শনিবার, ১ আগস্ট, ২০১৫

পল্লববরন পাল



চুম্বন-কে নিয়ে কবিতাগুচ্ছ 
পল্লববরন পাল 





 চুম্বন এক মন্দির উপাসনার
চুম্বন মহাকাব্য সংস্করণ
চুম্বন মৃতসঞ্জীবনীর সুধা
চুম্বন দুই ওষ্ঠে সেতুর গড়ন 

চুম্বন মহা বিশ্ব পরিক্রমা 
চুম্বন এক শৈল্পিক অভিবাদন 
চুম্বন এক সশব্দ নীরবতা
চুম্বন ছোটোগল্পের আস্বাদন

চুম্বন ভালোবাসার সহজ পাঠ 
চুম্বন তেড়ে আসে অ-য়ে অজগর 
চুম্বন এক হ্রস্ব উ-কার ঠোঁটে 
চুম্বন সুর লতা মঙ্গেশকর 

চুম্বন স্বর-ব্যাঞ্জন্ থিসরাস
চুম্বন এক বোঝাপড়া যুক্তাক্ষর 
চুম্বন এক নিভৃত আপোষ-যুদ্ধ 
চুম্বন সাম্রাজ্যবাদীর স্বাক্ষর 

চুম্বন মানে সীমান্ত উল্লঙ্ঘন 
চুম্বন মানে শোষক এবং শোষিত 
চুম্বন পারমানবিক মারণাস্ত্র 
চুম্বন মানে মনুষ্যজয় ঘোষিত

গানে গানে তব বন্ধন যাক টুটে
চুম্বন সেই প্রিয় স্বাধীনতা স্বাদ
চুম্বন এই দৈনিক হিংস্রতার 
বিরুদ্ধে ভালোবাসাময় প্রতিবাদ

চুম্বনে ভরা ভিটামিন এবিসিডি
সুস্বাস্থ্যজ্ঞান ওষ্ঠসেতুতে বন্দী 
একটানা দিনরাতভর চুম্বনে 
তামাকুসেবন নির্মুল করা ফন্দি 

চুম্বন এক স্বর্গীয় মিষ্টান্ন 
চুম্বন মানে অধরামৃত দ্রবণ
চুম্বন বহুমাত্রিক তাপচর্চা 
চুম্বন অতিমানবিক উদ্বোধন 

চুম্বন মানে শ্বাসের যুগলবন্দী 
চুম্বনে নেই দূষণ অভিপ্রেত
চুম্বন দিয়ে সম্পর্কের শুরু
চুম্বনে আঁকা সমাপ্তি সঙ্কেতও । 

***

 তোমার শব্দযন্ত্রে ঠোঁট ছুঁইয়ে
আমি পান করছি স্বরবর্ণদের
তুমি আটকে আছো আমার যুক্তাক্ষরে 
আর কংক্রিট শিরদাঁড়া বেয়ে
টিকটিকির মতো নি:শব্দে 
নেমে আসছে জ্যোত্‍স্নার আগুনপ্রপাত 
দ্বৈতকন্ঠে আটনম্বর সিম্ফনি গাইছে মধ্যরাত ও
মধ্যবর্তী একুশ মাইলের শ্রেণীবিভক্ত সমাজ

তন্নতন্ন খোঁজ চলছে সেই ঐতিহাসিক আপেলগাছের
অথচ নিউটন ছাড়া যে সত্যবোধন নেই
এই সামান্য তথ্য জানেনা আদম-ইভেরা 
এ শতাব্দী নিরাপদ, দ্বিতীয় অধ্যায়ে 
ব্যাঞ্জনে সুতরাং নিরঙ্কুশ খনন চলুক 

কই, দেখি –
ঠোঁটদুটো দাও আর একবার 

***

 ডানগালে বুঝি শব্দযন্ত্র ছিলো?
আমি লুণ্ঠনকারী না – অকস্মাৎ 
এক হুড়মুড় অভিকর্ষজ টানে 
ধাক্কা খেয়েছি শুধু চাঁদপানা মুখে

মুহূর্তে আমি তৈরি হাজতবাসে
চোদ্দপুরুষ তত্‍সহ প্রস্তুত 
অথচ অবাক – প্রস্তর-মৌনতা 
দৃষ্টিআগুনে ভিড়বাস পুড়ে ছাই 

যে সুত্র মেনে আপেলটা পড়েছিলো
গাছ থেকে নিচে নিউটন-পৃথিবীতে –
দোষ আপেলের, নাকি অভিকর্ষের?
ধর্মাবতার, অধম নিরপরাধ 

আমি আপেলের নিতান্ত সহোদর 
সুত্রানুযায়ী অভিকর্ষজ টানের 
বাসনাটুকুই, কিন্তু ক্ষমতাহীন
ছাপোষা টিকিটে রোজ বাসে যাতায়াত 

আমার ওষ্ঠে লেগে আছে গোল চাঁদ
জ্যোত্‍স্নাবৃষ্টি হচ্ছে অনর্গল 
ধর্মাবতার, বিধিমতে শ্রীমতীকে
এবার বাঁগাল বাড়ানোর রায় দিন

***

 আমার ঠোঁটের কোণে 
তোমার সন্ত্রাস লেগে আছে

***

 তোমার ঠোঁটের কোণে লেগে আছে রোদ্দুরকণা 
অন্ধকার থেকে আর উত্তরণে আলো জ্বালবোনা 
ওই ঠোঁট – বাতিস্তম্ভ – যেন দেহাতীত শিল্পকলা 
স্পর্শে নবজন্ম হয় – ভাষায় কঠিন সেটা বলা 

***

 প্রথম চুম্বনের ক্ষণে আম আঁটির ভেঁপু বেজেছিলো
আলো জ্বলে উঠেছিলো আশরীর নিশ্চিন্দিপুরে
কতো গ্রীষ্ম বর্ষা গেল মাঘোত্‍সব দোল তারপর 
আমি লিখে যাচ্ছি সেই ভালোবাসা পথের পাঁচালী 

***

৭ আমার ঠোঁটে তোমার ওষ্ঠ-কলম দিয়ে 
চিত্রকাব্য লিখছো যতো খসখসিয়ে
অচেনা সব বর্ণমালায় – ভুলবশত 
অর্থ আমি বুঝতে পারি জলের মতো। 

***

 সমুদ্র চুম্বন আঁকে সৈকত-বালুকার ঠোঁটে 
শরীরের অন্যপ্রান্তে আকাশের সঙ্গে রমণ 
যদিও শ্রেষ্ঠ ভোর সামুদ্রিক - স্বীকৃতি জোটে 
দ্বিচারিতা আখ্যা দেয় মানুষের ভুল ব্যাকরণ 

***

 কথা বলতেও দূরত্ব লাগে কিছু 
কিছু শূন্যতা চক্ষের আগুপিছু 
তার চেয়ে ঠোঁট ব্যস্ত সারাক্ষণ
তোমার ওষ্ঠে দিতে থাক চুম্বন

***

 আমাকে চুম্বন দাও
হে আদিম এসো শয্যায় 
দ্বৈত দেহে মহাকাব্য লিখি
আটশো তেত্তিরিশ অধ্যায়

***

উচ্চারণযন্ত্রদু’টি 
পরস্পর বন্ধ নিবিড় 
তাই কোনো শব্দ নেই
বাক্য নেই দাড়ি কমা 
সন্ধ্যে ছ’টার কাঁটা 
ধ্যানস্থ খাগের কলম 
শহরের সাদা পৃষ্ঠা জুড়ে 
লিখে যাচ্ছে উপন্যাস
নয় এক দীর্ঘ কবিতা 

***

 নাসিকার মতো লম্বালম্বি হলে অবশ্য 
অধুনা অনুভূমিক ওষ্ঠযুগলের 
উঁচুনিচু শ্রেণীবৈষম্য থাকতোনা – 
তর্কের খাতিরে চোখকানহাতপায়ের মতো
ওষ্ঠদুটিকেও যদি উল্লম্ব বলে ধরে নিই 
কে সামলাবে ডান-বাম নিত্য ঠোঁটাঠুটি 

নিজ নিজ শ্রেণীস্বার্থে হারেরেরে ঠোঁটকাটা 
স্বজনপোষন রক্তারক্তি রিগিং বা বুথদখল?
এখনো যে কোনও স্বর বা ব্যাঞ্জনের উচ্চারণে 
দুই ওষ্ঠের অল্প বা মহাপ্রাণ নৃত্যভঙ্গী 
প-বর্গে সোহাগ আলিঙ্গন, যুক্তাক্ষরে শৃঙ্গার - 
সে ওই শ্রেণীবৈষম্যটুকু মেনে ওপরনীচে আছে বলেই না

উঁচু ও নিচের ওষ্ঠ পরস্পর শ্রেণীশত্রু নয় 
অক্ষরের জন্ম হয় চিৎপাত ওষ্ঠশৃঙ্গারে 
সংগ্রামও বলা যায় – তৃপ্তির সাম্রাজ্য বাড়ে 
তারপর সন্তানপথে হেঁটে যায় অক্ষরেরা পাশাপাশি 
সহোদরহাত ধ’রে অনর্গল শ্রেণীহীন শব্দশৃঙ্খল 

শ্রেণীসংগ্রামী এই শব্দবাক্যমাণিক্যের জন্মশয্যায় 
এ ওর ওপরনীচে ওষ্ঠদুটি রাখতেই হয় 
রতিবিজ্ঞানের এই সনাতন উপভোগ্য রীতি 
বলা নেই কওয়া নেই – বদলাতে যাবো
ততো বিদ্ব-হরিদাস এখনো হইনি । 

***

 সাতাশটা চুমু দিয়ে উপন্যাস? – পাগলপ্রলাপ!
তর্কের খাতিরে তবু ছোটোগল্পটল্প হতে পারে
প্রবন্ধে অনধিকার চুমুটুমু অনন্তনিষেধ

বাকি থাকলো 

কবিতা –

হ্যাঁ –

জীবনের কিছু ক্ষেত্রে কিছু বাকি রাখাটাই শ্রেয়
কারণ অধুনা কবি যথাক্রমে বিশ্বাস করেন –

একটি কবিতা মানে একটি চুম্বন - 
মৌলিক পদার্থ উভয়েই,
ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মে আছে আশ্চর্য মিল 

উভয়েরই বুকে আছে নিজস্ব গোপন সন্ত্রাস
আত্মনেপদী কিছু অশরীরী মগ্ন সংলাপ
যারা শুধু অনুবাদে খরস্রোতা বয়ে যায়
শিরা উপশিরা দিয়ে
কবিতায়, কখনো বা চুম্বনের অধরশরীরে 

সাত না সাতাশ – তাই সংখ্যাটা নিতান্ত নিরীহ
আসল কথাটা হলো – স্বাভাবিক প্রিয় উষ্ণতায়
ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা বিক্রিয়াটা রসায়নাগারে
অণুপরমাণুদের শহীদমিনারসভা কতোটা সফল
উপচে উঠলো কিনা – সেটা দেখা, খাতাবদ্ধ করা
গোপন অলিন্দপথে অন্য কেউ আসছে যাচ্ছে কি?
ছোটোগল্প? উপন্যাস?
মুশকালো বেড়ালের পেটকাটা তালব্য শ? 

একটি চুমুতে লেখা কবিতায় কখনোসখনো 
সাতাশটা উপন্যাসও চাপা পড়ে যেতে পারে 

সে গল্পটা হবে’খন অন্য কোনো কবিতাসভায়। 













এবং একুশ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন