সোমবার, ১ জুন, ২০১৫

সম্পাদকীয়




পঞ্চম সংখ্যার প্রুফ চেকিং, এডিটিং সব শেষ। ব্লগ-এ আপলোড করছি মন দিয়ে। ফোন-এর  রিমাইন্ডার বেজে  উঠল হঠাৎ - কল পৃথাতাই তো, পৃথাকে ফোন করতে হবে।

পৃথা মিত্র। আমার ছোট্ট বেলার বন্ধু। হরিহর আত্মা বললে কম বলা হয়। পাশাপাশি বাড়ি আমাদের। একই স্কুল, একই ক্লাস কতো শীতের রাত, বর্ষার সন্ধ্যা, গ্রীষ্মের দুপুর আমরা একসঙ্গে, আমি ওর বাড়িতে – ও আমার বাড়িতে কাটিয়েছি, তার হিসেব নেই। অদ্ভুত আনমনা মেয়ে একটা। খুব সুন্দর গান গায়, মিষ্টি গলা, গীতবিতানে গান শেখে। অসাধারণ নাচে... ওর চিত্রাঙ্গদার কুরূপা, প্রকৃতি, শ্যামা যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা আজও ভুলতে পারেননি, আমি নিশ্চিত। আর লুকিয়ে লুকিয়ে কবিতা লেখে, অঙ্ক খাতার পেছনে, বইয়ের কোণে, রাফ্‌ খাতায়, যেখানে জায়গা পায়। দেখতে পেয়ে চেপেচুপে ধরলে রিনরিনে মিষ্টি সুরেলা গলায় পড়ে শোনায়। আর কবিতা পড়তে পড়তে ওর চোখ জলে ভরে যায়। অবাক হয়ে জানতে চাই – কিরে, কি হল তোর? মুখ ভার করে বলে, জানি না, যা...

পৃথাকে একবার পাড়ার ম্যাগাজিনের এক বৈশাখ সংখ্যার জন্য বললাম, রবিবাবুকে ছুঁয়ে একটা কবিতা লিখে দে তো। বলল, আমার নামে দেওয়া যাবে না কিন্তু। বললাম, দেখা যাবে। বিকেলে জানলা দিয়ে ডেকে বলল, নিয়ে যা তোর কবিতা। ছুটলাম। কিন্তু, ওমা... এ কী !!

হলুদ ঠোঁটওয়ালা পাখীদুটো
       রোজ মুখোমুখি ব’সে
কিচিরমিচির করে
         সংসারের কথাই বুঝি
মাঝে মাঝে রোঁয়া ফুলিয়ে
অভিমান করে মেয়েটা
ছেলেটা আদর ক’রে ঘাড়ের
কাছে ঠোঁট বুলিয়ে মান ভাঙায়
দুজনে পালা ক’রে
পাহারা দেয় বাসা

আজ সকাল থেকে
      ছেলে পাখীটা কোথাও নেই
আশে পাশে এদিক সেদিক
                  কোথাও না   
বাসা ছেড়ে বেশী দূর যেতে
পারে না মেয়েটা
পাইপের খাঁজ থেকে বেরিয়ে
কার্নিশের ধারে এসে
ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে
                  খোঁজ খোঁজ
চাপা গলায় কি যেন বলেই চলে
মাঝে মাঝে তীক্ষ্ণ স্বরেও –
তারপর আবার ফিরে যায় বাসায়...

আজও অভিমানে ঘাড়ের
রোঁয়া ফুলে উঠছে মেয়েটার
পলকহীন চোখদুটো
                  একটু ছলছলে
স্পষ্ট শুনলাম গভীর
গাঢ় স্বরে বলছে
‘ তবু মনে রেখো...’

অবাক চোখে ওর দিকে তাকাতেই বলল, কীইইইই...? দিয়েছি তো ছুঁয়ে... ওই দ্যখ, ওই পাইপগুলোর ফাঁকে শালিকদুটোর বাসাবলতে বলতে কোথায় যেন হারিয়ে গেল...

অনেক কষ্টে পৃথার ফোন নম্বর জোগাড় করেছি। শুনেছি, ওর স্বামী দুঁদে ব্যবসায়ী। গান কবিতা বিশেষ বোঝেন না। তবে পৃথাকে ভালবাসেন খুবপৃথা শুনলাম এখনো কবিতা লেখে, বাসী খবরের কাগজের কোণে, কিচেনের স্লিপ কাগজের পেছনে, ধোপার শাড়ী মুড়ে দেওয়া ব্রাউন পেপারের ওপর... পৃথাকে আমার চাই।

'এবং একুশ' পুরো তৈরী - আমি ফোনটা সেরে আসি, আপনারা ততক্ষণ কবিতায় ডুব দিন...


সুস্মিতা বসু সিং
























এবং একুশ

স্বপন দেব



এখন বলো
স্বপন দেব



এখন বলো আমার কাছ থেকে এতদিন
পূর্ব-প্রেম কেন লুকিয়েছিলে, মাঝরাতে
অসহ্য বুকের বেদনা, ক্লাস টেনের ভূগোলের
নম্বর, কেন লুকিয়েছিলে সিঁড়িভাঙ্গা শ্রম আর
প্রেমের ব্যর্থতা, ভর দুপুরের অপমান,
চাকরি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলোনি কেন?
ভেবেছিলে ছেড়ে যাবো, কষ্ট পাবো, ভয় পাবো ?
ভেবেছিলে আক্রোশে মাড়াতে যাব সারা পৃথিবীকে,
ভেবেছিলে ভেঙে যাব আত্মকরুণায় !
হিরণ্যস্তব্ধতায় রক্তের লোহিত কণায়
এইমাত্র মিশে গেল পত্রঝরনের হাহাকার। এসো, পাশে বোস
এবার আমাকে কথা দাও আমাকে ছুঁয়ে থাকবে,
যতদিন না আমি চলে যাই অন্য নীহারিকায়

বলো আর কোন দিন কিচ্ছু লুকোবেনা……

















এবং একুশ

দর্শনা বসু


ক্ষমা
দর্শনা বসু



আমার বিছানা চাদর বালিশে
লেপ্টে রয়েছে মুক্তি,
মগ্নতার ওই ঘেরাটোপ ছেড়ে
নাই বা করলি চুক্তি।

নাই বা দেখলি চোখ তুলে আজ
মেঘরঙা সাজ নিবিড়ে,
নাই বা করলি পাতালপ্রবেশ
মৎস্যগন্ধা তিমিরে।

মাচানে আমার শস্য আবেশ
ফলভারে মৃদুমন্দ,
রক্ত -আঁচলে সূর্য বিছাই,
বিষের বাসরে ছন্দ।


বেদুইন মন তোলপাড় বন
অস্ত্র লুকোয় আস্তিন,
ভিসুভিয়াসেও জলোচ্ছ্বাসের
বেহায়া সেতার রাতদিন।















এবং একুশ

শমীক জয় সেনগুপ্ত

ছায়া
শমীক জয় সেনগুপ্ত




আচ্ছা, আমরা ত' আমলতাস, দারু পাইন...
অথবা জংলা কোন ফুল হতে পারি!
লাল মেটে কাঁকুড়ে মায়ায়
আমরা ত' উড়ে যাই, দূরে যাই
সুদূরের ধুলো মাখা হাওয়ার আদরে।
যে বনে তে মধু নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনেছ নারী-
আমরা কি পারবোনা সে মুহূর্ত ফিরিয়ে দিতে?
বুরুডির বাঁধে খেটে চলে যে কঠিন লৌহপুরুষ
তার ঘাম, আর তার উদলা সোহাগ
আমাদের গায়ে গায়ে মাখা..
সে আদর তোমাকে দিতেই
উপলের দল হব ঢেউ-এ, মাটিতে...
নাড়োয়ার বুকে হব সুবার্ণরেখা-
জল বুকে তুমি তার ছায়া খুঁজে নিও।





















এবং একুশ

মৈনাক সেনগুপ্ত


সুজেটের জন্য
মৈনাক সেনগুপ্ত



শহরে নিয়ন-রাতে
মেয়েটি একলা হাঁটে
অজানা অগ্নিপথে ।
নিয়নে ঘোর তমসা;
শহরে রোজ কুয়াশা ।
কেন মেয়ে চলার নেশা ?
তুফানে আকাশঢাকা ।
জানি তোর পলকা পাখা।
হাতে স্রেফ প্রদীপশিখা।
দুপাশে দত্যিদানো ;
পায়ে পায়ে চোখরাঙানো ।
মেয়ে তুই থামলি কেন ?
হঠাৎ ই থামলে হবে ?
মেয়ে তুই বুঝবি কবে ?
আমি তোর পথ চেয়ে যে ।
হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত নাকি ?

এখুনি দিস না ফাঁকি ।
মুখ তোল চোখটা দেখি ।
মৃত চোখে ঐ তো আগুন ।
তোর লাশে জ্যান্ত ফাগুন ।
তুই সব আগামী ভ্রূণ ।















এবং একুশ

শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

এই তো সেদিন
শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়



এই তো সেদিন ভোরেরবেলা
আলোর বিচ্ছুরণ
আকুল শিহরণ
এই তো সেদিন।

এই তো সেদিন সকালবেলা
উচ্ছল রোদ পাখি
উতল ডাকাডাকি
এই তো সেদিন।

এই তো সেদিন দুপুরবেলা
ত্বক পোড়ানো আলো
ভীষণ জমকালো
এই তো সেদিন।

এই তো সেদিন বিকেলবেলা
আকাশ নীল পাখী
পরিয়েছিল রাখী
এই তো সেদিন।

এই তো সেদিন সন্ধ্যেবেলা
হাতের ওপর  হাত
দারুণ বৃষ্টিপাত
এই তো সেদিন।

এই তো সেদিন রাতেরবেলা
আতরগন্ধ মন
কুড়ায় আপনজন
এই তো সেদিন।

এই তো সেদিন জীবনখেলা
খেলতো জীবন যারা
এই তো সেদিন তারা

এই তো সেদিন।













এবং একুশ

সুচেতা বিশ্বাস

প্রস্তুতিপর্ব
সুচেতা বিশ্বাস



পুরনো লাটাই এ আবার নতুন সুতো
আহা ----বড় যত্নে দেওয়া মাঞ্জা
ঘুড়ি লড়াই এর দিন এগিয়ে আসে
ছাতে ঠায় দাঁড়িয়ে পড়েছে একা রাত

এখন তো শ্রাবন নয়
এখন বন্যা ঘুমিয়ে
তবু ও প্রিয় নামে অনাগত ধ্বনি ঝড়ে পরে

ফিকে রং পাওয়ার আগেই,
মধ্যরাতের স্তব্ধতায়------
ভাষাকে শান দিয়ে নেয়,
অভ্র ধোয়া ছাত আরো একবার














এবং একুশ

পলাশ কুমার পাল

নৈশপ্রহরী
পলাশ কুমার পাল



চাঁদের পাহারায়,
অপেক্ষ-মনে রাতের চৌকিদার হয়ে উঠি-
তিল তিল করে মুঠোতে রাত ভাঁজ করি;
আর ছুঁড়ে দিই
খোলা জানলার চোখে
ঘুমহীন ফাটলে।


চোখবোজা সুখী ঘুমের কবরের পাশে
নিস্তব্ধ গাছ হয়ে উঠি-
আসমানে শত শত আগ্নেয়গিরি
মরে যাওয়া বুকে মোমবাতি।
গলা মোমে
শিকড় ভিজিয়ে

সূর্যের অপেক্ষায় জাগি।













এবং একুশ

সিয়ামুল হায়াত সৈকত

সে
সিয়ামুল হায়াত সৈকত


আমার প্রতি তার বড্ড অভিমান
পাথরের বুকে কিঞ্চিৎ প্রেম রেখেছিলাম
বাকিটুকু উদারহৃদয়-
তার জন্যে বকুলের ফুল কুড়োলাম না
মোটরবাইকে দোলা দেওয়া পথ দিলাম না
ঠোঁটে ঠোঁট রাখার প্রতিজ্ঞা করেছি মাত্র,
সে উধাও !

ভণ্ডামি করিনি একুশ বসন্ত ছাড়িয়ে
কিংবা শামুকের খোলস গায়ে নিজেকে আবৃত করে।
শুধু সমুদ্রের আশায় ছিলাম
একটা বিশাল সমুদ্র আমায় ভাসাবে; বহুদূর।
ইচ্ছেরা বড় হয়নি মাত্র-
বেড়ে গেছে অতীতের পথগুলো !
























এবং একুশ

রূপক সান্যাল

আর কি নেবে ?
রূপক সান্যাল



আর কি নেবে ? শরীর শুধু ?
এই নিয়ে যাও এই নিয়ে যাও
মাঠের মত বিছিয়ে রাখা শরীর আমার,
এই নিয়ে যাও খোলা আঁচলসিঁদুর-মাখা কপালখানা,
এই নিয়ে যাও এই নিয়ে যাও -
হাসলে পরে দুই গালে টোলচাঁপার মত আঙুল আমার
সব
দিয়ে
দিই
সন্ধ্যা-দুপুরবিকেলবেলারমণ-সুখের দুপুর রাতও
সব
নিয়ে
যাও
আর কি নেবে ? শরীর ? শরীর ?
তা-ও নিয়ে যাও অষ্টাদশী শরীরখানা,
আমার আমি শরীরে নেই

তাও জানোনা তাও জানোনা!














এবং একুশ