অন্ধকার ফুঁড়ে কাক
পুণ্যশ্লোক দাশগুপ্ত
১
স্নায়ুর ডানা ঝাপটে চক্রাকার উড়ে চলল কাক,
অনেকখানি এইভাবে শীতল অনুচরেরা পপলার গাছ আর বন্য গোলাপের ঘ্রাণ
সবজিবাগানের মতো আকাশের একপাশে ফিনকি দিয়ে লাল রণক্ষেত্র
প্রথম স্বাদ পেল পল্লির অঙ্গসজ্জা ভিয়েনে চারুকলা,পোলাও-কালিয়া
লিথোগ্রাফ নয় একাডেমি-ঘর নয় সামান্য থিয়েটার,চোখের সামনে
কার্নিশ থেকে দেখা যায় কাঁসার কড়াই, ডেকচির ভুষোকালি
গোলাদুধ।কাকের জিহ্বা দেখা যায় না,দীর্ঘ চঞ্চু তার লকলক করে
জিভ দিয়ে জল গড়ায় কি না গড়ায় বুঝিনা যদি না থাকে,ভালো লোহার দরজা
সুদূরে শহর আর বনের ঈগলেরা বারুদের মতো পুড়ে ছাই হোক
ঘনায়মান অন্ধকার ফুঁড়ে আমি গভীর দরাজ দুই হাতে মধুর মিনার কচলাব।
২
গৃহাভিমুখে তুর্কী উল্লাস যেন দশ ঘোড়ায় টানছে ক্ষুধার স্তূপ,চূণকাম করা
চার-কুইন্টাল ভাত,জীবনের যুদ্ধে আমি অর্ধেক পেয়েছি,আর বাকী
বন্য অশ্বের কেরামতি।মৃত্যুর মতো মৃত্যু যদি আসে গহ্বরে রসুইখানায় ইয়া
আল্লা,শুঁড়িখানা তোলপাড়,অন্যের প্রভুত্ব ছ্যা,অচ্ছেদ্য সঙ্গি আমার দশহাজার কাক।
চিৎকার আনন্দে উজ্জ্বল
ভয় পাইনা এয়ার-গান ইট পাথর দুরাচার ডাইনি-টাইনি
৩
বাদুড় পানকৌড়ি কাক চললো সেই ঘোড়ার গাড়িতে,স্লেজ থেকে বক আর
লালঠোঁট মাছরাঙা পাখি
এগিয়ে চলল,
অভ্যর্থনার সম্ভাবনা অবগত আছি
সফরের তাঁবু আর ইরাণের জলপাত্র বুকে
ঘোড়ার লাগাম নেই সজ্জিত সতর্ক কপাল,অশ্বপৃষ্ঠে সমাসীন কাক
জয় হো
৪
সুখাবেশ চেরিগাছের ছায়া কাকের স্টুডিও
ক্যানভাস আর একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র টুনটুনি
পুকুরের জল পেরিয়ে কাক চলেছে নির্বিঘ্ন
দরদী যৌবন তার সামরিক জীবন ছোঁ-মেরে উপক্রম হল তৃপ্তির ভাব
চুলের ঝুঁটি ধরে আর্শিতে দেখে প্রতিরূপ,অদ্ভুত বীরত্বের গৌরব
মশাইরা, কাক কোনো ইতোর কিছু নয়
ঘুরতে ঘুরতে তার কৌলীন্য জাগে
বেমালুম উধাও তার ঘুম আপাত মনে হয় কিন্তু পৌরুষের
সমস্ত সৌন্দর্য পাকখায়,বুক ঘাড় কাঁধ বিজয়ি-গড়িমা
কেবল ওর আত্মা থাকে সোনায় মোড়া কিংখাবে
পাহাড়ের মাঝখানে উপত্যকায় বুকের পাঁজর রেখে আসে
তোমার চিকণ কালো ভুরুর দিব্যি খুঁটিতে আর বেঁধে রাখব না তোমাকে
৫
সুগন্ধি চুল্লির দীপ্তি ভেসে চলেছে
ঝলকাচ্ছে সেটা
জানালার নীচে অতলস্পর্শী খাদ যেন কবর থেকে ফিরে এসেছে ফ্রাই ফিশ
কাক কাক আর কাক উঠে দাঁড়ায় বসে খলবল করে
ভোগ উন্মাদের মতো পিতৃপিতামহ নৈশ আহার ছাই রঙ
দেখুন কী বাহাদুর যেখানে খুশি অপ্রতিরোধ্য একরোখা
গৃহস্থালির কাজ নেই শুধু খুঁটে খুঁটে
মহাশয় ঠাট্টা করবেন না,
কাকেরা প্রারম্ভে আদর-টাদর কিছুই তো পায়নি,প্রণয়ীর চুমু
উদগ্র-আবেগ বেপরোয়া বউ
এই বুঝি ছোঁ-মেরে নেয় প্রক্ষিপ্ত ললাট
শকুনের থাবা গাংচিল শয়তানের আলখাল্লা বিছিয়ে
পৃথিবী মুখর হোক কা কা কা কা কা
ভীতিপ্রদ কিছুটা সময়
হাসপাতাল ধ্যানমগ্ন ভিলা জানালার পর্দা সৌখিন-রেস্তোরাঁ
শূন্য হয়ে দাঁড়িয়ে রইল এমন তো নয়
৬
মহৎ কল্পনা নিয়ে উড়ে চলল কাক,বিক্ষিপ্ত
বিষাদের পুরোনো বইগুলো
তাতে ছবি
আমার চিন্তার আগে কাক এসে বসেছে সাগ্রহে
মানুষের বাড়িতে কাক বস্তুত দ্য ইডিয়ট
তাদের যন্ত্রণার অশ্রু মন্দভাগ্য কি করে লুকিয়ে রাখবেন আপনি
পীড়া থেকে আসা ধুলো বিনির্মাণ করো হে মহাদেব মৃত্যুর পর ও যেন মানুষ হয়
ও যেন খেতে বসে ডিনার টেবিলে
আদব-কায়দা শেখে রঙ পায় যুগপৎ ভাবুক ও নিবিড়
৭
সানুপুঙ্খ আমি কিছুই বলিনি,কেবল কাকের ব্যথা সঞ্চারিত ইশারা-বাচনে
আড়চোখ আর
ঔদ্ধত্য তুলনায় কম
পাঠকবর্গ বুঝে দেখুন,ক্ষণিকের অন্তর্ধান যেন সেই ফুসমন্তর
সে বুঝি উদ্দীপিত হল সে বুঝি
পরম তৃপ্তি নিয়ে ঢেলে দেবে মাংসের রোস্ট প্রেতাত্মার মুখে
৮
কখনো কখনো কাক ডেকে তোলে প্রেতাত্মার দেহ
খামার বাড়িতে সে খুঁজে পায় রাংতার মোড়কে জড়ানো
ঝাড়া দিলে সোনার রেকাবি ঝন ঝন শব্দ হল খুব
গোটা দল ছুটে আসে কাকাকা কা কা কা কা কা কা
সারা ভারতবর্ষ ডেকে উঠল কাকা কাকা কাকা কাকা
কাকের কি বলিষ্ঠ চিৎকার সাদা হাড় অভিজাত ফুসফুস
উপস্থিতবুদ্ধির পালক বাতাসে ভাসছে যেন আমোদ বেড়েছে
তারও ঝাঁকড়া বুনো নিদ্রা আসে দুপুর গড়ালে,আহা আত্মা
ঝাপ দিল জলে আহা ইহলীলা চলো যাই জাহান্নামের খুপড়িতে
ঢুকে পড়ি,দেশ কাল নতুন বিছানা বালিশের কল্কা করা মুখ
তোমার পাপের ভাগ ভাগাভাগি হোক
৯
অনুশোচনার কুঠুরিতে কাক নেই
শুঁড়ির দোকানেও কাক যায়নি
চারদিকে দৃষ্টিপাত শুধু
আত্মার সদ্গতি হোক
চুল্লি থেকে সদ্য সেঁকা পিঠে
চাল-কলা
এই নাও বিগ্রহ
জীবনের গন্ডিতে তন্দ্রা এনে দেবে,এই নাও
মধুর সংকীর্ণ শিশি ।
নিজের নিজের মুখ হতভাগা মগডালে ঝুলন্ত, নিচে
জলরাশি আয়নার সমান,নেমে এলো মাথা উঁচিয়ে মেঘ
কাকের সজ্জিত খড়খড়ি
কাকের আত্মবিস্মৃত মন
অনাড়ম্বর
অনুভবযোগ্য বলে বেপরোয়া কাক
পথ দেখাচ্ছে পক্ককেশ পায়রার ঝুঁটি
১০
কাক কী স্লেজ-গাড়ি টানে!
টানেলের ভিতর টয়ট্রেনে কাফেটরিয়ায়?
আমগাছে হোস্টেল খুলেছে কাকেরা,বায়ুদেবতার ঘর শিবখোলা
শ্মশান মশান ভাটিখানা ছিলিমের দোকান
কাকের দেবতা যিশু
নির্জনতা তাকে কাবু করতে পারে না।
এবং একুশ