শনিবার, ১ আগস্ট, ২০১৫

সম্পাদকীয়




সপ্তম সংখ্যার কাজ আজ শেষ করেই উঠলাম। রাত হল বেশ। বকুনী খেলাম। দোষ হল সেই নন্দ ঘোষ ফেসবুক – এর “কি যে আছে ওখানে? ঈশ্বরই জানেন” কথা বাড়ালে আরো বকুনীর সম্ভাবনা। কিন্তু মনে মনে ভাবলাম, শুধু ঈশ্বর কেন? আমিও বিলক্ষণ জানি, কি আছে সেখানে। সেখানে সৃষ্টি আছে, সৃষ্টি সুখের উল্লাস আছে, সেখানে স্বীকৃতি আছে, সেখানে ভাল লাগা আছে, ভালবাসা আছে, সেখানে নিটোল নিটোল সম্পর্কের টানাপোড়েন আছে... ভাবতে ভাবতে মনে পড়ে গেল আমার দুই বন্ধুর কথা। আজ শোনাব তাদেরই কথা। 

মৃত্তিকা দত্ত আমার গানের ক্লাসের বন্ধু। আমরা ‘মাটি’ বলে ডাকি। বয়সে কিছুটা ছোটই হবে। কিন্তু অদ্ভূত এক ব্যক্তিত্বের ছাপ চোখে-মুখে। শক্ত শক্ত গান অবলীলায় গেয়ে দেয়, শান্ত চোখে তাকায়, মিষ্টি করে হাসে, মৃদু স্বরে কথা বলে... দেখলেই কেমন সমীহ করতে ইচ্ছে হয়। 

মনোহর পুকুর রোডে পুরনো দিনের বিরাট বাড়ি। তারই তিনতলার একটা বড় ঘরে থাকতো মাটি আর কাকিমা। যৌথপরিবার। কিন্তু পরস্পরের মধ্যের বন্ধনটা কেমন জোরাল বলে নজরে পড়ত না। কাকিমা বলতেন, আমার তো সম্বল বলতে এই ঘরখানা আর স্কুলের চাকরী। মেয়েটা নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেলেই আমার ছুটি।

সম্ভবত কাকিমাকে তাড়াতাড়ি ছুটি দিতেই গ্রাজুয়েশনের পর মাটি চাকরী নিল একটা এন.জি.ও-তে। কালীঘাটের বিশেষ এলাকার নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ। মাটির চাকরীটা কাকিমার মোটেই পছন্দ হয় নি, এই পর্যন্ত জানতাম। 

তারপর বেশ কিছুদিন কোন যোগাযোগই ছিলনা আমাদের। প্রায় বছর সাত-আট পরে হঠাৎ একদিন ফেসবুকে খুঁজে পেলাম মাটিকে। শুনলাম, পুরনো চাকরীটাই এখনও করে। স্ট্যাটাস বদলেছে বছর তিনেক আগে, বিয়ে করেছে। ওর বর কোন এক গবেষণার কাজে বিদেশে থাকেন। মাটি আপাতত কোলকাতাতেই। একদিকে বৃদ্ধা শাশুড়ি, অন্যদিকে মা – কোলকাতায় এঁদের একা ফেলে যাওয়া সম্ভব নয়। কাকিমা অবশ্য মাটিকে এক্কেবারে ছুটি দিয়ে চলে গেছেন বছর খানেক আগে, এখন বালিগঞ্জ প্লেস-এর বিশাল অত্যাধুনিক ফ্ল্যাটে মাটি আর ওর শাশুড়ি। মুখ ফুটে কিছু বলার মেয়ে নয়, তবুও মাটির একাকীত্বটা কেমন যেন অনুভব করেই নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে শুরু করলাম। 

কথা প্রসঙ্গে একদিন জানলাম, দিল্লীতে এক আন্তর্জাতিক এন.জি.ও-র সদর দপ্তরে মাটির অফিসের একটা মোটা অঙ্কের চেক আটকে রয়েছে কোন এক অজানা কারণে। অনেক মেইল, ফোন করেছে – কোন সুরাহা হয়নি। শাশুড়িকে একা রেখে মাটির পক্ষে এখনই দিল্লী চলে যাওয়া সম্ভব নয়, এদিকে কাজটাও জরুরী, কি করবে বুঝতে পারছে না। তাই চিন্তিত। বললাম, দাঁড়া দেখি – কি করতে পারি।

ফোন করলাম অরণ্যকে। ছোটবেলার বন্ধু। এখন থাকে দিল্লীতে। গবেষণা ও লেখালেখি একাধারে নেশা ও পেশা। বললাম সব কথা। যোগাযোগ করিয়ে দিলাম মাটির সঙ্গে। ক’দিন পরে মাটির কাছে শুনলাম, প্রবলেম সল্ভড। মাটি ‘থ্যাঙ্কস’ জানাল আমাকে, আর আমি অরণ্যকে। তারপর আলাদা করে দুজনের সঙ্গেই কথা হয়। কিন্তু একসঙ্গে দুজনের খবর নেওয়ার কথা মাথায় আসেনি কখনও। 

মাস সাত আট পরে হঠাৎ অরণ্য কোলকাতায় এলো দিন দশেকের জন্য। দেখা হল আমার সঙ্গে, তিনজনেও দেখা করলাম একদিন। শুনলাম ওরা দুজনেও দেখা করেছে আলাদা করে। অরণ্য ফিরে যাওয়ার প্রায় মাস দেড়েক পরে মাটি একদিন ফোন করে এলো আমার অফিসে। এসেই একটা হালকা পিচ রঙের ফ্লোরাল প্রিন্টেড মুখ বন্ধ খাম আমার হাতে দিয়ে বলল, এটা একটু অরণ্যকে পৌঁছে দিও যে ভাবে হোক! বললাম, তুই দিচ্ছিস না কেন? কি এটা? বলল, দিও প্লীজ। খুব তাড়ায় আছি, পরে বলছি সব – বলেই আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই প্রায় ছুটে বেরিয়ে গেল। কেমন যেন মনে হল, পালিয়ে বাঁচল মেয়েটা। 

অরণ্যর ঠিকানা আমার কাছে নেই। ইনবক্স করলাম, ফোন করিস, কথা আছে। রাত পর্যন্ত ‘সীন’ হল না দেখে ফোন করলাম। ফোন বন্ধ। একটা টেক্সটও করে রাখলাম। সকালে উঠেও দেখি সেই একই হাল, কোন সাড়া শব্দ নেই ওই দিক থেকে। মাটিকে ফোন করলাম। আশ্চর্য!! মাটির ফোন বলছে ‘নাম্বার ডাস নট এগসিস্ট’ ...মানে কি? কাল সকালেই তো কথা হল! ইনবক্স করতে গিয়ে আরো আশ্চর্য হলাম। প্রফাইল ডিএক্টিভেটেড। মাটির অফিসের ঠিকানা বা ফোন নম্বর আমার কাছে নেই। সারা দিন এক চরম অস্বস্তিতে কাটিয়ে বিকেলে অফিসের পর কিছুটা ‘শেষ দেখতে হবে’- মনোভাব আর কৌতূহল নিয়ে দৌড়লাম বালিগঞ্জ প্লেস। সিকিউরিটি বলল, মেডামজী ঔর মাইজী তো কালহি সামকো বাহার গেলো, কাফি সামান লিয়ে। কোথাকে গেলো, হামি জানে না। 

ওখান থেকে ফেরার পথে কি মনে করে গেলাম মনোহর পুকুর রোডে। ওখানে কেউ মাটির খবর দিতে পারলো না বটে, তবে মাটির অফিসের ফোন নম্বর পাওয়া গেলো।

পরদিন ফার্ষ্ট আওয়ারেই ফোন করলাম, মাটি সাতদিন আগে চাকরী ছেড়ে দিয়েছে। কোথায় জয়েন করেছে, ওরা জানে না। ওদিকে অরণ্যরও  কোন খবর নেই। এদিকে এই খামটাতেও যে কি আছে, তাও জানি না। সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে দেখে সম্ভাবনার কথা ভাবাও ছেড়ে দিলাম দিন ক’য়েকের মধ্যে।

এমন পরিস্থিতিতে প্রায় আট নয় দিন পর হঠাৎ অরণ্যর  ফোন। বলল, গবেষণার কাজে একদিনের নোটিসে রাজস্থানের একটা প্রত্যন্ত গ্রামে এসেছি রে। এখানে থাকব এখন মাস তিনেক। তাড়াহুড়োয় কাউকে খবর দিতে পারি নি, সরি রে। গ্রামে তো নো কানেক্টিভিটি। আজ শহরে এসে ফোন খুলতেই তোর টেক্সট পেলাম। বল, কি হয়েছে? 

উত্তেজনা চেপে শান্ত গলায় জানতে চাইলাম, তুই যে ওখানে, মাটি জানে? একটু থেমে একটু যেন বিড়ম্বিত আর নীচু গলায় বলল, হ্যাঁ, ও জানে। ওকেও তো ফোন করেছিলাম, পেলাম না। তোর সঙ্গে কথা বলে নিয়ে আবার করছি। 

খুলে বললাম সব কথা। একটু সময় নিলো। তারপর চিন্তান্বিত গলায় বলল, এখানে চিঠি পাঠানো টাফ। তুই এক কাজ কর, চিঠিটা খুলে পড়। আমি দ্বিধা করছি বুঝে তাড়া লাগাল, পড় পড়, আমিই তো বলছি, কিছু হবে না...

শিল্পীর তুলির টানের মতো সুন্দর হাতের লেখা। কোন সম্বোধন নেই। একটা কবিতা –


মেয়েটা আর ছেলেমানুষ নয় 
প্রগাঢ় যৌবনা, বিবাহিতা 
সাধারণের ভীড়ে একেবারে 
মিশে যাওয়ার মতই সাধারণ 
অথচ পৃথিবীর সমস্ত খুঁটিনাটি 
নন্দন তত্ত্বে তার যত্ন নজর... 
বিধাতার কোন্‌ অন্যমনস্কতায় 
এমন সাধারণীর জন্ম ?!

ছেলেটা দূর প্রবাসী, গভীর তার 
প্রজ্ঞা...আরো গভীর অন্তরবীক্ষা 
প্রগাঢ় নিষ্ঠায় সে এক 
আত্মমগ্ন কবি 
বিধাতার অনেক যত্নে গড়া 
অন্ধকার থেকে ক্রমশ আলোর 
উৎসের দিকে ধীর অথচ 
সুদৃঢ় সাবলীল গমন তার।

বৈশাখের এক দগ্ধ দিনের 
শেষে শহরের আকাশে 
যখন ঝড় উঠলো মাতাল হয়ে...
আসলে তো ঝড় নয়, 
মেয়েটার উথাল পাথাল মন... 
এক ঝলক বৃষ্টি এসে ঠাণ্ডা 
করে তাকে। দেখা হল কফির 
দোকানে...। সেই প্রথম। অথচ
আশ্চর্য! সেই তো 
প্রথম নয়!!

ছেলেটার নিষ্পলক অন্তর্ভেদী 
দৃষ্টির ধারে মেয়েটা টুকরো 
টুকরো হতে হতে দ্রব হয়ে 
নদী হয়ে যেতে যেতে... 
এ কুল ও কুল এ কিনারা 
সে কিনারা হয়ে ক্রমশ 
মিশে যেতে থাকে 
ছেলেটার সাত সমুদ্দুর ভালোবাসায়...

এদিকে মেয়েটা একবারও তাকিয়েই 
দেখে না পৃথিবীর যাবতীয় সরল 
দৃষ্টিগুলো ধীরে ধীরে 
ক্রুর, ক্রুদ্ধ, তীক্ষ্ণ, তীব্র, অসহিষ্ণু 
আর অসন্তুষ্ট হয়ে উঠছে।

তোর কপালে দুঃখ আছে, মেয়ে !



রঙীন কাগজটার একেবারে শেষে লেখা – খুঁজো না আমায় আর...

কি অসম্ভব ব্যক্তিগত এ চিঠি, আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। অরণ্যও চুপ। তারপর হঠাৎ নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে, ‘একটা এড্রেস টেক্সট করছি, চিঠিটা পাঠিয়ে দে, প্লীজ’ – বলেই রেখে দিলো ফোনটা।

মাটিকে আর খুঁজে পাইনি। অরণ্যর সঙ্গে কথা হয় মাঝে মধ্যে। ভয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারি না। আপনারা কেউ যদি চেনেন বা খুঁজে পান মাটিকে, আমাকে জানাবেন, প্লীজ! আমি যাই, আপনারা ডুব দিন আরো কবিতায়...




শুভেচ্ছান্তে 
সুস্মিতা বসু সিং 





এবং একুশ

পল্লববরন পাল



চুম্বন-কে নিয়ে কবিতাগুচ্ছ 
পল্লববরন পাল 





 চুম্বন এক মন্দির উপাসনার
চুম্বন মহাকাব্য সংস্করণ
চুম্বন মৃতসঞ্জীবনীর সুধা
চুম্বন দুই ওষ্ঠে সেতুর গড়ন 

চুম্বন মহা বিশ্ব পরিক্রমা 
চুম্বন এক শৈল্পিক অভিবাদন 
চুম্বন এক সশব্দ নীরবতা
চুম্বন ছোটোগল্পের আস্বাদন

চুম্বন ভালোবাসার সহজ পাঠ 
চুম্বন তেড়ে আসে অ-য়ে অজগর 
চুম্বন এক হ্রস্ব উ-কার ঠোঁটে 
চুম্বন সুর লতা মঙ্গেশকর 

চুম্বন স্বর-ব্যাঞ্জন্ থিসরাস
চুম্বন এক বোঝাপড়া যুক্তাক্ষর 
চুম্বন এক নিভৃত আপোষ-যুদ্ধ 
চুম্বন সাম্রাজ্যবাদীর স্বাক্ষর 

চুম্বন মানে সীমান্ত উল্লঙ্ঘন 
চুম্বন মানে শোষক এবং শোষিত 
চুম্বন পারমানবিক মারণাস্ত্র 
চুম্বন মানে মনুষ্যজয় ঘোষিত

গানে গানে তব বন্ধন যাক টুটে
চুম্বন সেই প্রিয় স্বাধীনতা স্বাদ
চুম্বন এই দৈনিক হিংস্রতার 
বিরুদ্ধে ভালোবাসাময় প্রতিবাদ

চুম্বনে ভরা ভিটামিন এবিসিডি
সুস্বাস্থ্যজ্ঞান ওষ্ঠসেতুতে বন্দী 
একটানা দিনরাতভর চুম্বনে 
তামাকুসেবন নির্মুল করা ফন্দি 

চুম্বন এক স্বর্গীয় মিষ্টান্ন 
চুম্বন মানে অধরামৃত দ্রবণ
চুম্বন বহুমাত্রিক তাপচর্চা 
চুম্বন অতিমানবিক উদ্বোধন 

চুম্বন মানে শ্বাসের যুগলবন্দী 
চুম্বনে নেই দূষণ অভিপ্রেত
চুম্বন দিয়ে সম্পর্কের শুরু
চুম্বনে আঁকা সমাপ্তি সঙ্কেতও । 

***

 তোমার শব্দযন্ত্রে ঠোঁট ছুঁইয়ে
আমি পান করছি স্বরবর্ণদের
তুমি আটকে আছো আমার যুক্তাক্ষরে 
আর কংক্রিট শিরদাঁড়া বেয়ে
টিকটিকির মতো নি:শব্দে 
নেমে আসছে জ্যোত্‍স্নার আগুনপ্রপাত 
দ্বৈতকন্ঠে আটনম্বর সিম্ফনি গাইছে মধ্যরাত ও
মধ্যবর্তী একুশ মাইলের শ্রেণীবিভক্ত সমাজ

তন্নতন্ন খোঁজ চলছে সেই ঐতিহাসিক আপেলগাছের
অথচ নিউটন ছাড়া যে সত্যবোধন নেই
এই সামান্য তথ্য জানেনা আদম-ইভেরা 
এ শতাব্দী নিরাপদ, দ্বিতীয় অধ্যায়ে 
ব্যাঞ্জনে সুতরাং নিরঙ্কুশ খনন চলুক 

কই, দেখি –
ঠোঁটদুটো দাও আর একবার 

***

 ডানগালে বুঝি শব্দযন্ত্র ছিলো?
আমি লুণ্ঠনকারী না – অকস্মাৎ 
এক হুড়মুড় অভিকর্ষজ টানে 
ধাক্কা খেয়েছি শুধু চাঁদপানা মুখে

মুহূর্তে আমি তৈরি হাজতবাসে
চোদ্দপুরুষ তত্‍সহ প্রস্তুত 
অথচ অবাক – প্রস্তর-মৌনতা 
দৃষ্টিআগুনে ভিড়বাস পুড়ে ছাই 

যে সুত্র মেনে আপেলটা পড়েছিলো
গাছ থেকে নিচে নিউটন-পৃথিবীতে –
দোষ আপেলের, নাকি অভিকর্ষের?
ধর্মাবতার, অধম নিরপরাধ 

আমি আপেলের নিতান্ত সহোদর 
সুত্রানুযায়ী অভিকর্ষজ টানের 
বাসনাটুকুই, কিন্তু ক্ষমতাহীন
ছাপোষা টিকিটে রোজ বাসে যাতায়াত 

আমার ওষ্ঠে লেগে আছে গোল চাঁদ
জ্যোত্‍স্নাবৃষ্টি হচ্ছে অনর্গল 
ধর্মাবতার, বিধিমতে শ্রীমতীকে
এবার বাঁগাল বাড়ানোর রায় দিন

***

 আমার ঠোঁটের কোণে 
তোমার সন্ত্রাস লেগে আছে

***

 তোমার ঠোঁটের কোণে লেগে আছে রোদ্দুরকণা 
অন্ধকার থেকে আর উত্তরণে আলো জ্বালবোনা 
ওই ঠোঁট – বাতিস্তম্ভ – যেন দেহাতীত শিল্পকলা 
স্পর্শে নবজন্ম হয় – ভাষায় কঠিন সেটা বলা 

***

 প্রথম চুম্বনের ক্ষণে আম আঁটির ভেঁপু বেজেছিলো
আলো জ্বলে উঠেছিলো আশরীর নিশ্চিন্দিপুরে
কতো গ্রীষ্ম বর্ষা গেল মাঘোত্‍সব দোল তারপর 
আমি লিখে যাচ্ছি সেই ভালোবাসা পথের পাঁচালী 

***

৭ আমার ঠোঁটে তোমার ওষ্ঠ-কলম দিয়ে 
চিত্রকাব্য লিখছো যতো খসখসিয়ে
অচেনা সব বর্ণমালায় – ভুলবশত 
অর্থ আমি বুঝতে পারি জলের মতো। 

***

 সমুদ্র চুম্বন আঁকে সৈকত-বালুকার ঠোঁটে 
শরীরের অন্যপ্রান্তে আকাশের সঙ্গে রমণ 
যদিও শ্রেষ্ঠ ভোর সামুদ্রিক - স্বীকৃতি জোটে 
দ্বিচারিতা আখ্যা দেয় মানুষের ভুল ব্যাকরণ 

***

 কথা বলতেও দূরত্ব লাগে কিছু 
কিছু শূন্যতা চক্ষের আগুপিছু 
তার চেয়ে ঠোঁট ব্যস্ত সারাক্ষণ
তোমার ওষ্ঠে দিতে থাক চুম্বন

***

 আমাকে চুম্বন দাও
হে আদিম এসো শয্যায় 
দ্বৈত দেহে মহাকাব্য লিখি
আটশো তেত্তিরিশ অধ্যায়

***

উচ্চারণযন্ত্রদু’টি 
পরস্পর বন্ধ নিবিড় 
তাই কোনো শব্দ নেই
বাক্য নেই দাড়ি কমা 
সন্ধ্যে ছ’টার কাঁটা 
ধ্যানস্থ খাগের কলম 
শহরের সাদা পৃষ্ঠা জুড়ে 
লিখে যাচ্ছে উপন্যাস
নয় এক দীর্ঘ কবিতা 

***

 নাসিকার মতো লম্বালম্বি হলে অবশ্য 
অধুনা অনুভূমিক ওষ্ঠযুগলের 
উঁচুনিচু শ্রেণীবৈষম্য থাকতোনা – 
তর্কের খাতিরে চোখকানহাতপায়ের মতো
ওষ্ঠদুটিকেও যদি উল্লম্ব বলে ধরে নিই 
কে সামলাবে ডান-বাম নিত্য ঠোঁটাঠুটি 

নিজ নিজ শ্রেণীস্বার্থে হারেরেরে ঠোঁটকাটা 
স্বজনপোষন রক্তারক্তি রিগিং বা বুথদখল?
এখনো যে কোনও স্বর বা ব্যাঞ্জনের উচ্চারণে 
দুই ওষ্ঠের অল্প বা মহাপ্রাণ নৃত্যভঙ্গী 
প-বর্গে সোহাগ আলিঙ্গন, যুক্তাক্ষরে শৃঙ্গার - 
সে ওই শ্রেণীবৈষম্যটুকু মেনে ওপরনীচে আছে বলেই না

উঁচু ও নিচের ওষ্ঠ পরস্পর শ্রেণীশত্রু নয় 
অক্ষরের জন্ম হয় চিৎপাত ওষ্ঠশৃঙ্গারে 
সংগ্রামও বলা যায় – তৃপ্তির সাম্রাজ্য বাড়ে 
তারপর সন্তানপথে হেঁটে যায় অক্ষরেরা পাশাপাশি 
সহোদরহাত ধ’রে অনর্গল শ্রেণীহীন শব্দশৃঙ্খল 

শ্রেণীসংগ্রামী এই শব্দবাক্যমাণিক্যের জন্মশয্যায় 
এ ওর ওপরনীচে ওষ্ঠদুটি রাখতেই হয় 
রতিবিজ্ঞানের এই সনাতন উপভোগ্য রীতি 
বলা নেই কওয়া নেই – বদলাতে যাবো
ততো বিদ্ব-হরিদাস এখনো হইনি । 

***

 সাতাশটা চুমু দিয়ে উপন্যাস? – পাগলপ্রলাপ!
তর্কের খাতিরে তবু ছোটোগল্পটল্প হতে পারে
প্রবন্ধে অনধিকার চুমুটুমু অনন্তনিষেধ

বাকি থাকলো 

কবিতা –

হ্যাঁ –

জীবনের কিছু ক্ষেত্রে কিছু বাকি রাখাটাই শ্রেয়
কারণ অধুনা কবি যথাক্রমে বিশ্বাস করেন –

একটি কবিতা মানে একটি চুম্বন - 
মৌলিক পদার্থ উভয়েই,
ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মে আছে আশ্চর্য মিল 

উভয়েরই বুকে আছে নিজস্ব গোপন সন্ত্রাস
আত্মনেপদী কিছু অশরীরী মগ্ন সংলাপ
যারা শুধু অনুবাদে খরস্রোতা বয়ে যায়
শিরা উপশিরা দিয়ে
কবিতায়, কখনো বা চুম্বনের অধরশরীরে 

সাত না সাতাশ – তাই সংখ্যাটা নিতান্ত নিরীহ
আসল কথাটা হলো – স্বাভাবিক প্রিয় উষ্ণতায়
ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা বিক্রিয়াটা রসায়নাগারে
অণুপরমাণুদের শহীদমিনারসভা কতোটা সফল
উপচে উঠলো কিনা – সেটা দেখা, খাতাবদ্ধ করা
গোপন অলিন্দপথে অন্য কেউ আসছে যাচ্ছে কি?
ছোটোগল্প? উপন্যাস?
মুশকালো বেড়ালের পেটকাটা তালব্য শ? 

একটি চুমুতে লেখা কবিতায় কখনোসখনো 
সাতাশটা উপন্যাসও চাপা পড়ে যেতে পারে 

সে গল্পটা হবে’খন অন্য কোনো কবিতাসভায়। 













এবং একুশ

স্বপন দেব




যদি এমন হতো...
স্বপন দেব



হাত বাড়ালেই বন্ধু আর গাছ নাড়ালেই টঙ্কা,
বছরগুলো পার করি, নেই বয়েস বাড়ার শঙ্কা।
শিরায় শিরায় বইবে ধারা উনিশ-কুড়ির চলনে,
কোলেস্টেরল রইবে বশে দেদার ব্যাতিক্রমণে।
কাজের চাপে কপাল কোণে দপদপ নেই একটু খানি –
বুকের ভেতর বাঁদিক ঘেঁষে নেইকো কোনও ধুকপুকানি।
চড়তে সিঁড়ি হাঁটুর ব্যাথা থামাবে না ল্যান্ডিঙে,
পায়ের পেশীর পড়বেনা টান ঘণ্টাদুয়েক সাইক্লিঙে।
স্বপ্ন যেমন সাজাই আমি, সবকটা তার ফলবে।
চল্লিশোর্ধে চশমা এঁটেও চোখের তারা জ্বলবে।
আলোয় ভরা নায়াগ্রাকে কাছের থেকে দেখবো, 
ইউ এস এ এর অভিজ্ঞতা ডায়রি ভরে লিখবো।
কিন্তু…
সবাই জানি এমনধারা হয়না কঠিন বাস্তবে…
কি হলো আর কি হলোনার হিসাবনিকাশ রাখ তবে।
স্বপ্ন দেখা ছাড়বিনে তুই, বাঁচার কারণ সেটাও তো!!!
যেটুকু পাস মনের খোরাক যত্নে রাখিস অন্ততঃ।
বাড়বেনা তোর মনের বয়েস যতোই চুলে পাক ধরুক,
নিম আকাশে ইচ্ছে-পাখী বাঁধনবিহীন আজ উড়ুক…














এবং একুশ

শাহেদ সেলিম



চেরাই
শাহেদ সেলিম




অনুভূতিগুলো-
সুখ-দুঃখ, ভালবাসা 
চেরাই করি সুবিধা মত
চেরাই করি, চেরাই করি

জমি, জমা, অংশ, বংশ
নারী, প্রেমিকা অথবা রক্ষিতা
চেরাই করি সুবিধা মত
চেরাই করি, চেরাই করি

তবুও চেরাই হয়ে যাই
চেরাই হয়ে যায়
সময়ের কাছে
আমরা সবাই
চেরাই হয়ে হয়ে শুয়ে থাকি
খাটে, শুয়ে থাকি, পুড়ে যাই
অথবা বাক্সে করে নেমে যাই
শূন্যতাকে চেরা যায় কী না
কেউ কী জানে? কেউ কী জানে?










এবং একুশ

অঞ্জন বর্মণ



মেরিলীন লাসেরনা
অঞ্জন বর্মণ 




যে মেয়েটি মাঝরাতে ঘুম চোখে চলে 
ট্রেন ধরে পার করে অজস্র মাইল 
হুইশল এর তীব্র শব্দ – বুকে রক্তরোল 
বিছানায় শিশুদুটি মাতৃদেহ খোঁজে

তখনো হৃদয়ে বাজে Kenny Rogers। 

জঠরে আগুন রোজ টেনে নিয়ে আসে 
মৎস্যভেড়ি, পুতিগন্ধ, হায়েনার চোখ
নির্লিপ্তি বস্তা ভরে রূপোলী রানীতে
বেসাতির সংগ্রাম সূর্যালোক আনে

‘You decorated my life created a world’। 

চিবুকের স্বেদবিন্দু মুছে যায় ক্লেশ 
শিশুদের কলরোল স্কুলের প্রাঙ্গনে 
মাতৃস্নেহ চলকে পড়ে নরম হাতগুলিতে 
ক্লান্তি ভেঙ্গে তৃপ্তি হাসে কঠিন চোয়ালে

‘By painting your love all over my heart’। 

ঘরে ফিরে ক্লান্তিহীন নতুন সংগ্রাম
পুরুষের অপ্রেমে আত্মসমর্পণ 

….

তবু প্রেম আছ তুমি মুক্তির ওপারে
দৈববাণী ঝরে পড় হৃদয়ে আমার 

‘Shining soft in your eyes...’।









এবং একুশ

দময়ন্তী দাশগুপ্ত




প্রলাপ
দময়ন্তী দাশগুপ্ত



বল দেখি বাঁচা কাকে বলে?
বল দেখি মরে যাওয়া কি?
বল দেখি রোদ্দুর মানে?
বল দেখি হরিণ কি জানে?
বল দেখি কাকে বলে চেনা?
কাকে আজ আলো বলে ডাকে?
ভালোবাসা বাসা যায় নাকি?
হৃদয় কোথায় পড়ে থাকে?
বল দেখি সোজা কাকে বলে?
কাকে ডাকে বাঁশি বলে আজও?
কে জানে প্রলাপ আছে নাকি?
কথাহীনতার মাঝখানে?
ভুলে যাওয়া শব্দকে চিনিস?
ডানা নিয়ে চলে গেল কবে?
একমুঠো গন্ধরা যাবে?
ওদের খুঁজতে এখনো?
জল থেকে রঙ নিয়ে এলি?
আমাকে লিখলি আকাশে?
গল্পদের বলে এসেছিস?
তারাদের ভাসাও ক্যানভাসে?
রামধনু কেঁদেছিল কবে?
চিঠি কেউ লেখেনিতো তাকে?

চিঠি কেউ লেখেনিতো তাকে।
কেউ তাকে মনে রাখেনি তো।
নাম ধরে কেউ ডাকেনি তো।
রাতভোর বৃষ্টির ফাঁকে।
সেই শুধু ভেসেছে প্রলাপে।
সেই শুধু ভেঙেছে প্রলাপে।









এবং একুশ

শর্মিষ্ঠা ঘোষ


তুই এনে দিস 
শর্মিষ্ঠা ঘোষ



তুই বলছিস পেছনে লাল ও বলছে ‘বাহ’!
আমি গ্যাড়ালাম ইঁদুরকলে, কিমাশ্চর্যম্ আহ!
কেউ বললে‘বেশ চলেগা’ তুই বলছিস ‘অখাদ্যি’
যাব কোথা, হে ভগবান! কার কথাতে পাত্তা দি

এদিক চাপলে ওদিক ভাগে ‘দুষ্টুপুটু’ ভাবনাজাল
পোষ মানাতে আদর দিলাম উঠল গিয়ে ‘মগ’ এর ডাল
যুগের হাওয়া বেয়াড়াপনা টানছে কেবল ঘূর্ণিপাক
কি ভাগ্যিস শেকল পরা ঘটতো নইলে দুর্বিপাক!

থিমের বাজার বড্ড চড়া, টাচ করতে লাগছে ভয়
‘বাসি পচা দুর্বিনীত’- আওয়াজ খাচ্ছি অজায়গায়
বাঁচা আমায় বাঁচা রে ভাই, নিসপিশাচ্ছে কলমখান
দুরারোগ্য লেখার ব্যাধি ছাড়তে চাইছি যাচ্ছে না

বর্ণ নেই ছন্দহীন ভীষণ তবু বাঁচতে চাই
তোরই কাছে হাত পাতলাম উড়িয়ে দে ঢপের ছাই
তোর দিঠিতে দেখব আমি ভূত ভবিষ্য বর্তমান
তুই লিখে দিস জীবনগান বাঁচার সুর আর আয়ুষ্মান













এবং একুশ

মধুচ্ছন্দা মিত্র ঘোষ




পুনরাগমনায়চ
মধুছন্দা মিত্র ঘোষ




এতো আয়োজন –
সব উত্থানের প্রস্তুতি
এক গমন পেরিয়ে, আবারও

তোমায় নতুন করে পাবো বলেই
উড়িয়ে দিলাম অতীত
কিছু শাশ্বত স্মৃতি
কিছু জ্যোৎস্নালোক

মুদ্রিত রইল সই-সাবুদ
শর্ত ও বোঝাপড়া
বিধিবদ্ধ দায়ভার

এভাবেই,
এভাবেই পুনরাগমনায়চ...











এবং একুশ

সুধাংশু চক্রবর্ত্তী



অব্যক্ত বেদনায় ভরে বুক 
সুধাংশু চক্রবর্ত্তী 



দেখলাম মুখ টিপে হাসছো
ঘুরেফিরে চেয়ারটায় গিয়ে বসছো ।
তোমার ঐ হাসিখুশি মুখখানি দেখে
মনকে বলেছি ডেকে
ঐ দ্যাখ উড়ন্ত সোনালী চিলের বুকের আশা 
কেড়ে নিয়ে যায় তোর যত ভালোবাসা
পারলে রাখ তাকে ধরে
বেঁধে তোর ঐ মনমন্দিরে ।
মন হাসে শুনে সেই কথা
বলে ডেকে, ওকি তোমার সবিতা ?
ওকে তো মালিনী বলেই জানি,
তোমার সবিতা যে বড্ড অভিমানী
সেই যে না বলে কয়ে কোথায় গেল চলে 
তা কি আবার ফিরে আসবে বলে ?
মোটেও না 
সে কোনোদিনও আর ফিরে আসবে না 
কথাটা বলেই মন হাসে ঠা-ঠা করে
চাপা কান্নায় আমার এই দীর্ণ বুকখানি ভরে 
ওঠে কোন দুঃখে এমন অযাচিত ভাবে, 
সে কী তবে তোমারই অভাবে ?
















এবং একুশ

অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়






পূর্বরাগ
অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায়




তোরা কি জানিস সখি,
কেন আমি ভুল বকি!!
কেন কাঁদি হাসি আজকাল?

আমি তো পড়েছি প্রেমে,
আমি তো মজেছি শ্যামে,
শ্যামেরই যাদুতে এই হাল।

তোরা কি জানিস নাকি!!
কেমনে স্বপন মাখি!!
কেমনে কাটাই রাত দিন?

শ্যাম তো বাজালো বাঁশি,
আনমনে তাই হাসি,
শ্যাম বিনে বৃথা যায় দিন।

তোরা কি চিনিস তাকে,
জানিস কোথায় থাকে?
বলে দিবি তোরা কি আমায়?

শ্যাম কি যাদু করেছে,
কেমনে বশ করেছে,
শ্যাম বুঝি কাঁদালো আমায়!!

তোরা কি দেখলি তারে,
সেও কি রাধার তরে
বাজায় কি বাঁশির ওই সুর?

শ্যামেরে পাই না তবু, 
ভুলতে পারিনা কভু
শ্যাম বলো তুমি কত দূর??












এবং একুশ

সোহেল আহমেদ পরান


মনবাড়িতেই থাকো তুমি 
সোহেল আহমেদ পরান 



আমার মনবাড়িতেই তোমার বাস 
কোথায় চাও যেতে তুমি?
পারবে না কভু 
যেমন পারো নি আগের তেরো ব্যর্থ চেষ্টায়। 

তোমার জন্য অবাধ্য ব্যাকুলবোধ 
সীমানা প্রাচীর হয়ে বুক পেতে দাঁড়াবে ঠিক তোমার পথে 
ভালোবাসা মারতে তুমি ভালোবাসা বুকে তুলে নেবে জানি।

মনবাড়ির তুলতুলে আঙিনায় তোমার নিমগ্ন পায়চারি
আমার বিমুগ্ধ চোখের নিয়ত কেন্দ্র হয়ে রয় 
পরিধিতে পাহারায় থাকে স্বপ্নিল অনুভব

ব্যালকনির রেলিং ধরে তোমার উদাস আকাশ-বিহার
কিংবা বসার ঘরে সলজ্জ আনত স্মিত আভা
মনবাড়িকে আভিজাত্যের সোপান দেখায় কেবল

মনবাড়ির খাসকামরায় তোমার জন্য সযতনে কর্ষিত আসন
উন্মুখ হাহাকারে তোমার প্রতীক্ষায় প্রহর গুণে 
একদিন এসে সর্বাঙ্গে ছুঁয়ে যেও মনোনীতা।













এবং একুশ

পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাস





 বিকালের সোনা রোদ  
পূর্ণচন্দ্র বিশ্বাস


আমার জমিতে কচিধান ক্ষেতে ; 
বিকালের সোনা রোদ, বসবে না - 
দাঁড়াবে না সে; এই ভেবে এসে, 
কাটিয়ে দিল এক পক্ষ কাল । 
দেহ পুড়িয়ে ছাই করে ; 
মুখে খাবার তুলে দিয়ে- 
অবশেষে চলে গেল সে ।
জুঁই ফুলে বেল ফুলে প্রজাপতি ওড়ে , 
কাঠবিড়ালীর লম্বা ছুট - 
বিড়াল ধরে পাছে ! 
ক'সার বাঁশ ঝাড়; তার উপর - 
নীল সাদা কালো 
তিন পরত মেঘের আচ্ছাদন । 
ভেদ করে সে আবরণ , 
বিকালের সোনা রোদ - 
আলোয় আলো রাঙিয়ে দিলো ।
নদীর এপারে হাট বসেছে ; 
গোটা দশেক দোকানদার- 
থরে থরে সাজিয়েছে পসরা । 
ওই পারেতে দাঁড়িয়ে - 
গোটা দুই খরিদ্দার; 
বেচা কেনা করে । 
নদীজলে দোমড়ানো মোচড়ানো - 
অসংখ্য ঢেউয়ের পরে ঢেউয়ে, 
বিকালের সোনা রোদ পড়ে । 
দু-পাটি দাঁত খিলখিলিয়ে হাসে ।













এবং একুশ

দেবাশিস কোনার



প্রতিবাদীর মৃত্যুতে 
দেবাশিস কোনার




দু-চারটে প্রতিবাদী মরে গেলে কি আর হবে !
প্রতিদিনই পরলোকগমন করছে হাজার কণ্ঠ
কতশত প্রতিবাদী মানুষ জামা পাল্টে ফেলছে,
অকস্মাৎ নতুন পথ চলা শুরু করছে কবি,
অভিনেতা চেনা গল্প ছেড়ে ভিড়ছে শীর্ষ-দেবীর কাছে
নগণ্য যশের প্রত্যাশায় ক্ষমতার মোহে ।
প্রতিবাদের মৃত্যুতে এতো শোক কেন ?
কেনই বা এতো হাহাকার ?
যেখানে নিত্য এদিক সেদিক হাওয়া বদল ঘটছে,
বিবেক তলিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের অতল গভীরে
সুউচ্চ অট্টালিকার ওপরে চেপে বসছে সিণ্ডিকেট রাজ
ছুরির বুকে গেঁথে যাচ্ছে হোটেল মালিকের বুক -
নারীর ইজ্জত লুট হলে বৃথা কান্না কেন ?
এসব প্যানপ্যানানি না হয় তোলা থাক তাকে ।
কটা প্রতিবাদ থমকে গেল বলে দুঃখ করো না !
দেখবে ঠিক একদিন দমকা বাতাস এসে ভেঙ্গে ফেলবে 
জলের তলে ডুবে যাওয়া অবক্র মূর্তি ।













এবং একুশ

পলাশ কুমার পাল



ক্রমান্বয়ে কতকগুলি ছবি
 পলাশ কুমার পাল





তর্জনী ও বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠে একটি চোখের ছবি
নীল রঙে আঁকা;
বটাগাছের কাণ্ডে ধরো-
একটি জীবন্ত মানুষ যেন দেখছে।
মানুষেরা কখনো দেখেনি অতটা জীবন্ত!

এবার ঠিক তারাটির উপরে,
বাম হাতে পেরেক নিয়ে
ডান হাতের মুঠোয় হাতুড়ি মারো-
একটি জীবন্ত মানুষ যেন হাসছে।
মানুষেরা কখনো হাসেনি অতটা অফুরন্ত!

ছবি থেকে হাত ছেড়ে স্থির হও;
খালি গায়ে মাটির উপর দাঁড়িয়ে
বটগাছ আর ছবিটি দেখো-
একটা গোটা মানুষ ডাকছে।
মানুষেরা কখনো ডাকেনি অতটা ভালোবেসে!

এবার সভ্যতায় ফিরে যাও;
ক্যামেরার পেছনে চোখ রেখে
প্রাণবন্তকে জড় করে দেখো-
একটা শব কাঁদছে।
আত্মীয়ের মৃত্যুতে কেউ কখনো কাঁদেনি অতটা শোকে!

আবার ছবিটির কাছে গাছটির নীচে দাঁড়াও;
তুমিও গাছ হয়ে যাও
পৃথিবীর সব অন্ধকার শিকড়ে বিঁধে-
একলায় সে ঝুরি নামাচ্ছে।
মানুষেরা কখনো হয়নি অতটা প্রাণবন্ত!










এবং একুশ

সৌগত মজুমদার



সমীপেষু 
সৌগত মজুমদার 



তোমার হাতে বন্দুক ছিল, আমার শূন্য তূণ।
আপদে বিপদে বিপথে শ্বাপদে, হাড়ে মজ্জায় ঘুণ।
**
তৃণ সবুজ রংও ছিল, নীলচে আঁখি পল্লব
সবজে রং কালচে লাল, লালায়িত জান্তব।
***
টুকরো ভাঙ্গা ডাবের খোলা, গঙ্গাফড়িং পা।
রাত নেমেছে, ধূপের ধোঁয়া। গুলিয়ে ওঠে গা।
****
প্রেম পুরাতন ভৃত্য নেশার তাবড় লিবিডো।
রাজপথ তুই কানাগলির খবর দিবিত ?
*****
শিরা এবং উপশিরায় রক্ত জমা নুন।
নিয়ন আলোয় মুখোশ পোড়ে। হাড়ে মজ্জায় ঘুণ।















এবং একুশ

দীপঙ্কর বেরা


চলতেই আছি 
দীপঙ্কর বেরা




আমি চলতে আছি চলতেই আছি
জীবন থেকে জীবনের পথে চলতেই আছি ,
বিনিময় শুভেচ্ছার অঙ্কুরে অঙ্কুরে
আপ্রাণ চেষ্টায় হৃদয় আঁকা
গোলাপের বাগানে ঘুরে ফিরে
চলতেই আছি শুধু চলতেই আছি ।
হাত বাড়িয়ে হাতের অসহায়
জীবন গাঁথা আরো ভরসার অবস্থানে
শক্ত জমিতে নিজস্ব হয়ে
সংযমী শুভ রাস্তায়
চলতেই আছি শুধু চলতেই আছি ।











এবং একুশ

পিয়ালী বসু



স্বপ্ন 
পিয়ালী বসু 



স্বপ্নগুলো বোনা হচ্ছে
আকাশ কুসুম ইতিউতি স্বপ্ন 
ভবিষ্যতের অজানা নামহীন কেবিনের ধোঁয়াশা ঘেরা ফাটল ধরা বদ্ধ ঘরটায়।
প্রতিক্ষণ কাটছে তীব্র দোলাচলতায়
জিততে পারবো তো ? পারবো তো winner হতে ?
Though I am not obligated to win
but still .. I don't want be called a loser
পরাজিত রা পৃথিবী বদলের স্বপ্ন দেখতে পারে কি ?
ঘুমাতে পারি না রাতে
স্পষ্টতই শুনতে পাই শব্দটা
হৃদয় ভাঙার শব্দ, স্বপ্ন ভাঙার শব্দ 
আকাশ ছোট হচ্ছে, সংকীর্ণ হচ্ছে মন, পৃথিবী ছোট হচ্ছে, বাড়ছে দহন

~ ছোট হতে থাকা আকাশটা যখন সেজে ওঠে তারার সামিয়ানায় , তখন আরও একবার নতুন করে নতুন পৃথিবীতে পৌঁছোবার আর্তি জেগে ওঠে ~       
 I shall overcome ..some day !










এবং একুশ

সুকান্ত চক্রবর্তী



মৃত্যু তোমাকে 
সুকান্ত চক্রবর্তী 



তবু ও তো অনেকটা পথ চলা হল,
অনেক গান গাওয়া হল, স্বপ্ন দেখা হল;
অনেক বিপ্লব, অনেক যুগান্তর আনা হল ।
অনেক ভালবাসা, অনেক হিংসা, 
অনেক সম্পর্কের ছোটোবড়ো গল্প লেখা হল;
এতো অনেকের মাঝে বরং তুমিই ছিলে একা;
আছো; হাতে হাত রেখে অগোচরে তুমিই
নীরবে নিয়ে চলছ আমায় মহামিলনের দিকে। 















এবং একুশ

রূপক সান্যাল

    

অতীতের ভার 
রূপক সান্যাল 



ওই যে সবাই চ`লে গেল একে একে 
হাত নেড়ে – দূর দিয়ে 
তুমি ব`সে আছ ?
তোমাকে ডাকেনি বুঝি কেউ ?

তোমারই ডানার পালক নিয়ে 
সে ঘুরে এলো নক্ষত্রলোক -
তুমি ব`সে আছ ?

ভালোবাসেনি কেউ,
যেটুকু খাবার ছিল – খুঁটিয়ে খেয়েছে 
যেটুকু পাবার ছিল – চুটিয়ে ভ`রেছে দু`পকেটে 

আমার একটি হাত জমা রইলো তোমার কাছে 
আমার অর্ধেক আত্মা 
তোমার বুকে লকেট হ`য়ে ঝোলে,
কফিন খুলে কোনোদিন হীরের আংটি খুঁজতে যাবনা 

তোমারই পালক ওরা খুলে খুলে নিয়ে যায় –
ঘর সাজায় - বোঝ না ?
সে তো একা একা ঘুরে এলো নক্ষত্রলোক 
তোমাকে ফিরিয়ে দেয়নি তোমার ডানা,
সে তো বেশি-দূর-উড়তে-না-পারা পাখি চায়, 
যে অতি সহজেই মুঠোয় চ`লে আসে 

ওইসব পুরুষের লালা থেকে 
তোমাকে অনেক অনেক দূরে নিয়ে যেতে ইচ্ছে হয় ...
















এবং একুশ