সোমবার, ১ আগস্ট, ২০১৬

সাবিনা ইয়াসমিন



অশুভ নক্ষত্রের কাল
সাবিনা ইয়াসমিন



এর চেয়ে ভালো ছিলো পিতা
মাতৃগর্ভের কারাগার
২৮ জুলাই, ১৯৭১
পেঁচার মতো এক অশুভ প্রহর ছিল রাতের শেষে।


মা দরজার খিল তুলে ঝুলছিল
সিন্দুকে তুলে রাখা সমস্ত রত্ন
তুলে দিয়েছিল তস্কর হায়েনার হাতে
তবুও ওরা রক্ত চাই রক্ত চাই বলে উল্লাস করছিল
জঠর কারাগারে আমি তখন কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম।

সেদিন শ্রাবণের ভোর ছিল
মরুভূমিতেও নেমেছিল ঝরোঝরো বৃষ্টির কান্না
সবাই আমার উদ্দ্যেশ্যে বলছিল
এ সন্তান হয়তো দেখবেনা
বর্ষা, বসন্ত, পৃথিবীর আলো

কিন্তু আমি নষ্টগর্ভ হবোনা
শক্ত হাতে ধরে রইলাম
মাতৃপুষ্প, জন্মগর্ভভ্রূণে।

সকাল আটটায় নদীর তীর থেকে
তোমার শবদেহ এনে রাখা হলো
মায়ের প্রিয় কামিনী ফুলগাছটির নীচে
তখনও, জঠরের ভ্রূণ আমি কাঁদিনি

কারণ তুমি তখন ত্রিশ লক্ষের একটি পুষ্প
স্বর্গের বাগানে ফুটে উঠেছো, অপরূপ
ঝলমলে দ্যুতি।

এরপর ভচক্রে যোগ হলো
আরও অনেক কেতু, রাহূ ও শনি।

আরও এক আবিল ভোর এল
বর্ণহীন আকাশ থেকে
দেবদূতেরা নামবার আগেই
বয়ে গেল এলোমেলো ঝড়
নীড় ভাঙলো বত্রিশ নম্বরে।

দেবদূতেরা নামিয়ে দিলেন স্বর্গের সিঁড়ি
সেই সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেলেন
বারবার ক্ষমা করা উদার পিতা
প্রিয় সন্তানেরা ও সন্তানের জননী
এবং আত্মীয় আত্মা।

এখনও অসুস্থ কিছু কীটের প্রলাপ
ঢেকে দিচ্ছে সূর্যমুখীর উজ্জ্বল আলো।

বৃন্ত থেকে খসে পডেছে চারটি কুসুম
জাতির বিবেকের ক্রোডে।

এবারে নতুন রূপ দানবেরা
হলি আর্টিজানে
শোলাকিয়ায়
বাতাসে হিংস্র নারকীয় উল্লাস।

এতসব অশুভ নক্ষত্রকালের পরে
তোমাকে শুধু বলার থাকে পিতা
সাথে করে নিয়ে গেছ যে রুদ্রপলাশ
হিরণ্ময় কৃৃষ্ণচূড়া
নতজানু পেতেছি দু'হাত
আমাকে দাও

দাবানলে জ্বলতে থাকা স্বদেশ
দেখার এ কষ্ট মুখ
আমি আর কাউকে দেখাবোনা।
তোমার দেয়া পুষ্পঋণ নিয়ে
ফিরে যাবো মাতৃগর্ভ কারাগারে।















এবং একুশ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন