বৃহস্পতিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৬

সম্পাদকীয়

প্রকাশিত হলো 'এবং একুশ' ডিসেম্বর, ২০১৬ সংখ্যা।

এই সংখ্যার নির্বাচিত কবিরা হলেন
চয়ন
সুধাংশু চক্রবর্তী
শর্মিষ্ঠা নাহা
নীল রতন চক্রবর্তী
গৌতম দত্ত
আরশাদ উল্লাহ্‌
শিখা কর্মকার
দেবীস্মিতা দেব
ঋতব্রত
উত্তম বিশ্বাস
রুবি মুখার্জী
পিয়ালী বসু ঘোষ
কাজী এনামুল হক
কেয়া রায়
মমতা দাস
শৌনক দত্ত
স্মৃতি
অনুপম দত্ত
অলভ্য ঘোষ
সিয়ামুল হায়াত সৈকত
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী

চয়ন

ছি!
চয়ন
পুরীষদহে ডুবকি দিয়ে শান্তি মেলে,
আস্থা খুঁজি লাল গড়ানো ইতরমুখে --
মরুগ্গে যাক মান খোঁজা সব বেয়াক্কেলে;
নাক টিপে আর চোখ বুজে ঠিক থাকব সুখে।

সুধাংশু চক্রবর্তী

বিষণ্ণ কবিকে 
সুধাংশু চক্রবর্তী
চারপাশ দিয়ে কতশত অগণ্য পথিক হেঁটে যায়
এই নিঃসঙ্গ জীবন কাকে যেন ফিরে পেতে চায় ।
এ কোন শূণ্যতাকে সঙ্গী করে কাটছে বন্দী পরবাস
নিজের সাথেও দেখা যে হয় না কত শত মাস।

শর্মিষ্ঠা নাহা

দেব চরিত্র
শর্মিষ্ঠা নাহা
জননিপীড়ন মোর ধ্যান- জ্ঞান,
বলি 'ভগবান' পূজে তবু লোক।
সব অন্যায় ন্যায় হয়ে যায়,
যদি করা যায়
রেখে চোখে চোখ।

নীল রতন চক্রবর্তী

বিশ্বাস 
নীল রতন চক্রবর্তী 
আমার জামায় , শত ছিদ্র 
আমি শীতের এই প্রহরে
আগুন্তক হিমাংকের স্পর্শে
ভেঙ্গে টুকরো হতেই পারি .

গৌতম দত্ত

শালুকডাঁটা—
গৌতম দত্ত

গাজলডোবার জলে শালুকের ডাঁটা আমি অনেক দেখেছি—,
অবিকল তোমার আঙুল।
হাজারে হাজারে ফুল ফুটে আছে তোমার আঙুলে।
নরম, পেলব, লাবণ্য এমন কতকিছু বিশেষণ আমি
ব্যবহার করতেই পারি। এমন হাল্কা যে উত্তুরে হাওয়ায় হাওয়ায়
কেঁপে কেঁপে ওঠে, তিরতিরে জলের ওপর।

আরশাদ উল্লাহ্‌

সময় এসেছে
আরশাদ উল্লাহ্‌


মহাশূন্যের অজানা কোন নক্ষত্র থেকে
বিচ্ছিন্ন উল্কার মতোই আলোকের বেগে
ছুটে এসে পড়েছিলাম অকস্মাৎ
তুমি আর আমি শিশিরের মতো,
কোন একদিন এ পৃথিবীর বুকে!

শিখা কর্মকার




সেদিন ছিল আসার কথা তোমার 
শিখা কর্মকার

আঙ্গুলেতে বাজনা ছিল, গলার ভেতর গান
হাতের মধ্যে ভরা ছিল নরম আদর-কনা,
বুকের মধ্যে কষ্ট ছিল মাদুর পেতে বসে
থিতিয়ে গিয়েছিল সেদিন সকল কল্পনা ।

দেবীস্মিতা দেব

সাপ-লুডো
দেবীস্মিতা দেব


জীবনটা হলো,
জাস্ট একটা সাপ-লুডো।
আমরা প্রত্যেকে ওতে –
একেকটা রঙবেরঙের
গুটি মাত্র।




এবং একুশ

ঋতব্রত



উত্থিষ্টিত, অধীনত, নির্গত, সঙ্গত
(Translated from Over, Under, Through, With by Noelle Kocot)

(এরিক মারিয়া রিলকে-র জন্য)

ঋতব্রত



তুমি আর তুমি ছাড়া বাকি সবকিছুর মধ্যকার এক অজ্ঞ অবস্থা, একটি অণুর উপস্থিতিকে,
আঘাত না লাগে যাতে
নরম চোখ দিয়ে দেখব বলে
সযত্নে তুলে ধরি আলোয়,
তারই নিছনি তার মুগ্ধতা নিয়ে
নিষ্পাপ মুখখানি,
ক্ষণস্থায়ী পদ্মপাতার জল,
তবু অতি যত্নে পালন করে রাখি কাব্যভর।

উত্তম বিশ্বাস

আরোপিত সাম্যবাদ এবং প্রথাগত বিপ্লব
উত্তম বিশ্বাস

ওভেনে গনগনে অবৈধ খাদান
হাঁড়িটার কানা ছুঁয়ে সরপুরু দুধ ,
হঠাৎ নোটিশ এল মুদিখানা থেকে
আক্রোশে ফাটে হাঁড়ি ফ্যানা বুদবুদ !
তুমি খাবে মাছটুকু, ম্যাও খাবে কাঁটা ,
সন্ন্যাসী হলে খাবে সজনের ডাঁটা !


এবং একুশ

রুবি মুখার্জী

বিশ্লেষণ
রুবি মুখার্জী


সব কথার বিশ্লেষণ আমি চাই না,
হৃদয়ে গড়ে তোলা কিছু অনুভব-
সেজে ওঠে আপন মহিমায়
তার প্রকাশ চাই তার মত করেই..
মৃদু... স্নিগ্ধ... অথচ যুক্তি গ্রাহ্য ..
এই অস্পষ্ট স্পষ্টবাদিতাই আমার পছন্দ. !

পিয়ালী বসু ঘোষ

অমরাবতীর চাঁদ
পিয়ালী বসু ঘোষ


উভচর জীবন আমার
ডাঙায় বাঁচি
জলে ভাসি
কখনও একা, পরিপাটি
কখনও পিচ্ছিল পথে গুটিপোকার সাথী

কাজী এনামুল হক

চাঁদের আয়নায় খুঁজি চাঁদমুখ
কাজী এনামুল হক


খুব বেশী দূর নয়,
এ পাড়া আর ও পাড়া; মাঝখানে কয়েকটা অলিগলি,
রিক্সা-ভ্যানের ঠুং-ঠাং টেম্পু বা প্রাইভেট গাড়ীর হর্ণ
ইটের খোয়া, সিমেন্টের বস্তা।

কেয়া রায়

সুখের ঘরের চাবিকাঠি
কেয়া রায়


সুখটাকে কুক্ষীগত করতে বড় ইচ্ছা হয় |
তারপর সেই সঞ্চয় থেকে কতিপয় প্রিয়জনকে,
দিই যদি অল্প অল্প করে, তাদের প্রয়োজন মতো,
তবে কেমন হয়?

মমতা দাস

গল্পের মত - পুরুষের সংলাপ
মমতা দাস

কথা হয়েছিল দেখা হবে ,
উড়ো উড়ো কথা, স্থিরতা ছিল না
বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি তাই।
ডাক যখন এলো 'স্টেশনে থেকে,কেউ আসবে'

শৌনক দত্ত

রানাঘাট লোকাল
শৌনক দত্ত

সে ভীষণ দারুণ সময়-
মুখরতার কার্নিশে এসে
কথা বলছে খৃষ্টপূর্ব কন্ঠস্বর!

স্মৃতি

স্বাহা
স্মৃতি



স্মৃতিরাও মাঝে মাঝে বোঝা হয়ে ভাবে
গ্রহ বা তারার মনে কিছু রেখে দিয়ে
কতটা রাখবে তার হৃদি ভাসা জলে..
এর মধ্যে যদি ঘটে যায় দু একটা দাবানল

অনুপম দত্ত


নীড়
অনুপম দত্ত
ঘর পেরিয়ে উঠোন আর উঠোনজোড়া রোদ
শাড়ির ভাঁজে মিশে থাকা নরম অনুযোগ
হলুদমাখা আঁচল আর ছোট্ট একটা ঘর
স্বপ্নরা সব খেলা করে চৌকাঠ বরাবর

অলভ্য ঘোষ

চাষা ও ক্ষেত
অলভ্য ঘোষ


আমি চাষা তুমি ক্ষেত;নেই তাতে কোন আক্ষেপ।
আমার ঠোটের চুমুতে চুমুতে দেখছি তোমার রুক্ষ ভূমিতে
ফলেছে কত ফসল।

সিয়ামুল হায়াত সৈকত

কবি ও কবিতা
সিয়ামুল হায়াত সৈকত


প্রেমিকার জন্য আমার হৃদয় সর্বস্ব
বোকা দেয়ালের চিত্রপট চারকোণা,
ফিতায়; ভাঁজে–লুকোনো মনের ঘর
বিস্মৃতির চাঁদ চাঁদ খেলায় বৃহস্পতি!

ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী

তুমি অনন্যা
ত্রিভুবন জিৎ মুখার্জী




চাঁদ তোমায় দেখে মুখ লুকোয় মেঘের আড়ালে
বাতাস তোমার সুবাসে মাতোয়ারা
ফুল তোমার আগমনী বার্তা আনে
আকাশ থেকে পুষ্প বৃষ্টি ঝরে
নদী গায় তোমার রূপের গান
তুমি অনন্যা তুমি মন কর মাতোয়ারা।

মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০১৬

সম্পাদকীয়





প্রকাশিত হলো 'এবং একুশ' নভেম্বর, ২০১৬ সংখ্যা
এই সংখ্যার নির্বাচিত কবিরা হলেন -




ঋতব্রত ঘোষ
বৈশালী সেন
সেলিম কুরেশি
জাফর পাঠান
স্মৃতি
সুভাষ চট্টোপাধ্যায়
শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
শিবাংশু দে
সৌম্যদীপ রায়
গোপেশ দে
শান্তনু চ্যাটার্জী
শুক্লা মালাকার
অখিল কুমার দাস
আরশাদ উল্লাহ্‌
মেঘ শান্তনু
দেবীস্মিতা দেব
সোমাদ্রি সাহা
গৌতম দত্ত
রতন সেনগুপ্ত
ডঃ সুজাতা ঘোষ
শর্মিষ্ঠা নাহা






















এবং একুশ

ঋতব্রত ঘোষ



কাকবন্ধ্যা
ঋতব্রত ঘোষ



"এই নে না, টিকিট কেন না, আমি খুব পয়মন্ত রে, কত ফকির রাজা হয়ে গেলো, কত রাজা সম্রাট হয়ে গেল, তুইও হয়ে যাবি। নে না, টিকিট কেন না......"

পুনর্মিলন উৎসবের টিকিট চাইতে এসে লাটরিসায়েবের সাথে দেখা হয়ে গেল।
যুদ্ধে খুইয়েছে দুটো চোখ,
দুইখান হাত অবশ, কানে যা শোনে শোনে না
অবান্তর কথা বলে বাকি সব ঢেকে যায় প্রতিস্বরে,
জাত বেজাতের এজলাসে আস্কারা বিলি হয়;
সবেতেই এক ওজোর, টিকিট কেন না, নে না টিকিট।
টিকিটের দাম বেশি ছিল বলে নাকি আস্থা নেই তাই
রোগ, ধর্ম, গন্ধের বিচারে সটকে গেলাম,
প্রত্নবিদ্যার ঝলকানিতে ট্যারামেরা বসন্ত আলাপের মতো খেউর উঠেছে দেউলের আঙনে,
নদী তুমি ভাগ হলে কেন?
সরগরম হয়ে উঠছে মাহোল,
অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে যেন,
প্রতিদ্বন্দে মুখর মুখ গুলি উত্তেজনায় বেগনি হয়ে গেছে,
ইন্ধনের অপেক্ষায় তারা রাত জাগছে।


নদীরই দোষ।
সে কেনই বা অঞ্চল, গ্রাম, চৌহুদ্দি, নগর, বন্দর, দেশ
বিদেশের ঘেরাটোপ টপকালো?
পরিণামে পুড়ছে গ্রাম, ছারখার হচ্ছে শহর,
দগদগে ঘায়ের প্রকোপে
কাকবন্ধ্যার জরায়ু আর ভরে ওঠে না,
স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দেখেছিল বড় ডাক্তার
বলেছিল শহরে যেতে হবে, তবে ব্যারাম সারবে,
লাটরিসায়েব সেই থেকে রাস্তায় রাস্তায় টিকিট বেচে ফেরে,
লাটরি লাগে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে,
নদীর জল বেচার লাটরি
দেশভাগের লাটরি
ফুটিকড়ি পুঁজি লগ্নি করার লাটরি,
শরীর বেচা-কেনার লাটরি
দেশ ধ্বংস করার লাটরি,
কেউ কেনে, কেউ বাতুল বলে ধাক্কা মেরে চলে যায়,
গিয়ে আলোচনায় বসে,
সবাই বসে তুমুল আলোচনায়,
লাটরিসায়েব রাত বেরাতে আস্তানায় ফেরে,
ঘরে তার কাকবন্ধ্যা বউ
সেই কবে একবার বিইয়েছিল,
সেযাত্রা লাটরিসায়েবের বাড়ি থেকে
উৎসবের রোশনাই ভিনগাঁয়ে পৌঁছেছিল
চোগা-চাপকানে সেজে ইনিয়ে বিনিয়ে সায়েবের সে কি নাচন,
কাউন্সিলর বলেছিলেন, নেক্সট মহড়ায় এসো দিকিনি একবার,
তোমার একটা হিল্লে তোলা রইল এই।

একমাত্র অবলম্বন সে লায়েক হতেই দেশছাড়া হয়ে গেছে কবেই,
পুনর্বিন্যাস উৎসবের মহড়া চলছে বঙ্গীয় সংস্কৃতি দপ্তরে।
কেউ কিনছে, কেউ কিনছে না টিকিট যেমনটা হয়ে থাকে,
জনতার উল্লাস এবারের মতো থম্ মেরে গেছে।





এবং একুশ

বৈশালী সেন



খোলা চিঠি
বৈশালী সেন



গত চব্বিশ বছরে কখনো লিখিনি তোমায়,
জানি না কেন, আজ বড়ো ইচ্ছে করে
তোমায় লিখি মনের কথা,
'মা',সবাই বলে হাসি আমার 'প্রাণ খোলা'৷
আমি জানি, এ হাসি আমার নয়, এ তোমার৷
দিয়েছো আমায়, তাই না অমন হাসতে পারি৷
আর সব গুণ তো বোনের ঝোলায়৷
আমি শুধু হাসতে পারি৷

তবে, এই যে আমি লিখতে পারি
এও কিন্তু তোমার দয়ায়৷
অভয় দাও তো, সত্য বলি৷
সেই যে তোমার সাধের সবুজ খাতা-
যাতে লিখতে তুমি তোমার জীবন কথা,
আর ছিল মা প্রেমের কথা৷

'হাত দিবি না'— শাসিয়ে ছিলে৷
যেদিন তুমি চলেই গেলে,
পড়লো সেটা, তোমার এই দুষ্টু মে'টা৷
বুঝে ছিলাম সে'দিন আমি
কেমন করে বলতে হয় মা—'জীবন কথা'৷

জানি তুমি অনেক দূরে,
তারাদের দেশে বাস কর৷
সময় করে না হয়, তোমার
মেয়ের পত্রখানি একটু পোড়ো৷






এবং একুশ

সেলিম কুরেশি






মরণ
সেলিম কুরেশি




মরণ ১;
জীবনের সত্য জীবনেই নিহিত, তাঁর জন্ম কোন জরায়ুর গর্ভে নয়
না তাঁর মৃত্যু কোন খোদাই করা গোরস্তানে।
মানুষ হেঁটেছে কত পথ বছরে পর বছর, এ শুধু এক মুহূর্ত থেকে মুহূর্তের উত্তোলন
শুধু এক শাশ্বত অন্তিমের চিরস্তায়ী চমৎকার ; এক চাকচিক্য ধরে আছে
সপ্নের কেমেরার রঙিন অবলিলায় । সপ্ন ভাঙলেই জেগে উটে সমর্পিত মৃত্যুর মহা সন্ত্রাসে ।

মরণ ২;
ওগো মানুষ তুমি আর সাগরের ফেনার ফানুশ
ভেসে রও পানির নোনা শরীরে সাগরের সৈকতে
এক আমরন দুশমন বাতাসের কাছে সমর্পিত হবে বলে
আর বাতাস প্রবল হয়ে আসে দাঙ্গায় নামবে বলে
নিয়ে আসে সাগরের নোনা আত্তহুতি,
তুমি মিলিয়ে যাও বালিকার সিকিকোনে,
যেন ছিলোনা উৎপত্তি তোমার কোন কালে।
মানুষ আর ফেনার ফানুশ, একই সমান্তরাল চলাচল

মরণ ৩;
আত্মাই দেহের সেই অন্তরীন ভ্রুন,
একখান চাবি মাইরা দিছে ছাইড়া
চলতে আছে আপন ঘোরে,
জেগে উটে তাই অন্তিম জাগরনে।
ওরা বলে উদয়ের দিন,উন্মেষের দিন আজ ।
তুমি বুক ভাসাও কেঁদে, তুমি আর কোনখানে নেই বলে।
তুমি কস্মিনকালেও বুমার, আজিইতো তোমার প্রসববেদনার
এক ঐশ্বর্যশালী সৃষ্টির মহান যোগের দিন ।

মরণ ৪;
মরন দিয়ে গেছে অচলা মর্তের সন্তানের শেষান্ত
গানে গানে দেহ বলে তোমার হলও শুরু
আর মন বলে সুরে তালে তোমার হলও সারা
জয় জয়কার এখন আমারই অন্তরের অন্তরিক্ষে।

মরণ ৫;
মরন নিয়ে গেল স্পর্শ আর সংস্পর্শের সকল মান অভিমান।
রয়ে গেল জীবনের সকল সচেতন আর সজাগতা,
রেখে গেছ মনে স্মৃতির পাণ্ডুলিপি।
তুমি আর আমি হেঁটেছি মধুর বসন্তে, বর্ষায় ভিজেছি রিক্সার হুড তোলে,
খোজেছি উষ্ণতা শীতের সকালে চায়ের পেয়ালায়
গ্রীষ্মের খরায় ঘেমেছি ঘামে, লিখেছি নাম মাইলের ফলকে।
পরোলৌকিকতা পারবেকি ছিনিয়ে নিতে
জীবনের সকল স্মৃতির কথক আর ভৈরবী রাগ ।

মরণ ৬;
জীবনের আকুল সেই প্রতিক্ষা , শিশুর জন্মের গর্ভবস্তা
তারপর আবারো প্রতিক্ষা ।
দরজায় সেই অজানা কলিং বেলের ,মরনের শেষ আওয়ােজ
চলে যাওয়া এক অচলা শীতের খাঁজে
এইতো জীবন দুই প্রতিক্ষার হাত ধরাধরিতে।
এইতো জীবন জাতির উদয়ে আর বিলীনে
সকল কিছুর চলে যাওয়ার মাতমে।








এবং একুশ

জাফর পাঠান



শুনতে কি পাস্
জাফর পাঠান



চঞ্চল, উচ্ছল, উদ্দাম শিশুদেরকে
প্রাণহীন- নিথর করে দিচ্ছিস তোরা,
একেকটি সাজানো গুছানো সংসারকে
ক্ষণিকে ভাঙ্গিস একটানে আগাগোড়া।

স্বপ্নে বুনা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে
মানুষেরা যখন- শান্তির নীড় গড়ে,
ঠিক তখনি মারিস- বিষাক্ত ছোবল
মানবতার যকৃত খাস- ধরে ধরে ।

তোরাতো মানুষ খাচ্ছিস
জেনে শুনেই তা খাচ্ছিস।

মানুষ হিসাবে- এখন আর দেখিনা
তোদের ধর্মের লেবাস গায়ে মাখিনা,
তোদের রাজতন্ত্র, গণতন্ত্রের যন্ত্র
শুধু পুঁজিতন্ত্র, সাম্রাজ্যবাদের মন্ত্র।

সাগরের প্রতি প্রান্তরে- ভাসছে লাশ
তৃপ্তে সাম্রাজ্যবাদ করে, নগ্ন উল্লাস,
আছি অপেক্ষায়, দেখতে তোদের নাশ
রে কুলাঙ্গারেরা, তোরা কি শুনতে পাস্ ।






এবং একুশ

স্মৃতি



কৌশিকী
স্মৃতি



আঁধারকে ভালোবেসে
প্রদীপ জ্বালাই
ঢেকে দিই সর্বনাশা
শরীরি বালাই..
হেই ই ই বাবু ইদিকে আয় অন্ধকারে জ্বালাব রোশনাই... কেন এত অন্ধকার খুঁজিস? হাতেতে বেলিফুল জড়াস --- আমি কিন্তু তামসী ই আছি
দেহ সুখ তোলা দরে বিকাই...
আজ বুঝি শ্যামা পূজা হবে টুকুস ভাগ আমাদেরো আছে -- ন্যাংটা বেটি কিসে এত বড়ো? সর্ব অঙ্গে রক্ত টুকু সার।
আমি কিন্তু কালী হতে পারি -- শ্যামা হওয়া কি সহজ কাজ, আমি যাব বিপরীত বিহারে
মাগো মেয়ে দিস এ পোড়া জঠরে....
দন্ড কেটে চেয়ে নেব মাপ.. শোন বাবু বৃদ্ধাবাসে বাবুরাই থাকে, আমাদের অনন্ত নরক
মেয়ে তবু খেটে নিয়ে দেহ
পার হবে খিদের সড়ক ------
' যা দেবী সর্বভূতেষু ক্ষুধা রূপেন সংস্থিতা '
এই টুকু যদি শুনতে পাস, তোর পূজা ঠিক দেব আমি
( হেই বাবু হোস না উদাস) ....
এই দেখ বাঙলা বোতল
ঢুকু খেয়ে একটুকু রাখ
ওই শোন বাজায় বাজন
বোধনেই শ্যামা বিসর্জন.....
একটু বেশি টাকা দিস বাবু এ কালী পূজোতে
টুকু ব্যথা লাগবে বাবু আজ আলো রাঙা রাতে
কৌমার্য ঘোচাতে......








এবং একুশ

সুভাষ চট্টোপাধ্যায়



মাতৃদর্শন
সুভাষ চট্টোপাধ্যায়



কে বলেছে শ‍্যামা- মা মোর বস্ত্রহীনা ? --
সত‍্য কি তা-ই দেখ যা সাদা চোখে ?
অন্তর থেকে দৃষ্টি বাইরে আনো --
দেখবে, মা মোর লজ্জাভূষণ ঢেকে !!

কে বলে মা মোর নরের রক্তপিপাসু -
হাতে মুখে তাই বহিছে রুধির-ঝর্ণা ?
জ্ঞানের খড়্গে মোদের গরল নাশি'
নিজে পান করি' মা আজ শ‍্যামবর্ণা !!

কে বলে মা মোর হয়েছে উন্মাদিনী ? --
নাচিছেন শিব- ভূমিতে তাথৈ ছন্দে --
জগৎসৃষ্টি এক সুর-তালে বাঁধি'
মেতেছেন নবসৃষ্টির মহানন্দে !!

কে বলে মায়ের গলায় মুণ্ডমালা ? --
ওরা তো মোদের শত তমোগুণরাশি --
সন্তানদের আত্মারে করি' শুদ্ধ
মা, দেখ, হাসেন কেমন মধুর হাসি !!!







এবং একুশ

শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়





দীপান্বিতা
শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়



যে দিন হৃদয়ে নানান রঙের মেলা
আকাশে তারার ঝিকিমিকি আলোখেলা
যে দিন খুশি'র তুফান সবার মনে
একা থাকলেও ঘিরে থাকে পাঁচজনে
আনন্দ বাঁধে হাসি'র সঙ্গে মিতা
সেই দিনই সাজে জীবনে দীপান্বিতা।

প্রেমের প্রদীপ যেই দিন উজাগর
স্বপ্নেরা সব প্রাণ পায় পর পর
মন মধুময় ডানা মেলে কুয়াশায়
চাহিদার বীজ ফসলের দেখা পায়
উদ্দীপনার আভা হয় আদৃতা
সেই দিনই সাজে জীবনে দীপান্বিতা।

যে দিন বন্ধু ভালবেসে কাছে ডাকে
শত্রুর সাথে গলাগলি সাতপাকে
বৈরির সাথে যে দিন স্বয়ম্বর
সবাই স্বজন, নয় কেউ দূর পর
সবাই যে দিন পরিচিত পরিচিতা
সেই দিনই সাজে জীবনে দীপান্বিতা।

সেজে ওঠে সব তনু-মন যেই ক্ষণে
সহৃদয়তার আলাপন মনে মনে
বাতাসের বুক আনন্দ সুধাময়
মুচকি হাসিতে বাঁকা চাঁদ তন্ময়
যত সাধ সব তৃপ্তি সমর্পিতা
সেই দিনই সাজে জীবনে দীপান্বিতা।











এবং একুশ

শিবাংশু দে



পাথরে রেখেছি...
শিবাংশু দে


এসব সবুজ বৃষ্টি নীল রোদে আশ্বিন
সকাল ভরে থাকে
টানা শরতের ওয়াগন শিস দিয়ে
চলে যাচ্ছে মহুয়ামিলন
আমাদের গল্পগাছা মেঘের আলস্যময়
কবুতর পাঠ
কোন স্বপ্নে আশ্রয় দেবো
তাকে
রোরো এক নদী
এপার ওপার ছায়া
প্যাস্টেল প্রতিম জল
পাথরের দীর্ঘ মন্তাজ
ঐ শ্মশানের কাছে
এক রাতে গান হয়েছিলো
ফুটেছিলো অস্থির শরীরময়
শাপলার নাল
তাকে কি কবিতা বলে
কবি এসেছিলো কাল
রাতে
স্বপ্নে
প্রমত্ত ধাক্কা তার
আগের মতই
এখনও রয়েছো তুমি
পাথরের চিতা
হায়
কে তবে পোড়ালো
তাহার মদ্যপ হাসি
শব্দের খুঁট
টেবো ঘাটি কাঁপায়
এখনও
চট্টোকূলোদ্ভব কবি
আগের মতই হাসে
স্বপ্নে এখনও
ঈষৎ ঘুরিয়ে ঘাড়
আগের মতই জেদি
জানতে চেয়েছে
যেতে পারি...
কিন্তু কেন....








এবং একুশ

সৌম্যদীপ রায়



রাগের বোতাম
সৌম্যদীপ রায়


‘রাগ’ লেখা বোতাম টিপতেই
অফিসের গগনচুম্বী লিফট্
আমাকে নিয়ে নামালো
অধঃপতনের বেসমেন্টে

সেখানে সাজানো আছে
সারিসারি ডাস্টবিন আর
মুখ লুকিয়ে বসে আছে
আত্মম্ভরি ব্যর্থতা

আর একটা নোটিশ বোর্ড টাঙানো -
আপনি এতদুর ঠিকই এসেছেন
কিন্তু ডায়মন্ড খুঁজে পেতে
আপনাকে নেমে
যেতে হবে
আরও গাম্ভীর্যের শক্ত মাটি কেটে










এবং একুশ

গোপেশ দে



তোমার জন্য
গোপেশ দে


তোমার জন্য ভালবাসার নিমফুল নিয়ে আসবো মেঠোপথ ধরে
গুচ্ছকবিতার চারাগাছে রোজ জল ঢালবো।
তোমার জন্য ক্রিসমাসে পুডিং বানাবো
সান্তাক্লস হয়ে চকলেট ক্যাডবেরি বিতরণ করে মাখাবো দু'গাল।
তোমার জন্য সুকুমার রায় আওড়াব নিজেকে পাগলা দাশু ভেবে।
কাকাবাবু,ফেলুদা,টেনিদা,এমনকি শার্লক হোমসের চরিত্র সাজবো।
তোমার জন্য বোমারু বিমান থেকে ঝাপ দেবো তোমায় নিয়ে
প্যারাসুটে ঘুটঘুটে আঁধারে বেড়াব প্রশান্ত আটলান্টিক বীচে।
তোমার জন্য পৃথিবীর জড়াগ্রস্থ ডালপালায় পাতার সঞ্চার করবো
ব্যারিকেড কাঁটাতার পেড়িয়ে দুঃখিনীর হাতে দেবো ফলমূল।
তোমার জন্য ওয়ার্ডসওয়ার্থের বোন ডরথিকে নিয়ে আরেকটি ড্যাফোডিল লিখবো।
সরল কথার পদ্য লিখে পাথরের বুকে সবুজের আলপনা আঁকবো
শুধু তোমার জন্য....






এবং একুশ

শান্তনু চ্যাটার্জী







ধূমকেতু
শান্তনু চ্যাটার্জী



জীবিত থাকার তাগিদেই জেগে থাকা
ঘুমের ঘোমটা বড় বেশি অশরীরি
নিশিডাক শুনে উঠে গিয়েছিল যারা
আছড়ে পড়েছে অযাচিত নিদ্রায়

আছড়ে পড়াই স্বভাব জন্মগত
ধূমকেতু হোক অথবা দূরের ঢেউ
নদী জানত না কতদূর যেতে হবে
এগিয়ে দিয়েছে, পৌঁছে দেয় নি কেউ।








এবং একুশ

শুক্লা মালাকার




লৌকিকতা ও সম্পর্ক
শুক্লা মালাকার



সচ্ছলতা নেই

লৌকিকতা আছে,

বাজারের থলে হাতে বেরোতেই হয়

বিশেষ করে উৎসবের দিনগুলোতে,

স্বজন বন্ধুদের মিলন মেলায়

কৌতূহলের কু-দৃষ্টি এড়াতে

আলমারীর কোন, শাড়ির ভাঁজ, তোষকের তলা হাতড়ানো।

কৌটোকাটি ঘেঁটে যতটুকু পাওয়া যায়

সহজতা জড়ো করা।



সচ্ছলতা নেই

গোপন সঞ্চয়ও শেষ,

মিথ্যেময় পূর্ণতা দিয়ে আপ্যায়ণ,

ধৈর্যহীন নগ্ন হিসেব নিকেশ।



বিতৃষ্ণার ঋণভার লিখে রাখে

সম্পর্কের অভিশাপ।














এবং একুশ

অখিল কুমার দাস


"শুধু ভালবাসার জন্য"
অখিল কুমার দাস


শুধু ভালবাসার জন্য এই গান গাওয়া
শুধু ভালবাসার জন্য এই কবিতার পিছু ধাওয়া
ভালবাসার বরে এই পৃথিবীতে আসা

ভালবাসার তরে এই জনারণ্যে ভাসা ॥


এই ভালবাসা আমার

নবজাত শিশুর মধুর ক্রন্দনে
এই ভালবাসা আমার
দ্বাদশীর নব ঋৃতু বন্দনে
চতুর্দশীর ভরা প্লাবনে
আর অষ্টাদশীর মিথুন আলিঙ্গনে ॥



ভালবাসা কখনও

প্রসব ব্যথার দারুন যন্ত্রনায়
ভালবাসা কখনও
বালিকা বধুর বিদায় গাথায় ॥



ভালবাসার জন্য

এই যৌবনকে বেঁধে রাখা
ভালবাসার জন্য
এই কিশোর মনকে হাতে রাখা ।
বার্ধক্যের জীর্ন বস্ত্রকে ছুঁড়ে ফেলা
মৃত্যু নামের কাল সত্যের অবহেলা ॥



ভালবাসা মানে গোলাপের মেলা

ভালবাসা মানে রাসের লীলা
ভালবাসা মানে অহেতুক কথা
ভালবাসা মানে অকারন ব্যথা
তবু
ভালবাসার জন্য এই গান গাওয়া
ভালবাসার জন্য এই কবিতার পিছু ধাওয়া ॥







এবং একুশ

আরশাদ উল্লাহ্‌






শীত এসেছে
আরশাদ উল্লাহ্‌


গ্রীষ্মকালে ঘাম মুছেছি আর বলেছি
ঠাণ্ডা পানি মাথায় ঢাল
রৌদ্র মাঝে হাঁটতে গিয়ে গা পুড়েছি
গাছের ছায়ায় বসা ভাল।
আর ক’দিন আছে বাকি গুণে দেখি
হাতের দাগে নিজ আঙ্গুলে।
নভেম্বরে তাপ কমবে মনে রেখো
শীতবায়ু আসে তখন গ্রীষ্ম গেলে
ক’টা দিন ধৈর্য ধর তখন দেখো
শীত এসেছে সারাদেশে প্রবল বেগে!
গুরুজনের এমন কথা হয়না মিথ্যা
বই-পুস্তক ঘেটে দেখো আছে লিখা
ঋতুর পরে ঋতু আসে সত্য কথা
বছরঘুরে আসে ক্যামনে যায় দেখা!
গ্রীষ্ম শেষে ঘরে ঘরে শীত এসেছে
হিমেল বায়ু কাপড় পরে রেডি থাকো,
উত্তরদেশে শরতপ্রান্তে তুষার পড়ছে!
শীত এসেছে হিম পড়েছে উষ্ণ থাকো
দেহখানি গরম রাখো কাপড় পরে,
হাড়-কনকনে শীত পড়েছে হিম পড়েছে
তৈরি রাখো শীতের পিঠা ঘরে ঘরে,
শীতের পরে নতুন রূপে সেজেগুছে
আসবে আবার নব সাজে বসন্তকাল
ফুটবে ফুল শতশত গাছে-গাছে,
অক্ষপথে বিশ্ব ঘুরে চলছে দ্রুত চিরকাল
জানে কি কেউ কার নির্দেশে এমন হচ্ছে,
কেমন করে রাতের পরে হয় সকাল!








এবং একুশ

মেঘ শান্তনু



কোনো এক যুবতীকে
মেঘ শান্তনু


চোখের কোণে নিঃস্ব বালুচর
শিশির তোমার ডাক নিয়েছে চিনে
যুবতীকাল প্রহর ভরা স্রোত
আঁখি মেলে তাকাও বৃষ্টি দিনে

অন্য আকাশ, অন্য কোনো জল
মেঘ সীমানা পেরিয়ে যদি চাও
বিকেল আলোয় কার্নিশে পা রেখে
হঠাৎ কেমন রাধিকা হয়ে যাও !

ছড়িয়ে দাও অপূর্ব সব পালক
আমি তোমার সর্বনাশের ডাক
তৃষ্ণা মেটাও, হা-পিত্যেষ বুক
কিছু মানুষ জ্যোৎস্না খুঁজে পাক

বৃষ্টিফোঁটায় সর্বনাশের ছোঁয়াচ
রাত বাড়লে ভাসিয়ে দেবো তরী
আরো একবার অন্ধ হবো আমি,
নগ্ন হয়ে দাঁড়াও, হে ঈশ্বরী !









এবং একুশ

দেবীস্মিতা দেব




চাঁদ
দেবীস্মিতা দেব




পূর্ণিমার চাঁদকে দেখলে
ঝলসানো রুটি বলে
মনে হয়না।
চাঁদের মধ্যে চাঁদের বুড়িকে
খুঁজে পাইনা।
অত দালানের মাঝে
আকাশটা আজ ছোট।
রাস্তায় বা ছাদে গিয়ে
চাঁদ দেখবার
সময় পাইনা।








এবং একুশ

সোমাদ্রি সাহা



সম্পাদক হাসালে
সোমাদ্রি সাহা



কবিতাগুলো লুকিয়ে রেখেছিলাম।
তুমি সম্পাদক এগুলোই পেলে...
মরার পর আমার সেন্ট না..
ড্রাফ্ট দেখতে বলেছিলাম...
সম্পাদক তুমি এগুলো আমার থাকতে দাও
কারণ এ ভালোবাসা শুধু আমারই...
মীরা এসব ডিলিট করে দিলেও
আমার সেন্ট বক্সে রয়ে যাবে এই প্রেম।
...
সম্পাদক ডিলিট করে দিচ্ছ কবিতাদের --
কেন মীরা তোমার স্ত্রী বলে!!
স্ত্রী-কে
নিঃস্বার্থ ভালোবাসতে পারনি,
যৌনযন্ত্র ভেবেছো আর...











এবং একুশ

গৌতম দত্ত



তালগাছ
গৌতম দত্ত




বয়স বেড়েছে ঢের। তালগাছ এক পায়ে ঘুমোয়নি কতদিন !
নরম নরম ভিজে মেঘ ছুঁয়ে দেয় যদি তারে, এইরূপ আশা নিয়ে—
খাড়া হয়ে থেকে যায়। হাঁটু মুড়ে বসবার সাধ হয় কতোবার,
কতোবার সাধ জাগে উবু হয়ে শুয়ে পড়ে পুকুরের জল ঘাঁটে—।
মসৃন জলের স্বাদ পেতে চায় কতোবার— ! চিন্তার ভেতরে তার।
পাবে না তা কোনোদিন—, এটাও সে জেনে গেছে ; বুঝে গেছে, বেঁচে থাকা
অসফল বর্ণহীন। তবুও তো বেঁচে থাকা, অনাগত স্বপ্ন বুনে—
জীবনের চলাফেরা, ক্ষণিক ফলের লোভে। ধন্য আশা মায়াময় !


#

বৃষ্টি এসে পাতা ছুঁলে, একবার সাধ হয়— বাদলের অন্ধকারে—
শরীরে নরম স্পর্শ, আনাগোনা উঁচুনীচু— হরেক মেঘের সাজ !









এবং একুশ

রতন সেনগুপ্ত






প্রশ্নহীন
রতন সেনগুপ্ত




আমাকে বলাও পাপী
কি পাপ আমার?
ফিরে ফিরে এক কথা শতাব্দী অতীত
কর্মহীন নিবেদন জানুপাত
আমার ইচ্ছে নয় এতটুকু কোথাও, সবই তোমার - এই তো জন্মাবধি
তবুও পাপী ? পাপের ভাগীদার ?


এ এক মস্তিষ্ক স্রোত শিশুকাল থেকে
ডুব দিয়ে খায় ভিতর সংসার - তোমারই জয়
কোটি কোটি মুদ্রা মাথার ওপর নাচে
ভিক্ষাপাত্র হাতে তুলে বলি করুণা তোমার
এই শেষ সমাচার
প্রশ্ন করা যাবে না প্রশ্ন অবিশ্বাসী দুরাচার

তুমি এতই শক্তিমান
ঝটকা দাও দেখাও কেরামত
আনো সত্য সুন্দর - বলা যাবে না
এই অলীক অদৃশ্য প্রশ্নহীন মায়াজাল
চায় অজস্র গোলাম মাথা নত করে দাঁড়াক সম্মুখে

মানুষ হবার কিছু নেই - হটাও হটাও
সবই ভাগ্য নির্ধারিত কর্মফল
ছড়ি শুধু জানে কে নাচায় বিশ্ব সংসার
প্রশ্ন করো না
প্রশ্ন পুরনো ব্যাভিচার

মঙ্গল দীপ জ্বালো, জ্বালাও - বোলো না কার
প্রশ্ন হয়ে যাবে









এবং একুশ

ডঃ সুজাতা ঘোষ




শীতের পাখিদের মতো
ডঃ সুজাতা ঘোষ




আমি একটা দুরন্ত গতিতে রঙ বদলানো ভীষন রকম ভালোলাগা।
আমার জন্ম – মৃত্যু – থামা নেই।
আমি গোলাপি ভালোলাগায় জড়ানো একটা উড়ন্ত মনন।
প্রতিবার ব্ল্যাকহোলটার কাছে এসেও আবার ঘুরে দাঁড়াই,
আর মনে জড়িয়ে নেই গরম উত্তরীয়।


শীতের পাখিদের মত লেকের জলে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখি আর দেখি।
আমি অবাক হই, এত রঙ – রূপ – নেশা ............ সবই আমার!
আমার জন্যই কি মানুষ ক্ষত – বিক্ষত করে নিজেকে?
আমি হাসি ঝলসে ওঠা বিদ্যুৎ এর লালচে বাঁকা আলোয়
ওগো শুনছো? তোমায় বলছি, আমি ভেসে চলা চেনা মেঘেদের সারি।

পিচের কালো ধুলোময় রাস্তায় হেঁটে চলা মানুষগুলো ভাবে
এই বুঝি ধাক্কা খাবো উঁচু উঁচু, খোপ খোপ
মানুষের ভালোবাসার ঠিকানার সাথে।
না, আমি ওদের গায়ে মিশে গিয়ে আবার আঁকার ধারন করি।
আমার নাম ভালোবাসা। হ্যাঁ গো, আমার নাম ভালোবাসা।

আমি ওই সাত রঙ মিশে যাওয়া সুন্দরী শীতের পাখি .........
দেখো আমার দিকে চেয়ে
হ্যাঁ, ঠিক ঠাওরেছো।
আমি বাস করি তোমাদের ওই রঙ্গীন মনের
অনেক অনেক অনেক গভীরে।।






এবং একুশ

শর্মিষ্ঠা নাহা






'ভাই' - নাই
শর্মিষ্ঠা নাহা




তোকে আমি ভাই ই ভেবেছিলাম,
পাশে ছিলাম সকল শুভক্ষণে:
যমদুয়ারে কাঁটাও দিয়েছিলাম ;
তোর কপালে ফোঁটাও মনে মনে।


সেই বিপদে তোকেই ডেকেছিলাম,
'ভাইটি' বলে কান্না পায়ে ধরে -
গায়ের জোরে মাড়িয়ে গিয়েছিলি,
দৃশ্যগুলো মনে কি তোর পড়ে?

যন্ত্রণা আর রক্তস্রোতে ভেসে,
জীবন গেছে ছাই হয়ে যে পুড়ে।
সর্বনাশা মস্ত কী ঝড় এল!
শান্তি গেল জীবন থেকে উড়ে।

'ভাই' নাম সেই ক্ষণেই ঘুচে গেল,
অপরাধীর তকমা হল সাঁটা:
দুয়ারে দ্যাখ মরণ নাচে ওই -
কে দেবে তোর যমদুয়ারে কাঁটা?





এবং একুশ

শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৬

সম্পাদকীয়


সম্পাদকীয়



প্রকাশিত হলো 'এবং একুশ' অক্টোবর, ২০১৬ সংখ্যা।

এই সংখ্যার নির্বাচিত কবিরা হলেন



চয়ন
আরশাদ উল্লাহ্‌
সলিল বোস
দন্ত্যন ইসলাম
সাবিনা ইয়াসমিন
পাপিয়া গাঙ্গুলি
রতন সেনগুপ্ত
কৌস্তভ
নারায়ণ মেইকাপ
প্রতীক ঘোষ
পারমিতা চক্রবর্ত্তী
তুষার আহাসান
সোমস্নিগ্ধ মুখোপাধ্যায়
কম্পাস মণ্ডল
পরিতোষ মাহাতো
সোমাদ্রি সাহা
মৌসুমী মণ্ডল
সৌম্যদীপ রায়
গোপেশ দে
জাফর পাঠান
পলাশ কুমার পাল




এবং একুশ

চয়ন



ঘেন্না 
চয়ন


ঘেন্না করছে,ঘেন্না করছে,ঘেন্না করছে। 
অল্পবিদ্যা, মধ্য মেধায় পচন ধরছে ; 
গুপ্ত অহং মারণ যজ্ঞে মন্ত্র পড়ছে । 
ঘেন্না করছে। 

সৃষ্টি দুলছে, কাপড় খুলছে চণ্ডীর রামী 
বিনিদ্র রাত, কামার্ত এই লম্পট আমি -- 
হাতের মুঠোয় শ্লথ পৌরুষ কাতরে মরছে। 
ঘেন্না করছে। 

ঘন নিঃশ্বাস, রতির সুবাস, জুগুপ্সা ঘ্রাণ, 
নাগর বাঁশির অতৃপ্ত সুর ,বিরক্ত প্রাণ -- 
আত্মরতির নির্বেদ মাখা বিন্দু ঝরছে। 
ঘেন্না করছে। 

আয় পাড়ে আয়, তোল্ না আমায় পানসিতে তোর; 
হিমেল চুমোয় অনন্ত হোক খণ্ড প্রহর ---- 
যমের দিব্যি ওষ্ঠে প্রলয় বিষাণ তুলব । 
ঘেন্না ভুলব।




এবং একুশ

আরশাদ উল্লাহ্‌






আমার গ্রাম
আরশাদ উল্লাহ্‌




এটি আমার গ্রাম
তিন দিকে তার তিনটি নদি
উত্তরে ‘শালদা’ একটির নাম!
পশ্চিমে বুড়ি নদী বড় আঁকাবাঁকা
পূর্বে মৃত নদী শালদার স্মৃতি ঢাকা
নেই তার কোন নাম
এটি আমার গ্রাম!


গাছের ‘পরে পাখীদের বাসা
সবার মনে অগাধ ভালবাসা
পাশাপাশি ঘর কেউ নয় সার্থপর
সুখেদুখে আসে কাছে নয়তো পর
সবাই স্বজন নেই কোন দুর্জন
যুদ্ধে যারা দিল প্রাণ বিষর্জন
স্তম্ভে লিখা আছে তাদের নাম
এটি আমার গ্রাম!

চাষকরে খায় ফলায় ফসল
চায়না কিছু সুখটাই আসল
সন্ত্রাস নীতির বুঝেনা কিছু
নেই ভয়ভীতি কল্পিত জুজু
নেই হানাহানি পুলিশি হয়রানী
নেই গুম হত্যা ইজ্জতের হানি
যুগে যুগে আছে তার সুনাম
এটি আমার গ্রাম।

এ গ্রামের ছেলেরা যুদ্ধে লড়েছে
রক্তের বদলে স্বাধীনতা এনেছে
রক্ত লাল জবা - ফুটন্ত মিনারে
ফুল দিয়ে সবাই - কুর্নিশ করে
আগলে রেখেছে তারে কৃষ্ণচূড়া
সবার গর্ব গ্রামের সন্তান তারা
এখানে শহিদেরা ঘুমিয়ে রয়েছে
পাথরে লিখা তাদের নাম
এটি আমার গ্রাম!

পতাকায় রয়েছে শহীদের রক্ত স্বাক্ষর
মুছবেনা কোনদিন স্বাধীনতার অক্ষর
স্বাধীনতার নামে ভাঁড়ামি করে
রাজনীতির নামে শহরে নগরে
এনেছে সন্ত্রাস গুম হত্যা ধর্ষণ
খামোশ তোদেরও যাবে জীবন
সে দিন আর বেশি দূরে নয়
এ গ্রামে যদি - অনাচার হয়
শহিদেরা আবার উঠবে জেগে
দাঁড়াবে তারা - সবার আগে
মুছে দিবে তোদের নাম
এটি আমার গ্রাম!









এবং একুশ

সলিল বোস



আপসোস 
সলিল বোস


কল্লোলিত নব যৌবনের চঞ্চল হিল্লোলে
পেরিয়ে গেছে কলেজের মধুময় দিনগুলি
দায়িত্ব মুক্ত সেই সময়টা আমার কেটেছে
কলেজ পালিয়ে সিনেমা হলের কোণের সিটে
কিংবা পার্কে গাছের আড়ালে নিভৃতে
প্রিয় বান্ধবীর সাথে প্রেম প্রেম খেলায়।
একান্ত অন্তরঙ্গতার উত্তেজনাময় মুহূর্তের
সেই দিনগুলি ... আহা!
ভালই চলছিল সবকিছু, হঠাৎ তাল কেটে গেল
সেই ঘনিষ্ট বান্ধবী যখন বিয়ের প্রস্তাব দিল।
কয়েকটা দিন নানা আছিলায় এড়ানোর পর
বেশি দেরী করিনি বেকারত্বের দোহাই দিয়ে
তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব উড়িয়ে দিতে ...
অসহায় প্রেয়সীর চোখের জলও পারেনি
অস্বীকারের সিদ্ধান্ত থেকে আমাকে টলাতে।
কিন্তু ঐ ঘটনার ঠিক দুবছর পরেই আমি
সুবোধ বালকের মতো পিতার হুকুমে
গুটি গুটি পায়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলাম
বাবার অফিসের হেড ক্লার্কের মুখরা মেয়েকে
অর্ধাঙ্গিনী বানাতে ... চাকরির প্রলোভনে।


আমার জীবনের পরবর্তী গল্প অতি সাধারণ
আর পাঁচটা ছাপোষা কেরানির মতোই
একনাগাড়ে চলছে ... প্রতিদিন একই রুটিন।
বাজার-অফিস-ঘর-আড্ডার একঘেয়েমী...
সংসার নামক জোয়ালে জুরে থাকা
কলুর বলদ বলেই মনে হয় এখন নিজেকে।

জীবনের এই গোধূলিবেলায় পৌঁছে
আজকাল আমার খুবই মনে পড়ে
হেলায় হারানো সেই বান্ধবীর মিষ্টি ভঙ্গিমা...
তার অসম্ভব সুন্দর মুখ টেপা হাসির ছবি...
ঘনিষ্ট মুহূর্তে আধো আধো স্বরে উচ্চারিত
দাম্পত্য জীবন নিয়ে তার দেখা স্বপ্নের বর্ণনা...
চরম আকর্ষণীয় সোনালী ভবিষ্যতের পরিকল্পনা...
ভালবাসা সিক্ত মধুরতম মিলনাত্মক কাব্যিক নীড়...
শুধু আমরা দুজন .... অন্য কেউ থাকবেনা ...
শাড়ি...গয়না নিয়ে চাপ দেওয়া তো দূর
ডাল ভাত, কিংবা সেটাও রোজ না জুটলেও
কখনও তা নিয়ে ঝগড়া না করার অঙ্গীকার...
সকাল থেকে আমার অফিসের রান্নার ব্যস্ততা...
সারা দুপুর আমার বিরহ জ্বালায় অস্থির সময়...
বিকেল থেকে সেজে গুজে রাস্তা দেখা...
কখন আমি ফিরে আসব অফিস থেকে...
পাঁচ বছর চুটিয়ে প্রেম, তারপর একটি সন্তান...

কুমারী মনের কল্পনার অকাল মৃত্যু ঘটিয়েছি আমি।
তার স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনাতুর সেই অশ্রুসজল চোখ
বিনা প্রতিবাদে মাথা নিচু করে তার চলে যাওয়া
আজও আমি ভুলতে পারিনি...বুকে মোচর দেয়।

তাকে ঘরনী করলেই বোধহয় ভাল হোত,
সে কিন্তু খুবই নরম ছিল, এত দজ্জাল ছিল না।
এখন কেবল আপসোস আর আপসোস।





এবং একুশ

দন্ত্যন ইসলাম

এক বৃষ্টির জন্য ভেজা ফুল
[শামসুন্নাহার বৃষ্টির জন্মদিন উপলক্ষে নিবেদিত।]
দন্ত্যন ইসলাম




হাসনাহেনা শুধু গন্ধ বিলাতে জানে
গন্ধ বিলাতে জানে শুধু গন্ধরাজটি
ওরা ফুল নয়, ফুলের চাইতে উন্নত
ওরা মানুষ নয়, তাদের চেয়ে পবিত্র।
যতটুকু রূপালি রৌদ্র আছে তোমার ভেতরে
ততটুকুই আলোকিত করে দেয় তা ফুলের বাগান
যারা খুব স্থির দাঁড়িয়ে আছে নিজের পায়ে
ঠিক হাসনাহেনার ঝুলন্ত ফুলবতী ডাল
গন্ধরাজের অবারিত সৌন্দর্যের ডালপালায়
রোদ সেই তোমাদের মঙ্গল করে আপন রীতিতে।


বৃষ্টিতে মাখা কিছু শব্দ বানিয়ে আজ রুমাল বানালাম
রুমালে লিখে দিলাম বিনম্র উপহার
যার মহাভাণ্ডার ঐশী পারাবত দিয়ে গেছে
সন্ধ্যার কিছু আগে--
যখন তুমি গোলাপের পাতায় মিশ্রিত জলের অতলে
সাঁতার কেটে কেটে স্নান করছিলে।
পর্যাপ্ত মেঘলা দিন পেয়েছিল তোমার বিশেষ দিনটি
যেখানে ছিলাম না অপরিচিত আমি
না থেকেই তুলতুলে পেস্ট্রির বুকে চালিয়েছি
কোমল আঘাত, মজলিশ থেকে তখন
আনন্দের করতালি বাজিয়েছিল খুশিরত অচেনা।
তার পাশে রাখা ছিল হাসনাহেনা আর গন্ধরাজের মুঠো।


হে জন্ম পাহাড় তোমার হৃদয়ে ঠাঁই হবে
জারুলবনের বিশালতা
হরিণের পাল দুষ্টুমি হেঁটে যাবে জ্বলন্ত আগুন পাশ কাটিয়ে,
শপথ নিতে দাও সময়টুকু; রং করা চকমকি ঢেলে
উদযাপন করি তোমার উল্লাস দিন
তোমার মতো করে সাজানোর দিন।
এমন দীর্ঘ নৈঃসঙ্গের কবলে আর পড়িনি আমি
পরপর একাধিক একা ছিলাম
একটা বাড়ি মনে হচ্ছে ফুলের বাগান নয়
যার সবুজ ঘাসের ওপর শুয়ে নেই কোনও রমণী
অথচ জানো, ঘাসগুলো কেমন হলুদ হয়ে উঠছিল বারবার।
যেন কলকল পাখিদের সুরে তাজা হচ্ছিল পাতা
চারিদিকে সিম্ফনি বাজছে সুন্দরে সুন্দরে
টোল পরা গালের স্ফটিক হাসি শুনে
তার কোনও এক বিশেষ দিনে।


2> সমুদ্রের ডাকনাম ঢেউফুল
-----------------


আদর করে ঘুমের মিলনকে পৃষ্ঠার
দ্বিভাঁজ কোটরে শুইয়ে ফেলে
ডুগডুগির কর্ণস্নানে
দমহীন ফুঁ উল্টিয়ে
বহুবিধ আশালতা রোপণ করে উড়ালপুল।
ঘুমন্ত ঘোড়ার আদলে
আষাঢ়ের মেঘচূড়ায় ছায়ার মার্জিন
এঁকে দেয় ক্লাউন নগরী।
মিলনের শহরে বুক এলিয়ে
স্তন্যপায়ী শিশুদের দুধ পান করান
গর্ভবতী কুমারী পাহাড়।
বেশরম দর্শক দূরবীন কাঁধে
হেঁটে বেড়ায় পাহাড়ের খাদে খাদে
কোথাও নতুন গজায় সোনালি চুল
ও চুলের ক্রিসপি শব্দ।









এবং একুশ

সাবিনা ইয়াসমিন




শরৎকে তুমি ভেবে
সাবিনা ইয়াসমিন


মাঝে মাঝে শরৎকে তুমি ভেবে ভুল হয়
তার আকাশের নীল, সাদা মেঘ
আর মিঠাস রোদ্দুর
আমি প্রাণভরে ছুঁই।


তোমাকেও বলি
এভাবেই ছুঁয়ে থাকো
কাশফুলে কোমল হাওয়া হয়ে
অন্তহীন নীলাকাশ হয়ে
শিউলির বোঁটায় হলুদ রঙ হয়ে।

আমি মালা গাঁথবার ছলে
তোমাকেই গাঁথি
খোপায় পরি, বাহুতে জড়াই।

মাঝে মাঝে
শরৎকে তুমি ভেবে ভুল হয়
আমি বরষার শেষ গান দিয়ে
তোমাকে বরণ করি
আমার সবুজে।

তোমাকে বরণ করি
সংসদ ভবনের লেকে, চন্দ্রিমা উদ্যানে
রমনায়
দুপুরে, সকালে, সন্ধ্যায়
রাতগভীরের অবিশ্রান্ত ঝিল্লির ঝংকারে ।

মাঝে মাঝে তুমি ভেবে ভেবে
শরৎকে ছুঁয়ে যাই
আর তোমার আকাশি রঙ দেখতে দেখতে
অন্ধ হয়ে যাই ।

মাঝে মাঝে তাই
শিউলি ফোটার শব্দে
তোমার পায়ের আওয়াজ পাই
আর তোমাকে বসাই রাজাধিরাজ
পৃথিবীর সকল প্রেমিকের অসূয়ার বিপরীতে
আমার সাতনরি হারে।

মাঝেমাঝে তুমি ভেবে ভেবে
শরৎকে ছুঁয়ে ফেলি
আমার তৃষ্ণার ওপারে তখন
পোড়া বনভূমি কাঁপে।



এবং একুশ

পাপিয়া গাঙ্গুলি

চিঠি
পাপিয়া গাঙ্গুলি


রোজই ভাবি মেইল বক্সে একটা চিঠি আসবে।
সেই বিশেষ নাম লেখা, বিশেষ সম্মোধনের,
যে চিঠিটা এলে আমার সব অসুখ সেরে যাবে।
করে ফেলা সব ভুলগুলো একটা যুক্তির সান্তনা পাবে।
ঘুর্নি হয়ে ঘুরতে থাকা ভয়, কুরে খাওয়া কিছু খারাপ লাগা-
উড়ে যাবে ,ছু মন্তরে -রঙ বেরঙ প্রজাপতি হয়ে।
সূর্যটাকে সেদিন একটা হাসি ছুঁড়ে একটু প্রশ্রয় দিয়ে দেবো।
তাই রোজ কছলানোচোখে ,ঘুম স্বপ্নঘোর টুকরো আশায়,
আঙুল পৌঁছে যায়,স্পর্শ ফোনের মোলেম বুকে।
আলতো ছোঁয়ায় হুড়মুড় করে হাজির কতখবর! লটারিতে টাকা পাওয়ার ,কারোর জন্মদিন
রোগা হওয়ার নানা উপায়ের লোভ,
রান্নার হদিস,সস্তায় বেড়ানোর ফিকির,
দিন ভালো যাবে তো! অথবা সংবাদ দৈনিক,
এমন অগোছালো অনেক কিছু,এলোমেলো।
শুধু মেইলবক্সটা চোখে চোখ রেখে বলে, "আসেনি!"
চোখ বুজে ফেলি, সত্যিটাকে মুখ ভেংচে দিয়ে।
একমুঠো অপেক্ষা সড়িয়ে রেখে,খুশির মুখোশ আঁটি।
আচ্ছা, তোমার ওখানে কি ইন্টারননেট নেই?
আমার ইমেইল ঠিকানা দিতে ভুলে গেছিলাম কি ?
মোবাইলটা দিয়ে দিলেই হতো,
একটা ওয়াটস আপ ও করতে পারতে।
যাবার আগে সব শিখিয়ে ছিলাম তো!
আসলে অসুখ করেছে আমার ,মন খারাপের।
তোমার একটা চিঠি এলেই -
একদম ভালো হয়ে যাব ,বাবা!





এবং একুশ

রতন সেনগুপ্ত



ধূর্ত রাত
রতন সেনগুপ্ত



কয়েক লক্ষ ধূর্ত রাত মধ্যে বসে
তোমার আমার
বুকের মধ্যে আগুন জ্বেলে খাচ্ছে
মধ্যযুগ বৃষ্টি জল
শিকড় থেকে গজাচ্ছে ডালপালা


হাল দিচ্ছে সার দিচ্ছে দিচ্ছে অঢেল পানি
উপড়াবে কে
বুকের মধ্যে অন্ধ আশমানি
মগডালে আছেন যিনি জানেন তিনি
কাঁটা থাকলেও এটাই নিরাপদ
অন্ধকার কাটলে যদি হাঁটে সূর্যরথ

মাঝে মধ্যে জামাকাপড় শুকিয়ে নিলেই হল
সুখের মধ্যে অসুখ থাকে - থাক না
কয়েকটা বুলেট দিয়ে ঘুচিয়ে দেব বায়না
অন্ধকার কেটে গেলে মুখের সামনে আলো
এর চেয়ে বেঁচে থাক মৌল .... মৌল .... মৌল ...

কয়েক লক্ষ ধূর্ত রাত মধ্যে বসে
তোমার আমার






এবং একুশ

কৌস্তভ



ঘড়িতে একটা পঁচিশ !
কৌস্তভ



অবশেষে তখন রাত্রি একটা পঁচিশ ¦ শহরের
বড় ঘড়িটা জানান দিলো ¦ এবার
নিশ্চিন্তে আমি আমার সমস্ত ভাবনাকে
রাজনীতিতে বন্দি করে, ঘুমন্ত করে তুলেছি !
শুধু আমি আছি আধোঘুমে ! নিশ্ছিদ্র
নিরাপত্তার ভ্রান্ত ঘেরাটোপে !


চ্যাপলিনরা আজও আমাকে দেখে হাসে ! আমি
ভুলে গেছি কিছু হাসি উপহার দিতে !






এবং একুশ

নারায়ণ মেইকাপ



বাসি ফুল
নারায়ণ মেইকাপ



খোকা খোকা চোখ বয়স
যদিও তলে তলে দুপুর গড়িয়ে
কবে চলে গেছে, যদিও সহসা
বোঝা মুশকিল। তবু যতটা
মাখন মোলায়েম গলায় বলা
যায় সেরকম মিহি সুরে
হাতে ট্যুরিস্টার-এর হাতল
ধরিয়ে দিয়ে বলল, কিছু
মনে করিস না লক্ষ্মীটি,
এবার তুই পথ দ্যাখ।
-আস্ত পৃথিবীর আমি মালিক






এবং একুশ

প্রতীক ঘোষ

গুচ্ছ কবিতা
প্রতীক ঘোষ




১.আকাশ ও সে




অফিস থেকে ফিরে
চার মিনিট এর রাস্তা তাকে হেঁটে আসতে হয়
এই চার মিনিট এর রাস্তাই
তার সাথে আকাশের কথা দেখা করার সময়।
অফিসে ঢোকার সময় থেকে বেরোনোর সময়
আকাশের রঙ পালটে যায়।
সে চশমার উপরে লেগে থাকা বাষ্প মুছে
আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসে
আকাশ কি ক্লান্ত,কতোদিন ঘাড় নিচু করে বেঁচক আছে অমানুষ এর মতো।
একটা চুয়াল্লিশ নম্বর বাস চলে গেলে
তার মনে হয় এ জীবন চাই না।
পরের চুয়াল্লিশ এর বাসে
সে দরজায় পা রাখার জায়গা পায়।
বাস এই জীবন না চাওয়া মানুষ দের
ভিড় নিয়ে এগিয়ে যায়
দশ ফুট বাই দশ ফুট এর গন্তব্যে।
এরপর আকাশ মিটি মিটি তারায়
তার দিকে তাকিয়ে
পাঁজর ফাটিয়ে হাসে।


২. আমাদের এই জন্ম


সকাল থেকে লেবু পাতা গুলো
নরম হাওয়ায় দুলছে।
এরপর,
মানুষের ছায়ার দৈর্ঘ্য ছোট হতে থাকে।
ঘেমে ঘেমে গলে নিঃশেষ হয় দায়িত্ববোধ।
#
এখন কাঠবিড়ালির মতো দ্রুত সন্ধে নামছে।
লেবুপাতার দুলুনি থামে না।
#
মানুষ কখনোও ফুলের জন্ম পাবে না।


৩. সংসার




একদিন বিকেল বেলা আমি
বাগানে ফুল কুড়োতে কুড়োতে
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম
চোখ লেগে গেছিল আরকি
ঘুম ভাঙতে দেখি আমি
আর উঠতে পারছি না।
#
জানি না কখন আমার পিঠের উপর
কেউ একটা বাগান চাপিয়ে দিয়ে গেছে
সেই বাগানে দুটো পাখি থাকে
#
তারা গান গায়
বাসা বাঁধে।
#
আমি তাদের আর কোনোদিন ছুঁয়ে দেখতে পারি না
#
আমার পিঠের উর্বরতায়
ফলন্ত সংসার দেখি
#
সূর্যাস্ত অব্দি।









এবং একুশ

পারমিতা চক্রবর্ত্তী



স্মৃতি কবিতা
পারমিতা চক্রবর্ত্তী 



শহরে হঠাৎ মেঘ চলাচল
জোনাকি থাকে স্মৃতি দাগে
কাঁপছিল মন ,অন্যরকম ,
ডাক নাম নামল পরাগে

:
সাড়া দেয় অবুঝ মনের
জাইলোফোন
রূপকথা চোখ রাখে নদী
কোলাহলে
:

রোদেলা আলোয় জন্মায়
মোমবাতির চার্জসিট
মনপাহারায় উঁকি মারে
আলতো বিকেল
:
স্মৃতি ঘুম থেকে ওঠা
ব্যাথার ক্ষিদে
এনলিস্টেড হয় শহরের
খোলা ক্যান্টিনে
:
মনের উষ্ণ ভাঁজে হামাগুড়ি
দেয় বেসামাল ট্রাম
মুঠোর চিনাবাদামে ঢাকা প্রেম
ডাক দেয় সুদীর্ঘ মেয়েবেলার
:
ফুরফুরে হাওয়ায় শহর
তোলপাড় করা ইমোশান
জ্বলে ওঠে ত্রিফলার ব্যস্ততায় ...
:
লজ্জা চিবুক হয়ে ওঠে
অনুরাগের শাড়ি ধরা আঁচল










এবং একুশ

তুষার আহাসান



আমাদের কথামালা-১৩৭
তুষার আহাসান




আমরা এখন বিবেক রাখি সিন্দুকে

সোনা রাখি বন্দকে

চিটিং করি বন্ধুকে।



আমরা এখন চাঁদ ভাবি বিন্দুকে

ভয় পাইনে বন্দুকে

যে যা-ই বলুক নিন্দুকে।



আমরা এখন ভরসা রাখি গার্লফ্রেন্ডে

হিসেব রাখি থাউজেন্ডে

ফুর্তি মারি উইক-এন্ডে



আমরা এখন বাবা-মায়ের দোষ খুঁজি

সামলে রাখি গোপন পুঁজি

নিজেকে ছাড়া কাকে বুঝি!



আমরা এখন গাড়ি-বাড়ির গন্যমান্য

নেশায় নাই ভারসাম্য

সবকিছুতে’মানি’ কাম্য



আমরা এখন গুরুর কথায় পাথর ধরি

পড়শিদের কাতর করি

হাঁটা-যন্ত্রে ওজন ধরি



আমরা এখন চোখ রাখি বৃদ্ধাশ্রমে

কি জানি কখন কদর কমে
               ঠাঁই যেন পাই কোন রকমে।




এবং একুশ

সোমস্নিগ্ধ মুখোপাধ্যায়



চাইব সেদিন শুধু একটি ফুল
সোমস্নিগ্ধ মুখোপাধ্যায়




চূড়ান্ত ধ্বংসের পরে -

যদি শুধু বেঁচে থাকি তুমি আর আমি আর আমাদের মেয়ে,

তবে সেই গাঢ় অন্ধকারে,

নক্ষত্রের শাশ্বত আলোয় নতজানু হয়ে,

আমি শুধু চেয়ে নেব, হে ঈশ্বর - বাগানের শুধু এক ফুল,

যে ফুলের নাভীমূলে যত্নে রাখা পরাগকেশর -

আবার নতুন করে সভ্যতার জন্ম হবে বলে,

স্বভূমি যে চিনে নেবে অবিকল নিখুঁত, নির্ভুল।







এবং একুশ

কম্পাস মণ্ডল



বৃষ্টি
কম্পাস মণ্ডল



কাক ভেজা বৃষ্টির জল তোমার পালকে পালকে
কতটা বৃষ্টির ফোঁটায় চোখের কান্না মোছে ?
ভেজা আঁচল বেয়ে সে জল বুকে।
পোড়া কাঠের টুকরোয় এখনও প্রেম লেগে আছে ;
এমন একটা বৃষ্টির দিনে তোমার চলে যাওয়া --
বৃষ্টির কি হৃদয় আছে কোথাও ?
সে তো শুধুই ঝরে যাওয়া!
বৃষ্টি তোমার কি ছিল কখনও কেউ।
ভেজা শাড়ী টা এখনো ভেজাই আছে -
জানালার কাঁচ বেয়ে বৃষ্টির বিনুনি ;
মৃত্যু তুমি কি ছুঁতে পারো আমায় বৃষ্টির আঁচে ?
এ মৃত্যু, এ বৃষ্টি সবই তুমি আমি জানি ;
বৃষ্টি তোমার কি বয়স হয় না কখনো ?
এ বৃষ্টি আমার বার্ধক্য ছুঁয়ে গেছে ।
অতীত তুমি সাক্ষী হয়ে আছো এ বৃষ্টির জন্মানো -
এ বৃষ্টি আমার হৃদয় গলানো চিতায় আজন্ম শুয়ে আছে।





এবং একুশ

পরিতোষ মাহাতো



একান্ত একা
পরিতোষ মাহাতো



দূর্বার পৃথিবীতে আমি একা;
একান্ত একা
নির্জন পথে চলেছি আনমনে
যেন কোন মরু পথে....
ব্যস্ত প্রকৃতিও শান্ত
থেমে গেছে কোলাহল
নিস্তেজ হয়ে গেছে পৃথিবী
মৃত লাশের মতো।

ক্ষত বিক্ষত করেছ আমায়
তোমার নিষ্ঠুর হাতে
ঘৃণার তির ছুঁড়েছ আমার শূন্য বুকে
নিজেকে নিঃশেষ করেছি
তোমায় ভালোবেসে
আজ আমি একা; একান্ত একা
এই আদিগন্ত রাত্রির নির্জনে।







এবং একুশ