বুধবার, ১ জুন, ২০১৬

সম্পাদকীয়






প্রকাশিত হলো  'এবং একুশ' জুন, '১৬ সংখ্যা

এই সংখ্যার নির্বাচিত কবিরা হলেন -


স্বপন দেব
ডঃ সুজাতা ঘোষ
প্রণব বসুরায়
শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
তহমিনা সাম্মি
রণদেব দাশগুপ্ত
সায়ন্তনী বসু চৌধুরী

সায়ন্ন্যা
চয়ন ভৌমিক
অদিতি চক্রবর্তী
অনুপ দেবনাথ
অ্যাঞ্জেলিকা ভট্টাচার্য
পলাশ কুমার পাল
পিনাকী মণ্ডল
মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম
সুরজিৎ চক্রবর্ত্তী
মনোজিৎকুমার দাস
দীপ রায়
সীমান্ত হেলাল
অরূপ গোস্বামী
জাফর পাঠান








এবং একুশ

স্বপন দেব




মহুলডিঙ্গার বনে…
স্বপন দেব



আবার চলে যাব মহুয়ার দেশে
আবার চলে যাব মেঘলা দিনের গন্ধে
হাঁসুয়ার মত তীব্র হাওয়া এসে
নক্ষত্রের নকাব ওড়াবে, হে অরণ্য
কথা বলো কথা বলো কথা বলো, বলে
ভ্রূ-সন্ধিতে লাল সূর্য, ডেকেছিল উপত্যকাকে ।
কেকারবে দীর্ণ করে অরণ্যের পীনদ্ধ স্তব্ধতা—
মহুলডিঙ্গার বনে এসো প্রিয় সখি, কথা হবে ।
দূরে কোথাও এখন ছুটে যাচ্ছে সম্বর হরিণ
অথবা সন্ধ্যের পর প্রকৃতিতে প্রকৃত নি:শ্বাস
এলায়িত চুলে গহন হিম রাত্রি
ছুটে চলেছে জীবন ...
ভীষণ ভীষণ জীবন ...
















এবং একুশ

ডঃ সুজাতা ঘোষ


অনেক নাজানা
ডঃ সুজাতা ঘোষ



মুসলিম ধর্মের আর একটা কি যেন আছে রে?
কি আছে?
আরে কি একটা যেন বলে............
জানি না।
ওহো, খ্রিষ্টান।
ওফ মা, ওটা অন্য একটা ধর্ম।


আমার মা অনেক না জানা সঙ্গে নিয়েই
জীবনের তিন – চতুর্থাংশ কাটিয়ে দিয়েছে বিনা দ্বিধায়।
তাহলে দ্বিধাটা কার?
হয়তো আমার, অনেক বেশী শিখে ফেলেছি
তাই ভুল কানে এলেই অস্বস্তি হয়।
অথচ, আমার মা দিব্যি ভাত – কচুবাটা রান্না করে
সময়মত ঘরের সকলের মুখে খাবার তুলে দিয়ে
দিনের শেষে ঠাকুরকে প্রণাম করে
বিছানায় বুকের কাছে হাত জড়ো করে ঘুমিয়ে পড়ে।

আমার রাত শেষ হয় না কেন চোখ বুজে?
কেন এপাশ – ওপাশ করতে হয় বালিশ আঁকড়ে?
কেন মাসের শেষে সমস্ত রিপোর্ট হাই অ্যালার্ট জারি করে?
আজকাল ওষুধেও তো কাজ হচ্ছে না ভালো।
তাহলে কি মায়ের অজানার মধ্যেই লুকিয়ে আছে অনেক সুখ?

সোজা সরল জীবনগুলো জলের ছলাৎ ছলাৎ শব্দের সাথে
বাঁধা পেতে পেতে চড়ায় গিয়ে মিলিত হচ্ছে ক্রমশ।
আচ্ছা, চড়ার নীচে কি জল আছে?
আর সেই লাল চোখওয়ালা পাখিটা?
মা কোলে করে ভাত খাওয়াতে খাওয়াতে বলত, ও সাপ খুঁজছে।
আচ্ছা, আমরা সবাই কি সাপ খুঁজছি?
কি বিষধর!
সাপ না আমরা?
মাগো, তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছ?
আমার চোখে ঘুম আসে না কেন?

সকালের সূর্যটা যে বহুদূর।
তুমি কি একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দেবে
কতদিন ঘুমাই নি ভালো করে।
আমার জানা পৃথিবীটাও আজ বড়ো অজানা
তুমি কি জানো মা, কোন দিকে সূর্য উঠবে?
মাঠের ওপারটা লালচে হচ্ছে বড়।
আমি এবার ঘুমাব।।







এবং একুশ

প্রণব বসুরায়



মৃত
প্রণব বসুরায়




এ শহর আজ মৃত, জমানো বারুদ ভিজে
পাহাড় গুটিয়ে রাখি, নদী চলে যায় নিজে
#
নদী তো যাবেই নিজের গমন পথে
কেউ কি আছেই যাবে সে ভগ্ন রথে!
#
মরেছে শহর, মারা গেছে পাখি, আমিও হয়ত বা
আমার পিন্ড কাক খেয়ে যাবে, ডাকো তাকে, খা খা...









এবং একুশ

শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়





স্বপ্ন বিলাস
শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়





স্বপ্নকে তুমি ভালবাসো? বল সত্যি কথা
স্বপ্ন তো কারও ক্রীতদাস নয়, সে নদী বহতা
স্বপ্নই শুধু জানে কত সুখ স্বপ্ন দেখায়
তোমার তো তার হাত ধরবার নেই কোনো দায়
তবুও স্বপ্ন চোখের তারায় কবিতার মত
শব্দের জালে আবডালে রাখে গোপন ক্ষত
স্বপ্নের ঘরে প্রজাপতি ওড়ে এবেলা ওবেলা
স্বপ্নের রঙে সাজাই আসলে ঠিক হোরিখেলা
দিনগোনা কাকে বলে সে খবর স্বপ্নই রাখে
রাতজাগাপাখী ডাক দিয়ে যায় তোমাকে আমাকে
স্বপ্নপূরণ, সে তো শুধু এক অলীক মায়া
চিরদিন এই দোটানায় মরে ছায়া ও কায়া
স্বপ্ন আসলে তোমার আমার বাঁচার রসদ
ছুঁলেই জীবন উড্ডীন ডানা, সেই সম্পদ
কেউ জানে তার সাথে পথচলা, কেউ ছেড়ে যায়
অলীক স্বপ্নে মাতলে, নিখাদ স্বপ্ন হারায়।













এবং একুশ

তহমিনা সাম্মি



আজ আবার রাধাচূড়ার নিচে
তহমিনা সাম্মি




তখন আমি অল্প বয়সী মেয়ে
সম্ভবত নারী নই তখনো
সে কলেজে পড়ুয়া দামড়া ছেলে
একদিন কাছে এসে চুপিচুপি বললে
'এই, আমার বউ হবে'?
আমি তাজ্জব বনে যাই,
একটা মেয়ের সামনে কেউ এমন কথা বলে?
আমি রাগে গরগর চণ্ডী
হাতের মুষ্ঠি দিয়ে রামধোলাই



এরপর... সে বছরই গ্রীষ্মের কোন এক বাদলা দিনে
বৈশাখী বৃষ্টির পর স্কুল থেকে ফেরার পথে
ছেলেটি দাড়িয়ে রাধাচূড়া গাছটার নিচে
দু'হাত ভর্তি লাল-হলুদের সমারোহ
আমাকে খুব করে ডেকে বললে,
'অনেক কষ্ট করে এগুলো পেরেছি এনেছি, নেবে?
না নিলেও রাগকরবো না, কারণ, আমি আজ ভীষণ খুশি
শোনো, আজ তোমাকে একটা গোপন কথা বলি,
আমি শুনেছি, রাধাচূড়া আর কৃষ্ণচূড়া গাছের মাঝখানটায় দাড়িয়ে
যদি কেউ তার ভালোবাসার মানুষকে চায়, তবে সে তাকে নিশ্চিত পায়?
তুমি জানো আমি কাকে চেয়েছি'?

আমি দু'চোখ ভর্তি প্রশ্ন নিয়ে তাকাতেই বললে,
'তোমাকে
তোমাকে চেয়েছি
দেখো একদিন তুমি আমার হবেই'।

একথা বলেই একরাশ রাঁধা-কৃষ্ণ উড়িয়ে দিলে দখিনা হাওয়ায়
বললে, 'জানো? রাঁধা-কৃষ্ণ কে ছিলো!'

আমার কি জানি কি হলো...
আমি দৌড়, ভোঁ... দৌড়...

মাইরি বলছি, সেদিন সারারাত ঘুমাইনি
এক মুহুর্তও এক করিনি দু'চোখের পাতা
সত্যিই কি আমি অই ছেলেটার হবো!
দেখতে নেহাত মন্দ নয়, কিন্ত
কেমন জেনো, একটু খানি পাগল পাগল
ছন্ন ছাড়া ভাব
নেই লোকলজ্জার ভয়
শাসন বারণ কোনোটাতেই রুখে না তাকে
মেধা নেহাত মন্দ নয়, পড়াশুনা করে নাকি ঠিক করে!
নাকটা লম্বা আছে, ঘ্রাণশক্তিও প্রখর
নইলে, আমার গন্ধ শুকে ছুটে আসে কেমন করে?

গল্প যদি সত্যি হয়! সত্যি যদি হয়?
ধুর, এমনটা আবার হয় নাকি?
যদি হয়!
বুকে দুরু দুরু ভয়!
...............

ক'দিন পর আবার সে দাড়িয়ে অই রাধাচূড়ার নিচে
ছলছল চোখ যেনো বর্ষার নদী
উছলে পরবে এক্ষুনি
ম্লান স্বরে আমাকে ডেকে বললে,
'আমি কাল চলে যাচ্ছি, অনেক দূরে
মহাপতঙ্গে চরে উড়ে যাবো
ভিন দেশে
তুমি আমার অপেক্ষা করবে?
না করলেও ক্ষতি নেই, কারণ আমি জানি তুমি আমারই হবে
সেদিন স্বপ্নে রাঁধা-কৃষ্ণ যুগলে এসে আমাকে বলে গেছে
ফিরে এসে তোমাকে রাধা-কৃষ্ণর গল্প শোনাবো'

এই বলে একগুচ্ছ হলুদ রাধাচূড়া আমার হাতে ধরিয়ে দিইয়েই
মিলিয়ে গেলো, মিলিয়ে গেলো দূরে, বহু দূরে।

এরপর বারবার বহুবার এসে দাড়িয়েছি
এই রাধা-কৃষ্ণর মাঝখানটাতে
তারপর... একদিন আমিও চলে গেছি
অনেক অচেনা পথ মাড়িয়ে
১৩ বছর পর... আজ আবার এই চেনা পথে
একরাশ লাল-হলুদ ফুল হাতে
বৈশাখী বৃষ্টি জলে ভিজতে ভিজতে উর্ধ্বপানে চেয়ে দেখি
আমি দাড়িয়ে রাঁধাচূড়া গাছটার নিচে।
উপরে পতঙ্গ, মহাপতঙ্গ ওড়ে।

















এবং একুশ

রণদেব দাশগুপ্ত



যদি একটু 
রণদেব দাশগুপ্ত


যদি একটু লিখি এই নড়বড়ে সেতুর কাহিনি,
যদি একটু লিখি এই ফোঁটা ফোঁটা রোদের চঞ্চল,
যদি একটু লিখি এই বৃষ্টিহীন মেঘের আলাপ-
তবে কি পৃষ্ঠা জুড়ে
ফুটে উঠবে তোমার চাওয়াটি ?


যত খুঁটিনাটি
সোহাগী প্রকল্পে ছিল
রামধনু নারীটির মুখে
তাকে তো কবিতা বলে, নাকি ?

হীরামন পাখি
যতই রূপকথা দিক
আমাদের পথের বিরাগে
সেইসব জীবনের ঝুলি ঝেড়ে
মায়াময় মার্বেলের সাদা-
আমি তার নাম রাখি
জ্যোতির্ময় হাসি ;
এইটুকু যদি লিখে রাখি ?













এবং একুশ

সায়ন্তনী বসু চৌধুরী



ছাপ
সায়ন্তনী বসু চৌধুরী


সিঁড়িগুলো ঠিক পেরোব......
কিন্তু পায়ে পায়ে
ওৎপাতা ফণা; তাই
কালোটা একটু বাড়তেই
অামি খপ করে পেড়ে এনেছি
গোটা চাঁদ.......
অামি সাহস করে
স্তন ঢেকেছি সাদা
অালোয়ানে.....
দাগ লাগাবি ?
অায় এক সমুদ্র
বিষাক্ত লাল অার শান্ দেওয়া
কুঠার নিয়ে ......
হারের ভয় তো নেই !
রক্ত শুকোলেই কালশিটে;
মুছলেও যাবে না |
মরি যদি ;ছাপই জেগে থাকবে
সিঁড়িতে....... রক্ত অার পায়ের ........













এবং একুশ

সায়ন্ন্যা



শীর্ষক বিহীন 
সায়ন্ন্যা


শোন হৃদয় ; আমি জানি কতো অসংখ্যবার কথা খুঁজেছ তুমি . কতো সহস্রাব্দ শুধু হাতড়ে বেরিয়েছ উপযুক্ত শব্দসাধন . তোমার প্রতিটি অন্বেষণ প্রেম বলে গেছে . বলে গেছে ভালবাসো . . জড়িবুড়ি করে আঁকড়ে ধরো . . . ছুঁয়ে ছুঁয়ে দাও সওব টুকু. . . . .
- তোমায় খুঁজছি . . কতকাল খুঁজছি , জানতে পারোনি বুঝি?
- খুঁজবে কেন ? ভেতর বার সবটা জুড়েই . . .
- কই আর তেমন করে ?
- তবে কেমন করে চাও ?
- প্রথমবার মা শেখাতো কেমন করে " অ " এর গলা টানতে হয় ! আমি পারতাম না . . . বিলকুল পারতামনা . . . গোল্লা মতো পাকিয়ে রেখে দিতাম অধুরা . . . মা বললেন !
- কি বললেন ?
- বললেন ভালবাসার জনটিকে বাঁকা কাজল দিতে নেই বাবা . গোল্লা পাকিয়ে সুন্দর করে গলাটা টানো . . যেন সুর ফুটে ওঠে ঠিক ঠিক করে . সেই দিন বুঝলাম .
- বুঝলে ? কি ? কেমন গো ?
- বুঝলাম , সমস্ত অক্ষরের বুকে সুর থাকে .
- যেমন ? শুনি ?
- যেমন ধরো . . . এই যে চলছে বসন্ত . . . ওই বাঁ দিকের ন্যাড়া গাছটা দেখো . . . দেখলে ? . . . দেখলে কেমন নবীন পাতা . . শিশু শিশু হাত বাড়িয়ে ধরেছে . . অথবা একটা রাধাচূড়া ফুলই যদি ধরো . . . বুঝতে পারছনা . . . সর্বোত্কৃষ্ট প্রেমের রাগ বাজছে নিরন্তর !
- বুঝলাম . . কিন্ত ! খুঁজছিলে কেন ? নতুন করে কেন ?
- খুঁজতে হয় গো ! তুমি বুঝবে না . এক্ একটা কথা , শব্দ , অক্ষর অনেক যন্ত্রণা দেয় . . . খানিক ধরো প্রসব বেদনা . . বেদনার জোর তেমনটি না হলে আর প্রসব হয় কেমনে ? . . . কিছু বলতে পারলে আরাম . . ভীষণ আরাম . . . মেজাজ হাল্কা . . রাতে ঘুম ভালো . . কিন্ত জোর আসছে না . . . তুমি না থাকলে যে বোবা কালা মন . . . সাড়া শব্দ নেই . . . মড়া হয়ে বসে থাকি সারারাত !
- বুঝলাম ! তবে শুধু নিজের কথা কইতেই দরকার আমায় ! আর কিছু নয় ?
- এতো অভিমান তোমার ? এতো ভালোবাসো আঁকড়ে থাকতে ?
- বাসি ! বাসিই তো !
- তবে শোন . . . সেই জন্মের পরপর যখন কথা কইতে পারতামনা . . . মা চুমো খাচ্ছেন . . . আমি বোবা . . বাবা স্নেহে কোলে করছেন . . বলতে পারছিনা কিছুই . . . খেতে ইচ্ছে করছেনা . . না বলবো ; ভাষা নেই . . . খেলতে খেলতে চোট পেয়েছি . . কাঁদছি আকুল . . কোথায় লেগেছে কেমনে জানাবো ?
- বেশ জানো ভুলিয়ে দিতে ! !
- সে আর হতো কি ? তুমি না থাকলে ? বিদেশ বিভুঁইয়ে তোমায় পাইনে. . . সারাবেলা মন আনচান . . . কখন যাই তোমার কাছে . . . কখন হয় প্রাণের আরাম !
- কেবল নিজের দরকার ! আর আমার বেলা ?
- তোমার বেলা জান কবুল ! মরতে রাজি . . . ওদের মতো নির্ভয়ে গুলি রাখবো বুকে . . . তোমার জন্যে সাত সমুদ্র পার দিতে পারি . . তোমার জন্যে অনশন করবো এক্ জীবন . . . তুমি বললে ঝান্ডা হাতে নষ্ট করবো শত বসন্ত . . . প্রতিটি ফাগুনে দোল খেলবো নিজেরই রক্ত দিয়ে . . তুমি আমার বিপ্লব . . জন্মপত্রে পিতার পরিচয় অসম্পূর্ণ প্রয়াস . . . জননী ভিন্ন কে আমি ?
আমি একটি মাংস পিণ্ড . . . আমি জরায়ু নিংড়ে বেরিয়ে আসা চোখ , নাক , কান ভিন্ন কিছুই নই মা কে ছাড়া .
- তবে তুমি ভালোথেকো . তুমি আরামে থেকো . বিজাতীয় অনুভূতি দূরে সরে যাক্ . তুমি শীত , বসন্তের প্রতিটি বিকেলে কোলে মাথা রেখে মন ভরে বোলো ; তোমার সমস্ত ছেলেবেলা , বেড়ে ওঠা , প্রেম , যৌনতা , বহিষ্কার ! আমি রইলাম শিয়রটিতে












এবং একুশ

চয়ন ভৌমিক



খাদের কিনার থেকে দাঁড়িয়ে
চয়ন ভৌমিক





এই যে অন্ধকার শোনো,
পুরোনো বন্ধুত্ব ছুঁড়ে ফেলে দিলাম এবার।
কথাবার্তা যা দেওয়া ছিল এতদিন,
সব থাক যেখানে যা ছিল,
সব ভুলে যাওয়াই ভালো এখন।
ঘুমের মধ্যে যত খাপছাড়া স্বপ্ন দিয়েছিলে
তাদের নিয়ে একা হাঁটা বন্ধ হয়েছে অনেকদিন, নিশ্চিত আমি।
কিছু দৃশ্যে তোমার অলীক বীজ, আজও
খুঁচিয়ে যাচ্ছে আমার নৈশব্দের দরজা যদিও।
তবুও হামাগুড়ি দিয়ে আমি চলে এসেছি
এক সরুগলির মধ্যে রাখা,
অশরীরি আলো পাথরের ঢিপির পাশে।
শৈত্যপ্রবাহের মাঝে আমি তুলেছি উষ্ণ কলার,
নিয়ন দেবতার মন্দিরে শব্দহীন,
গেয়েছি প্রার্থনা সংগীত।
গত শতকের যুদ্ধ, শহীদ বেদী, জেনোসাইড,
চিনিয়ে দিয়েছে আসল রূপ তোমার, ও আঁধার।
তুমি বরং ফিরে যাও, তোমার আদিম গুহার ভিতর,
তোমার কৃতকর্মের ইতিহাস লিখে দাও,
ভবিষ্যতের অভিশাপ কুড়ানোর জন্য।
মৃত্যু ডাকা রাত তোমার বক্ষলগ্না রমনী,
তাকে ফালাফালা করে নেমে আসছে
বিদ্যুৎস্পন্দ ভোর, পাখিদের উজ্জ্বল ডানা ।
ধ্বংসের একতরফা চুক্তি ছিঁড়ে ফেলা যাক নির্দ্বিধায়।



































এবং একুশ

অদিতি চক্রবর্তী


আলোনা  আলাপন
অদিতি চক্রবর্তী



কত জন্মখরচে মৃত্যুঠিকানা করি বদল
আমারতো দু'মুঠো কেবলই সম্বল
একবার তাই পাতি টানটান
কখনো উপুড়ে দিই বাম ঢেকে ডান।
এরপর ছেঁড়া মেঘ কাছে এলে
তারার পিদিমখানি জ্বেলে
শনশন হাওয়াদের মন্ত্র পাঠাই
ধরতাই ঠিক হওয়া চাই।
সংসারে সকলেই চায়, খাবে মহাভোজ
কবিতা খাতায় ছাইপাশ লেখাগুলো রোজ
আলোনা তখন
ঠিকানা বদলে যায় পর ও আপন
কেন লিখি? কেই বা কবিতা খুঁজে পড়ে!
তির তির নদী এক বয় অন্তরে।
প্রশ্ন অমূলক জেনে
গোপন তরঙ্গ টেনে
কুমারী পাতাদের ফিসফিসে বলি
একদিন ধুমধাম বাঁধবোই গিঁঠ
কাছেপিঠে কেউ শুনে ফেলে অচকিতে
বাতাস কইতে থাকে দূয়ো দিতে দিতে,
আমায় তুমি ভাঙছো যেমন দুনিয়াদারি
গয়নাগাটি পরে আমি বাহান্নপীঠ।















এবং একুশ

অনুপ দেবনাথ



বকুলকথা
অনুপ দেবনাথ



ঐ ছায়ে বসেছিলে তুমি,
এই ঘাসে রেখেছিলে হাত ।
এ খানেই তো প্রথম দেখা,
হাতে রাখা হাত ।


এ পথেই হেঁটে যেতে তুমি,
গাছ থেকে কেড়ে নিতে ফুল ।
সেই ফুল আজো ঝরে জানো,
সুরভিত শুভ্র বকুল ।

বকুল বিছানো সে পথে,
যখনই হেঁটে হেঁটে যাই ।
শুনি বকুলের প্রশ্ন আকুল ,
নাই ; সাথে নাই ?

সময়ের সাথে তুমি আমি,
দূর থেকে আরো ,দূরে সরে যাই ।
জাগে শুধু বকুলের প্রশ্ন আকুল,
নাই ; সাথে নাই ?













এবং একুশ

অ্যাঞ্জেলিকা ভট্টাচার্য



আপোষ
অ্যাঞ্জেলিকা ভট্টাচার্য



আমার নিরক্ষর ,সেকেলে মা ।

বিটি রোড পার হতে পারেনা

গরিয়াহাটে হারিয়েছে কতবার ,

ভুল ট্রেনে উঠে

মুখ থুবড়ে পড়েছে বনগাঁয় ।

হাত পুরিয়ে আমাদের ভালো মন্দ খাইয়েছে

সময়ের আগে বুড়িয়ে গেছে

কিন্তু কখনো আমাদের জন্য ফুরিয়ে যায়নি ।

আমার মা অভিযোগ করতে শেখেনি কখনো-

হয়তো মনে মনে অভিমান করেছে

কিন্তু তার হদিশ পাইনি কখনো ।

হদিশ কি করে পাবো?

চোখের জল রান্নাঘরের তাপে

এক অদ্ভুত মেঘের জন্ম দিয়েছিল



তার নাম আপোষ .............


























এবং একুশ

পলাশ কুমার পাল




নিঃশ্বাস বহিছে
পলাশ কুমার পাল



বরফের পর বরফ কেটে
জীবন হাঁটছে
উঠছে...
থোক থোক বরফ বুকে।

আইসক্রিম গলে গেলে
জিভ চাটছে
তৃপ্তি,
ভাঁড় ভেঙে সে যে আইসক্রিম কিনেছে!

কাঠির গায়ে বরফ
কাপেতে বরফ
জীবন চুষতে চুষতে মৃত্যুও-

দৃশ্যের সন্ধানে কবিমন
হোঁচট খেতে খেতে তবু...
নীরবে উচ্চতা ভাঙছে
নীরবে...

বরফের পর বরফ কেটে
জীবন হাঁটছে
উঠছে...
নামলেই মৃত্যু
উঠলে জিজ্ঞাসা;
থোক থোক বরফ বুকেতে
নিঃশ্বাস আজও বহিছে...














এবং একুশ

পিনাকী মণ্ডল



শৃঙ্গজয়
পিনাকী মণ্ডল





পাহাড় আর দিগন্তের নীলে

ছুটেছিলে শূন্যের অমোঘ আকর্ষণে,

নীল বরফ আর মৃত্যুর বিভীষিকা

তুচ্ছ ছিল সেথা।

মনে কি পরেনি বিধবা মা,

পড়ে থাকা একলা গৃহকোণ,

তার সজল- করুণ আঁখি...

বড় হ’ল শুধু শৃঙ্গ জয়ের হাথছানি ?

সারি-সারি লোক, কত নেতা-মন্ত্রী

ভিড় ক’রে আজ তোমার আঙিনা মাঝে,

কেউ বা দেয় ফুল, কেউ মালা

শান্তনার বর্ষা যেন নামে,

কি হ’বে এই বরমাল্য, পুষ্পাঞ্জলি নিয়ে

বন্দী তুমি আজ কফিনের মাঝে।

পারবে কি তুমি অশক্ত শরীরে

বৃদ্ধা মায়ের পাশে উঠে দাঁড়াতে ?

চতুর্দোলায় চড়ে কফিন বন্দী হয়ে

শুরু হয় তোমার শেষ যাত্রা,

প’রে থাকে তোমার বিধবা মা,

আর এক চিলেতে ঘরের অনন্ত অন্ধকার।














এবং একুশ

মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম




পরিবার
মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম





দমবন্ধ হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে দুদ্দাড় দৌড়োচ্ছি

মাঠের পর মাঠ বনের পর বন

দ্রুতলয়ে বের হয়ে পড়তে হবে আমাকে

এই বদ্ধ জঙ্গল থেকে

যেখানে অবিশ্বাস আর হিংসার সাম্রাজ্য

ধীরে ধীরে কুঁড়ে খেয়েছে বিশাল গণতন্ত্রকে

এবং সামনে মুখ থুবড়ে

পড়ে আছে ভালবাসার শ্বাসমূল

এখন সমস্তটা মনে হয়

যুগ যুগ ধরে নিপুণ হাতে গড়া দু'পয়সার মেকি হাওয়াই মিঠাই

ঘর ছেড়ে আমি পালাচ্ছি, আটকা পড়ে যাচ্ছি এবং পরে ব্যর্থতার অঢেল পাহাড় নিয়ে উড়ে যাচ্ছি...











এবং একুশ

সুরজিৎ চক্রবর্ত্তী



ঈশ্বর জন্ম
সুরজিৎ চক্রবর্ত্তী



কাল রাতে একটা জোনাকি উড়ছিল
একবিন্দু আলো নিয়ে
অন্ধকারে
আমি নেমে এলাম
ব্যালকনি থেকে সোজা
এক সিঁড়ি দু সিঁড়ি এড়িয়ে

একজন প্রবীণ বললেন এভাবে হয় না
শরীর থেকে ছাল খসাতে হয়
ইশ্বর কনার মত
মুহুর্তের জন্ম মৃত্যু

বাতাসে এলোমেলো উড়ছে পরোয়ানা
গাছ ব্যাকটিরিয়া আর ইঁদুর জন্মের
লাল অথবা সবুজ আলো
জ্বলে উঠেই নিভে যাচ্ছে
পলকের ব্যাবধানে
জন্ম আর নাজন্মের সিদ্ধান্ত
লক্ষ কোটি বছর দূরে
রোজ বহুবার
একইভাবে

বিচারক বললেন এত তাড়া কেন
তোমার কেসটার পর্যালচনা এখনও বাকি
তারপর ম্যান্ডোলিন বাজিয়ে
ফিরে গেলেন
কালো দিগন্তে

সকালে মুখ ধুতে গিয়ে দেখলাম
আমার জিভটা এখনও
সাদা হয়ে আছে মরা মানুষের মত ।।











এবং একুশ

মনোজিৎকুমার দাস



উইলিয়াম ব্লেকের কবিতা
অনুবাদ - মনোজিৎকুমার দাস
বিবর্ণ গোলাপ




ওহ গোলাপ, বিবর্ণ তোমার রূপ

অদৃশ্য কীট

রাতের পতঙ্গ

ঝড়ের গর্জন;

র্খুঁজে পেয়েছি

লাল রঙে রাঙানো

তোমার শয্যা;

নিরুদ্ধ গোপন ভালবাসায়



তোমার জীবন তমসাচ্ছন্ন ।






এবং একুশ

দীপ রায়



সায়ানাইড লাভ্
দীপ রায় 



লাভ্ ইজ ব্লাইন্ড বলে
যত প্রেমিক যুগল একে একে
ঝাঁপিয়ে পড়েছে দামাল জমিতে
প্যারাশুট খুলে
একটা ধুলোমাখা মেঘ
তাদের সর্বাঙ্গে গ্রাস করেছে
ও সমাজ নামক একটা
ধারালো ছুরি প্রায়শই তাদের
ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে
এই বিশ্বাস বুকে নিয়ে
রোজ সারা পৃথিবীজুড়ে
কত ইফ্তিকার ও সোফিয়ারা
চিরঘুমে আবদ্ধ হয় নীলরঙা ঠোঁটে
আর কখনোসখনো আমরা পাতা
উল্টে ওদের কথা পড়ি
আর পাশ ফিরে শুয়ে
নিজেদের কবর হাতড়াই

















এবং একুশ

সীমান্ত হেলাল




শান্তিপ্রিয় মোমপুতুল

সীমান্ত হেলাল



প্রখর রোদ্রস্নানে উন্মাতাল হয়ে আমি ছুটে গেছি

সাদা ছায়াধারী বৃক্ষের নিচে।

যতটুকু আর্দ্রতা আছে দিয়ে দিয়েছি তাকে।

বিনিময়ে একটু শান্তি চেয়েছি



সিগ্রেটের ধোঁয়ায় স্বপ্ন উড়িয়ে হাঁটতে চেয়েছি নিরুদ্দেশ

হাঁটতে হাঁটতে ফের-ফিরে এসেছি সেই পথে

যেখানে হাড়িয়েছি আনকোরা শৈশব...



আজন্ম বেহিসেবি জীবন বয়ে চলে চঞ্চল ঘরির মতো

ঘাম আর লবনে শানানো দেহ মাঝে মাঝে একটু ক্লান্তি চায়

তবু অক্লান্ত কলমের মতো চলমান আমি



প্রয়োজন মতো ব্যবহার হচ্ছি

অপ্রোয়জনে ফুড়িয়ে যাচ্ছি

বোবা কান্না-জমা হতে হতে

আমি এখন মোমপুতুল।



প্রচন্ড উত্তাপে গলে যাই

কারো বিরহের আগুনে জ্বলে যাই

জলের মতো সহজ হয়ে ব’য়ে যাই...





জন্ম থেকে জ্বলছি তাই




























এবং একুশ

অরূপ গোস্বামী


হামার রবি ঠাকুর
অরূপ গোস্বামী




হামার রবি ঠাকুর ?

দেখবি যা তুই লিড়ন দিছে
শিমুলটাঁড়ের বাইদে
বাস্যাম লিয়ে দৈড়াছি তাই
ছিল্যা ঘরে কান্দে ।
বিহন বেলায় ঘরকে ঘুরে
সিনান খাওয়া সাইরে
বাঁধব্যে বস্যে ঝুমুর টুসু
গাইবে গলা ফাইড়্যে ।

হামার রবি ঠাকুর ?

কৈলা খাদে গাইত্যের ঘায়ে
ভাঙছ্যে কালা পাথর
জীবন মরণ রাখছ্যে বাজি
আশ্বিন থাক্যে ভাদর ।
ঝান্ডা উঢ়ায় লড়াই করে
গায় জিহাদী গান
রক্ত চুষা করত্যে নিকাষ
টাঙির ফলায় শান ।

হামার রবি ঠাকুর ?

ঝুপড়ি ঘরে লমফ আলয়
লিখছ্যে বস্যে পইদ্দ
নাইবা থাকুক মানে মাথা
নাইবা বলুক ভদ্দ ।
ভট কাগজের উল্টা দিকে
সময় দিছে ফাঁকি
খঁকরা পেটে ছুটছ্যে চুঁহা
সকাল কত বাকি ?










এবং একুশ

জাফর পাঠান



ইচ্ছা-অনিচ্ছা

জাফর পাঠান



যায় দিন যায়- ইচ্ছাগুলি একটানে ছিঁড়ে

ডুবিয়ে দুখের অতলে কোথায় যেন ভিড়ে,

চেয়েছি যা হয়ত আছে তা ইচ্ছার ঐ নীড়ে

হয়ত ইচ্ছার কেন্দ্রবিন্দু- ঐ নীড়কে ঘিরে।



ছুঁয়ে দেখে-না দেখে চেয়েছি যা এই জীবনে

কিছু আছে ইচ্ছাধীন- কিছু অন্যের ভুবনে,

আবার কিছু না চাইলেও- আসে ইচ্ছা বিনে

ইচ্ছার ইচ্ছায় কিছু আছে- নিতে হয় কিনে।



কি চেয়েছি-কি পেয়েছি ইচ্ছা আর অনিচ্ছায়

মিলিয়ে দেখি- বেশীটুকু অনিচ্ছার ইচ্ছায়,

ঘুড়ি উড়াই আমি- নাটাই আমার কব্জায়

না দিলেও সায় কে যেন সূতা নিয়ে যায়!



ভাবি শুধু ভাবি- রহস্যের দোটানা ইচ্ছায়

বাধ্য হই কিছু করতে- ইচ্ছাহীন স্বেচ্ছায়।











এবং একুশ