বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৫

সম্পাদকীয়





নবম সংখ্যার কাজ করছি, হঠাৎ ‘টিং’ করে নোটিফিকেশনের শব্দ শুনে উঁকি মারলাম পাশের ট্যাবে। ইনবক্স – ইন্দুমতী – একটা অ্যাটাচমেন্ট – ওপরে লেখা ‘তোমার জন্য’। খুলতেই দেখি একটা কবিতা – 



সবটুকুই তো তোমার 
কিছুই রাখিনি বাকি 
মাঝে মাঝে নিজেকেই 
ফাঁকি দিই আজও... 
যা পেলাম, একবার মিলিয়ে 
নিতে ইচ্ছে করে। 
পাওনা ছিলো কিনা- 
সেটাও তো জানা দরকার 
দয়ার দানে বড় ভয় 
করুণা কোরোনা কখনও আমায় 
যোগ্যতা থাকে যদি বিন্দুমাত্র 
দিও সমানুপাতিক 
অপ্রাসঙ্গিক মনে হলো বুঝি! 
জাফরিকাটা নকসা দেখে 
গভীর জলোচ্ছ্বাস – 
প্রাসঙ্গিক নয় কি? 
সবুজ পাহাড়ের ঠিক 
নীচটার চারণ ভূমিতে 
শুধু গাভী নয় 
গর্ভীনী মনও আতঙ্কে মরে 
তোমার শিখীচূড়ার নীল আভাস 
বিষে বিষে গাঢ় অপরাজিতা রঙ 
কাঠঠোকরার ঠকঠক ঠকঠক 
বকবক বকবক… ক্লান্তিতে 
দু’চোখ বুজে আসে 
বর্ষার মেঘ একটুকরো 
পাঠিয়ে দিয়ো তো বহুতলের 
কার্নিশে… বারান্দা-বাগানে 
বিরহিণী রাধিকা… এসো এসো পুরুষোত্তম 
একটু স্কচ আর চিকেন পপকর্ণ… 
রাত্রি এখনও যুবতী। তবুও 
আমাকে এবার যেতেই হবে। 
না না – সবুজ অন্ধকার নয়… 
ছাতিমের মাতাল গন্ধ আর 
শান্তিনিকেতনের রাস্তায় পড়ে 
থাকা পাকা তাল... 
সঙ্গে যদি আসতে চাও 
কোপাই-এর শুকনো খাদে 
পাশাপাশি শুয়ে থাকি চলো 
জল এলে যাবো না হয়
ভেসেই… ততক্ষণ শুধুই 
অপেক্ষা অপেক্ষা অপেক্ষা… 



কেমন যেন একটা বিষাদের ছোঁয়া কবিতাটায়... চিন্তা হলো মেয়েটার জন্য।


ইন্দুমতী আইয়ার। উপাধি টুকু ছাড়া অবশিষ্ট আদ্যন্ত আষ্টেপৃষ্ঠে বাঙালী। বছর আট-নয় আগে একটা সেমিনারে গেস্ট লেকচারার হয়ে গিয়েছিলাম শান্তিনিকেতনে, সেখানেই আলাপ ইন্দুর সঙ্গে। তন্বী শ্যামা অসম্ভব মিষ্টি একটা মেয়ে। আশ্চর্য সমাহিত এক চরিত্র। সেমিনার শেষ হয়ে গেলো বিকেল ৪টেয়, এদিকে ফেরার ট্রেন সেই শেষ সন্ধ্যায়। চা খেতে ডাকল সোনার তরী হাউসিং-এর একটা ছোট্ট ডুপ্লেক্সে ওর আস্তানায়। বাইরে ভেতরে ছবির মতন সাজানো বাড়িটার চৌকাঠ পেরতেই কেমন যেন মনটা ভাল হয়ে গেলো। সেবার ঘন্টা চারেকের আলাপচারিতায় এটুকু বুঝেছিলাম, মেয়েটার অনেক গুণ। 


এর বছর তিনেক পর লিঙ্গুইস্টিক্সের একটা ওয়ার্কশপের চিফ কো-অর্ডিনেটর হিসেবে ডাক পড়ল ওদের ওখান থেকেই। ও তখন ওই ওয়ার্কশপের প্রজেক্ট লিডার। তিন মাসের প্রজেক্ট। থাকার ব্যবস্থা ও নিজেই করেছে, কোনও গেস্ট হাউসে নয় – ওর নিজের বাড়িতে। এবার মেয়েটাকে খুব কাছ থেকে দেখার জানার সুযোগ হলো। এতগুলো গুণ একসঙ্গে একটা মানুষের থাকতে পারে, ওকে না দেখলে জানা হতো না। 


বাগান ও বাড়ির অন্দর সজ্জা – দুটোই করে নিজে হাতে। এবং করে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গেই। ওখানকার আবহাওয়ায় কোন গাছে কোন সময় কি সার দিতে হবে, কোন সময় কতটা ছেঁটে রাখতে হবে, কোন সময় গাছের গোড়ায় একটু পাথর আর বালি চাপা দিয়ে রাখতে হবে... পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান। আবার ঋতোপোযোগী অন্দর সজ্জা যে কাকে বলে, কোন জায়গার আলোর মাত্রা যে কেমন হওয়া উচিত, সপ্তাহের কোন দিন খাবার টেবিলে কোন প্ল্যান্ট, কি ভাবে থাকা উচিত... কোনও ফর্মাল ট্রেনিং ছাড়া এমন নিখুঁত অবহিতি যে কি করে হলো, তাও ধারণার অতীত। নিজে হাতে রান্না করতো। রান্না করতে করতে কাঁচি দিয়ে সব্জির খোসা কেটে কেটে রান্না ঘরের টেবিলের ওপর সাজিয়ে সাজিয়ে অমন অপূর্ব আলপনা দিয়ে রাখতে আমি আর কাউকে দেখিনি। সারা বাড়িতে ওর নিজের হাতে আঁকা অসাধারণ সব যামিনী রায় স্টাইলের পেইন্টিং। ঝরঝরে বাংলা লেখার হাত। অপূর্ব গানের গলা। ওদিকে আবার একই সঙ্গে ওড়িশি আর মনিপুরী ড্যান্সে স্পেসালাইজেশন। অথচ এতো যে গুণ, কাছ থেকে না মিশলে বাইরে থেকে দেখে একটুও বোঝার উপায় নেই। আমি ওর গুণে পাগল হয়ে গেলাম। সখিত্য আরো গাঢ় হলো, কথায় কথায় যখন জানতে পারলাম একেবারে সাল তারিখ মিলিয়ে আমাদের জন্মদিনটা এক। 


দিন কয়েকের মধ্যে ইন্দু আমাকে ওর এক বিশেষ বন্ধুর সঙ্গে আলাপ করাতে নিয়ে গেলো। গিয়ে দেখি আবীরলাল মুখোপাধ্যায়। আবীরকে আমি চিনি। সেই যাদবপুরে পড়ার সময় থেকে। কোন যোগাযোগ ছিলো না অবশ্য। শুনলাম আবীরও এখানে এসেছে একটা প্রজেক্ট-এর কাজেই। ওর প্রজেক্টটা হলো – হ্যান্ডিক্রাফ্ট অফ রুরাল বেঙ্গল: রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট-এর ওপর একটা ডকু-ফিল্ম বানানো। একটা বিদেশী কম্পানি স্পনসর করছে। এখানে আছে বেশ কিছু দিন। থকতে হবে আরো বেশ কিছু দিন। আবীর একটা ঝলমলে চরিত্র। ছটফটে, আনন্দপ্রিয়, সৌন্দর্য পিয়াসি মানুষ। আর ঠিক এই জায়গাতেই ওদের আত্মার বন্ধন, আমি বেশ উপলব্ধি করতে পারলাম। 


সারা দিনের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ওরা দেখা করে নিতো ঠিক। কখনো ওদের দেখতাম স্টুডেন্ট হস্টেলের পিছনের সিঁড়িতে, কখনো বা ছাতিম তলার সামনের আমবাগানের বেঞ্চিতে। আবীরের মতো ছটফটে মানুষটাও ইন্দুর পাশে কেমন যেন শান্ত হয়ে যেতো। বিকেলের দিকটায় ওদের প্রায়ই দেখতাম উদয়নের প্রাঙ্গণে, উদিচীর বারান্দায় পাশাপাশি চিত্রার্পিতের মত নিশ্চুপ নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখছে। ওদের এই বহিঃপ্রকাশের উচ্ছ্বাসহীন নিবিড় আত্মীয়তা দেখতে দেখতে তিন মাস কেটে গেলো। আমার কাজ শেষ। আমি কলকাতায় ফিরে এলাম। কিন্তু ওদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগটা রয়েই গেলো। এর প্রায় আড়াই মাস পর শুনলাম আবীরের কাজও শেষ। আবীর কলকাতায় ফিরছে। এখান থেকে সোজা যাবে বিদেশী স্পনসর কম্পানির হেড অফিসে। 


এরপর সে এক অন্য ইতিহাস। ইন্দুর লেখায় লেখায় ঝরে ঝরে পড়তে লাগলো আবীরের যশের গল্প। সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়াচ্ছে আবীর। ইন্দুর কাছেই খবর পাই। তারপর হঠাৎ করেই ধীরে ধীরে একদিন বদলে যেতে শুরু করলো ইন্দুর লেখার ভাষা। উচ্ছ্বাসটা কমে এলো ক্রমে ক্রমে। আবার সেই শান্ত সমাহিত আত্মস্থ ইন্দুমতী। কিন্তু বিষণ্ণতার মালিন্য কখনও স্পর্শ করেনি ইন্দুকে। তবে আজ কেন এই বিষাদের সুর? তবে কি দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসানের কোন সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে? তাই কি ইন্দু একটু শঙ্কিত? শুনেছিলাম যেন কার কাছে, আবীর ফিরছে দেশে। এত দীর্ঘ দিন পরেও কি আবীর সেই আগের মতনই আছে? চিন্তা হচ্ছে এবার ইন্দুর জন্য, বড় স্পর্শকাতর মেয়ে। আমি যাই, একটু খোঁজ নিয়ে আসি মেয়েটার। আপনারা বরং ততক্ষণ ডুব দিন ‘এবং একুশ’-এ। 


শুভেচ্ছা নিরন্তর...
সুস্মিতা বসু সিং 













এবং একুশ

বৈজয়ন্ত রাহা




বৈজয়ন্ত রাহা




নেই

হারিয়ে যাবার চেয়ে অধিক ছিল পাখিদের মাতৃভাষা...
গাছেদের ওম
সম্ভোগের পরে ছিন্ন অবসাদ মাটি ছুঁয়েছিল আবাল্য অরণ্যে
কষ্টেরা স্বাধীনতা পেয়ে উড়ে গিয়েছিল সম্পর্কের পাতাগুলি থেকে
তোমারি আঘ্রাণে কুয়াশারা নেমে এসেছিল ডানা মোড়া দুপুর-রেলিঙ্গে...


ভুল

আলতো সে হাত ছুঁয়ে বলেছিল লেবুরং রোদ
বন্ধ দুচোখে , দেখাটুকু করে গেছে সব দেনা শোধ
অদেখাতে অতীতের সব ছবি সাজিয়েছে ভালবাসাবাসি দিন
সেলফোনে পুরোনো সে রিংটোন এঁকে গেছে ভুল রং ভুলেই রঙ্গীন 
মেঘের আঁচলে বাঁধা দেওয়া কথা ঘুমিয়েছে , ছেঁড়া তমসুক
উড়ে গেছে, নদীতীর হেঁটে গেছে বহুদূর , রোদরং পিছনে আসুক...




















এবং একুশ

ইন্দ্রনীল ভাদুড়ী




এলোমেলো ভাবনা 
ইন্দ্রনীল ভাদুড়ী


বহুদূরে মনের গভীরে যখন তুমি প্রতিনিয়ত 
সূর্যের স্বর্ণালী আভার ঝলকের মাঝে বলিষ্ঠতা খুঁজে বেড়াও, 
আমি অন্বেষণ করতে থাকি মদিরার সুবাসে বারবার, 
নিবিড় স্বপ্নালু স্পর্শের হারানো রহস্য কি গ্রাস করে 
একটু একটু করে এক ভাঙাচোরা হৃদয়ের কিছু টুকরো নুড়িপাথর ? 
হয়ত বা জানা নেই অচেনা সে প্রশ্নের ঝাপসা কোন উত্তর – 
বড় বজ্রকঠিন কাজ তখন আমার কাছে, 
প্রেমকে দৃঢ়বন্ধনে আবদ্ধ করতে, 
অথবা কর্কশ ঠোঁটের উষ্ণস্পর্শে 
তোমার বিদ্রোহী চেতনাকে গলিয়ে দিতে চাওয়া ...। 
কালো মেঘ জমতে শুরু করে আকাশে, 
এবং সীমাহীন ব্যর্থতা বেদনারূপে কুরে কুরে খায় ! 
জয়ডঙ্কা বাজায় তখন চরম অহংকারী কর্তব্যবোধ ! 
আর তুমি ? হঠাতই যেন সামাজিক অপরাধপ্রবণতা থেকে চাও পালাতে ।। সন্ন্যাস এর চাদর গায়ে দেওয়া বিবেক এসে বাধা সৃষ্টি করে ... 
ঠেলে সরিয়ে দেয় তোমার তীব্র ইচ্ছেগুলি – 
গোপন ভালবাসা, নিষিদ্ধ পাপের মোহ তখন উপভোগ্য ব্যাকুল মন জুড়ে ... শিহরিত অন্তর যায় রয়ে , ধীরে ধীরে মধ্যরাত্রির শ্মশান হয়ে, 
এলোমেলো ভাবনার জ্বলন্ত চিতার বিষাক্ত ধোঁওয়া 
গিলে খায় তোমায় আর আমায় ! ক্রমে নিদ্রার পরশ, তখন আমার সুখসাগর । থেকে যাও তুমি একলা, ভেঙ্গে পড়ে চূর্ণবিচূর্ণ হয় দামী হুইস্কির গেলাস 
বাইরে এল কালবৈশাখী, উড়ে যায় শুকনো পাতা শত শত ...






















এবং একুশ

নিরুপম দত্ত




ইচ্ছে
নিরুপম দত্ত




এখন রাতের আকাশে তাকালে 
তারাগুলো ডাকে 
আয় চলে আয়। 


এখন নদীর পারের 
গোলাপী জলে ইচ্ছে করে 
অতল ছুঁয়ে দিতে। 


এখন চারিদিকে শুধু 
প্রেমের হাতছানি 
কিছু নেই আর এই পৃথিবীতে।

















এবং একুশ

অপরাহ্ণ সুসমিতো



একটি কাব্য নাটিকার শুভ মহরত
অপরাহ্ণ সুসমিতো



হ্যামলেট :
তোমার সাথে আজ সারাদিন রোদ বৃষ্টি শাখা
দূরে দূরে মেঘের সাথে হাওয়ায় মিলন মাখা ।


ওফেলিয়া :
মেঘদূত এসে করবী করেছে দেখো । আজ কোনো কাজে মন নেই কেন? পড়তে ইচ্ছা করছে না? শেখো । টেবিলে জমে আছে সোনার তরী । স্নান ঘরে তোমার স্পর্শ মাখা কস্তুরী । জানালা গলে মেঘ এসে পড়লো সে কি? আমার ভিনদেশী কালিদাস শুনতে কি পাও দ্রিমিকি?


হ্যামলেট :
জানি গো জানি সুযোগ পেলেই ডাকাবুকো সৃষ্টি । তুলতুলে মেঘ পেলে পিষে করবে অমল বৃষ্টি । ঝরবে আমাদের কাননে । আমি শ্রাবণধারা বলে বলে খালি পায়ে স্মরণে । ফোটাবো কুসুম কলি । আঙ্গুলের ডগায় তুলে নেবো স্মৃতির অলি । কাঁচের জানালায় ভেজা হাতে তোমার নাম মিলিয়ে, প্রতিধ্বনি করে বলবো : কার সম্পদ কাকে দিলে বিলিয়ে ?


ওফেলিয়া :
থাকবে বুঝি মনে ? কেউ একজন ভেজার অপেক্ষায় বুঝি মরণে? নিজের ঘরের সামনে তোমার গ্রীবার সীমানা ভাসে,তোমার অপার আঙ্গিনায়হাসে । চেনা আকাশে অচেনা ছায়াপ থকে ডাকে । এ শহরের পথে পথে তোমার পথের শাখে ।


হ্যামলেট :
ইশ রেণু তুলবে আমার ভ্রমর ! পারবে সামাল দিতে আমাকে বাকী জীবনের সমর? সমস্ত জীবন জমিয়ে রেখেছি, তোমার রেণু আমি অবিরাম মেখেছি ।










এবং একুশ

লোপামূদ্রা মুখার্জি



রংবাহারী মন 
লোপামূদ্রা মুখার্জি 




ফুল নয়, ও তো নষ্টের সাক্ষী রাখে
পাতা জানো বেশ সবুজ ডাকে
আসমানে গুমরে ছিল মন
তৃষ্ণার্ত্ ডাকে রিম ঝিম বরষণ।

তনুর বাতায়নে সময় সরনী রয়ে যায়
স্মৃতি ছুঁয়ে যাওয়া মুহূর্তরা লুকোচুরি খেলায়
পেঁজা পেঁজা অনুভূতিরা বেশ টাটকা,
অনুভূতি বিহীন ভালোলাগা গুলো বড্ড্ ফাঁকা ফাঁকা।

মন জানলায় চাঁদের হাসি
আজও বাতাস বাজায় কানুর বাঁশি,
ফিরোজিয়া রং চুবিয়ে পথ চলা
হাজার রংবাহারী মোড়কে কথা বলা,
বলতে, চলতে, শুনতে নও ছুঁই মন
সে এলেই দাঁড়াবে না অপেক্ষারা কিছুক্ষণ।













এবং একুশ

অনুপম দাশশর্মা



ভাসতেই হয় 
অনুপম দাশশর্মা



প্রতিটি অবাধ্য ইচ্ছা অশান্ত্ মনের শিকড়,
এ খবর জানে যামিনী, জানে গর্বের প্রভাকর
সকালের হাতে যখন সম্ভাব্য গরমিলের অসহ্য দিনলিপি
মুঠোয় পিছলে যায় সভ্যতার সুস্থ্ মন, খুশির সঙ্গীত।
দিন শেষে ক্ষোভের তুষ থেকে ফুঁসে ওঠে অস্থায়ী শিবির।

সেখানেই সময়ের কাছে ভিক্ষার হাত পাতা
সময় আর কোথায় দেয় ছাড়,
যে দিন চলে যায় হাত নেড়ে
তার কাছে পাওয়া যায় মিথ্যের মোড়কে
কিছু সুখের অভিসার।

সর্বত্র্ বিষময় আবহ
আশ্বাসের বাঁশি বেজে চলে হাজারো পোষাকের জেল্লায়
রংমশাল জ্বলে একা একা,
যতক্ষণ চলে আলোর দাপট, বিষাদ ভুলে থাকা
প্রচেষ্টারা কিছুটা স্বস্তি পায়।

এই জীবন, এই আমাদের অ-সুখের দেশ
শেখাচ্ছে ভাসতে প্রতিদিন
সাথে আছে ডুবুরীর বেশ।









এবং একুশ

তন্ময় বসু

সেলফি
তন্ময় বসু



চাঁদের সেলফি তুলতে মিনিমাম কত মেগাপিক্সেল?
আনুগত্যে পুষিয়ে যাবে, কিছুটা
রিচার্জ করতে অল্প কিছু প্রেম; বাকীটুকু দিয়ে বোরখা।
ফেল কড়ি, 

সবাই নিজের -
সেলফি জুড়ে জেগে থাকে রাত
রেজলিউশন বাড়তেই থাকে তোমার।









এবং একুশ

দেবাশীষ দে





শহীদ মিনারে রাত
দেবাশীষ দে 




বলছি শোনো। শহীদ মিনারে ওঠা আমাদের মানায় না ।
তুমি কি অবাধ্য মেয়ে ? চিৎকার করে বলো,
হাতধরে টানো, ‘উচ্চতা ছাড়া নাকি ভালোবাসা যায় না ।’

আমি তো ছিলাম অনেক দূরের অশ্রু ভেজা ছেলে ।
তুমি কি রোদ্দুর নাকি ? ডাকলে যে,
শুখিয়ে নেবে ? তোমার বারান্দায় হৃদয় দেব মেলে ?

কিছু কিন্তু নেই আমার । সম্বল সামান্য লেখালেখি ।
তুমি কি উড়ন্ত পাখী ? নীল কালিতে,
কবিতার হারানো শব্দ সব, খুঁজে আনো দেখি ?

সিঁড়িতে তোমার উচ্ছলতা আমি কি সামলাতে পারি ?
তুমি কি যুবতি হলে ? সিঁড়ির শেষ ধাপে,
পিঠ ছুলো তোমার বুক । উত্তাপে এবার বুঝি মরি ।

মিনার চূড়ায় দেওয়ালে ঠেস, বুকে আছড়ালে তুমি ।
তুমি কি সমুদ্র নাকি ? দোলাবে আজ ?
মফঃস্বলের ছেলে, মহানগরে কেঁদে ফেললাম আমি ।

মহানগর রাতজাগে, মফঃস্বলে জ্বলছে জোনাকি আলো ।
তুমি কি রামকিঙ্করের মূর্তি ? খুলে দিলে
রাত পোশাক । আবদারে আজীবন ভালোবাসবে, বলো ?

আগুন, রাতগান, অশ্রু, নীরবতা, সাক্ষী থাকে মিনার চূড়া ।
তুমি কি ঝর্ণাধারা ? ধুয়ে ফেলো বাসি দাগ ?
মহানগরে সূর্য উঠলেই কি ডুবে যায়, মফস্বলের সব তারা ?



















এবং একুশ

মিজান ভূইয়া



সেই স্বপ্ন  
মিজান ভূইয়া



ভুলে ভুলে চাষ
করি স্বপ্ন।
সত্যের সন্ধান পাই শৈশবে।
কৈশোরে তোমাকে
বেনসনের মতো ধরে
ফেলি।
আলোচনায় অধিকারে
অতীতে ফিরে ফিরে যাই।
প্লেনের
ভিতরে বসে শীত বাজাই।
সেই মাঠ আমার মনে থাকে না। কল্লোলিত জল, নানা
নূপুর ধ্বনি মনে থাকে না।
ভিতরে চলচ্চিত্রের মতো নদী
নানা আয়ু রেখে ঘরে
যায়।
আমি সব উপেক্ষা করে,
তোমাকে নিয়ে 
বাগানে বাগানে
ঘুরি,
চেয়ারে বসিয়ে তোমার মুখ
মুছে দেই।








এবং একুশ

পলাশ কুমার পাল



কোন প্রেম
পলাশ কুমার পাল



চপ্পলের অভিঘাত ভুলে
ধুলোরা চপ্পলের পেছু পেছু ধায়.....
কিছুটা লাফিয়ে উঠে
চপ্পলের টবে মানুষ-উদ্ভিদের পা ধরে,
কোন গোপন কথা বলে যায়?

পাতা মিটমিট করে দেখে,
বুকে ফুল পুষে
গাছের শিকড় তবু অন্ধকার সাম্রাজ্য রচে.....

নির্বাক পৃথিবী।

পথিক হেঁটে যায়
ধুলোর পৃথিবীতে কলম হাঁটে-
কাগজওয়ালার ঝাঁকায় শূন্য-কাগজ,

ধুলো ভরে নিয়ে দিন শেষ করে স্টেশনারী দোকান।
ঝাড়ুতে বারবার ঝাড়লেও
প্রত্যহ অসহায় মানুষের ভিড় পৃথিবী চেনায়....

ঝাড়ুতে বারবার চুম্বনে
কোন প্রেম, ভাগ্যহীন উর্বর?
শুষ্ক ধুলোকে আশ্বাস দেয়....








এবং একুশ

মনোজ কুমার দে






মন খারাপের কবিতা 
মনোজ কুমার দে




ভাল্লেগা না মেঘলা দিনের বিষণ্ণতা
সাবধানে যাও, রাস্তা জুড়ে শ্যাওলা রাখা।

আকাশ জুড়ে খামখেয়ালি রোদের খেলা
ছাদের ওপর ইত:স্তত কাপড় মেলা।

তারই মাঝে বিদ্যুতেরা দিক পাহারা
ব্যর্থ করে নামবে দেখ বৃষ্টিধারা।

এমন দিনে তোমার সুর ভীষণ বাজে
শ্রীকান্ত নয়, শ্রাবণী নয়, তোমায় খোঁজে।

হাত চলে যায় অসাবধানে ফোনের বুকে
শব্দরা আজ মেসেজ হবে তোমায় ছুঁতে।

ব্যক্তিগত উচ্চারণের ধ্বংস স্তূপে
বিরক্তিরা নামবে দেখ বারুদ রূপে।

আগুন হয়ে জ্বলবে ওরা নিজের মত
তুমি তখন কফি কাপে চুমুক রত।












এবং একুশ

পল্লববরন পাল



ধ্বংসে কবি জাগে 
পল্লববরন পাল





একটি ভ্রমর এসে বসেছিলো খোলা জানলায়
ঈষৎ সামনে ঝুঁকে বলেছিলো – ওঠো কবি চলো

কবির আঘুম চোখে প্রস্ফুটিত পিচুটি ফুলেরা
তৎক্ষণাৎ ঝরে গেলো হাততালি আনন্দে নেচে
যেন তারা হরিদ্বর্ণ শ্যামাপোকা – আলোকবান্ধব
মৃত্যু কতো রমণীয় উৎসবী| পর্দাআঁচল খুলে
পরমাসুন্দরী রোদ শয্যাপানীয় হাতে এলো
ভিজে চুলে ঝর্ণামানচিত্র এঁকে নিঃশ্বাসদূরে 
পানীয়ধোঁয়ার মতো উষ্ণ বাঁকা শরীরবিন্যাস 
পৌরানিক পরীডানা উরুসন্ধি ত্রিভূজউঠোনে 
জুঁইগন্ধে ম ম - ধ্বংস ক্যালেণ্ডারে রবীন্দ্রনাথ 
একটি ভ্রমর এসে বলেছিলো – ওঠো কবি চলো 

জানলায় কে দাঁড়িয়ে – ভ্রমর? নাকি সে রোদ? নারী? 
বিছানায় উঠে বসে কবি, পানীয়ে চুমুক দেয় – জাগে 















এবং একুশ

মমতা দাস (ভট্টাচার্য)



অকাল বোধন 
মমতা দাস (ভট্টাচার্য) 


 শিউলি ফোটার গন্ধে 
বাতাস বিমুগ্ধ, 
শাদা কাশ, পান্না সবুজ ঘাস 
আকাশে গুচ্ছগুচ্ছ পেঁজা তুলো মেঘ 
মনে কেন অজানা ভয়, 
অকালে দেবী বিসর্জন ! 

এসেছে সেদিন, 
জানি, শুভ লগ্নে অকাল বোধন। 
শরতে শারদা দূর্গা, 
চারদিকে সাজ সাজ রব, 
পূজার শত আয়োজন,
 আগামী সময়ে অকাল বোধন। 

চুপিসারে কোনঘরে ফুল ঝরে যায়
, কন্যাভ্রুণ পলকে মিলায়। 
নিরব অশ্রুমুখী নিঃশব্দ ক্রন্দন 
অগোচরে দেবী বিসর্জন। 
ঢাক-ধল-ধুপ-পুস্প পূজা ও সম্মান 
আজ নাকি অকাল বোধন ! !











এবং একুশ

দর্শনা বসু



এক টুকরো ঝলমলে রাত
দর্শনা বসু


নীল যন্ত্রণার সিম্ফনিতে 
আপোষ-ভাঙা দ্বন্দ্বেরা 
কষ বেয়ে নামতে থাকে-

কচি বাঁশপাতা রঙের 
ছলনার আবিরে সেজেছিল 
ছোট এক মৌটুসি চাঁদ, 
ইমনে-পয়ারে-ললিতে-বাহারে, 
আহা কি অপরূপ -

ভোর হবার অাগেই, 
অারেকটা অামি 
চকিতে জাগে-

বুকের একচিলতে জমিটায় 
ব্যারিকেড ভাঙে- 
রক্তের দাগে, 
ঝলমলে ফাগে।











এবং একুশ

শমীক জয় সেনগুপ্ত



কবিতার হকার 
শমীক জয় সেনগুপ্ত


আমার শরীর জুড়ে জমে উঠেছে মাটির চর। 
কোথাও বেতসের নরম টান- 
ত' কোথাও মাথা দুলিয়ে, ভ্রূ নাচিয়ে 
এগিয়ে আসছে গুল্ম-লতা বল্লরীরা। 
দুটো চোখে দূষণের কাজল 
ঢেকে রেখেছে আমার সব চপলতা- 
যে ভাবে মাটির থেকে দূরে চলে যাওয়া 
মানিপ্লান্ট ঢেকে রাখে আমার অনাবৃত উরু 
উন্মেলিত বক্ষ আর এক বাক্স কামনায় মোড়া 
প্যান্ডোরার হিসেব নিকেশ। 
ঠিক সেভাবেই এ সভ্যতা ঢেকে দিচ্ছে 
আমার নির্জনতার একান্ত বাসর। 
আর সভ্যতার টাই এঁটে একরাশ ভাগাড়ে শকুন 
অপেক্ষা করছে আমার পচনধরা 
ভিত নড়ে যাওয়া সঙ্গস্কারে ঠোঁট ঠেকাবে বলে- 
ওরা বুঝি জেনে গেছে আমি কবি ন ই। 
আসলেতে কবিতার হকার একজন। 
ওরা ও জানে যে শুধু ঠোঁট ছুঁলেই চুমু খাওয়া হয় না কখনো।





এবং একুশ

অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়



অভিমানের কবিতা
অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় 


এবার তবে অভিমান করি বলো!! 
এবার তবে মনটা খারাপ হোক 
এবার না হয় শাস্ত্রেই মতিগতি 
আমার আবার প্রিয় শ্রাস্ত্রই কোক!!


যদিও শুনি তোমার প্রচুর কাম,
 কামনায় নাকি হচ্ছ তুমি নীল!!
 আমার কিন্তু শালিখ ভালোলাগে- 
তোমার প্রিয়,জানি শঙ্খচিল। 


শুনেছি নাকি তুমিও ভেবে সারা- 
শুনেই আমার সারাগায়ে শিহরণ, 
তোমার শরীর উষ্ণ প্রেমের মতোই 
আমার শরীর ভেবেই উচাটন।









এবং একুশ

কচি রেজা



হেমন্তের সংযুক্তি 
কচি রেজা



এই তীব্র জানালাপ্রীতি আমার নিঃসঙ্গ কৈশোরের সুধাবিষ । আমি রোদের দিকে
চেয়ে থেকেছি যতক্ষণ না ম্লান বিকেল আসে পায়ের কাছে , আমি বিকেলকেও সন্ধ্যার অন্ধকারে শ্লথ হতে হতে হারাতে দেখি । অন্ধকারও আমার/ নির্নিমেষ দৃষ্টির সামনে শাদা
অস্তাচল সূর্যের আভায় যেমন পালটে যায় নদীর বিস্তৃত চর , বহুদিন গুমোটের পর
জল ছুঁয়ে যেমন সবুজাভ মাটিতে জন্মায় স্বপ্নালু শেকড়
বিবর্ণ কপাট ছুঁয়ে, নিভৃতি ছুঁয়ে, একান্ত শিলার মত মগ্ন এই জন্মান্তর
আমার সক্ষম রক্তের বৃত্ত, আমার জন্মান্ধ চোখ জেগে ওঠে দৃষ্টির সুস্থ্তায়
তুমি ঝুঁকে থাকলে 
হেমন্তের সংযুক্তি চেয়ে চেয়ে এখন আমি কীযে স্তব্ধ








এবং একুশ

জয়া চৌধুরী





জয়ী
জয়া চৌধুরী




তুমি যদি ভালবাসি ভাব
তাহলে তোমাকে প্রস্তুত থাকতে হবে প্রতি শ্বাসে।
যে কোন ক্যাবিনেট পদের চাকরির পরীক্ষার চেয়েও
ঢের বেশি অনিশ্চিত তোমার এই যাত্রা
বরং তোমার সব কিছুই যাত্রা বলেও ভাবতে পারে
তোমার প্রিয় মানুষটি যাকে তুমি ছায়া কিংবা
নিজে বলেই ভাবতে শুরু করেছ। কেননা ভালবাসার
কোন প্রমাণ বা শংসাপত্রই দেবার ব্যবস্থা নেই।
ধরো যদি বৃষ্টির দিনে তার জন্য গরম চপ কিংবা প্রিয়ার
ওপরের হলে একটা জম্পেশ সিটে বসিয়ে ভাবলে
বেশ খানিক রোম্যান্স করা গেল সে গুড়ে কফি অসম্ভব।
যদি তাকে খুব জ্বরে জোর করে ওষুধ গেলাও
সে তখন রেগে গেলেও মনে মনে খুশি হবে হয়তো তবে
তাহলেই যে তোমার ভালোবাসা হলমার্ক 
পেয়ে যাবে তার কোন ঠিক নেই। 
নাহয় তাকে গার্জেন কিংবা বসের
শাস্তি থেকে বাঁচিয়েছ তাই বলে সে তোমাকে 
বন্ধু ভাবতে পারে কিন্তু ভালোবাসা! 
মাঝরাতে তুমি যদি তার বুকে পেটে নাক ঠেকিয়ে 
গভীর শ্বাস নাও কিংবা ভোর ভোর ইশ্বরের 
জন্য গান করো যার সঙ্গে কবিতার প্রত্যক্ষ যোগ নেই
তাহলে তো তোমার প্রেমের সীমাবদ্ধতা প্রমাণিত।
এই মুহূর্তে সে বুঝে গেছে যে তুমি একটি 
ঈশ্বর ভীরু গিড়গিড়ানি করা পাবলিক যার
দৌড় বা কায়দা বাজী হলো একটু স্পেশাল-
ভগবানবাজী। তবে তুমি নিজে এগুলো কেন করো জানো?
কারণ তুমি নিজে জানো সে তোমাকে কতখানি দিয়েছে
তোমাকে সে খাইয়েছে পরিয়েছে আদর করেছে
তোমার গায়ে এতটুকু ব্যাথা সে দেয় নি কখনো
রাস্তায়, লোকের মাঝে, নির্জনে, সে শুধু তোমাকেই প্রিয় জেনেছে
হ্যাঁ তাকে কেউ চাইলে সে হয়ত মস্করা করেছে কিন্তু
তুমি তো বুঝদার মানুষ এবং বেশ উদারও
একথা তোমার চেয়ে বেশি কেউ জানে না তার 
মন আর তার নেই। ওটা তোমার কাছেই দেওয়া
এটুকু জানা থাকলেই তো যথেষ্ট বলো। আর কেন তাকে
রোজ প্রমাণ দিতে হবে সে কতটা পাগল তোমার জন্য!
প্রমাণ চিরকাল জানকীরই কাজ জাননা?
জানকী বল্লভেরা 
চিরকাল ঠিক চিরকাল পূজ্য চিরকাল আরাধ্যই থেকে যান মূর্খ !













এবং একুশ

শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়



আমি কিছু করিনি
শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়


বৃদ্ধটি থলে হাতে আপন মনে হাঁটছিলেন
কি যেন বিড়বিড় করছিলেন
তবে এ নিয়ে ভাবার কিছু নেই
এটা তিনি প্রতিদিনই করে থাকেন, কারণ
হাতে থলি আর টাকা গুঁজে দিয়ে
বৃদ্ধা গড়গড় করে যা যা বলেন, আর
তার যা যা আনতে ভুলে গেলে
আরও যা যা বলেন, তা থেকে বাঁচতে হলে
প্রথম বলাগুলো মুখস্ত করা ছাড়া উপায় নেই।

প্রত্যেকদিনের মত আজও তাই করছিলেন, কারণ
আজও একই সময় সুর্য উঠেছিল
আজও শালিখটা নেচে গিয়েছে ঝুল-বারান্দায়
টাকা আর থলের দ্বন্দ আজও অপ্রতিরোধ্য।
তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, সে অনেকদিন
নিজের নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত তারা
তিন-চতুর্থাংশেরও বেশী পেরিয়ে আসা দুজনের সংসারে
সাধ ও সাধ্য দুইই এখন সীমিত, তবু
পুরোনো দিনের অভ্যেসটা রয়ে গেছে।

না, তিনি 'বুল ফাইট' আগ্রহি ছিলেন
এমন অপবাদ কেউ কখনও দিতে পারবে না
এমন কি দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যের আকর্ষণে
গো-জাতি'র প্রতি তাঁর বিশেষ সহানুভূতি ছিল
এমন চিন্তাও কেউ মনে ঠাঁই দিতে পারবেন না
তবু ঘটনাটা ঘটেই গেল
ঠিক কি কারণে যে বৃষটি হঠাৎ অমন
বিপরীতমুখি হয়ে বৃদ্ধের দিকে ধেয়ে গেল
প্রত্যক্ষদর্শীরা কেউ তার কোন কারণ বলতে পারেননি
শুধু যখন পাসের নর্দমা থেকে তাঁর রক্তাক্ত শরীরটাকে তোলা হল
তখন সম্পূর্ণ নিস্তেজ হবার আগে
শিশুর মত বলেছিলেন - 'আমি কিছু করিনি'
যেন তাঁর এ দশার জন্যে সবাই তাঁকেই দুষছে!!

ডাক্তারবাবুরা বললেন
তাঁরা নাকি তাঁদের আয়ত্তের সব চেষ্টাই করেছিলেন, তবু ......... 
ঠিক কি কারণে তাঁর এই দুর্ভোগ তা না বুঝেই
বৃদ্ধ বিনা প্রতিবাদে চলে গেলেন।

শালিখটা কি কালও আসবে?!

গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারত
যদি না এ দেশেরই আর এক প্রান্তে
সেই কিশোরটিও বিনা প্রতিবাদে চলে যেতে বাধ্য হত
শুনলাম আঁকার ইস্কুল থেকে ফিরছিল সে
পথে আগত ভোটের মুখে হঠাৎ যুযুধান দুই রাজনৈতিক দল
একটা আধলা ইঁট সোজা এসে লাগে তার মাথায়।
সেও তার মা'কে শেষবারের মত বলেছিল -
'আমি কিছু করিনি'।

যাকগে, এসব নিয়ে ভাববেন না,
নিতান্ত কাকতালিয় ব্যাপার আর কি!










এবং একুশ

ইন্দ্রাণী সরকার



আইন মোতাবেক 
ইন্দ্রাণী সরকার




এক মাঘে না কি শীত যায় না 
কিন্তু এক বস্ত্রে এক মাঘ দিব্যি চলে যায় 
ফুটপাতে যারা শুয়ে থাকে 
তাদের এভাবেই দিন কাটে 
সেখানে রিডিং গ্লাস বা অভিজ্ঞতা 
কোনটাই কাজে লাগে না 


কাল ছেতুবাবুর বাগানে যে 
মিস্ত্রিটা কাজ করছিল ওর নাম হীরালাল 
জন্মসূত্রে নাম প্রাপ্তি 
বোধ হয় বাবা মা ভেবেছিলেন যে বড় হয়ে 
হীরের মালিক হয়ে লালে লাল হবে 
এখন পলেস্তারা আর সুরকি মেখে লাল হয় 


প্রেমিকার নিষিদ্ধ কবরে কোন প্রেমিক 
জুতো খুলে যায় কি না জানা নেই 
তবে কবর দেবার আগে চাঁদের আলোয় 
প্রেমিকার মুখে শেষ চুমু খেয়ে 
প্রেমিক স্যুট টাই পরে ড্রেস স্যু গলিয়ে নেয় 
অনেকটা পথ এখনো চলা বাকী











এবং একুশ

সপ্তর্ষি মাজি


তবু আমি কবি
সপ্তর্ষি মাজি



লোকে বলে,
কবিরা নাকি বৃষ্টি দেখলে পাগল হয়ে ওঠে
কই, আমি তো হই না

আমি তো সেদিনও হইনি,-
যেদিন চোখের সামনে তুলে নিয়ে যেতে দেখেছি
'বছরের স্কুল বালিকাকে, কিম্বা যেদিন
পাড়ার পাগলটিকে লাথি মারলেন মহামান্য মাননীয়,
সেদিনও তো স্বাভাবিকই ছিলাম
পাশের বাড়ির কর্তা যেদিন মদ খেয়ে বউ ঠেঙান,
সেদিন রাতেও তো ঘুম আসে অন্য দিনেরই মত

লোকে বলে,
কবিরা নাকি সত্যি কথা বলেন
সত্যিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে অফিস যাইনি কতবার;
ফোনে করে বলেছি 'শরীর খারাপ'
পেনশন নিতে আসা বৃদ্ধটির হাত থেকে
টেবিলের তলা দিয়ে গুনে নিয়েছি কড়কড়ে নোট
বৃদ্ধ ভিখারিটির পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গিয়েছি
না শোনার ভান করে কতবার ভিড় বাসে টিকিট না কেটে
নেমে ভেবেছি, যাক, লোকটাকে ঠকানো গেল বেশ...

তবু আমি কবি
মাঝেমাঝে বক্তৃতা দিই কাছেপিঠে স্কুলে,
কবি সম্মেলনে আউড়ে বেড়াই মনুষ্যত্বের কবিতা,
মুহুর্মুহু হাততালি পড়ে, শেষমেশ সটকে পড়ি
একটা এক্সট্রা প্যাকেট হাতে, আর বাড়ি ফিরে

আরও একবার বসে যাই খাতা ও কলম নিয়ে।।













এবং একুশ