শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০১৬

মৌসুমী মণ্ডল



গুচ্ছ কবিতা
মৌসুমী মণ্ডল




এক

খোঁপাটা আজ দুরন্ত নদীর ঢেউ
ওর মোহনায় একগুচ্ছ বেলফুল নিজেই একা রাখতে পারলাম, পুরুষহীন বিকেলে।

দুই

উড়ছি শিশিরে ও রোদে
এবং ঘামে ভেজা নিশ্বাসে
জল-ফড়িঙের ডানায়
কেউ নেই, কেউ নেই
কালো পীচের রাস্তায়
শুধু গাড়ি ভর্তি মানুষের দল
চোখের দিঘীর জলে
শুধু ধোঁয়া জমে

তিন

নাছোড়বান্দা শিশু-ক্ষুধারা কোরাস গাইছে
আহা, কোন প্রিয়মুখ যদি ভালবেসে
এক থালা গরম ভাত দিতো,
তবে ওরা প্রজাপতির মতো উড়ে উড়ে
আর রোদের মতো নেচে নেচে
'খুশির দিন' পালন করতো!

চার

মন কুরে কুরে খেয়েছে ইঁদুরের
সুতীক্ষ্ণ ঝকঝকে দাঁত
তবুও আমার আর্চিজ্ কফি মগে
লেগে থাক সেই শীতের রাতটুকু
তোমার চুমুকের দাগের হয়ে


পাঁচ

আমি তোমার চিরকালের
বিশেষণ ছিলাম, রয়েই গেলাম
তুমি হঠাৎই কেন ক্রিয়াপদের পানে
নদীর মতো নিচ্ছো বাঁক?

ছয়

তুমি হয়েই থাকো
শরতের ঘুমন্ত মেঘ।
আমি কান পেতে
শুনবো দুপুরে
পায়রার শান্ত বকবকম্,
হয়তো সাইবেরিয়ান
পাখি হয়ে
উড়ে যাব অন্য দিগন্তে।
আবার বর্ষামেঘ হয়ে
নিতে যাবো না তোমার খোঁজ।

সাত

কষ্টগুলো ছাই হচ্ছে , হোক না
তোমাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে উজানে
গাঙের ঢেউ,
আমার অনুরাগের ঘর
ভাঙছে !

আট

জানালার শার্সি ভিজছে
রিম্্্্ঝিম্্্্রিম্্্্ঝিম্
আয়নার পারদের গভীরে
যে কবিতাদের বসবাস ্্্,
জলের গভীরে যে জলপাখি
মাছরাঙার স্নান ্্্,
তার প্রতিটি পৃষ্ঠা খুলে দেখি
পূর্বপুরুষদের যুদ্ধ- নিষ্ঠার
কালো অক্ষরদের ্্্
শুধু একটা দোয়েলের ডানা ্্্
শ্রাবনের দিকে চোখ রেখে,
ভিজবে একাকী ্্্

নয়

একটা সকাল পেরিয়ে গিয়ে
ইচ্ছের হীরক কঙ্কন
সহস্রমুখী আকাশ হয়ে ঝুলে আছে
প্রতীক্ষার কনকচাঁপার দোলনাতে।
একটা সাগরের নীল নখের
জলতরঙ্গের আঁচড় বসে যাচ্ছে
আমার ত্বকের অন্তর্বাসে।

দশ

দরদাম শেষে,
জেনে গেছে সাঁতার ভুলে যাওয়া মাছ জীবন, হলো অঙ্ক না শেখা
এক মাতাল মহুয়া বন

এগারো

কী ভীষণ গ্রীষ্ম-দিন
যদি চাও, দিও না হয়
ইভ্ আদমের সবুজ পাতার পোশাক আমরা না হয় আবার আদিম
আবার জোছনার পূর্ণিমা
তুমি হবে চৈত্রমাস,
আর আমি সর্বনাশ
তুমি যদি মেঘআদুরে পাখি
রোদের মত ঝিলিক দিয়ে,
চাইবো ভালো বাসাবাসি

বারো

আমি রাজপুতানার
এক ঘুমন্ত নগরীর কুলবধূ
সহমরণ ও রুদালী
আমার কড়ির গহনা
রাত পোড়া গন্ধ কত প্রকারের হয়!
খোলা হাওয়ায় উড়ছে
আমার বাঁধনি শাড়ির আঁচল
ওগো অনার্য বাঁশিওয়ালা
চল এক সাথে কাগজের মতো পুড়ি

তেরো

ছাদের ফুলবাগানে দু'ফোঁটা চাঁদের আলো বিশ্রাম করছে দেখে
মনে হলো, বিরহ — তিনটি মাত্র অক্ষর
কিন্তু অনুভবের অসুখ দীর্ঘ

চৌদ্দ

বেদনারা আসে যখন তখন
নিঃশব্দে
বেড়াল পায়ে, আওয়াজ পাওয়া যায়না
শুধু রেখে যায় এক আকাশ ঝড়
আর দীর্ঘ চুরুটে পোড়া সকাল বা রাত। কিংবা প্রতীক্ষা






এবং একুশ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন