সোমবার, ১ আগস্ট, ২০১৬

সম্পাদকীয়




সম্পাদকীয়



প্রকাশিত হলো 'এবং একুশ' ২য় বর্ষ, ১৯তম সংখ্যা

এই সংখ্যার নির্বাচিত কবিরা হলেন -


পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্ত
মাসউদুর রহমান খান
মৃন্ময় ঘোষ
রাজা ভট্টাচার্য
শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
অনুপ দেবনাথ
গৌতম দত্ত
সাবিনা ইয়াসমিন
রেজা রহমান
অনাদি চক্রবর্তী
ব্রতী মুখোপাধ্যায়
নীল রতন চক্রবর্তী
মধুসূদন রায়
মনিরা রহমান ঊর্মি
প্রিয়াঙ্কা দাস
বাসব মণ্ডল
সুমনা পাল ভট্টাচার্য্য
প্রেমেন্দু মিশ্র
পলাশ কুমার পাল
অনুষ্টুপ শেঠ
অসিত বরণ চট্টোপাধ্যায়





এবং একুশ

পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্ত



অন্ধকার ফুঁড়ে কাক
পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্ত




স্নায়ুর ডানা ঝাপটে চক্রাকার উড়ে চলল কাক,
অনেকখানি এইভাবে শীতল অনুচরেরা পপলার গাছ আর বন্য গোলাপের ঘ্রাণ
সবজিবাগানের মতো আকাশের একপাশে ফিনকি দিয়ে লাল রণক্ষেত্র
প্রথম স্বাদ পেল পল্লির অঙ্গসজ্জা ভিয়েনে চারুকলা,পোলাও-কালিয়া
লিথোগ্রাফ নয় একাডেমি-ঘর নয় সামান্য থিয়েটার,চোখের সামনে
কার্নিশ থেকে দেখা যায় কাঁসার কড়াই, ডেকচির ভুষোকালি
গোলাদুধ।কাকের জিহ্বা দেখা যায় না,দীর্ঘ চঞ্চু তার লকলক করে
জিভ দিয়ে জল গড়ায় কি না গড়ায় বুঝিনা যদি না থাকে,ভালো লোহার দরজা
সুদূরে শহর আর বনের ঈগলেরা বারুদের মতো পুড়ে ছাই হোক
ঘনায়মান অন্ধকার ফুঁড়ে আমি গভীর দরাজ দুই হাতে মধুর মিনার কচলাব।

গৃহাভিমুখে তুর্কী উল্লাস যেন দশ ঘোড়ায় টানছে ক্ষুধার স্তূপ,চূণকাম করা
চার-কুইন্টাল ভাত,জীবনের যুদ্ধে আমি অর্ধেক পেয়েছি,আর বাকী
বন্য অশ্বের কেরামতি।মৃত্যুর মতো মৃত্যু যদি আসে গহ্বরে রসুইখানায় ইয়া
আল্লা,শুঁড়িখানা তোলপাড়,অন্যের প্রভুত্ব ছ্যা,অচ্ছেদ্য সঙ্গি আমার দশহাজার কাক।
চিৎকার আনন্দে উজ্জ্বল
ভয় পাইনা এয়ার-গান ইট পাথর দুরাচার ডাইনি-টাইনি

বাদুড় পানকৌড়ি কাক চললো সেই ঘোড়ার গাড়িতে,স্লেজ থেকে বক আর
লালঠোঁট মাছরাঙা পাখি
এগিয়ে চলল,
অভ্যর্থনার সম্ভাবনা অবগত আছি
সফরের তাঁবু আর ইরাণের জলপাত্র বুকে
ঘোড়ার লাগাম নেই সজ্জিত সতর্ক কপাল,অশ্বপৃষ্ঠে সমাসীন কাক
জয় হো

সুখাবেশ চেরিগাছের ছায়া কাকের স্টুডিও
ক্যানভাস আর একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র টুনটুনি
পুকুরের জল পেরিয়ে কাক চলেছে নির্বিঘ্ন
দরদী যৌবন তার সামরিক জীবন ছোঁ-মেরে উপক্রম হল তৃপ্তির ভাব
চুলের ঝুঁটি ধরে আর্শিতে দেখে প্রতিরূপ,অদ্ভুত বীরত্বের গৌরব
মশাইরা, কাক কোনো ইতোর কিছু নয়
ঘুরতে ঘুরতে তার কৌলীন্য জাগে
বেমালুম উধাও তার ঘুম আপাত মনে হয় কিন্তু পৌরুষের
সমস্ত সৌন্দর্য পাকখায়,বুক ঘাড় কাঁধ বিজয়ি-গড়িমা
কেবল ওর আত্মা থাকে সোনায় মোড়া কিংখাবে
পাহাড়ের মাঝখানে উপত্যকায় বুকের পাঁজর রেখে আসে
তোমার চিকণ কালো ভুরুর দিব্যি খুঁটিতে আর বেঁধে রাখব না তোমাকে

সুগন্ধি চুল্লির দীপ্তি ভেসে চলেছে
ঝলকাচ্ছে সেটা
জানালার নীচে অতলস্পর্শী খাদ যেন কবর থেকে ফিরে এসেছে ফ্রাই ফিশ
কাক কাক আর কাক উঠে দাঁড়ায় বসে খলবল করে
ভোগ উন্মাদের মতো পিতৃপিতামহ নৈশ আহার ছাই রঙ
দেখুন কী বাহাদুর যেখানে খুশি অপ্রতিরোধ্য একরোখা
গৃহস্থালির কাজ নেই শুধু খুঁটে খুঁটে
মহাশয় ঠাট্টা করবেন না,
কাকেরা প্রারম্ভে আদর-টাদর কিছুই তো পায়নি,প্রণয়ীর চুমু
উদগ্র-আবেগ বেপরোয়া বউ
এই বুঝি ছোঁ-মেরে নেয় প্রক্ষিপ্ত ললাট
শকুনের থাবা গাংচিল শয়তানের আলখাল্লা বিছিয়ে
পৃথিবী মুখর হোক কা কা কা কা কা
ভীতিপ্রদ কিছুটা সময়
হাসপাতাল ধ্যানমগ্ন ভিলা জানালার পর্দা সৌখিন-রেস্তোরাঁ
শূন্য হয়ে দাঁড়িয়ে রইল এমন তো নয়

মহৎ কল্পনা নিয়ে উড়ে চলল কাক,বিক্ষিপ্ত
বিষাদের পুরোনো বইগুলো
তাতে ছবি
আমার চিন্তার আগে কাক এসে বসেছে সাগ্রহে

মানুষের বাড়িতে কাক বস্তুত দ্য ইডিয়ট
তাদের যন্ত্রণার অশ্রু মন্দভাগ্য কি করে লুকিয়ে রাখবেন আপনি
পীড়া থেকে আসা ধুলো বিনির্মাণ করো হে মহাদেব মৃত্যুর পর ও যেন মানুষ হয়
ও যেন খেতে বসে ডিনার টেবিলে
আদব-কায়দা শেখে রঙ পায় যুগপৎ ভাবুক ও নিবিড়

সানুপুঙ্খ আমি কিছুই বলিনি,কেবল কাকের ব্যথা সঞ্চারিত ইশারা-বাচনে
আড়চোখ আর
ঔদ্ধত্য তুলনায় কম
পাঠকবর্গ বুঝে দেখুন,ক্ষণিকের অন্তর্ধান যেন সেই ফুসমন্তর
সে বুঝি উদ্দীপিত হল সে বুঝি
পরম তৃপ্তি নিয়ে ঢেলে দেবে মাংসের রোস্ট প্রেতাত্মার মুখে

কখনো কখনো কাক ডেকে তোলে প্রেতাত্মার দেহ
খামার বাড়িতে সে খুঁজে পায় রাংতার মোড়কে জড়ানো
ঝাড়া দিলে সোনার রেকাবি ঝন ঝন শব্দ হল খুব
গোটা দল ছুটে আসে কাকাকা কা কা কা কা কা কা
সারা ভারতবর্ষ ডেকে উঠল কাকা কাকা কাকা কাকা
কাকের কি বলিষ্ঠ চিৎকার সাদা হাড় অভিজাত ফুসফুস
উপস্থিতবুদ্ধির পালক বাতাসে ভাসছে যেন আমোদ বেড়েছে
তারও ঝাঁকড়া বুনো নিদ্রা আসে দুপুর গড়ালে,আহা আত্মা
ঝাপ দিল জলে আহা ইহলীলা চলো যাই জাহান্নামের খুপড়িতে
ঢুকে পড়ি,দেশ কাল নতুন বিছানা বালিশের কল্কা করা মুখ
তোমার পাপের ভাগ ভাগাভাগি হোক

অনুশোচনার কুঠুরিতে কাক নেই
শুঁড়ির দোকানেও কাক যায়নি
চারদিকে দৃষ্টিপাত শুধু
আত্মার সদ্গতি হোক
চুল্লি থেকে সদ্য সেঁকা পিঠে
চাল-কলা
এই নাও বিগ্রহ
জীবনের গন্ডিতে তন্দ্রা এনে দেবে,এই নাও
মধুর সংকীর্ণ শিশি ।

নিজের নিজের মুখ হতভাগা মগডালে ঝুলন্ত, নিচে
জলরাশি আয়নার সমান,নেমে এলো মাথা উঁচিয়ে মেঘ
কাকের সজ্জিত খড়খড়ি
কাকের আত্মবিস্মৃত মন
অনাড়ম্বর
অনুভবযোগ্য বলে বেপরোয়া কাক
পথ দেখাচ্ছে পক্ককেশ পায়রার ঝুঁটি
১০
কাক কী স্লেজ-গাড়ি টানে!
টানেলের ভিতর টয়ট্রেনে কাফেটরিয়ায়?
আমগাছে হোস্টেল খুলেছে কাকেরা,বায়ুদেবতার ঘর শিবখোলা
শ্মশান মশান ভাটিখানা ছিলিমের দোকান
কাকের দেবতা যিশু
নির্জনতা তাকে কাবু করতে পারে না।












এবং একুশ

মাসউদুর রহমান খান



আতসী
মাসউদুর রহমান খান




আতস কাঁচ ফেলে দেখা মানুষের
ভেতর যেন ভরা পূর্নিমায় ভয়াল
কালো মেঘ। অথচ, দিনের আলোয়
শুভ্রতা নিয়ে বসে, মেঘেরই মত।
মানুষেও সেকি! অদ্ভুদ দ্বি-তত্ত্বম।

তদন্তের রিপোর্টটিও আলো দেখেনি,
আর কখনোই পায়নি তার খোঁজ
আলামতে,
নিজেই নিজের বৃত্ত, শূন্য আঁকা কাগজে
সরষের ভূত মন্ত্র জপা
আরও একবার।

অন্দরমহল আর বাহিরের চাকচিক্যে
অন্ধ যেজন,
তাকে স্নিগ্ধ সকালের শুভ্রতা ছুঁয়ে যায় না।











এবং একুশ

মৃন্ময় ঘোষ




রূপকথা
মৃন্ময় ঘোষ




রাজপুত্তুর এবং রাজার কন্যে নিয়ে
রূপকথা যা, বাদ দিয়ে আজ অন্য কিছু।
তোমার আমার পাশের বাড়ীর শ্যামলা মেয়ে,
চালাক সে নয়, একটু বরং ক্যাবলা সে জন।
দাঁত উঁচু তার, প্রেমের চোখে কেউ দেখে নি।
হৃদয়পুরের সিংহাসনে স্থান রাখে নি।
একটা ছেলে হ্যাবল ক্যাবল বেকার মানুষ।
মোট বয়ে খায় নেই তো তারও টাকার তোড়া।
অশিক্ষিত ক্যাবলা ছেলে ঠকায় লোকে,
পরিশ্রমী দিনের শেষে যা পায় কমই।
দেখলে তাকে শ্যামলা মেয়ের দুঃখ জাগে,
ইচ্ছে করে ঘাম মুছে দেয় রুক্ষ দেহের।
কাজ সেরে সে ফেরত এলে আসন পাতে,
ভাত বেড়ে দেয় দু-এক মুঠো ভীষণ স্নেহে।
ক্যাবলা ছেলে এতেই খুশী গরম ভাত আর
অল্প স্বল্প যা জুটে যায় নরম ছোঁয়া।
হে মহাকাল, এদেরকে এক সঙ্গে রেখো,
অল্প খুশী, অল্প হাসি রঙ্গে বাঁচুক।
রক্ত ঘামের মধ্যে সোহাগ রোজ গাঁথা হোক।
তোমার আমার এই কাহিনীই রূপকথা হোক।















এবং একুশ

রাজা ভট্টাচার্য


শাওন
রাজা ভট্টাচার্য


শুকনো ডালে বসেই যদি শাওন-রঙা পাখি,
একলা ঘরে ঢোকেই যদি অকাল-বৈশাখি -
জানলা ভাঙা, দরজা ভাঙা, ঠেকাই কেমন করে?
বহু যুগের ওপার হতে আষাঢ় এল ঘরে।
#
ভিজে যাচ্ছে শুকনো পাতা, ভিজে যাচ্ছে মাটি,
বানভাসি তোর হাতের রেখায় আমার হাঁটাহাঁটি ;
ভ্রু-সঙ্গমে বৃষ্টিফোঁটা - একটুখানি ছুঁই?
রাতের বুকে বৃষ্টি এল।
আমার বুকে তুই !
#
একলা ঘরের কাঙালপনা বাড়িয়েছিল হাত,
তুই ছুঁলি না বলেই এত তুমুল বৃষ্টিপাত...







এবং একুশ

শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়



এসো, প্রেমের কথা বলি 
শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়




এসো এখন আমরা প্রেমের কথা বলি
হাতে হাত, ঠোঁটে ঠোঁট, শরীরে শরীর
এসো, আমরা ভালবাসার কথা বলি।


হয়তো বা পৃথিবীর কোনো প্রান্তে গুপ্তঘাতক
এ সময়ই পিস্তলের বুকে কিছু ভুল ভরে নিল
হয়তো বা ধমনীর লাল রঙ মেখে নিল
কোনো প্রান্তে মৃত্তিকা এখনই
অতলে তলিয়ে যেতে যেতে
হয়তো বা এ মুহুর্তে ঠিক, কোনো মেয়ে
কোনো দেশে বলছে চেঁচিয়ে -
'আমায় এমন করে মেরো না পুরুষ'।

ভেবো না সে সব,
এসো আমরা প্রেমের কথা বলি
এসো আমরা ভালবাসার কথা বলি।

দুফোঁটা জলের জন্যে খালি পায়ে মরু বেয়ে
ক্রোশ ক্রোশ হেঁটে যায় যারা
তারা কি আদৌ জানে কত নদ নদী
আমাদের পাহারায় নিত্যদিন উচ্ছল উত্তাল!
এইমাত্র হয়তো সে পথে
নিদাঘের তপ্ত তাপে 'জল জল' বলে
কোনো প্রাণ বালিতে হারাল।
সীমান্তে টহলরত একরোখা হয়তো বা কেউ
শত্রুর বুলেটে তার বুক ভরে নিল, এইমাত্র
হয়তো অশীতিপর কোনো এক কামুক ধার্মিক
কবুল করল কোনো কিশোরীর নিকা
হয়তো বা কন্যাভ্রুণ এইমাত্র ধুয়ে মুছে সাফ।

না...না, এত ভাবতে নেই, তার চেয়ে
এসো আমরা প্রেমের কথা বলি
এসো আমরা ভালবাসার কথা বলি।

এ নশ্বর পৃথিবীতে কোনোকিছু চিরস্থায়ী নয়,
কারা যেন অকারণ এই সব বলে।
আসলে সমস্ত কিছু আপেক্ষিক
বহতা নদীর মত জীবনের স্রোত
এ-ঘাট সে-ঘাট ছুঁয়ে ছুটে যায় দিকচক্রবালে
যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ জীবনের গতি
তারপর আমি নেই, তুমি নেই
আমাদের প্রজন্মের ভার, বয়ে যাবে অন্য মানুষ
ছায়া রেখে গেলে ছায়া, আগুনে আগুন
মেখে নিয়ে টেনে যাবে নিজের জোয়াল।

না...না...না...না, ভেবোনা এ সব, বরং
এসো, আমরা প্রেমের কথা বলি
এসো, আমরা ভালবাসার কথা বলি।







এবং একুশ

অনুপ দেবনাথ



সৌদামিনী 
অনুপ দেবনাথ 



তোমাকে আমি এণাক্ষী বলে ডাকতাম,
মীনাক্ষী, মৃগনয়না, মদিরেক্ষণা ও বলেছি কতবার,
মনে ও নেই সব।
তোমার চোখ আমার সবচেয়ে প্রিয়,
চোখেই যে সব বলে দাও।

গঙ্গার ঘাটে সেদিন বসেছি দুজনায়,
আকাশ রাঙ্গিয়ে ধীরে নামছে সন্ধ্যা।
দু পাড়ে জ্বলে উঠছে আলো,
ছোট ছিপ নৌকোগুলো হঠাৎ অন্ধকার।
কথা কইছিলে না তুমি।
নদীর কথা শুনছিলে?
ছলাৎ ছল, ছলাৎ ছল।
অপাঙ্গে দেখছি তোমায়,
কি রূপ, কি রূপ।
আলো ছায়ার, আঁধার মায়ায়,
মেয়েরা অলোকসুন্দরী হয়ে যায়।

বেশ ক্ষিদে পেয়েছিল।
দুটো ডিম টোস্ট কেনা গেল।
নদীর ধারে বসে রইলে তুমি ঠায়,
জলের দিকে অপলক।
এসে যেই না বসেছি তোমার পাশে,
অমনি শীর্ণ হাত বাড়িয়ে,
খাবার চাইল একটি বাচ্চা ছেলে।
তোমার চোখে তাকালাম,
সে চোখে প্রশ্রয়।
একটা টোস্ট দিয়ে বললাম, যাঃ
নড়লো না ছেলেটি,
পাশে এসে দাঁড়ালো তার বোন,
এ তো মহা মুশকিল. . .।
তুমি স্থির তাকিয়ে আমার দিকে,
বাকি টোস্টটাও দিলাম অগত্যা।
তাকিয়ে দেখি সুহাস তোমার চোখ,
তাতে খেলে যাচ্ছে বিদ্যুৎ।
সৌদামিনীর সে মায়ায়,
আমি আজও পুড়ে যাই।
ভালোবাসা অঞ্জন ঘন সে চোখ,
দেখতে পাই আমি আজও।

তারপর?
ভালোবাসা পেয়েও ক্ষিদে নিয়ে ভাববো, এমন অনভিজাত আমি নই।

ও হ্যাঁ, বলা হয়নি।
অন্য নামে তাকে আর ডাকিনি,
ডেকেছি সৌদামিনী।







এবং একুশ

গৌতম দত্ত





বন্ধু
গৌতম দত্ত



এই ছেলেটা, কোথায় গেলি তুই
মা যে তোকে চাইছে বারংবার
সেই যে গেলি, ফিরছিস না কেন!
তুই না এলে বাড়ি-ই অন্ধকার।


#

বন্ধু’রা তোর এতই যদি ভাল— !
তারা কেন ভেতর ভেতর চুপ?
তুই কি তবে পাকা ধানের মই—
নাকি অপেক্ষাতে? হাতে নিয়ে ধূপ?

#

বন্ধু কথা’র মানে জানিস তুই?
জানে কি তোর প্রাণে’র বন্ধু যারা?
বন্ধু মানে দোসর, স্বজন, সাথী,
আড়ি-ভাবে’র, সময় পাবে তারা?

#

হাওয়া এখন বড্ড বেশী ভারী—
শোনা কি যায়? রাতের কড়া নাড়া—
বাড়ি এখন বন্দী ফ্ল্যাটের ঘরে,
হারিয়ে গেছে রাতের য’ত পাড়া।

#

সন্ধ্যে বেলা হাজার পার্টি’র ভিড়
বোতল-গেলাস গড়াগড়ি যায়—
নেশা যখন মাথায় চ’ড়ে বসে
বন্ধু’কে কি চিনতে পারা যায় ?

#

জেঠা, কাকা কেউ তো বকার নেই—
মানিক সোনা আরো আদর চায়,
বকতে গেলে আইন আসে তেড়ে ;
এমনি করে আদর বেড়ে যায় !

#

এই ছেলেটা, আয় না ফিরে তুই
নয় তো জানা কোথায় পাবো তোকে?
বাঁশ বাগানের মাথার ওপর—
হারিয়ে গেলি? কি বলি তোর মা’কে?

#

সাথী’রা তোর, কাপড়ে মুখ বেঁধে
ঘুরছে নাকি? এ শহরের বুকে— ।
তোর তো তারা বন্ধু বলেই জানি,
পারছে তারা? বসতে, খেতে, শুতে?

#

এমন করে এরাই বড়ো হবে— ?
আমাদের কি নেইকো কোনও দায়!
আরও কত আদর দিয়েই, শেষে
‘বন্ধু’ মানেও পাল্টে দেওয়া যায়!










এবং একুশ

সাবিনা ইয়াসমিন



অশুভ নক্ষত্রের কাল
সাবিনা ইয়াসমিন



এর চেয়ে ভালো ছিলো পিতা
মাতৃগর্ভের কারাগার
২৮ জুলাই, ১৯৭১
পেঁচার মতো এক অশুভ প্রহর ছিল রাতের শেষে।


মা দরজার খিল তুলে ঝুলছিল
সিন্দুকে তুলে রাখা সমস্ত রত্ন
তুলে দিয়েছিল তস্কর হায়েনার হাতে
তবুও ওরা রক্ত চাই রক্ত চাই বলে উল্লাস করছিল
জঠর কারাগারে আমি তখন কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম।

সেদিন শ্রাবণের ভোর ছিল
মরুভূমিতেও নেমেছিল ঝরোঝরো বৃষ্টির কান্না
সবাই আমার উদ্দ্যেশ্যে বলছিল
এ সন্তান হয়তো দেখবেনা
বর্ষা, বসন্ত, পৃথিবীর আলো

কিন্তু আমি নষ্টগর্ভ হবোনা
শক্ত হাতে ধরে রইলাম
মাতৃপুষ্প, জন্মগর্ভভ্রূণে।

সকাল আটটায় নদীর তীর থেকে
তোমার শবদেহ এনে রাখা হলো
মায়ের প্রিয় কামিনী ফুলগাছটির নীচে
তখনও, জঠরের ভ্রূণ আমি কাঁদিনি

কারণ তুমি তখন ত্রিশ লক্ষের একটি পুষ্প
স্বর্গের বাগানে ফুটে উঠেছো, অপরূপ
ঝলমলে দ্যুতি।

এরপর ভচক্রে যোগ হলো
আরও অনেক কেতু, রাহূ ও শনি।

আরও এক আবিল ভোর এল
বর্ণহীন আকাশ থেকে
দেবদূতেরা নামবার আগেই
বয়ে গেল এলোমেলো ঝড়
নীড় ভাঙলো বত্রিশ নম্বরে।

দেবদূতেরা নামিয়ে দিলেন স্বর্গের সিঁড়ি
সেই সিঁড়ি বেয়ে উঠে গেলেন
বারবার ক্ষমা করা উদার পিতা
প্রিয় সন্তানেরা ও সন্তানের জননী
এবং আত্মীয় আত্মা।

এখনও অসুস্থ কিছু কীটের প্রলাপ
ঢেকে দিচ্ছে সূর্যমুখীর উজ্জ্বল আলো।

বৃন্ত থেকে খসে পডেছে চারটি কুসুম
জাতির বিবেকের ক্রোডে।

এবারে নতুন রূপ দানবেরা
হলি আর্টিজানে
শোলাকিয়ায়
বাতাসে হিংস্র নারকীয় উল্লাস।

এতসব অশুভ নক্ষত্রকালের পরে
তোমাকে শুধু বলার থাকে পিতা
সাথে করে নিয়ে গেছ যে রুদ্রপলাশ
হিরণ্ময় কৃৃষ্ণচূড়া
নতজানু পেতেছি দু'হাত
আমাকে দাও

দাবানলে জ্বলতে থাকা স্বদেশ
দেখার এ কষ্ট মুখ
আমি আর কাউকে দেখাবোনা।
তোমার দেয়া পুষ্পঋণ নিয়ে
ফিরে যাবো মাতৃগর্ভ কারাগারে।















এবং একুশ

রেজা রহমান



এই ঘুম ভাঙে যদি
রেজা রহমান



যখন যা আসে মুখে তাই বুঝি বলে মুখপুড়ি
এই তো কদিন পর শিমুলতুলোর উড়োউড়ি
খুঁজলেও এ আমাকে ফিরে আর কোথাও পাবিনে
শীতে যে এসেছে তাকে যেতে হয় বসন্তের দিনে।


যে চোখের জল মুছে জাত গেল মন্দ বলে লোকে
আজ তুই চোখ বুজে দেখি ধূলো দিস সেই চোখে
কী আর করিস বল্ বেলা গেল ও চোখের বালি
নিজ কর্মদোষে তুই নিজেরই যে কপাল পোড়ালি!

অনেক হয়েছে রাত আর কত এবার ঘুমাই
এই ঘুম ভাঙে যদি তোকে যেন নক্ষত্রটি পাই।








এবং একুশ

অনাদি চক্রবর্তী




গাঁয়ের পথে
অনাদি চক্রবর্তী


পথগুলো কি তেমনি আছে
তেমনি আঁকাবাঁকা,
দু'ধারেতে ধানের মাঝে
ধূসর রঙে আঁকা।
আল পেরিয়ে যখন আমি
গাঁয়ের পথে যাব,
গ্রাম ছাড়া সেই রাঙামাটির
পথ কি আবার পাব!
রাঙামাটির পথটি ধরে
গাঁয়ের পথে যেতে,
আম-কাঁঠালের গন্ধেতে কি
উঠবে পরাণ মেতে!
গাঁয়ের মাঝে শুনতে পাব
উঠছে কোলাহল,
ধূলার পরে করছে খেলা
ন্যাংটো শিশুর দল
দল বেঁধে কি পুকুর ঘাটে
গাঁয়ের বৌয়ে ঝিয়ে,
তেমনি করে বাসন মাজে
ঘোমটা মাথায় দিয়ে?
পদ্মফোটা পদ্ম দিঘী
তারই ফাঁকে ফাঁকে,
পানকৌড়ি ঘুরে বেড়ায়
সোনালি রোদ মেখে।
গাছের ডালে মাছরাঙাটি
চুপটি করে বসে,
পুকুর পানে চেয়ে থাকে
মাছ ধরবার আশে।
রঙ-বেরঙয়ের প্রজাপতি
ফড়িং ঘাষে ঘাষে,
সন্ধ্যাবেলা জোনাকীরা
প্রদীপ হাতে আসে।
গাঁয়ের শেষে আছে কি সেই
ভগ্ন কুটিরখানি,
যে ঘরেতে থাকত সুখে
রাজার দুয়োরাণী।
মেঘ বরণ কন্যাটি তার
কুঁচ বরণ চুল,
আঙিনাতে ডালে ডালে
চম্পা-চাঁপা ফুল।
এখনও কি পরাণ কাঁদে
কাজলা দিদির তরে,
বাঁশ বাগানের মাথার উপর
চাঁদ উঠলে পরে।


যদি বলো এসব কিছুই
দেখতে আজও পাবো,
তাহলে আবার আমি
তোমার গাঁয়ে যাবো।
পানের বরজ থেকে না হয়
এক জোড়া পান নিয়ে,
চেয়ে নেব পান-সুপারি
তোমার বাড়ি গিয়ে।








এবং একুশ

ব্রতী মুখোপাধ্যায়



এই নাও
ব্রতী মুখোপাধ্যায়


যে মাঠের পরে আর মাঠ নেই
তার মাটি হলুদ
সেইখানে দাঁড়িয়ে
যে আকাশের পরে আর আকাশ নেই
(কী যে নাম রঙের!)
সেই দিকে তাকিয়ে
যখন আমি চেঁচিয়ে উঠে বলি
ভরা মিথ্যের মুখ একবার দেখিয়ে দাও
আমার মাথার ওপর মুখের ওপর স্বপ্নচূর্ণ ছড়িয়ে পড়ে
তলোয়ারকে তলোয়ার
আর রক্ত যা তাকে রক্ত বলে চিনে নিতে ভুল হয় না
যা আর কি লাল চোখ তাকে অন্যরকম মনে হওয়া অসম্ভব
রাজা যখন উৎসবের পথে
ভিকিরিদের তাড়িয়ে দেয়া হয়
তাদের ভাঙাচোরা মুখের করুণ হাহাধ্বনি
হাজার হাতের করতালির গর্জনের নিচে হারিয়ে যায় না


যে খনির নিচে আর খনি নেই
যে পাহাড়ের নিচে আর পাহাড় নেই
যে নদীটি এইমাত্র লুট হয়ে গেল
ছুটে যাই
সারি সারি লাশ শাদা কাপড়ে ঢাকা
গালে হাত দিয়ে বালিকা এক বসে
তার সাহস নিয়ে সংশয়ের প্রশ্ন নেই
কিন্তু তার হাতের আঙুলগুলি ?
আঙুলগুলি কেটে নিয়ে গেছে
বলে সে নিজের মনে গান ধরে
তার সুরে করুণাভিক্ষা নেই
বস্তুত তেমন কিছুই নেই যাকে কেউ বলতে পারে করুণ
মৃত্যুর চেয়েও ঠাণ্ডা বাতাস বইতে থাকে
অন্ধকারের চেয়েও অন্ধকার
নড়ে চড়ে, আঘাত করতে থাকে

যে আগুন আমার প্রাচীন পিতা
কঠোর তপস্যার পর পাথর ঠুকে একদিন জ্বালিয়েছিল
বুকের থেকে তার খানিক খামচে এনে
ছুটতে থাকি
মাথার ওপর দিয়ে হাড় কাঁপিয়ে উড়ে যায়
রাজপ্রহরী ইস্পাতের পাখি
তাদের পেট থেকে খসে পড়ছে আগুনের ডিম
চাকায় চাকায় ভর দিয়ে
যারা একটার পর একটা গ্রাম ঘিরতে থাকে
তাদের কারো হাত নেই হাতিয়ার আছে

যে সমুদ্রের ঢেউগুলি গড়ে ওঠার আগেই
ভেঙে যায় কখন
তার তীরে আছড়ে পড়ে হাজার হাজার ঝিনুক লক্ষ লক্ষ মাছ
মরা সবাই
আমি সেখানে দৌড়ে যাই
একটা বুড়ি, গায়ের চামড়া পোড়া,
বালুর ওপর উবু হয়ে বসে
কী যেন খোঁজে
চোখ থেকে রক্ত চুঁইয়ে বসনহীন বক্ষ ভিজে যায়
আর সমুদ্রবন্দরে দেশবিদেশের বণিকদের পতাকা উড়তে থাকে
জাহাজ থেকে ঝাঁপ দিয়ে আগুন ছুঁড়তে ছুঁড়তে যারা নামে
কেমন যেন পরিচিত সবাই
যেন তাদের আগে কবে দেখেছিলাম

যে রাজা ছিল যে রাজা হল
যে রাজা হল যে রাজা হবে
রাজা ত্রাণ করে রাজা প্রাণ নেয়
রাজার হাতে বজ্র রাজার হাতে পুষ্প
রাজার খেতাব দেয় রাজা শূলে চড়ায়
গরিবের জন্যে, হায়, রাজার চোখে কর্পোরেটের পানি
এইসব ভাবতে ভাবতে
স্বজনদের কেউ কেউ যখন বেশ দূরে
আরও দূরে
আরও আরও দূরে
আমি আর বালির ওপর দাঁড়াতে পারি না
আমার আর আকাশ ছাড়া ভরসা নেই
হাত জোড় করে বলি
নক্ষত্র দেখিয়ে তুমি পথ চিনিয়েছিলে
হে আকাশ
শস্য আর স্বপ্নের বিস্ময় হারিয়ে যাবার আগে
এই বেলা আমাকে দাও আলোর আলিঙ্গন
আমাকে শিখতে দাও
যে বাঁচা প্রচণ্ড যন্ত্রণার কিন্তু সেখানে গ্লানি নেই
যে মৃত্যু অনিবার্য কিন্তু সেখানে
নির্বোধ আতঙ্কে কুঁকড়ে থাকতে হবে না
যে জানার শেষ নেই কিন্তু যা এখুনি না জানলেই নয়
তার জন্যে
এই নাও একটি জীবন
একটি বই তো নয়










এবং একুশ

নীল রতন চক্রবর্তী



এখানেই থেমে যায় সভ্যতার রথ 
 নীল রতন চক্রবর্তী


জামা পালটালেই সব পালটায় না,
শুধু চেহারাটা বদলে যায়, এই যা...
আমাদের হয়েছে তাই
নতুন বেশভূষায় চেহারা পাল্টেছি শুধুই,
আসলে তো রয়েছি সেই আকাট মুখ্যই
তাই এখনও আদিম দস্তুরে সভ্যতা লুকাই
আর ব্যপক উল্লাস তার সমর্থনেই ...।।
কি জানি সভ্যতা কারে কয় ?
হয়ত দাঁড়িয়ে ঝুলন্ত বারান্দায়
নিশ্চুপ দেখে যাওয়া তাণ্ডব রাস্তায়
আর ডেকে রেখে নিজস্ব বাতায়ন
চুপচাপ করে যাওয়া নীরব সমর্থন ...
ভুলে যাই আমি বা আমরা, চরিত্র আগুণের
দহনই শেষ কথা, আপন বা পর কেউ নয় তার ।
সময় যদিও পক্ষ করে না অবলম্বন
সে থেকে যায় নির্বিকার ভাবলেশহীন
আর এখানেই তালগোল যতব্যবহার
ধরে নেই আছে সমর্থন তার ,-
নীরবতা সর্বক্ষণে সুখকর নয়
কিছুটা উচ্ছ্বাস আজ বড়ো প্রয়োজন
নীরব জনতার, নিদেন পক্ষে মানবতার
না হলে আগুন দহনেই খেলবে রক্তে ফাগুন...
ধর্ম আমাকে বলে নি যেতে মিথ্যা আচরণে
তবু যাই আপামর সব অন্ধ জ্ঞানে
পাল্টে ফেলা জামাতেও ধরে সেই পথ
আর এখানেই থেমে যায় সভ্যতার রথ...











এবং একুশ

মধুসূদন রায়




আলোকবর্তিকা
মধুসূদন রায়




বুকের মধ্যে নিশ্চল রসিক বাজনাদার
ঝলসানো হাত ধরে নৌকোর দাঁড়ের শব্দ শোনায়
রক্তের স্রোত বয়ে চলে স্মৃতির শহর পেরিয়ে
নির্বাক কুয়াশার কিনারায় –
#
ব্যক্তিগত শব্দরা অনুরণন মানে না
স্রোতের গভীরে ধাক্কা মারে অগভীর
কথোপকথন, পায়ের তলায় রাধাচূড়া,
পঞ্চমীর চাঁদ সরে গেলে ছলছল হয়
হলুদ জাফরানি চোখ
#
ধুয়ে যাচ্ছে সমস্ত স্বপ্নবীজ
কৈশোর ফিরছে গেরুয়ারাঙা রাস্তায়
প্রথম গোলাপের নির্জন ছাতিমতলা
#
তোমাকে ছিন্ন করল যে রাতের তারা
তাকে অতর্কিতে ভালবাসা দিও









এবং একুশ

মনিরা রহমান ঊর্মি






আঁধার...
মনিরা রহমান ঊর্মি



দু একটা ড্রাগন কিংবা ডায়নোসরের মত নয়
একঝাক নীলতিমির মত দুঃখ আছে আমার।
ওদের সাথেই নিত্য বসবাস।

মাঝেমধ্যে সমুদ্র পৃষ্ঠদেশে ভেসে ওঠে
অক্সিজেনের প্রয়োজনবোধে
তখনই চট করে একঝলক রোদ মেখে নিই গায়ে
আবার তলিয়ে যাই কয়েকশ ফুট নীচে

সমুদ্র তলদেশে, মুখগুজে পড়ে থাকি...
একা।
অন্য এক জগতে, যেখানে আলো ভীষণ ক্ষীণ
অন্ধকার বরফ শীতলতায়, স্নায়োবিক অসারতায়
কাটে রাত-দিন।

যদিওবা, দিন কিবা রাত বিশেষ কোনও পার্থক্য বোধগম্য নয়,
যেখানে আলো আমাকে ছুঁতেই পারেনি,
তবে কি করে ভোর হয়?

আকাশে যাই থাকুক,
সূর্য কিংবা চাঁদ
সমুদ্র তলদেশে কেবলই
আমার..
অমাবস্যার আঁধার
বিদঘুটে কালো রাত।









এবং একুশ

প্রিয়াঙ্কা দাস





অনন্ত আশা
প্রিয়াঙ্কা দাস




মধুময় জ্যোৎস্নায় তুমি এলে একাকিনী,
ঘরে-বাইরে তখন আলো- আঁধারির উথালপাতাল খেলা...
এরই মাঝে মেঘবালিকা তোমার আসন্ন পদধ্বনি শুনি...
আগুন রঙা শাড়িতে নূপুর পরা কালো পায়ের জলছবি এঁকে দিলে এই মত্ত বাউলের হৃদয়- কুটিরে...
হাসনুহানার সুগন্ধিতে ধুয়ে দিলে তার দহন জ্বালা...
বেশ তো ছিলাম আপন খেয়ালে স্তব্ধ ভীড়ের কোলাহলে,
তবুও অচেতনের মত মেতে উঠলাম তোমার সাথে জীবনের এক্কা- দোক্কা খেলার আসরে...
ধূসর ধূলায় মাখা এ নগর কেবল নিয়ে যেতে চায় মৃত্যুর জোয়ার ভাটায়...
আর আমি আরবার পথ ভুলে হারিয়ে যাই চোরাবালির শুষ্কতায়...
তুমি পারবে মেঘবালিকা!
তোমার সিক্ত আঁচলের প্রেমাবেগে আমায় ভিজিয়ে দিতে?
আমার এই আনমনা মনটিকে তোমার মৃদুমধুভাসে ভুলিয়ে রাখতে?













এবং একুশ

বাসব মণ্ডল




ঘুমঘোর
বাসব মণ্ডল



সত্যান্বেষী এই ছিন্ন দেহ
ভাঙা ছায়া বেয়ে
খুঁজে নেয়
অতল গহীন নিস্তব্ধতা

ধ্বস্ত সিঁড়ি বেয়ে
আমার ক্লান্ত দিন গুলো
মিশে যায়
শ্মশানের সানিত স্তব্ধতায়

নিঃসঙ্গতার অনায়াস আলিঙ্গনে
আমার ফসিল মন
খুঁজে পায়
নৈস্বর্গিক পূর্ণতা

জারজ ভ্রূণের ঠিকানাহীন আশ্রয়ে
আমি হারিয়ে যাব
স্বেচ্ছায়...







এবং একুশ

সুমনা পাল ভট্টাচার্য্য




ভালবেসে
সুমনা পাল ভট্টাচার্য্য




শহরের চারপাশ এত যান্ত্রিকতায় ছুটছে-
আবেগের চাদর জড়িয়ে তোমায় যে ডাকব
বড় দ্বিধা হয় আমার...

মনে হয়, যদি অবুঝ ভাবো!!
যদি বলো, বুদ্ধি - বিবেচনাহীন -
আমার বুকের ঢেউ যদি না ছোঁয় তোমায়-
তোমার ঘড়ির কাঁটায় যদি আটকে থাকে স্বপ্নের তারা-
যদি সেখানে কোথাও না আর দানা বাঁধে আনমনা ঝিমফুল-
তবে আমার সবটুকু 'আমি' জেনো বুদবুদ হয়ে মরবে...

আসলে, পাগলামি আছে বলেই পাগল হতে পারি-
আসলে, ভালবাসা আছে বলেই অপেক্ষা করতে পারি-
আসলে, হৃদয় আছে বলেই আকূল হতে পারি-
আসলে, বিশ্বাস আছে বলেই নিজেকে বাজি রাখতে পারি-

আমার খোলোসে গোটানো আছে যে একটুকরো অমলিন প্রেম
তাকে আজ স্বযত্নে রেখে গেলাম তোমার বুকের ওপর-
আর তাকে ঘিরে সাজিয়ে দিলাম আমার অভিমানী ঠোঁটের আলতো চুম্বন-
ভোরের নিষ্পাপ হিমগুলো নিষ্ঠুর রোদে ঝলসে যাওয়ার আগে সব রঙ মেখে নাও 
..."ভালবেসে"








এবং একুশ

প্রেমেন্দু মিশ্র




যন্ত্রণার মাথায় রত্নরা নাচে
প্রেমেন্দু মিশ্র



যন্ত্রণার মাথায় রত্নরা নাচে।
শূন্যতার পরে যদি কিছু থাকে খেলা।
এই সেই খেলা।
সেরার সেরা।

পাখিকে গোলাম হতে দেখেছি।
দেখেছি পায়ের মাটি কেমন গায়েব -
কংক্রিট।
দুই গোলার্ধ ভয়ে কাঁপে।
বিপদে যে ভাবে বুক কাঁপে আমাদের।

একরাশ দুঃখ, জ্বালা, ভুক, গরিবী নিয়ে নাচে দেহ।
জ্বালাময় দেহ।
অজ্ঞানতার দেহ।
তারা কাঁদে, বুক চাপড়ায়।
চোখ ভরে যায় জলে।
শোষণ, পীড়নের সময় -
ঠিক তখনই বিপরীতে রত্ন দেহ স্মিত হাসি দেয়।
ছোটায় জ্ঞানের বুলি।
যন্ত্রণায় তখন কাঁদে অভাবের দেহ,
তাচ্ছিল্যে, অযত্নে।












এবং একুশ

পলাশ কুমার পাল




প্ল্যাটফর্মটা ডাকছে আমায়
পলাশ কুমার পাল




প্ল্যাটফর্মটা ডাকছে আমায়
  ডাকছে ঐ রেলপথ-
বিকেল মানেই স্বপ্ন খোঁজে
  তোর বাড়ি তোর গলিপথ!
হাজার ভিড়ের যাওয়া-আসা
  তুই যে তখন একলা মন;
রেল ছুটে যায়, আমিও ছুটি
  যতদূর যায় দু-নয়ন-
রেলপথটা বড্ড মায়া
  সূর্য যখন যায় রে ঢলে;
সত্যি বলছি বুকের মাঝে
  সিগারেটেও আগুন জ্বলে...
কফিতে তোর সেদিন ঠোঁট
  নান্দিকতার কত কথা;
একলা ক্ষণে মেঘলা দিনে
  প্ল্যাটফর্মে সে কাব্যগাঁথা।
পাঠ করি তোর সকল কিছু
  যতটা ছুঁয়েছি তোকে;
প্ল্যাটফর্মেতে মিলব কখনো
  দুই চুমুক একই কাপে?
কফিতে আজ উঠছে ধোঁয়া
  বারান্দাটা বড্ড ভিজে;
প্ল্যাটফর্মটা ডাকছে রে আজ-
  আসবে কি তুই বঁধু সেজে?
বিকেল মানেই রেলপথ ঐ
  নিরুদ্দেশে হারিয়ে যাওয়া,
ভিড়ের মাঝে গল্পকথায়
  তোকে মনে অনেক পাওয়া!
ছুটছি তাই ছুটছি আজও
  হাঁটছি ঐ স্টেশন পথে...
তোর গলিতে তুই রিক্সা ধরিস
  আসিস ক্ষণেক বঁধু বেশে!
হারিয়ে যাব ট্রেনের মতো
  সমান্তরাল অচীনপথে-
রিক্ততা সব যাব ভুলে
  ভালোবাসার আতুরেতে!












এবং একুশ

অনুষ্টুপ শেঠ



রাস্তা
অনুষ্টুপ শেঠ



এই মগ্ন সময়ে, কি নিয়ে
বালুখেলা আর। কি দিয়ে পেরোতে হয়
ভস্মচরাচর –
এ জটিল সময়ে, জেগে উঠতে
আলিস্যি, জেগে থাকতে আলিস্যি, তবু
প্রতি রাত জাগরী প্রহর।

প্রহর থেকে প্রহরে,
মিথ্যের ঘরবসত জুড়ে গড়িয়ে পড়ে
অসমাপ্ত সুর
প্রহর থেকে প্রহরে
কান্নার মৃদু চলাচল, ইচ্ছেরা
দূর, সুদূর।

কি ভাবছ, এর পরও
আশা লিখব? তুলে নেব একবিন্দু আলো
অনন্দ অভ্যাসে?
সে সাহসও রাখি। কিন্তু
যদি সে স্ফূলিঙ্গ দাবানল জ্বালে
বৃক্ষলতাঘাসে

যদি আগুনের আঁচে, সব সত্য
ভস্মরূপে সর্বগ্রাসী হয়
পাহাড়ী জঙ্গলে,
আরো কি দুর্বোধ্য হব তবে?
তুমি জানো রাস্তা খুঁজে নিতে?
অমৃতে, গরলে...














এবং একুশ

অসিত বরণ চট্টোপাধ্যায়


তিয়াসা কে ছুঁয়ে
অসিত বরণ চট্টোপাধ্যায়



তিয়াসা কে ছুঁয়ে সারারাত,
স্বপ্নে অথবা দুঃস্বপ্নে অবিরাম
এবং বহুক্ষণ---
মাংসল বুকের উপত্যকায় যাযাবরী হাত,

আমি তো চিনি শরীরের অলিগলি তস্যগলি,
হৈমন্তী সুঘ্রাণ অথবা মরুভূমির তপ্তবালি।
তোমার তুমিত্বে আমার অনন্ত পিপাসা,
তোমার সুঘ্রাণে তুমি অন্তর্লীনা তিয়াসা।
দুর্বোধ্য গহন আঁধারে তুমি দুরাশা,
'যদি', 'কিন্তু' 'সুতরাং' এ সব হারানোর নেশা।

শিশিরের শব্দে পেয়েছি তোমায়
শুনেছি নূপুর নিক্কন হৈমন্তী অঘ্রাণে,
দেখেছি পৌষালী গাঢ় কুয়াশায়,
বসন্তে দিয়েছো সাড়া নীরব আমন্ত্রণে।
এবং বিষণ্ণ বিকেলে---
অথবা রাত্রি প্রসবা গোধূলি কিরণে
সেই এলে,..
বিকেলে ভোরের ফুল হয়ে
দহনের তীব্র জ্বালা নিয়ে,
কালবোশেখীর তীব্র আশ্লেষে
ফোঁটায় ফোঁটায় ভাসিয়ে দিলে দুকূল।

এখনও রাত বাকি, অনন্ত পিপাসা
ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা
আষাঢ়ের বৃষ্টি হয়ে ঝরো
মেটাও দহন জ্বালা।





































এবং একুশ