এই নাও
ব্রতী মুখোপাধ্যায়
যে মাঠের পরে আর মাঠ নেই
তার মাটি হলুদ
সেইখানে দাঁড়িয়ে
যে আকাশের পরে আর আকাশ নেই
(কী যে নাম রঙের!)
সেই দিকে তাকিয়ে
যখন আমি চেঁচিয়ে উঠে বলি
ভরা মিথ্যের মুখ একবার দেখিয়ে দাও
আমার মাথার ওপর মুখের ওপর স্বপ্নচূর্ণ ছড়িয়ে পড়ে
তলোয়ারকে তলোয়ার
আর রক্ত যা তাকে রক্ত বলে চিনে নিতে ভুল হয় না
যা আর কি লাল চোখ তাকে অন্যরকম মনে হওয়া অসম্ভব
রাজা যখন উৎসবের পথে
ভিকিরিদের তাড়িয়ে দেয়া হয়
তাদের ভাঙাচোরা মুখের করুণ হাহাধ্বনি
হাজার হাতের করতালির গর্জনের নিচে হারিয়ে যায় না
যে খনির নিচে আর খনি নেই
যে পাহাড়ের নিচে আর পাহাড় নেই
যে নদীটি এইমাত্র লুট হয়ে গেল
ছুটে যাই
সারি সারি লাশ শাদা কাপড়ে ঢাকা
গালে হাত দিয়ে বালিকা এক বসে
তার সাহস নিয়ে সংশয়ের প্রশ্ন নেই
কিন্তু তার হাতের আঙুলগুলি ?
আঙুলগুলি কেটে নিয়ে গেছে
বলে সে নিজের মনে গান ধরে
তার সুরে করুণাভিক্ষা নেই
বস্তুত তেমন কিছুই নেই যাকে কেউ বলতে পারে করুণ
মৃত্যুর চেয়েও ঠাণ্ডা বাতাস বইতে থাকে
অন্ধকারের চেয়েও অন্ধকার
নড়ে চড়ে, আঘাত করতে থাকে
যে আগুন আমার প্রাচীন পিতা
কঠোর তপস্যার পর পাথর ঠুকে একদিন জ্বালিয়েছিল
বুকের থেকে তার খানিক খামচে এনে
ছুটতে থাকি
মাথার ওপর দিয়ে হাড় কাঁপিয়ে উড়ে যায়
রাজপ্রহরী ইস্পাতের পাখি
তাদের পেট থেকে খসে পড়ছে আগুনের ডিম
চাকায় চাকায় ভর দিয়ে
যারা একটার পর একটা গ্রাম ঘিরতে থাকে
তাদের কারো হাত নেই হাতিয়ার আছে
যে সমুদ্রের ঢেউগুলি গড়ে ওঠার আগেই
ভেঙে যায় কখন
তার তীরে আছড়ে পড়ে হাজার হাজার ঝিনুক লক্ষ লক্ষ মাছ
মরা সবাই
আমি সেখানে দৌড়ে যাই
একটা বুড়ি, গায়ের চামড়া পোড়া,
বালুর ওপর উবু হয়ে বসে
কী যেন খোঁজে
চোখ থেকে রক্ত চুঁইয়ে বসনহীন বক্ষ ভিজে যায়
আর সমুদ্রবন্দরে দেশবিদেশের বণিকদের পতাকা উড়তে থাকে
জাহাজ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আগুন ছুঁড়তে ছুঁড়তে যারা নামে
কেমন যেন পরিচিত সবাই
যেন তাদের আগে কবে দেখেছিলাম
যে রাজা ছিল যে রাজা হল
যে রাজা হল যে রাজা হবে
রাজা ত্রাণ করে রাজা প্রাণ নেয়
রাজার হাতে বজ্র রাজার হাতে পুষ্প
রাজার খেতাব দেয় রাজা শূলে চড়ায়
গরিবের জন্যে, হায়, রাজার চোখে কর্পোরেটের পানি
এইসব ভাবতে ভাবতে
স্বজনদের কেউ কেউ যখন বেশ দূরে
আরও দূরে
আরও আরও দূরে
আমি আর বালির ওপর দাঁড়াতে পারি না
আমার আর আকাশ ছাড়া ভরসা নেই
হাত জোড় করে বলি
নক্ষত্র দেখিয়ে তুমি পথ চিনিয়েছিলে
হে আকাশ
শস্য আর স্বপ্নের বিস্ময় হারিয়ে যাবার আগে
এই বেলা আমাকে দাও আলোর আলিঙ্গন
আমাকে শিখতে দাও
যে বাঁচা প্রচণ্ড যন্ত্রণার কিন্তু সেখানে গ্লানি নেই
যে মৃত্যু অনিবার্য কিন্তু সেখানে
নির্বোধ আতঙ্কে কুঁকড়ে থাকতে হবে না
যে জানার শেষ নেই কিন্তু যা এখুনি না জানলেই নয়
তার জন্যে
এই নাও একটি জীবন
একটি বই তো নয়
এবং একুশ
je khanir niche r khani nei
উত্তরমুছুন