আপসোস
সলিল বোস
কল্লোলিত নব যৌবনের চঞ্চল হিল্লোলে
পেরিয়ে গেছে কলেজের মধুময় দিনগুলি
দায়িত্ব মুক্ত সেই সময়টা আমার কেটেছে
কলেজ পালিয়ে সিনেমা হলের কোণের সিটে
কিংবা পার্কে গাছের আড়ালে নিভৃতে
প্রিয় বান্ধবীর সাথে প্রেম প্রেম খেলায়।
একান্ত অন্তরঙ্গতার উত্তেজনাময় মুহূর্তের
সেই দিনগুলি ... আহা!
ভালই চলছিল সবকিছু, হঠাৎ তাল কেটে গেল
সেই ঘনিষ্ট বান্ধবী যখন বিয়ের প্রস্তাব দিল।
কয়েকটা দিন নানা আছিলায় এড়ানোর পর
বেশি দেরী করিনি বেকারত্বের দোহাই দিয়ে
তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব উড়িয়ে দিতে ...
অসহায় প্রেয়সীর চোখের জলও পারেনি
অস্বীকারের সিদ্ধান্ত থেকে আমাকে টলাতে।
কিন্তু ঐ ঘটনার ঠিক দুবছর পরেই আমি
সুবোধ বালকের মতো পিতার হুকুমে
গুটি গুটি পায়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসেছিলাম
বাবার অফিসের হেড ক্লার্কের মুখরা মেয়েকে
অর্ধাঙ্গিনী বানাতে ... চাকরির প্রলোভনে।
আমার জীবনের পরবর্তী গল্প অতি সাধারণ
আর পাঁচটা ছাপোষা কেরানির মতোই
একনাগাড়ে চলছে ... প্রতিদিন একই রুটিন।
বাজার-অফিস-ঘর-আড্ডার একঘেয়েমী...
সংসার নামক জোয়ালে জুরে থাকা
কলুর বলদ বলেই মনে হয় এখন নিজেকে।
জীবনের এই গোধূলিবেলায় পৌঁছে
আজকাল আমার খুবই মনে পড়ে
হেলায় হারানো সেই বান্ধবীর মিষ্টি ভঙ্গিমা...
তার অসম্ভব সুন্দর মুখ টেপা হাসির ছবি...
ঘনিষ্ট মুহূর্তে আধো আধো স্বরে উচ্চারিত
দাম্পত্য জীবন নিয়ে তার দেখা স্বপ্নের বর্ণনা...
চরম আকর্ষণীয় সোনালী ভবিষ্যতের পরিকল্পনা...
ভালবাসা সিক্ত মধুরতম মিলনাত্মক কাব্যিক নীড়...
শুধু আমরা দুজন .... অন্য কেউ থাকবেনা ...
শাড়ি...গয়না নিয়ে চাপ দেওয়া তো দূর
ডাল ভাত, কিংবা সেটাও রোজ না জুটলেও
কখনও তা নিয়ে ঝগড়া না করার অঙ্গীকার...
সকাল থেকে আমার অফিসের রান্নার ব্যস্ততা...
সারা দুপুর আমার বিরহ জ্বালায় অস্থির সময়...
বিকেল থেকে সেজে গুজে রাস্তা দেখা...
কখন আমি ফিরে আসব অফিস থেকে...
পাঁচ বছর চুটিয়ে প্রেম, তারপর একটি সন্তান...
কুমারী মনের কল্পনার অকাল মৃত্যু ঘটিয়েছি আমি।
তার স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনাতুর সেই অশ্রুসজল চোখ
বিনা প্রতিবাদে মাথা নিচু করে তার চলে যাওয়া
আজও আমি ভুলতে পারিনি...বুকে মোচর দেয়।
তাকে ঘরনী করলেই বোধহয় ভাল হোত,
সে কিন্তু খুবই নরম ছিল, এত দজ্জাল ছিল না।
এখন কেবল আপসোস আর আপসোস।
এবং একুশ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন