শুক্রবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৬

সম্পাদকীয়








নববর্ষ এল আজি
দুর্যোগের ঘন অন্ধকারে;
আনে নি আশার বাণী,
দেবে না সে করুণ প্রশ্রয়।
প্রতিকূল ভাগ্য আসে
হিংস্র বিভীষিকার আকারে;
তখনি সে অকল্যাণ
যখনি তাহারে করি ভয়।
যে জীবন বহিয়াছি
পূর্ণ মূল্যে আজ হোক কেনা;
দুর্দিনে নির্ভীক বীর্যে
শোধ করি তার শেষ দেনা।
                                      
                                            -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর













এবং একুশ

পল্লববরন পাল




চাঁদগুঁড়ো
পল্লববরন পাল




বালিশে ভ’রে দিলাম চাঁদগুঁড়ো
বালিশ হলো রাতআকাশ
আমি মাথা রাখলাম আকাশে

ও ভালোবাসা,
ডানা মুড়ে খানিক বসো না
আমার চোখপল্লবে?

****************

পাহাড়ি জানলার শার্সিতে
নখ আঁচড়াচ্ছে যে সাদা বেড়ালটা
তার ভালোনাম মেঘ,
সদরদরজায় কড়া নাড়ছে
শালজঙ্গলের যে মগডালগুলো
ওদের ভালোনাম বৃষ্টি

তুমি হাত ধরলেই
ভ্রমণ হবো


বেড়ালটা ধর্ম হয়ে চলুক না সঙ্গে

****************

মল্লারে বড্ডো বুক নিঙড়োয়
আর উঠোন উপচে
দাওয়ার মাটি হড়কায়

তার চেয়ে বরং
তোমার রোদেল মেঘের গল্প বলো
যার আলোছাতার নিচে দাঁড়িয়ে
আমরা বেশ
ঘামকলমে এ ওর পিঠে পদ্য লিখবো

****************

জলের ওপর হাসিঢেউ
নাকি আস্ত একটা মুচকিনদী

কী হয়ে উঠবো?
কী হতে পারলে
চড়া পড়বে দামোদরে
যার স্রোতে হারিয়ে গিয়েছে
আমার কবিতার খাতা

****************

এখানে ১৫ ডিগ্রির শীতবাতাসে
সারাদিন সেই মনকেমনের জুঁই গন্ধ -
যা ছড়িয়ে পড়েছে
পৃথিবীর সৃষ্টিইতিহাস নিয়ে
তোমার পুষ্পযোনি থেকে।
আমি সেই মানস সরোবরে
পূণ্যস্নানের আদিম প্রতীক্ষায়
শবরীপাথর।

হে শীত, আমাকে অর্জুন করো।

****************

এ ঘরে আজকাল আর ভ্রমর-টোমর আসেনা
শুধু ছাদপাখার আবর্তনগুনগুন
সঙ্গে ঘুঙুরনাচে দেয়ালক্যালেণ্ডার

কাজ ছিলোনা কিছু,
তাই কাল সারাদিন ধরে
দরজাটায় নীলরঙ লাগিয়েছি

****************

আকাশ সমুদ্র বাতিঘর
পার্কস্ট্রীট চিলেকোঠা এসেমেস্‌
অনুবাদের পরেও অবিকল
আকাশ সমুদ্র বাতিঘর
পার্কস্ট্রীট চিলেকোঠা এসেমেস্‌

যতোবার অনুবাদ করতে চেয়েছি তোমাকে
কবিতার খাতা ভাসিয়ে দিয়েছে
এক পাগলিনদী

****************

মাঝেমাঝে আমার সব জানলা দিয়ে
অকস্মাৎ অন্দরে ঢুকে
উজাড়ে ভাসিয়ে নিয়ে যায়,
ভেজা পোষাকের মধ্যে থেকে
জেগে ওঠে স্বচ্ছ শৈশব

সে কি নদী?
রবীন্দ্রনাথ?
নাকি তুমি, বাবা?

নইলে কাকভিজে চৌকাঠে দাঁড়িয়ে
হিমহিমে কাঁপতে কাঁপতে
জিভ কেন মিষ্টিমিষ্টি লাগে?

****************






























এবং একুশ

পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্ত








দীপান্বিতার ছোট্ট প্রেম
পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্ত





জীবন্ত দেখিনি তাকে, নিস্তব্ধ অথবা চমৎকার রঙের মিশ্রণ,
দুর্ভাগা আমি, ভোররাতে মুখের বিভিন্ন পায়চারি,
ফেসবুকে পাপ, মিথ্যাভাষণ, সাবধান হবার কি আছে?
বলছি না, দুজনের মধ্যে কল্পনা, এটা যেন যৌনতার গান।
খেয়ালের কর্মশালা যেন, কালচে রঙের অশুভ আপেল
আমার নিভৃত জীবন, খড়খড়ি, কামনা বাসনা
আমার সন্ধ্যায় কবি ছিল খোদাই পোট্রেট, আর
ঝোপের আড়ালে তিনি, হতভাগ্য স্বামীর তরোয়াল।


স্বপ্ন ছিল, সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাব রসিকের কাব্যনাটকে
সুরের আশ্রয় নিলাম, এমন প্রক্রিয়া, হুঁশ ফেরানোর।
খুঁজে পেয়েছি শরীর মন্থন যেন প্রাথমিক মনের তাড়না...


কে প্রাসঙ্গিক,আদৃত হয়েছিল আগে? কে অতি উজ্জ্বল ছিল!
রেফারেন্স নেই, মৌলিক হরিণশিকার!
নানাবিধ সমুজ্জ্বল ছিল, জোয়ারের আভাস
উতলা যেন সে নীল দর্শনে বিধুর।

আহা, ফেসবুক দৃশ্যের অন্তরালে, তুমি চেনো কি?
সে শুধু গাঢ় অনুভব, সন্ধ্যার ছায়া।
ছোঁয়া নেই, রহস্য, সাসপেন্স যেন তা প্রেমিকার অলৌকিক কিছু


দেখা যায় কথোপকথন, ফোটোগ্রাফ, ঝগড়ার তন্দ্রা
কল্পনার সাথে খুঁজে পেয়েছি একই দৃশ্য,
কথা জন্মায়,আমি অবশ্য সৌভাগ্যবান।
সুদেহী কবিতার পেটে শুয়ে আছি

পৃথিবী আনন্দের, শিস দিই, অনধিকার
ডিনারে আমার বিষাদ
চলতে চলতে টুকরো টুকরো 
পৃথক
নারীরা তন্দ্রাচ্ছন্ন, আমাকেই খোঁজে

রান্না পুড়ে যায়, রোমাঞ্চকর শিহরণ
মিশে যায় মাংসের ঝোলে...










এবং একুশ

সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য




দ্বিধা নয়
সুরঙ্গমা ভট্টাচার্য




সংশয় রেখো না।
যাবে,
যেও তবে।
বেদুইন-
শব্দের হাত ধরে
হনন পথে
শীতল ঘাসের চাদরে
শ্বাস,
কিচির মিচির 
নীরবতা,
মোরগ ঝুটি সকাল
কিচ্ছু আবেদন
রাখবে না।
তোমার শাবক দুপুর
ভুল ঠিক যোগফল
আজানিয়া সাঁঝ
গ্রীবায় উল্কি আঁক
জেব্রা ক্রসিং
কিচ্ছু না
তোমার কাজের মাঝে
স্বপ্নে
ভাবনায়
যদি চলে আসি ঘুরে ফিরেও
অপঘাতে আঘাতে
খুব জোরে 
ফুঁ 
দিয়ে
ইচ্ছে উড়িয়ে দিও
দেখো
ছিলার টানে
গোপনীয়তা ভাংগবে না
দেখো তুমি
ভেতরটায় 
বড্ড ক্ষয়
মূল স্রোত
বড়
অসহায়
বিমোহিত হতে হতে
বিমোহিত হতে হতে
ক্রমশ
নিস্তব্ধ চরিত্র হয়ে উঠব আমি








এবং একুশ

মোহাম্মদ আন্ওয়ারুল কবীর



রয়ে যায় তবু কিছু 
মোহাম্মদ আন্ওয়ারুল কবীর



যাওয়ার জন্যই আসা
ভোরের শিশির জানে সত্য -
রয়ে যায় তবু কিছু

সাইঁজির গান এখনো মাদক
সময়সেতুতে কাটছে নকশা
চলে যাবো আমি-
নিশানাটুকু পড়ে থাক্।






এবং একুশ

কৌশিক গাঙ্গুলি



বোধ 
কৌশিক গাঙ্গুলি 




আমার পৃথিবীতে দেখি 

অন্যায়ের জয় - জয়কার,
কুঁকড়ে যাওয়া বিবেক আর বোধ, 
খুন হয়ে যাওয়া সততা, ভুল বোঝা প্রেমিকা, 
হারিয়ে যাওয়া ক্রোধ, কান্না আসে দমকে দমকে, 
সব ভুল হয়ে যায় তবু একমাত্র কবিতারা, 
শব্দরা জ্বলে ওঠে, সে বিবেককে বলে ভয় নয় লড়া, 
মৃত্যু আমাদের হারাতে পারবে না,
 বোধকে সে জাগিয়ে রাখে আর চেতনাকে হাতিয়ার করে এই অসময়ে ..... ।







এবং একুশ

ব্রতী মুখোপাধ্যায়




স্পর্শমণি
ব্রতী মুখোপাধ্যায়



তুই বলছিস ফাঁকই ছিল, আমি বলছি ফাঁকি
পুজোর ফুলের গন্ধ এবং মধুর মন্ত্রধ্বনির
গলায় গলায় মিল হয় নি, ঠিক আছে কাজ চলুক
বলতে বলতে লুট হল যেই সাধের স্পর্শমণি
আমি চেঁচাই কোথায় গেল, ওরে কোথায় থাকিস ?

আলোর হদিশ সত্যি পেলাম ! অন্ধকারই জ্বলুক 
বললাম, আর বুকের মধ্যে সারাক্ষণ কি ফাঁকা 
কেন আমার মনে এল না উলঙ্গ না হয়ে 
বললাম যা হল বলা, কতটুকুন বয়েস --- 
ছিঁড়েখুঁড়ে দেখেই জেতিস, কি দরকার ঢাকার ?

তোর তরফে ঠিক কি ছিল, পায়ের নিচের মাটি
শক্ত কিংবা আলগা কিছু টের পাই নি মোটেই
তুই আরশির সামনে চোখে সমানে চোখ রেখেই
পারতিস কি থাকতে সোজা আগলে নিজের ঘাঁটি ?

তুই বলছিস ফাঁকই ছিল, আমি বলছি ফাঁকি
যা হোক, যা হওয়ার হল, মনের ঘরেই থাকিস












এবং একুশ

শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়



মিথ্যুক 
শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়



প্রশ্ন করলে – ‘কেমন আছ’ ?
বললাম – ‘ভাল’, আর 
সত্যিই সুস্থ বোধ করলাম ।

জলতরঙ্গের মত হেসে বললে
- ‘অমনি মিথ্যে কথা’
ঠিক তখনই কার্নিশে পায়রাগুলোর
এলোপাথাড়ি স্বর-সঙ্গম,
আমার পাণ্ডুর মুখের হাসি দেখতে পেলে না ।

তারপর ঘন অভিমানী মেঘ আর অঝোর শ্রাবণ
‘আমায় কেউ খবর দেয়নি’ ।

বললাম – ‘খুব মনে পড়ছিল তোমায়’
আকাশে তখন অবিশ্বাসী প্রশ্নবোধক চিহ্ন
উত্তর করলাম –
‘দুর্গত হলেই তো মানুষ বন্ধু খোঁজে’
মেঘের বুক চিরে একমুঠো ঝিলমিলে রোদ
‘মিথ্যে কথায় তোমার আজও জুড়ি নেই’
আবার পায়রাগুলো গেয়ে উঠল বৃন্দগান
আমার পাণ্ডুর মুখের হাসি দেখতে পেলে না ।

বললাম – ‘তোমায় দেখে ভাল লাগছে’
বললে – ওমা, টেলিফোনে দেখা যাচ্ছে বুঝি’ !!
বললাম – ‘হ্যাঁ, আমি পাই’
আবার ঝর্ণা হাসি, এবং – ‘মিথ্যুক’ ।

আমার পাণ্ডুর মুখের ভাললাগা হাসি
তুমি দেখতেই পেলে না ।
















এবং একুশ

সুপ্রভাত লাহিড়ী



ঠিকানা
সুপ্রভাত লাহিড়ী



অদূরে মাঝদরিয়ার নাওয়ে
বিরহী মাঝির গান
শিরশিরে হাওয়ায় ভাসে,
কখনো দেবদারু গাছে
কখনো মন্দার মায়ায়
আছড়ে পড়ে দীর্ঘশ্বাসে!

আমিও নিঃস্ব আজ,
নিঃস্ব ঐ মাঝির মতন
কিংবা বিরহী মাঝির মন
খুঁজে ফেরে সবার মনে
নিঃসঙ্গ চিরবিরহীর মনের ঠিকানা-
এক হয়ে পাওয়া তোমার আমার
মনের আর্শিতে।








এবং একুশ

শাহেদ সেলিম তমাল



জাদু
শাহেদ সেলিম তমাল




জাদুকর আস্তিন থেকে বের করে আনে 
রঙের পুতুল
গুঁজে রেখেছে কতকিছু 
চোখের আড় ভেঙ্গে নিয়ে আসে 
কুহক বাস্তব
নিমেষে ভেসে যায় দর্শক 
হাত জুড়ে থাকে আধুলি আটানা
ভীতু দর্শক চেয়ে দেখে লোহিত স্রোত চারদিকে
ভেবে নেয় এও এক জাদু।









এবং একুশ

পলাশ কুমার পাল




ক্রমশ সময়
পলাশ কুমার পাল


ক্রমশ সময়...

দহনের পরে বর্ষার স্রোতে ঋতু পরিবর্তন,
ভেঙে যাওয়ার পর অবশেষ সত্‍কারের অপেক্ষায়:
চিতা নয়, তবু হেমন্তের নদী জলহীন-

ধীরে ধীরে কুয়াশা কেটে গেলে
শীতের চাদর সরিয়ে শরীরী রোমকূপে রোদ্দুরের স্বাদ
ক্রমশ মিস্টি হয়...

বসন্ত সমাপনে যজ্ঞে আহুত বেলপাতা:
মন্ত্রপাঠের পর ছাই-
পাথরে পাথরে জলের ঋতুচক্র
সুখ;
জীবন সময়ের প্রবাহে...
শেষ ঠিকানা জানা নেই।







এবং একুশ

ইন্দ্রাণী সরকার




ধরিত্রী মা
ইন্দ্রাণী সরকার



একটুখানি আকাশ অথবা আকাশের মেঘ । তুমি শস্যশ্যামলা জননীর দুগ্ধপোষ্য 
হয়েই থেকো । লাঙলে তুলে আনো বিষ, ক্ষণে ক্ষণে হয়ে যাও ধরিত্রী মাতা । কি সুন্দর, 
কি সুন্দর মোম শরীর চন্দ্র মাখা । মা গো, বেবী ডল কি তোমারি আর এক নাম, বা 
বিভিধ রূপের বিশেষ কোন রূপ ? টুটা ফাটা জমিতে ধান আনতে তোমারি খোঁজ করি 
রজ:স্বলা মাতা । একবার এসে যাও, ভয় নেই বাল্যবিধবা করাই না, বালিকা বধূও নয় । 
তুমি বৃক্ষ হয়ে যাও, ফলবতী হও । তুমিই গঙ্গা, তুমিই যমুনা, তোমাতেই নিবেদিত 
অক্ষৌহিনী সেনা । নদীর ছলছল, পুকুরের কলকল, সমুদ্রের মোহনা তোমাতেই সমর্পিত । 
এ যেন একই অঙ্গে নাচে মোহিনী মোহন দূর্বাদলশ্যাম আর মধুময়ী রাধা । ওগো মাতা, 
অপরূপা মাতা, ত্রিনয়নে ঝরাও শান্তিবারি আর ত্রিপিটক সুধা । সমস্ত দেবতা, যক্ষ, রক্ষ, 
গন্ধর্ব শুধু তোমাতেই সমর্পিত । স্খলিত আঁচল লাঙ্গলের ফলায় কর্ষিতা বেদনাতুর ধরিত্রী মা ।













এবং একুশ

মনোজিৎকুমার দাস






শীতের পাখিরা 
মনোজিৎকুমার দাস 



বরফে ঢাকা কোন সে প্রান্তর থেকে
উড়ে আসে শীতের পাখিরা
কুয়াশার ডানায় ভর করে
বাংলাদেশের শিশিরে শিশিরে
ভেজা নদী তটে
গাঙশালিকেরা বসত করে 
নদীর কোটরে কোটরে 
মাছরাঙা এক ধ্যানমগ্ন
নদীর কিনারের জলে হেলে থাকা
এক হিজলের ডালে;
ভোরের কুয়াশা সরে গেলে
ভিনদেশীপাখিরা নদীর কিনারে
দল বেঁধে রোদ পোহায় ওম ভরা
চোখে--












এবং একুশ

দীপঙ্কর বেরা



চুপকথা 
দীপঙ্কর বেরা


মৌমি টিউশন পড়ে ফেরার সময় আহিতকে অনেকদিন দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে। মোবাইলে
খুটখুট করে আর আড়চোখে তাকায়। অনেকেই বিশেষ করে ছেলেরা মৌমিকে ঘিরে থাকে।
কথা বলতে চায়। মৌমিও উপভোগ করে। কিন্তু আহিতের না-বলা
সৌন্দর্য্য-গুনগুনের মাঝে একটু বেশি ভাবায়।
পুজানকে একবার জিজ্ঞেস করে - ছেলেটা কে রে?
মৌমি জিজ্ঞেস করেছে তাই পুজানের সাথে অনেকেই বেশি সতর্ক স্মার্ট হয়ে পড়ল
- ও! ও আমাদেরই ক্লাসে ভারতীতে পড়ে। এই স্যারের ক'বার খোঁজ নিয়েছে।
কিন্তু পড়তে আসেনি।
মাস দুয়েকের মধ্যে মৌমি দেখে স্যারের ক্লাসে। ফেরার সময়ও পাশে এলনা।
কিন্তু আড়চোখ সতর্ক। মৌমিকে নিয়ে কিছু বলে বা জানতে চায় তাও কারো. কাছে
শোনেনি।
না-বলা সইতে না পেরে মৌমি সামনে দাঁড়াল - এভাবে এত চুপকথা কেন? সোজা
এগিয়ে এসে আমার হাত ধর।
তারপর কথায় শুধু কথা আর কথা।















এবং একুশ

মিজান ভূইয়া


ডানার জল 
মিজান ভূইয়া


আমার দুপুরগুলো
তোমার গহনাগুলোর মতোই
হৃদয়ে পোষে, সময়, মহাদেশ,
কাঠবিড়ালী।
কিন্তু দু'জনের পার্থক্য জানতে
গিয়ে শুনতে পাই,
কানের কাছে কথা বলে
সাদাকালো পৃথিবী। মুহুর্তেই
আমি পাখি হয়ে যাই, মেঘের ভিতর উড়ি…ঝড় হয়, আমার ডানার জল
সীমান্তের দিকে ঝরে…!
তখন একই বাতাসে
তোমার গহনা, কাছাকাছি পাতায়
আমার দুপুর… টের পাই,
দু'জনের বিছানা ডুবে যায় শীতে।






এবং একুশ

মধুছন্দা মিত্র ঘোষ



ভ্রমণার্থী শিবির থেকে...
মধুছন্দা মিত্র ঘোষ



মেঘের গায়ে এমন মেঘ জমেছে
বৃষ্টি কথন, পশলা খানিক
চেনা আবহাওয়ায় কিঞ্চিৎ
বিকেলের ভূমিকা কমে আসছে
মেঘ রোদ্দুরের খুনসুটি টক্করে
লোলেগাঁও আকাশ জুড়ে চকিত ইন্দ্রধনুস
পাহাড় ঢালে, সাতরঙা দ্যুতি
লাবণ্যময় প্রকৃতিমায়ায়
এপারে গান, ওপারে গান _ 
ঝান্ডিদাঁড়ার সূর্যভোর, ‘ক্যানোপি ওয়াক’,
প্রকৃতির নির্জনে সফেদ হাতছানি
কাঞ্চনজঙ্ঘার অতখানি ঘোর __ 

নির্ভুল গুনে নেওয়া হুল্লোড়ে
রিসপ – লাভা – চারকোল – পেডং
এক সদ্য তোলা নবীন লঘুসংগীত
ঋতু ফুটছে, ওপারে ছায়া
ভ্রমণ মৌতাতে,
নামিয়ে আনি, অলীক পর্যটন সুষমা ...













এবং একুশ

মাহমুদ পারভেজ




ভয়ঙ্কর অন্ধকারের রাত
মাহমুদ পারভেজ




এক ভয়ঙ্কর অন্ধকারের রাত্তির এসেছে নেমে, ঠিক পৃথিবীর বুক বরাবার;
ঘন কালো বিড়ালের লোমের মতোন,
ছাইয়ের চেয়ে আরো ছাইরঙা কালো।
অমাবস্যাপীড়িত আকাশ আজকের,
তার নীচে নীচু জাতহীন এক আঁধারের রাত পেঁচার ঠোঁটের ভাঁজে
বয়ে এনেছে বিষাদ-কালো বিদঘুটে।
সেই বিষাদের চাদরে আমার শরীর মুড়িয়ে
আমি চলে যাচ্ছি পথভুলো কুকুরের ডাক অনুসরণ করতে করতে চোরাগলির পথ ধরে,
অথচ এপথ আমার যে নয় জানি আমি,
তবুও বিষাদ আমাকে চলেছে টেনে এদিকেই।
আমি কেমন মূর্খের মতন চলেই যাচ্ছি দ্যাখো!
দ্যাখো, আর বুঝি ফেরা হবে না আমার....






এবং একুশ

জাফর পাঠান



সুখহীন সুখ
জাফর পাঠান



নির্দয়ভাবে কেটে কেটে- ক্ষতবিক্ষত করে
খেঁজুর গাছ থেকে রস নিবোনা নিজ ঘরে,
নীলিমা হেমন্ত আকাশ, দুহাত চেঁপে ধরে
বলে, সুখহীন সুখ কাটাবো কেমন করে।

মাতন ধরা ঐ গাছের ফুলগুলি না ছিঁড়ে
থাকবো, সুবাসিত সুবাসটুকু শুধু ঘিরে,
কথা দিচ্ছি, লোভাতুরে ভ্রমর হবোনা আমি
কলি থেকে নিবোনা মধু জানবে শুধু তুমি।

প্রজাপতির মত যথেচ্ছ উড়ো দলে দলে
না পেলেও, দলছুট করবোনা বাহুবলে,
ছিন্নতার ব্যথা সহেনা আমার এই দিলে
তাই পারিনা ছিনাতে নিষ্ঠুরতম কৌশলে।

ফুলে-ফলে-রসে-তারুণ্যে থাকো জীবনভর
নেতানো বৃক্ষ-তরু-লতা, ভীষণ কষ্টকর,
আত্মায় বেঁধেছি মন, নয় তা জীবন ভর
কবর থেকেও দেখব, আত্মা যে পরম্পর।



























এবং একুশ

অশোক তাঁতী






এপিটাফ
অশোক তাঁতী



বন্ধ দরজা দিয়ে দেখতে পাচ্ছি নিজস্ব কবর 
চিতাভষ্ম ছড়ানো কিছু ছাতিম
একমাত্র মেয়ে দরজা খুলে শান্ত চোখে 
পায়ের পাশের কিছু ফুল 
দুহাতে 
ছড়িয়ে দেবে আকাশের দিকে মুখ করে 
আর জ্বলন্ত হাওয়াতে এক নারী
কাঠের চামচে
তুলে নেবে স্পর্শযোগ্য কিছু মাটি –
ভাঙা হাতলের কাপটাতে









এবং একুশ

ডঃ সুজাতা ঘোষ



কোথায় হারিয়ে গেলো
ডঃ সুজাতা ঘোষ



কিছু মনে থাকে না, তাই লিখে লিখে রাখি হাতে।
বেশ কিছু বছর পেরিয়ে এসেছি, সঙ্গে ছায়া নিয়ে।
এখনও মনে হয় ও আমার কোলে মাথা রেখে আদর খাচ্ছে।
আমার শূন্য হাত ঘুরে বেড়ায় এঘর ওঘর হাতড়ে বেড়াই হাওয়া আর আকাশ।
লাল পাখি, নীল গাছ, আর কালো আকাশ...

একটু একটু করে গড়ে তোলা সোহাগের বীজখানি
আদরে আহ্লাদে ভরিয়ে রাখা ঐ হাসি মুখখানি
এক-পা দু-পা এগিয়ে গেলো আমার হাত আর আঙ্গুল ছেড়ে...

হঠাৎ করে খবর এলো, আর ফিরবে না সে ঘরে,
হারিয়ে গেলো হৃদপিণ্ড, হারিয়ে গেলো সম্বল
হারিয়ে গেলো ভরসা, আর হারিয়ে গেলো ঐকাল।

এতদিনের স্বপ্নবোনা, এখন হলো স্মৃতি,
মেয়ের মুখের হাসি যখন মিলিয়ে হলো লিপি।
কেউ নেই যে পথ দেখায় হারানো মেয়ের পথে,
শুধুই এখন হাতড়ে বেড়াই অতীত আর অতীতে।

কেন হলো? ......... কেনই বা হলো?
কে দেবে উত্তর?
শুধু জানি, ও আছে এখনো কোথাও ............
আমি হাতড়াই, হাতড়ে বেড়াই
আর পার হই দিগন্তর ।।








এবং একুশ

সপ্তর্ষি মাজি





সংক্ষিপ্ত
সপ্তর্ষি মাজি



একসাথে পথচলার বিকল্প যে পথচলাই
তা বোধহয় তোর আমার থেকে বেশী কেউ বোঝে না।
নখ আর নখরের পার্থক্য?
সে তো শুধু অনুভবে,
তোকে ভালোবেসে তাও বুঝিনি আমি কোনোদিন।

আজ আর কী শুনতে চাস পরিনীতা?
তোকে দেওয়ার মতো তেমন কিছুই তো আর নেই।
পড়ে আছে শুধু কিছু মান-অভিমান,
মুহূর্তের ভুল আর কিছু, আগু-পিছুটান।।





















এবং একুশ

মোকসেদুল ইসলাম




মৃত্যুসুখ
মোকসেদুল ইসলাম



এখানে মুখ খুবড়ে পড়ে থাকে জন্মান্ধ রাত
মৃতরা আলিঙ্গন ভালোবাসে বলেই আঁধারকে করে সঙ্গী
নারীর অধরে দেয়া প্রথম চুম্বনের কথা ভুলে কেউ কেউ
স্বেচ্ছায় বেচে নেয় দীর্ঘতম মৃত্যুযন্ত্রণার স্বাদ।

শূন্যতা যখন গ্রাস করে সন্ধ্যামন্দিরের মঙ্গল প্রদীপ
নিষিদ্ধ হতে হতেই তখন বেদনারা দু’বোন দু’হাত
প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যায় আকাশের ঠিকানায়,
ঝুলে যাওয়া দুপুর বারান্দায় বসে রিলিজ স্লিপে 
লিখে রাখে সচিত্র মৃত্যুর ইতিহাস।

এখানে মুখ খুবড়ে পড়ে থাকে জন্মান্ধ রাত
রংবাহারির দুঃসময়ে রৌদ্রলোকে দু’চোখ খোঁজে গুপ্ত ক্ষত
আমরা মানবিক মানুষ নই, ফাল্গুন রাতে
দুর্বিষহ আগুনে পুড়িয়ে দিই মলাটবন্দি সুখ।































এবং একুশ