে তাই বহিছে রুধির-ঝর্ণা ?
জ্ঞানের খড়্গে মোদের গরল নাশি'
নিজে পান করি' মা আজ শ‍্যামবর্ণা !!

কে বলে মা মোর হয়েছে উন্মাদিনী ? --
নাচিছেন শিব- ভূমিতে তাথৈ ছন্দে --
জগৎসৃষ্টি এক সুর-তালে বাঁধি'
মেতেছেন নবসৃষ্টির মহানন্দে !!

কে বলে মায়ের গলায় মুণ্ডমালা ? --
ওরা তো মোদের শত তমোগুণরাশি --
সন্তানদের আত্মারে করি' শুদ্ধ
মা, দেখ, হাসেন কেমন মধুর হাসি !!!







এবং একুশ

শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়





দীপান্বিতা
শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়



যে দিন হৃদয়ে নানান রঙের মেলা
আকাশে তারার ঝিকিমিকি আলোখেলা
যে দিন খুশি'র তুফান সবার মনে
একা থাকলেও ঘিরে থাকে পাঁচজনে
আনন্দ বাঁধে হাসি'র সঙ্গে মিতা
সেই দিনই সাজে জীবনে দীপান্বিতা।

প্রেমের প্রদীপ যেই দিন উজাগর
স্বপ্নেরা সব প্রাণ পায় পর পর
মন মধুময় ডানা মেলে কুয়াশায়
চাহিদার বীজ ফসলের দেখা পায়
উদ্দীপনার আভা হয় আদৃতা
সেই দিনই সাজে জীবনে দীপান্বিতা।

যে দিন বন্ধু ভালবেসে কাছে ডাকে
শত্রুর সাথে গলাগলি সাতপাকে
বৈরির সাথে যে দিন স্বয়ম্বর
সবাই স্বজন, নয় কেউ দূর পর
সবাই যে দিন পরিচিত পরিচিতা
সেই দিনই সাজে জীবনে দীপান্বিতা।

সেজে ওঠে সব তনু-মন যেই ক্ষণে
সহৃদয়তার আলাপন মনে মনে
বাতাসের বুক আনন্দ সুধাময়
মুচকি হাসিতে বাঁকা চাঁদ তন্ময়
যত সাধ সব তৃপ্তি সমর্পিতা
সেই দিনই সাজে জীবনে দীপান্বিতা।











এবং একুশ

শিবাংশু দে



পাথরে রেখেছি...
শিবাংশু দে


এসব সবুজ বৃষ্টি নীল রোদে আশ্বিন
সকাল ভরে থাকে
টানা শরতের ওয়াগন শিস দিয়ে
চলে যাচ্ছে মহুয়ামিলন
আমাদের গল্পগাছা মেঘের আলস্যময়
কবুতর পাঠ
কোন স্বপ্নে আশ্রয় দেবো
তাকে
রোরো এক নদী
এপার ওপার ছায়া
প্যাস্টেল প্রতিম জল
পাথরের দীর্ঘ মন্তাজ
ঐ শ্মশানের কাছে
এক রাতে গান হয়েছিলো
ফুটেছিলো অস্থির শরীরময়
শাপলার নাল
তাকে কি কবিতা বলে
কবি এসেছিলো কাল
রাতে
স্বপ্নে
প্রমত্ত ধাক্কা তার
আগের মতই
এখনও রয়েছো তুমি
পাথরের চিতা
হায়
কে তবে পোড়ালো
তাহার মদ্যপ হাসি
শব্দের খুঁট
টেবো ঘাটি কাঁপায়
এখনও
চট্টোকূলোদ্ভব কবি
আগের মতই হাসে
স্বপ্নে এখনও
ঈষৎ ঘুরিয়ে ঘাড়
আগের মতই জেদি
জানতে চেয়েছে
যেতে পারি...
কিন্তু কেন....








এবং একুশ

সৌম্যদীপ রায়



রাগের বোতাম
সৌম্যদীপ রায়


‘রাগ’ লেখা বোতাম টিপতেই
অফিসের গগনচুম্বী লিফট্
আমাকে নিয়ে নামালো
অধঃপতনের বেসমেন্টে

সেখানে সাজানো আছে
সারিসারি ডাস্টবিন আর
মুখ লুকিয়ে বসে আছে
আত্মম্ভরি ব্যর্থতা

আর একটা নোটিশ বোর্ড টাঙানো -
আপনি এতদুর ঠিকই এসেছেন
কিন্তু ডায়মন্ড খুঁজে পেতে
আপনাকে নেমে
যেতে হবে
আরও গাম্ভীর্যের শক্ত মাটি কেটে










এবং একুশ

গোপেশ দে



তোমার জন্য
গোপেশ দে


তোমার জন্য ভালবাসার নিমফুল নিয়ে আসবো মেঠোপথ ধরে
গুচ্ছকবিতার চারাগাছে রোজ জল ঢালবো।
তোমার জন্য ক্রিসমাসে পুডিং বানাবো
সান্তাক্লস হয়ে চকলেট ক্যাডবেরি বিতরণ করে মাখাবো দু'গাল।
তোমার জন্য সুকুমার রায় আওড়াব নিজেকে পাগলা দাশু ভেবে।
কাকাবাবু,ফেলুদা,টেনিদা,এমনকি শার্লক হোমসের চরিত্র সাজবো।
তোমার জন্য বোমারু বিমান থেকে ঝাপ দেবো তোমায় নিয়ে
প্যারাসুটে ঘুটঘুটে আঁধারে বেড়াব প্রশান্ত আটলান্টিক বীচে।
তোমার জন্য পৃথিবীর জড়াগ্রস্থ ডালপালায় পাতার সঞ্চার করবো
ব্যারিকেড কাঁটাতার পেড়িয়ে দুঃখিনীর হাতে দেবো ফলমূল।
তোমার জন্য ওয়ার্ডসওয়ার্থের বোন ডরথিকে নিয়ে আরেকটি ড্যাফোডিল লিখবো।
সরল কথার পদ্য লিখে পাথরের বুকে সবুজের আলপনা আঁকবো
শুধু তোমার জন্য....






এবং একুশ

শান্তনু চ্যাটার্জী







ধূমকেতু
শান্তনু চ্যাটার্জী



জীবিত থাকার তাগিদেই জেগে থাকা
ঘুমের ঘোমটা বড় বেশি অশরীরি
নিশিডাক শুনে উঠে গিয়েছিল যারা
আছড়ে পড়েছে অযাচিত নিদ্রায়

আছড়ে পড়াই স্বভাব জন্মগত
ধূমকেতু হোক অথবা দূরের ঢেউ
নদী জানত না কতদূর যেতে হবে
এগিয়ে দিয়েছে, পৌঁছে দেয় নি কেউ।








এবং একুশ

শুক্লা মালাকার




লৌকিকতা ও সম্পর্ক
শুক্লা মালাকার



সচ্ছলতা নেই

লৌকিকতা আছে,

বাজারের থলে হাতে বেরোতেই হয়

বিশেষ করে উৎসবের দিনগুলোতে,

স্বজন বন্ধুদের মিলন মেলায়

কৌতূহলের কু-দৃষ্টি এড়াতে

আলমারীর কোন, শাড়ির ভাঁজ, তোষকের তলা হাতড়ানো।

কৌটোকাটি ঘেঁটে যতটুকু পাওয়া যায়

সহজতা জড়ো করা।



সচ্ছলতা নেই

গোপন সঞ্চয়ও শেষ,

মিথ্যেময় পূর্ণতা দিয়ে আপ্যায়ণ,

ধৈর্যহীন নগ্ন হিসেব নিকেশ।



বিতৃষ্ণার ঋণভার লিখে রাখে

সম্পর্কের অভিশাপ।














এবং একুশ

অখিল কুমার দাস


"শুধু ভালবাসার জন্য"
অখিল কুমার দাস


শুধু ভালবাসার জন্য এই গান গাওয়া
শুধু ভালবাসার জন্য এই কবিতার পিছু ধাওয়া
ভালবাসার বরে এই পৃথিবীতে আসা

ভালবাসার তরে এই জনারণ্যে ভাসা ॥


এই ভালবাসা আমার

নবজাত শিশুর মধুর ক্রন্দনে
এই ভালবাসা আমার
দ্বাদশীর নব ঋৃতু বন্দনে
চতুর্দশীর ভরা প্লাবনে
আর অষ্টাদশীর মিথুন আলিঙ্গনে ॥



ভালবাসা কখনও

প্রসব ব্যথার দারুন যন্ত্রনায়
ভালবাসা কখনও
বালিকা বধুর বিদায় গাথায় ॥



ভালবাসার জন্য

এই যৌবনকে বেঁধে রাখা
ভালবাসার জন্য
এই কিশোর মনকে হাতে রাখা ।
বার্ধক্যের জীর্ন বস্ত্রকে ছুঁড়ে ফেলা
মৃত্যু নামের কাল সত্যের অবহেলা ॥



ভালবাসা মানে গোলাপের মেলা

ভালবাসা মানে রাসের লীলা
ভালবাসা মানে অহেতুক কথা
ভালবাসা মানে অকারন ব্যথা
তবু
ভালবাসার জন্য এই গান গাওয়া
ভালবাসার জন্য এই কবিতার পিছু ধাওয়া ॥







এবং একুশ

আরশাদ উল্লাহ্‌






শীত এসেছে
আরশাদ উল্লাহ্‌


গ্রীষ্মকালে ঘাম মুছেছি আর বলেছি
ঠাণ্ডা পানি মাথায় ঢাল
রৌদ্র মাঝে হাঁটতে গিয়ে গা পুড়েছি
গাছের ছায়ায় বসা ভাল।
আর ক’দিন আছে বাকি গুণে দেখি
হাতের দাগে নিজ আঙ্গুলে।
নভেম্বরে তাপ কমবে মনে রেখো
শীতবায়ু আসে তখন গ্রীষ্ম গেলে
ক’টা দিন ধৈর্য ধর তখন দেখো
শীত এসেছে সারাদেশে প্রবল বেগে!
গুরুজনের এমন কথা হয়না মিথ্যা
বই-পুস্তক ঘেটে দেখো আছে লিখা
ঋতুর পরে ঋতু আসে সত্য কথা
বছরঘুরে আসে ক্যামনে যায় দেখা!
গ্রীষ্ম শেষে ঘরে ঘরে শীত এসেছে
হিমেল বায়ু কাপড় পরে রেডি থাকো,
উত্তরদেশে শরতপ্রান্তে তুষার পড়ছে!
শীত এসেছে হিম পড়েছে উষ্ণ থাকো
দেহখানি গরম রাখো কাপড় পরে,
হাড়-কনকনে শীত পড়েছে হিম পড়েছে
তৈরি রাখো শীতের পিঠা ঘরে ঘরে,
শীতের পরে নতুন রূপে সেজেগুছে
আসবে আবার নব সাজে বসন্তকাল
ফুটবে ফুল শতশত গাছে-গাছে,
অক্ষপথে বিশ্ব ঘুরে চলছে দ্রুত চিরকাল
জানে কি কেউ কার নির্দেশে এমন হচ্ছে,
কেমন করে রাতের পরে হয় সকাল!








এবং একুশ

মেঘ শান্তনু



কোনো এক যুবতীকে
মেঘ শান্তনু


চোখের কোণে নিঃস্ব বালুচর
শিশির তোমার ডাক নিয়েছে চিনে
যুবতীকাল প্রহর ভরা স্রোত
আঁখি মেলে তাকাও বৃষ্টি দিনে

অন্য আকাশ, অন্য কোনো জল
মেঘ সীমানা পেরিয়ে যদি চাও
বিকেল আলোয় কার্নিশে পা রেখে
হঠাৎ কেমন রাধিকা হয়ে যাও !

ছড়িয়ে দাও অপূর্ব সব পালক
আমি তোমার সর্বনাশের ডাক
তৃষ্ণা মেটাও, হা-পিত্যেষ বুক
কিছু মানুষ জ্যোৎস্না খুঁজে পাক

বৃষ্টিফোঁটায় সর্বনাশের ছোঁয়াচ
রাত বাড়লে ভাসিয়ে দেবো তরী
আরো একবার অন্ধ হবো আমি,
নগ্ন হয়ে দাঁড়াও, হে ঈশ্বরী !









এবং একুশ

দেবীস্মিতা দেব




চাঁদ
দেবীস্মিতা দেব




পূর্ণিমার চাঁদকে দেখলে
ঝলসানো রুটি বলে
মনে হয়না।
চাঁদের মধ্যে চাঁদের বুড়িকে
খুঁজে পাইনা।
অত দালানের মাঝে
আকাশটা আজ ছোট।
রাস্তায় বা ছাদে গিয়ে
চাঁদ দেখবার
সময় পাইনা।








এবং একুশ

সোমাদ্রি সাহা



সম্পাদক হাসালে
সোমাদ্রি সাহা



কবিতাগুলো লুকিয়ে রেখেছিলাম।
তুমি সম্পাদক এগুলোই পেলে...
মরার পর আমার সেন্ট না..
ড্রাফ্ট দেখতে বলেছিলাম...
সম্পাদক তুমি এগুলো আমার থাকতে দাও
কারণ এ ভালোবাসা শুধু আমারই...
মীরা এসব ডিলিট করে দিলেও
আমার সেন্ট বক্সে রয়ে যাবে এই প্রেম।
...
সম্পাদক ডিলিট করে দিচ্ছ কবিতাদের --
কেন মীরা তোমার স্ত্রী বলে!!
স্ত্রী-কে
নিঃস্বার্থ ভালোবাসতে পারনি,
যৌনযন্ত্র ভেবেছো আর...











এবং একুশ

গৌতম দত্ত



তালগাছ
গৌতম দত্ত




বয়স বেড়েছে ঢের। তালগাছ এক পায়ে ঘুমোয়নি কতদিন !
নরম নরম ভিজে মেঘ ছুঁয়ে দেয় যদি তারে, এইরূপ আশা নিয়ে—
খাড়া হয়ে থেকে যায়। হাঁটু মুড়ে বসবার সাধ হয় কতোবার,
কতোবার সাধ জাগে উবু হয়ে শুয়ে পড়ে পুকুরের জল ঘাঁটে—।
মসৃন জলের স্বাদ পেতে চায় কতোবার— ! চিন্তার ভেতরে তার।
পাবে না তা কোনোদিন—, এটাও সে জেনে গেছে ; বুঝে গেছে, বেঁচে থাকা
অসফল বর্ণহীন। তবুও তো বেঁচে থাকা, অনাগত স্বপ্ন বুনে—
জীবনের চলাফেরা, ক্ষণিক ফলের লোভে। ধন্য আশা মায়াময় !


#

বৃষ্টি এসে পাতা ছুঁলে, একবার সাধ হয়— বাদলের অন্ধকারে—
শরীরে নরম স্পর্শ, আনাগোনা উঁচুনীচু— হরেক মেঘের সাজ !









এবং একুশ

রতন সেনগুপ্ত






প্রশ্নহীন
রতন সেনগুপ্ত




আমাকে বলাও পাপী
কি পাপ আমার?
ফিরে ফিরে এক কথা শতাব্দী অতীত
কর্মহীন নিবেদন জানুপাত
আমার ইচ্ছে নয় এতটুকু কোথাও, সবই তোমার - এই তো জন্মাবধি
তবুও পাপী ? পাপের ভাগীদার ?


এ এক মস্তিষ্ক স্রোত শিশুকাল থেকে
ডুব দিয়ে খায় ভিতর সংসার - তোমারই জয়
কোটি কোটি মুদ্রা মাথার ওপর নাচে
ভিক্ষাপাত্র হাতে তুলে বলি করুণা তোমার
এই শেষ সমাচার
প্রশ্ন করা যাবে না প্রশ্ন অবিশ্বাসী দুরাচার

তুমি এতই শক্তিমান
ঝটকা দাও দেখাও কেরামত
আনো সত্য সুন্দর - বলা যাবে না
এই অলীক অদৃশ্য প্রশ্নহীন মায়াজাল
চায় অজস্র গোলাম মাথা নত করে দাঁড়াক সম্মুখে

মানুষ হবার কিছু নেই - হটাও হটাও
সবই ভাগ্য নির্ধারিত কর্মফল
ছড়ি শুধু জানে কে নাচায় বিশ্ব সংসার
প্রশ্ন করো না
প্রশ্ন পুরনো ব্যাভিচার

মঙ্গল দীপ জ্বালো, জ্বালাও - বোলো না কার
প্রশ্ন হয়ে যাবে









এবং একুশ

ডঃ সুজাতা ঘোষ




শীতের পাখিদের মতো
ডঃ সুজাতা ঘোষ




আমি একটা দুরন্ত গতিতে রঙ বদলানো ভীষন রকম ভালোলাগা।
আমার জন্ম – মৃত্যু – থামা নেই।
আমি গোলাপি ভালোলাগায় জড়ানো একটা উড়ন্ত মনন।
প্রতিবার ব্ল্যাকহোলটার কাছে এসেও আবার ঘুরে দাঁড়াই,
আর মনে জড়িয়ে নেই গরম উত্তরীয়।


শীতের পাখিদের মত লেকের জলে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখি আর দেখি।
আমি অবাক হই, এত রঙ – রূপ – নেশা ............ সবই আমার!
আমার জন্যই কি মানুষ ক্ষত – বিক্ষত করে নিজেকে?
আমি হাসি ঝলসে ওঠা বিদ্যুৎ এর লালচে বাঁকা আলোয়
ওগো শুনছো? তোমায় বলছি, আমি ভেসে চলা চেনা মেঘেদের সারি।

পিচের কালো ধুলোময় রাস্তায় হেঁটে চলা মানুষগুলো ভাবে
এই বুঝি ধাক্কা খাবো উঁচু উঁচু, খোপ খোপ
মানুষের ভালোবাসার ঠিকানার সাথে।
না, আমি ওদের গায়ে মিশে গিয়ে আবার আঁকার ধারন করি।
আমার নাম ভালোবাসা। হ্যাঁ গো, আমার নাম ভালোবাসা।

আমি ওই সাত রঙ মিশে যাওয়া সুন্দরী শীতের পাখি .........
দেখো আমার দিকে চেয়ে
হ্যাঁ, ঠিক ঠাওরেছো।
আমি বাস করি তোমাদের ওই রঙ্গীন মনের
অনেক অনেক অনেক গভীরে।।






এবং একুশ

শর্মিষ্ঠা নাহা






'ভাই' - নাই
শর্মিষ্ঠা নাহা




তোকে আমি ভাই ই ভেবেছিলাম,
পাশে ছিলাম সকল শুভক্ষণে:
যমদুয়ারে কাঁটাও দিয়েছিলাম ;
তোর কপালে ফোঁটাও মনে মনে।


সেই বিপদে তোকেই ডেকেছিলাম,
'ভাইটি' বলে কান্না পায়ে ধরে -
গায়ের জোরে মাড়িয়ে গিয়েছিলি,
দৃশ্যগুলো মনে কি তোর পড়ে?

যন্ত্রণা আর রক্তস্রোতে ভেসে,
জীবন গেছে ছাই হয়ে যে পুড়ে।
সর্বনাশা মস্ত কী ঝড় এল!
শান্তি গেল জীবন থেকে উড়ে।

'ভাই' নাম সেই ক্ষণেই ঘুচে গেল,
অপরাধীর তকমা হল সাঁটা:
দুয়ারে দ্যাখ মরণ নাচে ওই -
কে দেবে তোর যমদুয়ারে কাঁটা?





এবং একুশ