কাকবন্ধ্যা
ঋতব্রত ঘোষ
"এই নে না, টিকিট কেন না, আমি খুব পয়মন্ত রে, কত ফকির রাজা হয়ে গেলো, কত রাজা সম্রাট হয়ে গেল, তুইও হয়ে যাবি। নে না, টিকিট কেন না......"
পুনর্মিলন উৎসবের টিকিট চাইতে এসে লাটরিসায়েবের সাথে দেখা হয়ে গেল।
যুদ্ধে খুইয়েছে দুটো চোখ,
দুইখান হাত অবশ, কানে যা শোনে শোনে না
অবান্তর কথা বলে বাকি সব ঢেকে যায় প্রতিস্বরে,
জাত বেজাতের এজলাসে আস্কারা বিলি হয়;
সবেতেই এক ওজোর, টিকিট কেন না, নে না টিকিট।
টিকিটের দাম বেশি ছিল বলে নাকি আস্থা নেই তাই
রোগ, ধর্ম, গন্ধের বিচারে সটকে গেলাম,
প্রত্নবিদ্যার ঝলকানিতে ট্যারামেরা বসন্ত আলাপের মতো খেউর উঠেছে দেউলের আঙনে,
নদী তুমি ভাগ হলে কেন?
সরগরম হয়ে উঠছে মাহোল,
অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে যেন,
প্রতিদ্বন্দে মুখর মুখ গুলি উত্তেজনায় বেগনি হয়ে গেছে,
ইন্ধনের অপেক্ষায় তারা রাত জাগছে।
নদীরই দোষ।
সে কেনই বা অঞ্চল, গ্রাম, চৌহুদ্দি, নগর, বন্দর, দেশ
বিদেশের ঘেরাটোপ টপকালো?
পরিণামে পুড়ছে গ্রাম, ছারখার হচ্ছে শহর,
দগদগে ঘায়ের প্রকোপে
কাকবন্ধ্যার জরায়ু আর ভরে ওঠে না,
স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দেখেছিল বড় ডাক্তার
বলেছিল শহরে যেতে হবে, তবে ব্যারাম সারবে,
লাটরিসায়েব সেই থেকে রাস্তায় রাস্তায় টিকিট বেচে ফেরে,
লাটরি লাগে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে,
নদীর জল বেচার লাটরি
দেশভাগের লাটরি
ফুটিকড়ি পুঁজি লগ্নি করার লাটরি,
শরীর বেচা-কেনার লাটরি
দেশ ধ্বংস করার লাটরি,
কেউ কেনে, কেউ বাতুল বলে ধাক্কা মেরে চলে যায়,
গিয়ে আলোচনায় বসে,
সবাই বসে তুমুল আলোচনায়,
লাটরিসায়েব রাত বেরাতে আস্তানায় ফেরে,
ঘরে তার কাকবন্ধ্যা বউ
সেই কবে একবার বিইয়েছিল,
সেযাত্রা লাটরিসায়েবের বাড়ি থেকে
উৎসবের রোশনাই ভিনগাঁয়ে পৌঁছেছিল
চোগা-চাপকানে সেজে ইনিয়ে বিনিয়ে সায়েবের সে কি নাচন,
কাউন্সিলর বলেছিলেন, নেক্সট মহড়ায় এসো দিকিনি একবার,
তোমার একটা হিল্লে তোলা রইল এই।
একমাত্র অবলম্বন সে লায়েক হতেই দেশছাড়া হয়ে গেছে কবেই,
পুনর্বিন্যাস উৎসবের মহড়া চলছে বঙ্গীয় সংস্কৃতি দপ্তরে।
কেউ কিনছে, কেউ কিনছে না টিকিট যেমনটা হয়ে থাকে,
জনতার উল্লাস এবারের মতো থম্ মেরে গেছে।
এবং একুশ