সম্পাদকীয়
তৃতীয়া,
কিশোরী কন্যার মত কমনীয়, অথচ সাবলীলতায় ঋজু। নতুন আঙ্গিকে, নতুন সাজসজ্জায়।
শুধু
কবিতার জন্য আরো একটি ব্লগ। কিন্তু বাঙালীর কাছে কবিতা কখনোই উদ্বৃত্ত হয় না। বয়স
কালে দু’ছত্র কবিতা লেখেননি – এমন বাঙালী আছেন বলে আমার জানা নেই। প্রাচীন কালে তো
বটেই, নিতান্তই আধুনিক যুগেও এমন এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়, যখন কবিতার স্মরণ নেওয়া
ছাড়া গত্যন্তর থাকে না। ব্যক্তিগত আমি-র প্রাচীনতা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান, তবু বলি –
সাড়ে তিনটে দশক পেরিয়ে এসেছি অবলীলায়। তা, বাঙালী জীবনে কবিতার সর্বব্যাপী
মাহাত্মের কথা ভাবতে গিয়ে দেড় দশক আগের একটি কবিতাশ্রয়ী ঘটনা মনে পড়ে গেল, বলি সেই
কথাই –
তখন
কলেজে পড়ি। আমার এক সহপাঠী, ধরুন, নাম অমিতাভ, প্রেমে পড়লো আর এক সহপাঠিনী
অনিন্দিতার (এই নামও কাল্পনিক)। অনিন্দিতা পড়াশোনায় অসম্ভব ভালো, এদিকে
অমিতাভ চলনসই। কিছুতেই আর প্রেম নিবেদন করে উঠতে পারেনা। Stairs-এর (কলেজের সিঁড়ির আড্ডার ওই নামই
ছিলো) মন্ত্রণাসভায় সিদ্ধান্ত হল, কবিতা লিখতে হবে। দুদিন সময় দেওয়া হল আমিতাভকে।
অমিতাভ লিখতে শুরু করল কবিতা। “ তোমার প্রেমে আমি মাতাল ”... মাতাল-এর সঙ্গে কি
মিল যায়? পাতাল? চাতাল? ঝাঁপতাল? – ধুউউউউর – হচ্ছে না ঠিক। এটা বাদ। নতুন লাইন –
“ আনিন্দিতা, আমি তোমায় ভালোবাসি ” – কাশি? ফাঁসি? মাসি? ...ইশ্শ্শ্
দুদিন
পরে অমিতাভ এলো কলেজে – অবসন্ন, বিধ্বস্ত! অগত্যা সেই stairs-এই বিশুর চায়ের দোকানের বিখ্যাত ১/২ চায়ের ফোয়ারা আর লেড়ো বিস্কুট
সহযোগে যৌথ উদ্যোগে তৈরী হল অনিন্দিতার জন্য প্রথম প্রেমের কবিতা। ওই এক কবিতার
জোরে প্রেমটা ওদের হয়ে গেল। ওরা এখন সুখী দম্পতি।
বিশ্বায়নের
যুগে এখন হয়তো কবিতার এমন বহুল ব্যবহার সীমিত। ঠিকই। তবুও ভাবুন তো, বসন্তের
চাঁদনীরাতের মাতাল সমীরণে মন যখন ব্যাকুল, whatsapp-এ দু'ছত্র কবিতাই তো তাকে লিখে পাঠাতে ইচ্ছে করে। কি, করে না? তাই
তো উত্তর আধুনিক কবিও লেখেনঃ
কবিতা আমার ছেলেবেলার খাতা
কবিতা আমার রাত-পালানো ঘুম
কবিতা আমার তোমার ছবি নিয়ে
সারা দুপুর একলাটি বাথরুম
কবিতা আমার যৌবনের নেশা
কবিতা আমার প্রথম উপার্জন
কবিতা আমার ল্যাপটপের খাঁজে
আঁকড়ে থাকা জীবনকে প্রাণপণ
কবিতা তোমায় স্পর্শ করে আজও?
ভোলাতে পারে শব্দের অপমান?
কবিতা আমায় রোজ ভুলিয়ে রাখে
বিপন্নতা... এবং পরিত্রাণ!
আপনাদের
কাব্যময় সাহচর্যে নিরন্তর সম্পৃক্ত হোক এবং একুশ।
শুভেচ্ছান্তে
সুস্মিতা
বসু সিং
এবং একুশ
আপনার সম্পাদকীয় টি অনবদ্য লাগল। সঙ্গে গদ্য টিও অনবদ্য।
উত্তরমুছুন