বুধবার, ১ জুলাই, ২০১৫

সম্পাদকীয়



ষষ্ঠ সংখ্যার কাজ একটুও হয়নি। আজ একটা ছুটি পাওয়া গেছে। ঠিক করেছিলাম বেশীরভাগটাই সেরে রাখবো। কিন্তু দুপুর থেকেই আকাশটা মেঘলা। জানলার গরাদ পেরিয়ে আমগাছটার পাতাগুলোর ফাঁক দিয়ে মনটা বার বার ওলটপালট... এলোমেলো ছেঁড়া ছেঁড়া কতকগুলো মেঘ কেমন যেন দিশাহারা, কি যে করবে! যাবে, না থাকবে? এদিক যাবে, না সেদিক?  কিছুই কেমন ঠিক করতে পারছে না। দেখতে দেখতে বেলা বয়ে গেল...

বিকেলের দিকটায় আচমকা এক ঝলক উত্তাল হাওয়া আর একটা ঘন কালো মেঘ চারদিক আঁধার করে ধেয়ে এলো। তারপর মেঘটা নিজেরই ভার আর বইতে না পেরে বড় বড় ফোঁটায় ঝরে পড়তে থাকল অবিশ্রান্ত ধারায়। আর বসে থাকতে পারলাম না। বারান্দার দরজাটা খুলতেই মাটি ভেজা সোঁদা গন্ধ মেশা বৃষ্টির একটা প্রবল ঝাপটা আছড়ে পড়ে ভিজিয়ে দিল শরীর মনের অনেকখানি। ধড়াস করে উঠল বুকের ভেতরটা। এক ঝটকায় মনে পড়ে গেল বারো-তের বছর আগের সেই দিনটা।

কিংশুককে প্রথম দেখি বিমল বাবুর ক্লাসে। স্বভাবসিদ্ধ কমনীয় ভঙ্গীতে শ্রীকৃষ্ণকীর্তন বোঝানোর চেষ্টা করছেন বিমলবাবু, ছেলেমেয়েরা যে যার মত ব্যস্ত। হঠাৎ পিছন থেকে কেউ একজন গম্ভীর গমগমে গলায় বলে উঠল, কৃষ্ণ মোটেই ওই রকম ন্যাকা ন্যাকা লোক ছিলেন না!!!  মুহূর্তে সারা ক্লাস নিস্তব্ধ, বিমলবাবু উঠে বেরিয়ে গেলেন। দুবছরে আর কখনো আমাদের ক্লাস নেননি তিনি।

যেচেই আলাপ করলাম। শিলিগুড়িতে বাড়ী। নানা বিষয়ে অগাধ জ্ঞান। ওর কাছেই জানলাম, ওর দাদু ছিলেন সংস্কৃত পণ্ডিত। বাড়ীতে প্রায় পাঁচ হাজার বইয়ের লাইব্রেরী আছে। অচিরেই জমে উঠল বন্ধুত্ব। ক্লাসের পর রোজই  চলে আলোচনা। কোন দিন পূর্ণেন্দু, তো কোন দিন নৃসিংহ। কখনো শক্তি-সুনীল, কখনো বা সমরেশ-বুদ্ধদেব। যেদিন রবীন্দ্রনাথে ডুব দেয়, সেদিন আর ওকে খুঁজেই পাওয়া যায় না। আবার কোন কোন দিন বিংশ-একবিংশ শতাব্দীর ইংরাজী সাহিত্যে সাঁতরে বেড়ায় আপন মনে।

ওর কথা শুনতে ভাল লাগে আমার। চুপ করে শুনি, ও বলতে থাকে...কেমন একটা ঘোরের মধ্যে যেন। ক্লাসের পর রোজ বিকেলে। কোন দিন কলেজ স্কোয়ারে ওয়াই এম সি এ-র ক্যান্টিনের সামনের বেদীতে, কোন দিন বা হাঁটতে হাঁটতে সে...ই হেদুয়ার বেঞ্চে। কখনো একান্তই সেন্টিনারী বিল্ডিং-এর সিঁড়িতে। তবে বেশিরভাগ দিনই দ্বারভাঙ্গার ওপর তলার গ্যালারীতে। ঘন্টার পর ঘণ্টা বসে বসে তন্ময় হয়ে শুনি ওর কথা, যতক্ষণ না শশাঙ্কদা এসে তাড়া লাগায় দরজা বন্ধ করার জন্য।

সেদিনও অমন গ্যালারীর বেঞ্চে পা গুটিয়ে বসে ডুব দিয়েছি মুগ্ধতায়। আজ ও পড়েছে মহাভারত নিয়ে, শান্তনু-দেবব্রত-সত্যবতী... তলিয়েই গেছে বুঝি নীল যমুনার কালো জলে। হঠাৎ চুপ করে গেলো... চারিদিক নিস্তব্ধ। তারপর অকস্মাৎ স্বপ্নোত্থিতের মতো ঘোর লাগা গলায় বলে উঠল, জানো তো, আমি এই যোজনগন্ধাকে চিনি। আবার চুপচাপ চারদিক। কোনও শব্দ নেই... এক মিনিট, দু মিনিট, পাঁচ মিনিট...ঠিক জানি না কতোক্ষণ। শশাঙ্কদা এসে তাড়া লাগালো, সেকি, যাও নি এখনো? পালাও পালাও...বৃষ্টি আসছে খুব জোর।

দৌড়োতে দৌড়োতে বেরিয়ে এলাম। আকাশটা এক্কেবারে  মিশমিশে কালো।  ক্যাম্পাস প্রায় খালি। রাস্তায় এসে দেখি উল্টো দিক থেকে ঘটাং ঘটাং করে আসছে একটা পাঁচ নম্বর ট্রাম। এক ছুটে উঠে পড়লাম ট্রামটায়, এসপ্ল্যানেড থেকে মেট্রো নিয়ে নেব। ট্রামটা সবে ওয়েলিংটন দিয়ে ঘুরেছে, শুরু হল দুর্দান্ত বৃষ্টি। চারিদিক ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধে ম’ম’ করতে লাগল। চোখ বন্ধ করে এক বুক গন্ধ নিয়ে চোখ খুলতেই দেখি, স্নিগ্ধ স্মিত চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।

এসপ্ল্যানেডে নেমে অনাদি কেবিনের শেড পর্যন্ত আসতে আসতে প্রায় ভিজেই গেলাম। সরু শেডের নিচে তখন অনেক ভীড়। ঘেঁষাঘেঁষি ঠেলাঠেলি করে বৃষ্টি থেকে বাঁচার চেষ্টা প্রায় বৃথা। ততক্ষণে আরো ভিজে একশা, শীত শীত করছে। ঠেলেঠুলে আরো একটু ভেতরে যাওয়া যায় কিনা ভাবছি, হঠাৎ পাশ থেকে বৃষ্টি আড়াল করে আমার সামনে এসে দাঁড়াল কিংশুক। আমার নাকে তখন বৃষ্টি ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ ছাপিয়ে ডেনিম ডিও-র ভেজা ভেজা গন্ধ। আর কানের কাছে গুনগুন গুনগুন... বিবাহিত রমণীর কত যে ঝঞ্ঝাট থাকে... বিবাহিত রমণীর কত যে ...

এর পর কেটে গেছে আরো দুটো বছর। হঠাৎ একদিন একটা চিঠি এল আমার নামে। আশ্চর্য হলাম রীতিমতো। আজকাল আবার চিঠি কে লেখে? কোথা থেকে এসেছে বুঝলাম না। প্রেরকের নাম নেই কোথাও, পোস্টাল স্ট্যাম্পটাও কালি ধেবড়ে পড়ার অযোগ্য। নীল রঙের মুখবন্ধ খাম, খুলেই চমকে উঠলাম – নীল রঙেরই কাগজে অসাধারণ হাতের লেখা –

কৃষ্ণচূড়া গাছটার ডালে
একটা নাম না জানা পাখী
কালো নীল উজ্জ্বল খয়েরী
আজকাল প্রায়ই আসে দুপুরে
ঠিক যখন আর লেখায়
মন বসেনা
কিসের যেন একটা প্রত্যাশায়
              অন্যমনস্কতা
কার কথা যেন
            বার বার মনে পড়ে
ঝিরঝিরে পাতাগুলোর ফাঁক দিয়ে
মন আকাশচারী...
ও এলে কেমন যেন
প্রথম বৃষ্টিতে ভেজা মাটির
       সোঁদা সোঁদা গন্ধ পাই
আজ একটা নাম রেখেছি ওর -
              যোজনগন্ধা

শরীরটা কেমন অবশ হয়ে গেল। কোথাও কোনো সম্বোধন নেই, নাম নেই...কে লিখেছে এ চিঠি? কিংশুক? আমার বাড়ীর ঠিকানা পেলো কোথায়? কেন লিখল এমন চিঠি? বাড়ীর লোক যদি জানতে চায়, কার চিঠি? কি লিখেছে? কোথায় থাকে এখন? শিলিগুড়িতেই থাকে এখনও? দুপুর বেলা বসে বসে কি লেখে? রোজ লেখে? কি করে এখন ও? সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে... কানের কাছে আবার সেই গুনগুন গুনগুন... বিবাহিত রমণীর কত যে ঝঞ্ঝাট থাকে... বিবাহিত রমণীর কত যে ...

অনেক দিন পর আবার মনে পড়ে গেল সব কথা। আজ আর কোনো কাজ হবে না। আপনারা কবিতা পড়ুন, আর আমায় আজ একটু ছুটি দিন, প্লিজ...   


সুস্মিতা বসু সিং






এবং একুশ 

স্বপন দেব

কবিতার জন্ম
স্বপন দেব




অবসন্ন বিষণ্ণ মনের গহনে
শব্দ তো আসেনা আর
তৃণলিপ্ত শিশিরের বনে ধুতে মুখ
সকাল বেলায়।
অথচ, ফুটন্ত দুধের মত আবেগ উথলালে
নতুন শব্দেরা আসে হরিণীর মত
ধূমগন্ধী সন্ধ্যার এলোচুলে
কাঁকই ফেরাতে।
অন্ধকার আর একটু গুঢ় হলে
করঞ্জের অন্ধ বন জ্বলে আকাঙ্খায়
তখন ই এসে যায় পাগল শব্দেরা
ঝড় হয়ে বোঁটা থেকে ফল ছিঁড়ে নিতে,
আদরে সোহাগে রক্তাক্ত করে দিতে
মাতাল হৃদয়।
তখন ই আধো ঘুমঘোরে হেমন্তের
শিশিরের মত গুনগুন ঝরে পড়ে
মুগ্ধবৎ ভৈঁরোর আলাপ
পাখ-পাখালির কলরবে জেগে উঠে দেখি

ভ্রু-সন্ধিতে সূর্য নিয়ে কবিতা এসেছে !!













এবং একুশ

দেবাশীষ মজুমদার


এবং প্রহেলিকা
মূল কবিতাঃ পাবলো নেরুদা, Enigma with Flower
বাংলায়নঃ দেবাশীষ মজুমদার



শেখা হয়ে ওঠেনি আজো
কি করে সেভাবে জেগে উঠতে হয়, স্বেচ্ছায়,
শ্বেতশুভ্র অবয়বে পৃথিবীর চিরন্তন স্থিরতা
কিংবা স্থবিরতা ছিঁড়ে, বদলে ফেলবার কাঙ্ক্ষায়,
তেমন মাহেন্দ্রক্ষণে, মাটির গাঢ় অন্ধকারকে তুড়ি মেরে,
কুৎসিত রাত্তিরের ঘৃণ্য কালোকে হারিয়ে জেগে ওঠে
বিস্মিত অঙ্কুর-
উড়িয়ে দেয় অনাবৃত সৌন্দর্যের বিজয় কেতন, অমল ধবল
পদ্ম যেমন।
তার কাছে কিছুই শিখিনি বলেই কি
বিজয়
তুমি এতোটা দেরীতে এলে!

Enigma with Flower
Pablo Neruda

Victory. It has come late, I had not learnt
how to arrive, like the lily, at will,
the white figure, that pierces
the motionless eternity of earth,
pushing at clear, faint, form,
till the hour strikes: that clay,
with a white ray, or a spur of milk.
Shedding of clothing, the thick darkness of soil,
on whose cliff the fair flower advances,
till the flag of its whiteness
defeats the contemptible deep of night,
and, from the motion of light,

spills itself in astonished seed.

















এবং একুশ

মধুছন্দা মিত্র ঘোষ

নাব্যতা
মধুছন্দা মিত্র ঘোষ



অসম্ভব এক নদীকোলাহল
আমি ঢেকে নিচ্ছি মায়াকাজলে

অজস্র বৃষ্টিবিকেল চেয়ে
কৌশলে ভাসিয়ে রেখেছি
নাব্য কথা মালা

সমস্তটাই প্রাতিভাষিক
যেভাবে পানসি-তে ভেসে
খুঁজে চলি অচেনা বন্দর

অথৈ নদীর সঙ্গোপনে
কাগজের নৌকা গুলো
এল বিকেল কুড়োতে


এ নদী নাব্যতা জানে খুব...



















এবং একুশ

অঞ্জন বর্মণ

ফিরে আসা যায়?
অঞ্জন বর্মণ



কল্পনার রঙে রাঙিয়ে দেখেছি বার বার
শব্দ হয়ে মিশে গেছো মাথার ভিতরে,
অবলীন চেতনা বা ঘুম ফোটা চোখে
নতশিরে আলাপন গোপনে গভীরে।

হাওয়ায় এঁকেছি যত তোমার ওই রেখা
ট্রেনে, বাসে রাস্তায়, ব্যস্ত রেস্তোরাঁয়,
মেঘ হয়ে মিশে গেছো আকাশের বুকে
স্বপ্ন কিংবা জাগরণে, ঘন নিস্তব্ধতায়।

তবু নিয়ে রংতুলি ক্যানভাস হাতে
কাঁপা কাঁপা মনরেখা এঁকেছি যে কত,
অনর্থক বৃষ্টি বা ছন্দবদ্ধতায়
সীমাহীন সীমানাকে বেঁধেছি আনত।

ফিরে আসা যায় কিনা স্বপ্নহীনতায়
ফোঁটা ফোঁটা শিশিরের ঘ্রাণ মেখে বুকে,
ভাবোনি কি একপলক নীরবতা ছুঁয়ে

কখনো নীলিমা আজ গভীর অসুখে?

















এবং একুশ

বিদিশা সরকার

তুই
বিদিশা সরকার
 



একটা লাইন বলবি? বৃষ্টি নিয়ে?
 
কানেকশনের জন্য একটা তুই জরুরী
 
একটু আগে গোলাপ বলে ডাকল কে যে!
 
অনেকটা ঠিক তোরই মত
 
মিৎসুবিশি
জাগছে পাহাড় ঘুমিয়ে পরছে 
জাগছে আবার
 
আমিই যেমন থামাই গাড়ি
 
আমিই গিয়ার --
 
খাদের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা শুভমিতার
 
গান শোনাবি
 
কয়েকটা লাইন সুর বসিয়ে
আসছে না রে একটা বিন্দু, একটা স্বর্গ 
ভিজছি এতো
 
যেমন তুই ও চেয়েছিলি
 
ভাগাভাগির চায়ের মধ্যে উষ্ণতাকে
 
জুড়িয়ে দিচ্ছে, একটা দরজা
 
হাজার চাবি
একটা ফোকাস, একটা হর্নে ভিজছে না তো 
জানলাগুলো খুলছে শুধু
 
ফিরলি ঘরে

তবুও যদি সময় করে একটু পারিস 
একটা ভাঙা মালগাড়ির-ই লাইন নাহয়
...















এবং একুশ

পারমিতা চ্যাটার্জী

তোমায় মন পড়ে
পারমিতা চ্যাটার্জী





লুকিয়ে আছ হিয়ার মাঝে
তোমায় শুধু মনে পড়ে
এমন বর্ষা রাতে;
মন হেঁটে চলে
শৈশবের ছায়া ভরা আঙিনা দিয়ে,
কত কথা আর কবিতা গাথায়
কেটেছিল সেই দিন,
সবই আছে লেখা অন্তরে,
আজ শুধু তোমায় মনে পড়ে।
ঝিরঝিরঝির ঝরেছিল বৃষ্টি
সেদিনও সন্ধ্যাবেলায়,
বর্ষারাতের কবিতায় গানে
মেতেছিল সেই দিন,
সবই আজ শুধু-- ইতিহাস;
আমার যে শুধু তোমায় পড়ে মনে,
আষাঢ় মাসের বর্ষার অঙ্গনে।।
আজ তুমি নেই কাছে,
এমন বাদল রাতে,
আছ অন্তর গভীরে
নীরবতার এক কোণে;
গোপনে অশ্রুজল----
আজও খুঁজে চলে তোমায়,
বদল বরিষণে,
তোমায় মনে পড়ে।।

















এবং একুশ

পিয়ালী বসু

আগল
পিয়ালী বসু




রাতের ভেজানো দরজায় 
আটকে ছিল
 
না বলা কথাটা ...
তুমি যেদিন অতর্কিতে এলে
 
রোদ্দুরে ভিজে
 
সেদিন
রাতের ভেজানো দরজার
 
আগলটা শেষমেশ খুললো
 
It was night when the sky was dark blue
 
And you came in with a rugged look
 
আসলে অবাধ্য হৃদয় এভাবেই হরণ হয় !












এবং একুশ

ডঃ সুজাতা ঘোষ


চলো বেড়িয়ে আসি
ডঃ সুজাতা ঘোষ




রোজ মনে হয় বেড়িয়ে আসি
যেখানে শুধু আমি আর তুমি
আর আমার প্রিয় নারী প্রকৃতি

তাঁর খামখেয়ালী কাল বৈশাখী, রাগের গর্জনে বজ্রপাত
অভিমানে বৃষ্টি, আনন্দে মৃদু বাতাস
সোহাগে লাল হয়ে ওঠা  গোধূলী আকাশ,
মুহূর্তের ক্রোধে সুনামী আর ভূকম্পন,
মিলনে বুনোফুল আর শান্তিতে কাশফুলের সোহাগ
বাতাসের সাথে দুলে দুলে ...ঢেউ তুলে।

রোজই মন বলে, চলো বেড়িয়ে আসি।
মন বোঝে আমি আর প্রকৃতি
এই দুই নারী একে অপরের মনের খুব কাছাকাছি।

বদ্ধ সমাজের গণ্ডির নিয়মে প্রতিনিয়ত
সুনামী হয় আমার মনের গভীর তরঙ্গে।
আকাশ তাই হাত বাড়ায় সন্ধের সোনালী
আলো হয়ে আমার অন্দরমহলে...

বলে, চলো বেড়িয়ে আসি...মনে মনে।।


















এবং একুশ

দর্শনা বসু

তবুও অমৃত
দর্শনা বসু



পঞ্চদশী ওই চাঁদের মখমলি শয্যা
মার নয়।
মজ্জার পরাভূত পরিধিতে
এক অলীক মোহ বরণ,
তবু কেন মায়া হয়ে জড়িয়ে থাকে।

রাত্রি ও দিনের মেদুর সন্ধিক্ষণে
শেষ হলে শব্দের তর্পণ –
অপরূপ দুরে লোয়,
বিন্দু বিন্দু অমৃতেরা
উদ্যত বিষের ফলায়
এক একটি শ্বেতচাঁপার হাসি
হয়ে ফুটে ওঠে-
সুবাসিত করে মার চেতনার

প্রতিটি তোরণ।















এবং একুশ

অনুপম দাশ শর্মা

বরং তুলো হও...
অনুপম দাশ শর্মা





আ্যতো মায়ায় ঢেকে থেকো না যাতে তোমার ছায়া
ধেয়ে আসা শুভেচ্ছার আলো'দের
মিশিয়ে দেয় ধুলোয়
অহংকার থাকুক কালির দোয়াতে
যেখানে অনবরত ঘটে চলে ক্ষিপ্ত মনের সাফাই পর্ব

এক একটা শব্দে মাথা তোলে
ষড়রিপুর প্রতিষেধক, নজর ফেলে
সম্মতি দিও প্রত্যেক স্বাধীন মতকে

ফি-বছর দেওয়ালিতে দেখো না
মোমবাতির বিসর্জন?
বরং এবার গলতে শেখো
ঝর্ণার মতো, বৃষ্টির মতো, অজস্র ফুল-পাপড়ির মতো

একদিন ঠিক দেখব....
রোদ্দুরের গায়ে লেগে থাকা আমিত্বের খোসা
ক্রমশ ঝুরঝুর করে খসে পড়ছে
তখন তুমি শরতের তুলো হয়ে গেছো















এবং একুশ

সেখ সাদ্দাম হুসেন

মুখোমুখি : কবি ও পাঠক
সেখ সাদ্দাম হুসেন



মুখের মাপ রেখে যাও
খাবারের মজলিস থেকে ডুগরে ফেরা
পাঠক;
কবিদেরও অন্ন লাগে
পিঠ-চাপড়ানি আর পকেটের এত যন্ত্রনা
হাত ভরতে পারছি না
সৌজন্যের মৌমাছি চাষ কমিয়ে দিচ্ছি
আজকাল। সমপ্রেমে
আমরা মাতাল ফলাই। আর
কবিতা থেকে অ্যালকোহল চুষতে চুষতে

তেলির-ডাঙায় ফেরি করি উভয়মুখী গান।













এবং একুশ

মাহমুদ নজির

নিরুদ্দেশ
মাহমুদ নজির



অতিবৃষ্টি, ঝড়ঝাপটা, দূরন্ত ঘূর্ণি
আর নদী তীর বেয়ে ফেঁপে ওঠা
জলের নাচন এইসব দেখতে দেখতে
আমিও ভেসে চলছি থৈথৈ
 
আষাঢ়ের ধারাজলে...মন বিমোহিত !
 
সাধের নাও সাজিয়েছি এবেলায়,
 
তোমাকে নিয়ে যাবো সুজন
 
বাদিয়ার ঘাটে। আলতা, চুরি,
চোখের কাজল, চুলের ফিতা,
 
মেসি, মাজন সব কিনে নেবো
 
ঘুরে ঘুরে। বৃষ্টি আসুক নেমে, প্রবল বৈঠায় ধার টেনে টেনে ছলছল হারিয়ে যাবো দুজন নিরুদ্দেশ...
এবং একুশ

তাপসকিরণ রায়

মন
তাপসকিরণ রায়


মন,
খোলসের পরতে পরতে,
খুঁজে পাবার সময়গুলি শুধু ব্যর্থতার
শেষ নেই কোথাও--
অপেক্ষা,
তন্দ্রাগুলি চৈতন্য উৎসে নড়ে ওঠে--
দরজা খোলার প্রবণতা,
নতুন মুখের বাকলগুলি অকস্মাৎ
ঠোঁট ছোঁয়া নেমে আসে জলের নিয়মে
কিছু কিছু অধোগামী চরিত্রের দিকে তাকিয়ে থাকা,
ওপরে, ঢাকা মুখের আদল ফাঁকে
উঁকি দিয়ে কতবার চমকে উঠেছ জীবন!
হঠাৎ নদী আমার বুকে, বুকের নদীতে আমার ঘরের ভিত,
কার ছত্রবাস ধ্বসে যায়! কিছু অনুসন্ধিৎসা মনের তাপ,

খুঁজে ফেরে মাঝের হারিয়ে যাওয়া আসপাশ।









এবং একুশ