মঙ্গলবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

জয়া চৌধুরী



আয়না সখা
জয়া চৌধুরী



আমি বেশ ভেবে দেখেছি
আয়নার সঙ্গে আমার প্রাক্তন প্রেমিকের মত সম্পর্ক
যখনই ওর সামনে গেছি ও কেবলই 
আমার মন্দ গুলোই আঙুল তুলে দেখিয়েছে
ক্লাস থ্রি তে পড়বার সময় যে বার পাকানো গোঁফ 
এঁকে দিল বড়মামা দৌড়ে ওর কাছে গেলাম,
বুকের ভেতর ঢিপ ঢিপ সিরাজদৌল্লাকে চাক্ষুষ কেমন লাগবে না জানি !

ওমা, দেখি মাসীমণির শাড়িটাকে ধুতি করে পরা
কাজল পেনসিল দিয়ে গোঁফ আঁকা সেই আমিই দাঁড়িয়ে!
ক্লাস নাইনে প্রথম শাড়ি পরে আনন্দে ডগমগ
এক্কেবারে পাশের বাড়ির সুন্দরী বৌদি লাগছে বুঝি!
সামনে দাঁড়িয়ে সেম কেলেঙ্কারি।
মায়ের ঢলঢলে ব্লাউজ গায়ে শাড়ি পরা জবুথবু
ওই কার্টুনটা কে???

প্রথমবার প্রেমে পড়েই একদৌড়ে ছুট
কুছ কুছ হোতা হ্যায় ফুটে বেরোলো না কি 
যৌবনের ব্রণের মত। যা ভেবেছি ঠিক তাই।
লোকটা আমিই ছিলাম...রানী মুখার্জী নয়। তারপর
আমার ছেলের বাপ যখন নিজেও কারো ছেলে ছিল তখন 
যেদিন লাইব্রেরীতে কফি খাবার প্রস্তাব দিল, দিন এলে
আমিও খুবসে প্রেম করে বাড়ি ফিরে অনেকক্ষণ 
আঁতিপাঁতি করে মুখ দেখলাম। কই! প্রেমে পড়েছি
বোঝা যাচ্ছে নাতো! ধুস... তখন থেকেই জানি আয়নাটা
আমার প্রিয় ক্লাস মেটও যে সব বারেই ফার্স্ট গার্ল হয়ে
বসে থাকে আর আমার ফ্রাস্ট্রু এড়াতে 
স্রেফ এলেবেলেদের সঙ্গে মিশতে হয়। মাঝে সাঝে 
যে সব ঝুটঝামেলা হয়েছে জীবনে সেটা আমি স্নানের সময়
কল খুলেই সামলে নিয়েছি, আমার আয়না লাগেনি তাতে।

কিন্তু যেদিন দুপুরবেলা একলা ঘরে
আপন মনে ‘চন্দ্রা’-র পার্ট টা মুখস্ত করতে করতে
ভাবছি... ইস একবার ‘নন্দিনী’ টা পেলে না ফাটিয়ে দেবো।
দরজায় ঘন্টি বাজতেই খুলে দেখি পোস্টম্যান।
ভাবলাম হেমন্ত কাল তো আসেনি ... তবে পোস্টম্যান কেন?
সে আমায় হাতে ধরিয়ে দিল ছেলের বাপের একটা মুখবন্ধ নোটিশ।
খুলেই কিসব যেন পড়লাম... দৌড়ে
আমার শত্রুর কাছে গেলাম। বেরোতে হবে একটু পরেই
চুল আঁচড়ানো পাউডার দেওয়া বাকী... অথচ
কিছুতেই নিজেকে দেখতে পাচ্ছিলাম না। সব কেমন 
ধোঁয়া ধোঁয়া ।
চোখ ঘসলাম, আয়নাটাও পরনের জামা টা দিয়ে মুছলাম।
নাঃ। রাজ্যের মেঘের কুয়াশা যেন ভিড় করে আছে ওটায়।
একটা আরামের শ্বাস বেরোলো বুক থেকে।
যাক বাবা আয়নাটা প্রাক্তন নয় আমার বর্তমানেই প্রেমিক।
ভাগ্যিস গ্রীষ্ম দুপুরে মেঘ ডেকে আনল। 




  















এবং একুশ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন