আমি কিছু করিনি
শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
বৃদ্ধটি থলে হাতে আপন মনে হাঁটছিলেন
কি যেন বিড়বিড় করছিলেন
তবে এ নিয়ে ভাবার কিছু নেই
এটা তিনি প্রতিদিনই করে থাকেন, কারণ
হাতে থলে আর টাকা গুঁজে দিয়ে
বৃদ্ধা গড়গড় করে যা যা বলেন, আর
তার যা যা আনতে ভুলে গেলে
আরও যা যা বলেন, তা থেকে বাঁচতে হলে
প্রথম বলা গুলো মুখস্ত করা ছাড়া কোন উপায় নেই ।
প্রত্যেকদিনের মত আজও তাই করছিলেন, কারণ
আজও একই সময় সূর্য উঠেছিল
আজও শালিখটা নেচে গিয়েছে ঝুলবারান্দায়
টাকা আর থলের দ্বন্দ্ব আজও অপ্রতিরোধ্য ।
তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, সে অনেকদিন
নিজের নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত তারা ।
তিন-চতুর্থাংশেরও বেশী পেরিয়ে আসা দুজনের সংসারে
সাধ ও সাধ্য দুইই এখন সীমিত, তবু
পুরোনো দিনের অভ্যেসটা রয়ে গেছে ।
না, তিনি বুল-ফাইটে আগ্রহী ছিলেন
এমন অপবাদ কেউ কখনও দিতে পারবে না
এমন কি দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যের প্রতি অনীহায়
গো-জাতির প্রতি তাঁর বিশেষ জাতক্রোধ ছিল
এমন চিন্তাও কেউ মনে ঠাঁই দিতে পারবেন না,
তবু ঘটনাটা ঘটেই গেল ।
ঠিক কি কারণে যে বৃষটি হঠাৎ অমন
বিপরীতমুখী হয়ে বৃদ্ধের দিকে ধেয়ে গেল
প্রত্যক্ষদর্শীরা কেউ তার কোন কারণ বলতে পারেননি
শুধু যখন পাশের নর্দমা থেকে তাঁর রক্তাক্ত শরীরটা তোলা হোল
তখন সম্পূর্ণ নিস্তেজ হবার আগে
শিশুর মত বলেছিলেন – ‘আমি কিছু করিনি’
যেন তাঁর এই দশার জন্যে সবাই তাঁকেই দুষছে !!
ডাক্তারবাবুরা বললেন –
তাঁরা নাকি তাঁদের আয়ত্তের সব চেষ্টাই করেছিলেন, তবু......
কেন যে তাঁর এই দুর্ভোগ তা না বুঝেই
বৃদ্ধ বিনা প্রতিবাদে চলে গেলেন ।
শালিখটা কি কালও আসবে ?!
গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারতো
যদি না এই দেশেরই আর এক প্রান্তে
সেই কিশোরটিকেও বিনা প্রতিবাদে চলে যেতে হোতো ।
আঁকার স্কুল থেকে ফিরছিল সে
পথে আগত ভোটের মুখে হঠাৎ যুযুধান দুই রাজনৈতিক দল
একটা আধলা ইট সোজা এসে লাগে তার মাথায় ।
সে’ও তার মা’কে শেষবারের মত বলেছিল –
‘আমি কিছু করিনি’ ।
যাকগে, এসব নিয়ে ভাববেন না
নিতান্ত কাকতালীয় ব্যাপার আর কি !!
এবং একুশ
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন